Monday, June 30, 2014

পাড়ুইয়ের হূদয়ও এ বার বিজেপিতে

পাড়ুইয়ের হূদয়ও এ বার বিজেপিতে

parui
এখনও পুলিশি প্রহরায় দিন কাটে পাড়ুইয়ের ঘোষ পরিবারের।— রাজা ভকত।
এই সময়, বীরভূম: রাজনীতির ময়দান থেকে আদালতের আঙিনা৷ ন্যায়বিচারের দাবি আর পাড়ুই মামলা এক রকম সমার্থক হয়ে গিয়েছে গত এক বছরে৷ সেই পাড়ুই-যুদ্ধের প্রধান চরিত্র হূদয় ঘোষ এ বার নাম লেখাচ্ছেন বিজেপিতে৷ লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা ইস্তক এই বাংলাতেও গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর ঢল নেমেছে৷ তা সত্ত্বেও হূদয় ঘোষের সিদ্ধান্ত আলাদা করে তাত্‍পর্য পাচ্ছে৷

এমনিতে বীরভূমের কসবা গ্রামের ছাপোষা এই মানুষটির রাজনীতিতে তেমন প্রতিষ্ঠা নেই৷ তৃণমূল করতেন৷ কিন্ত্ত গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই সে পরিচয় ঘুচেছে৷ কিন্ত্ত আইনের আঙিনায় হূদয়ের লড়াই সম্ভ্রম কুড়িয়েছে তামাম রাজ্যেই৷ এ হেন এক চরিত্রের বিজেপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত সে কারণেই শোরগোল ফেলছে৷

সম্ভবত আজ, সোমবারই বিদ্যাধরপুরে হুল দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চে বিজেপি-র রাজ্য এবং জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে হূদয়বাবু সঙ্গীসাথীদের নিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে চলেছেন৷ বিক্ষুব্ধ তৃণমূলপন্থীদের হাতে থাকা কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শঙ্করী দাস, উপপ্রধান পার্বতী বাগদি-সহ পাঁচ সদস্যও বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন৷ বিক্ষুব্ধদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের 'সরকারি' এক সদ্যসও দল ছাড়বেন৷ আর তা হলে কসবা পঞ্চায়েতটিই বিজেপির দখলে চলে যাবে৷ হূদয়বাবু অবশ্য রবিবারও খোলসা করে কিছু বলেননি৷ তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, 'সোমবারই সব স্পষ্ট হবে৷'
আর বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, সোমবার হুল দিবসে একটি অনুষ্ঠান আছে৷ তার মূল উদ্যোক্তা রাজ্য আদিবাসী বনবাসী কল্যাণ আশ্রম৷ ওই আশ্রমের তরফে তাঁকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছে৷ সেখানে আশ্রমের রাজ্য সম্পাদক অনুপ দাশগুপ্তও উপস্থিত থাকবেন৷ সেই সঙ্গেই দুধকুমারবাবুর সংযোজন, 'হূদয়বাবুরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য আগেই আবেদন করেছেন৷ দল তা বিবেচনা করছে৷'

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় কসবা অঞ্চলে (পাড়ুই এই অঞ্চলেই) হূদয়বাবুর মতো আরও অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মীর সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধ বাধে প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে৷ শেষ পর্যন্ত জেলা নেতৃত্বের নিষেধ উপেক্ষা করেই হূদয়বাবুরা কয়েক জন নির্দল হিসেবে লড়াইয়ে নামেন৷ ভোটের দিন কয়েক আগে পাড়ুইয়ে দলের এক সভায় সেই নির্দলদের উদ্দেশে হুমকির সুরে অনুব্রত বলেন, 'নির্দলদের কেউ ভোট দেবেন না৷ ওরা হামলা করতে এলে ওদের বাড়ি-ঘরদোর সব জ্বালিয়ে দেবেন৷ আর পুলিশ-প্রশাসনের কেউ নির্দলদের মদত দিলে তাদের বোমা মারুন৷' অনুব্রতর ওই হুমকির পরেই ভোটের দু'দিন আগে বেশি রাতে কসবা গ্রামে হামলা হয়৷ বেশ কয়েক জনের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়৷ হূদয়বাবুর বৃদ্ধ বাবা সাগর ঘোষকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়৷ পরে তিনি মারা যান৷

ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়৷ জল গড়ায় অনেক দূর পর্যন্ত৷ বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়৷ সেই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মন্তব্য করেছিলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদ আছে বলেই অনুব্রত হুমকি দেওয়ার পরেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না৷' তিনি বার বারই প্রশ্ন তোলেন, অনুব্রত কেন এখনও অধরা৷ তাঁরই গড়ে দেওয়া বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি দত্ত৷ এমনকি সিট তদন্তে গড়িমসি করলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷ তদন্ত নিয়ে কৈফিয়ত্‍ দিতে আদালতে তলব করেন সিট-এর প্রধান, খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজিকেই৷

লোকসভা ভোটের মুখে তুমুল বিড়ম্বনায় পড়ে রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে স্থগিতাদেশ নেয়৷ মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত৷ পরে অবশ্য সেটি বিচারপতি দত্তের এজলাসেই ফিরে আসে৷ কিন্ত্ত মুখ্যমন্ত্রী-অনুব্রত সংযোগ নিয়ে নিজের পূর্ববর্তী মন্তব্যে অনড় থেকে এবং প্রধান বিচারপতির এজলাসের ভূমিকায় অসন্তোষের কারণে বিচারপতি দত্ত আর পাড়ুই মামলা শুনতে চাননি৷ তবে মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর সময়েও তাঁর মন্তব্য ছিল তাত্‍পর্যপূর্ণ, 'জীবদ্দশায় আমি এই মামলা শুনব না৷ তবে চিতায় ওঠার আগে পর্যন্ত মামলাটির কথা মনে থাকবে৷' কলকাতা হাইকোর্টের আর এক বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের এজলাসে এখন পাড়ুই মামলা চলছে৷ আগামী ৮ জুলাই ফের শুনানি রয়েছে৷ অনুব্রত ধরা না পড়ায় বিচারপতি ট্যান্ডনও প্রশ্ন তুলেছেন৷

আর গত এক বছর ধরেই হূদয়বাবুর পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ শাসকদলের নেতারা নানা ভাবে তাঁদের ভয় এবং হুমকি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ৷ এই পরিস্থিতিতে হূদয়বাবুদের বিজেপিতে নাম লেখানো বীরভূমের রাজনীতির অঙ্কেও বিশেষ তাত্‍পর্য পাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের অন্তর্বিরোধের আবহেও নতুন জল্পনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে৷ বিজেপি সূত্রের দাবি, শুধু কসবাই নয়, বীরভূমের সাত্তোর, রূপপুর, কঙ্কালিতলা, আলবাঁধা সর্পলেহনা প্রভৃতি পঞ্চায়েতের প্রায় সাত হাজার তৃণমূল সমর্থক সোমবারই বিজেপিতে যোগ দেবেন৷

No comments:

Post a Comment