Monday, June 16, 2014

রায়দিঘির খুনে পান্ডা দলত্যাগী কংগ্রেসিই

RAIDIGHI
অমিত চক্রবর্তী ও শুভেন্দু হালদার

রায়দিঘি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব অস্বীকার করলেও রায়দিঘিতে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই চারজনের প্রাণ গিয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব৷ সরকারি খাস জমিতে ঘর করে থাকা বাসিন্দাদের কাছ থেকে মোটা টাকা তোলা আদায়ের চেষ্টা এবং তাতে বাধা দেওয়াকে ঘিরে সংঘাতেরই চরম পরিণতিতে শনিবার রাতের খুন বলে মানছেন তাঁরা৷ ওই ঘটনায় আদি তৃণমূলের তিনজন স্থানীয় নেতার সঙ্গেই খুন হন এক সিপিএম সমর্থকও৷

আড়াই বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলের আদি ও নব্য গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত-মারামারি নিয়ে বারে বারেই বিব্রত হতে হয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে৷ রায়দিঘিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ যদিও এই ঘটনায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ঘটনায় জখম আয়ুব মোল্লা৷ প্রাক্তন সুন্দরবন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গেই খুনের দায়ে অভিযুক্ত সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য বিমল ভান্ডারি, মথুরাপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন মোল্লাও৷ কান্তিবাবু এ দিন বলেন, 'গত পঁচিশ বছর ধরে শনি-রবিবার আমি রায়দিঘিতে থাকি৷ কিন্ত্ত দাদা হঠাত্‍ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরতে বাধ্য হই৷ আর ওখানে কারা কী করেছে তা সবাই জানে৷ চক্রান্ত করে যদি আমায় গ্রেপ্তার করতে চায় আমি বাড়িতেই আছি, পুলিশ ধরে নিয়ে যাক৷'

এই খুনে মূল অভিযুক্ত হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে, সেই ওয়াজেদ আলি খামারু লোকসভা ভোটের আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব৷ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে রায়দিঘির কাশীনগর মোড়, খাড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় ছিল শোকের ছায়া৷ দুপুরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মুকুল রায়-সহ তৃণমূল নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেন৷ যদিও সেখানে ছিলেন না স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রী রায়৷ পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু বলেন, 'গোটা ঘটনার পিছনে সিপিএমের পরিকল্পনা রয়েছে৷ বিজেপির ইন্ধনে এই কাজ হয়েছে৷ শনিবার সন্ধ্যায় সিপিএম নেতা কান্তিবাবু রায়দিঘি থেকে চলে যাওয়ার পরেই এই নারকীয় ঘটনা ঘটায় এর পিছনে তাঁর হাত রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা৷'

ঘটনার সূত্রপাত খাড়ি নদীর পাড়ে খাস জমিতে বসবাস করা শ'খানেক পরিবারকে ঘিরে৷ সরস্বতীপাড়া নামে ওই এলাকার বাসিন্দারা সিপিএম সমর্থক৷ তৃণমূলের প্রবল দাপটেও খাড়ি পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে৷ এই বুথেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে হারতে হয়েছিল রাজ্যের শাসকদলকে৷ ওই নির্বাচনের পরেই এলাকার দাপুটে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন উপপ্রধান ওয়াজেদ আলি খামারু যোগ দেন তৃণমূলে৷ মৃত আতিয়ার মোল্লার বাবা আকবর মোল্লা বলেন, দলে ঢুকেই সরস্বতীপাড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করছিল ওয়াজেদ৷ সরকারি জমিতে দীর্ঘদিন বসে থাকা বাসিন্দারা তখন দলের পুরোনো নেতাদের দ্বারস্থ হন৷ টাকা চাওয়ার প্রতিবাদ করেন হাসান, হাফিজুল, আতিয়াররা৷ তা নিয়ে শুক্রবার কাশীনগর মোড়ে দু'পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়৷ এর পরেই বিষয়টির মীমাংসার জন্য শনিবার দলীয় অফিসে বসা হয়েছিল৷ মৃত সফিউল মোল্লার আত্মীয় ফিরোজা বেওয়া বলেন, 'টাকা না দিয়ে আমরা সবাই তৃণমূলে যোগ দেব বলে কথা চলছিল৷ সে ব্যাপারে কথা বলতেই সফিউল ওদের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিল৷ কিন্ত্ত বাড়ি ফেরার সময় ওঁকেও খুন করে ওয়াজেদের লোকজন৷'

পুলিশ এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল অভিযুক্ত ওয়াজেদ খামারু ধরা না পড়ায় ক্ষোভ বাড়ছে৷ রাতে খুন করার পর ওয়াজেদ এ দিন সকালে পরিবার নিয়ে সকলের সামনে দিয়েই পাড়া ছেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷

শনিবার রাতে কাশীনগরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ১১১ নম্বর বুথের সভাপতি হাসান গাজি-সহ অন্য নেতাদের সঙ্গেই সদ্য দলে ঢোকা ওয়াজেদ আলি খামারুকে নিয়ে বৈঠকে বসেন ব্লক সভাপতি ভগবান অধিকারী৷ কিন্ত্ত সেখানেও বচসা বাধায় দলবল নিয়ে বেরিয়ে যান ওয়াজেদ আলি৷ কিছুক্ষণ পর একটি অটো রিকশা করে হাসান গাজি ও অন্যরা বাড়ির পথ ধরেন৷ কিছু দূর গিয়ে শ্রীনগর মোড়ের কাছে গাড়ি ঘিরে ধরে বোমা মারতে থাকে দুষ্কৃতীরা৷ অটো দাঁড়াতেই একে একে টেনে নামিয়ে কোপানো হয় হাসান গাজি, বুথের কোষাধ্যক্ষ হাফিজুল গাজি, তৃণমূল যুবার পঞ্চায়েত এলাকার সহ-সভাপতি আতিয়ার মোল্লাকে৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সিপিএম সমর্থক সফিউল মোল্লার৷ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বলেছেন, 'কিছুদিন আগে দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ওয়াজেদ বেআইনি কাজকর্ম করছে বলে অভিযোগ আসে৷ সরস্বতীপাড়ার ঘটনায় দলের অন্য নেতারাও তার বিরুদ্ধে যান৷ সিপিএমের ইন্ধনেই ওয়াজেদ এই ঘটনা ঘটিয়েছে৷'

২০১১ সালে রাজারহাটে সিন্ডিকেটকে কেন্দ্র করে খুন হন স্বপন মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মী৷ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সাংসদ সৌগত রায় ও মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সমর্থকরা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন দু'পক্ষকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না বলে ীঁশিয়ারি দেন দলের শীর্ষ নেতারা৷ তার পরেও সেই সংঘাত চলছেই বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন মোড়কে৷
http://eisamay.indiatimes.com/state/ex-congressman-turns-out-to-be-mastermind-in-roydighi-murder/articleshow/36616597.cms?

No comments:

Post a Comment