Saturday, June 28, 2014

ইনডিসেন্ট প্রপোজাল ও দানবতন্ত্রের বেড়াজাল

ইনডিসেন্ট প্রপোজাল ও দানবতন্ত্রের বেড়াজাল

মিনার রশীদ ২৬ জুন ২০১৪
ডেমি মুর ও উডি হেরালসন অভিনীত একটি বিখ্যাত সিনেমা ছিল ইনডিসেন্ট প্রপোজাল। এ সিনেমার নায়ক নায়িকা নিদারুণ অর্থকষ্টে পড়ে। নায়কের মাথায় অনেক ব্যবসার পরিকল্পনা; কিন্তু সমস্যা একটাই এ ব্যবসার মূলধন হিসেবে হাতে কোনো টাকা নেই। জীবনের লাল নীল স্বপ্নগুলোকে ধরতে লাসভেগাসে চলে যায়। জুয়া খেলে হাতের পাঁচ শেষ সম্বলটিও খুইয়ে ফেলে। এমন অবস্থায় চোখে সর্ষে ফুল দেখতে থাকে। ত্রাণকর্তা হিসেবে তখন এক বিলিয়নিয়ারের উদয় হয়। এ ধনকুবের এক মিলিয়ন ডলার দিতে চায়; কিন্তু শর্ত একটাই স্ত্রী ডায়নাকে এক রাত এ বুড্ডার সাথে থাকতে হবে। প্রস্তাবটি খুবই আকর্ষণীয় ও লোভনীয় হলেও তা ছিল খুবই ইনডিসেন্ট ও মর্মপীড়াদায়ক।

সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির নিরঙ্কুশ বিজয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তা শুনে এই সিনেমার নায়কের রক্তক্ষরণটি স্মরণ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে মোদির ‘দ্বিতীয় ঘর’ হিসেবে মনে করে এখানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিলিয়নিয়ারের ইনডিসেন্ট প্রপোজাল পেয়ে সিনেমায় নায়কের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটেছিল। নেমন্তনের এ ভাষা দেখে একই ধরনের রক্তক্ষরণ আমাদের হচ্ছে। কারণ নায়কের ওই সম্পদের চেয়েও বড় সম্পদ ও ইজ্জত হারানোর ঝুঁকিতে এখন আমরা।

শাব্দিক এবং ভাবগত উভয় অর্থেই শব্দটি কানে বেজেছে। কারণ ব্যক্তিজীবনে মোদির প্রথম ঘর থেকেও না থাকার মতো। নির্বাচনের আগে আগে দেশের মানুষ জেনেছে তার প্রথম ঘরের খবর। সে ঘরটি নির্বাচনের হলফনামায় থাকলেও বাস্তবে তার তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। মিডিয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্যই সম্ভবত আগের নীরস জীবনের সেই স্ত্রীর বায়বীয় স্বীকৃতিটুকু দেয়া হয়েছে। কাজেই বেছে বেছে সেই মোদিকে যখন দ্বিতীয় ঘরের লোভ দেখানো হয় তখন আত্মাটি একটু কেঁপে ওঠে বৈকি।

বাংলার সাথে মোদির তেমন কোনো আত্মিক সম্পর্ক কখনোই অনুভূত হয়নি। কখনোই পদ্মার ইলিশ খেতে চেয়ে আমাদের বিগলিত করেননি। এ বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি কখনো আবেগভেজা দুয়েকটি মধুর কথা বলেননি। বরং যখন পাকিস্তানকে গালি দিয়েছেন তখন একই বাক্যে বাংলাদেশকে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের আগে আগেও বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে কাঁথা বালিশ ঠিক করে রাখার হুমকি দিয়েছিলেন। তাই এ নেমন্তনের ভাষাটি একতরফা প্রেমের দৃষ্টিকটু প্রদর্শন বলে মনে হয়েছে। মোদি এতে সাড়া দেননি। এ ইন্ডিয়ার অনেকের সাথেই দহরম মহরম থাকলেও এর আগে কাউকে এমন বিদঘুটে ইশারায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বেগম খালেদা জিয়াও মোদিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছে। সব সময় কাটাকাটিতে বিশ্বাসী সুশীলদের একটা অংশ এগুলো দিয়ে এ ইনডিসেন্ট প্রপোজালটিকে কাটাকাটি করে ফেলতে চেয়েছেন। তাদের এ অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা বার্তায় কিছুটা উচ্ছ্বাস দৃষ্টিগোচর হলেও তা স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ ও শালীনতা অতিক্রম করেনি। এগুলো কাউন্টার করতে গিয়ে অনেকটা প্যানিক হয়ে এক লাফে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওই ভাষায় এ নেমন্তনটি পাঠিয়েছেন। কাজেই কংগ্রেস হোক কিংবা বিজেপি হোক, প্রেম বিলানোতে কেউ তাদের অতিক্রম করতে পারবে না সেই ঈঙ্গিতটি দিয়ে এ নেমন্তনটি পাঠানো হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতারোহণকে বিএনপি সেলিব্রেট করেছে কংগ্রেস শাসনের অবসান হিসেবে। ন্যূনতম আশায় বুক বেঁধেছে, কংগ্রেস বিশ্বসভায় নিজের দুই কান কেটে এ অবৈধ সরকারকে যেভাবে সমর্থন জুগিয়ে গেছে, বিজেপি অন্তত ততটুকু করবে না। গণতন্ত্রের নামে যে দানবতন্ত্র জাতির ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে তার জীবন কৌটাটি (যে কৌটায় দানবদের আত্মা রাখা থাকে) স্পষ্টতই রাখা নয়া দিল্লিতে। দানবতন্ত্রের সেই জীবন কৌটাটি আগের মতো প্রটেকশন পাবে না এটা ভেবেই উনিশ দলের এ অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসটি দেখা গেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

এটা সবাই জানি যে, এত দিন কংগ্রেস আমাদের মাথাব্যথা দিয়েছে। এখন বিজেপি দেবে হয়তো বুকে ব্যথা। তারপরও কামনা করছি যে, আগে মাথাব্যথাটি দূর হোক। তা ছাড়া সারা পৃথিবীতে নরেন্দ্র মোদির ‘ব্যাড-বয়’ ইমেইজটি দূর করতে তাকেও কিছু ভালো কাজ করে দেখাতে হবে। আমাদের দ্বিতীয় ঘরের নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করে প্রথমেই ভুটান গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে বলেছেন, ভালো প্রতিবেশী না পেলে শান্তিতে থাকা যায় না। কাজেই প্রতিবেশীদের ঘুমহীন ঢুলু ঢুলু চোখ হয়তো মোদির দৃষ্টিতে পড়বে। কাজেই আশা করা যায়, কংগ্রেস প্রতিটি প্রতিবেশীর পেছনে যেভাবে আঙুল দিয়ে রেখেছিল বিজেপি সেই আঙুলগুলোর সব না হলেও কিছু সরিয়ে নিতে পারে। বিজেপির কাছে প্রত্যাশা আসলে এতটুকুই।

কংগ্রেস শাসনের অবৈধ ও অনৈতিক বেনিফিসিয়ারি আওয়ামী লীগ মনেপ্রাণে কংগ্রেসের বিজয় কামনা করেছিল। বিশ্বখ্যাত ইকনোমিস্টের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮-এর নির্বাচনে কংগ্রেস আওয়ামী লীগকে দিয়েছিল উপদেশ আর টাকার থলি। বিনিময়ে এবার তারা দিয়েছে দৃশ্যত ঝাড়-ফুঁকসহ আশীর্বাদ ও কামনার থলি। শামীম ওসমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে, নেত্রী এখন অলি-আওলিয়া হয়ে পড়েছেন। এটি বলার সময় মাননীয় স্পিকার কিংবা যাকে বলেছেন তিনি কোনো আপত্তি করেননি। ঘানার ওঝা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বাণ বা জাদুটোনা মারতে পারলেও আমাদের এই অলি ইন্ডিয়ার ইলেকশনে কোনো কেরামতি দেখাতে পারেননি। আওয়ামী লীগের শত কামনা সত্ত্বেও কংগ্রেসের চূড়ান্ত ভরাডুবি হয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষ তার নামে অধর্ম বা হিপোক্র্যাসিতে এ অঞ্চলের মানুষ ত্যাক্তবিরক্ত। ধর্মনিরপেক্ষ নামক হিপোক্র্যাটদের প্রতি সারা উপমহাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। ইন্ডিয়ার গত নির্বাচনটিতে এ বাস্তব সত্যটি দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে। ইন্ডিয়ার মুসলমানদের মন থেকে বিজেপির ভয় অনেকটা সরে গেছে। একইভাবে কিছুটা ছোট্ট পরিসরে বাংলাদেশের হিন্দুদের মন থেকে আগের জামায়াতভীতিও অনেকটা কমে গেছে। মাওলানা সাঈদীর ছেলে গত উপজেলা নির্বাচনে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে বিপুল ভোটে পাস করে এসেছেন। সরকারের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ না থাকলে এ ফলাফল কী হতো তা সহজেই অনুমেয়। এখানে সরকার ফেল করে দেখাতে চায় পরীক্ষায় নকল করিনি; কিন্তু ছাত্রের অবস্থা এতই খারাপ যে, বই দেখে লেখেও পাস করতে পারেনি।

কাজেই ধর্ম আর অধর্মের মাঝে আর কোনো বোঝাপড়া নয়, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বাইপাস করে এক ধর্ম অন্য ধর্মের কাছাকাছি আসার আলামতটি স্পষ্ট হচ্ছে। বিশ্বমানবতা ও হিউম্যান ডিগনিটিকে গুরুত্ব দিয়ে সব ধর্ম ও তাদের অনুসারীরা যদি নিজেদের চিন্তাভাবনা ও আচরণকে পুনর্বিন্যাস করে নেয় তবে এ পৃথিবীটি আরো অনেক সুন্দর হয়ে পড়বে।

সরকারের পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় বিহারি বস্তিতে ১০ জন লোককে পুড়িয়ে মারার পরও এ দেশে মানবতাবাদের সোল এজেন্ট ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মুখটি তেমনভাবে খোলেননি। সংখ্যালঘুদের জন্য এরা কখনোই ভেতর থেকে কাঁদেন না, দিল্লির মোয়া পাওয়ার আশায় মায়াকান্না দেখান। এদের কান্নাটি ভেতর থেকে এলে উর্দুভাষী সংখ্যালঘু বিহারিদের জন্যও কাঁদত। এরা প্রমাণ করেছেন যাদের মধ্যে ধর্ম নেই তারা আসলেই অমানুষ। ধর্মবিবর্জিত মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমানুষ হয়ে পড়ে। দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে। তবে ঠেলায় পড়ে যারা তাহাজ্জুদ পড়া শুরু করেন সেসব মওসুমি ধার্মিকদের কথা ভিন্ন।

টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না তাহলো বিবেক ও ধর্মবিশ্বাস। ধর্মভিত্তিক দল মোদির প্রতি ইন্ডিয়ার ভোটারদের এ আস্থার পাল্লাটি সে কারণেই ভারী হয়ে উঠেছে। ইন্ডিয়ার যে মুসলমান ভোটাররা ছিলেন কংগ্রেসের ভোটব্যাংক তারাও কংগ্রেসের মুনাফেকি (মুখে এক আর অন্তরে আরেক) নীতিতে হতাশ হয়ে এবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। ইন্ডিয়ার মুসলমানদের জন্য এটা একটা নতুন এক্সপেরিমেন্ট। তারাও এখন তাদের এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। বিজেপি এ এক্সপেরিমেন্টে টেনেটুনে পাস করতে পারলেও উপমহাদেশের রাজনৈতিক চেহারা পাল্টে যেতে পারে।

 ইন্ডিয়ার মুসলমানেরা যদি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে মেনে নিতে পারে তবে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলকেও সহজেই মেনে নিতে পারে। মৌলবাদের জুজুর ভয় এখন চলে গেছে। কাজেই যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে হবে এ তাগিদটি বিজেপির মধ্যে থাকবে না। এ গণনা থেকে কংগ্রেসকে আবারো ক্ষমতায় দেখতে আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে উঠেছিল।

কংগ্রেসের চরম ভরাডুবির পরও আওয়ামী লীগ আশা ছাড়েনি। কারণ কোনো দেবতাকে কী দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হয় তা এ পূজারির চেয়ে আর কে ভালো জানবে? প্রভু কংগ্রেসকে যা দিয়েছে দরকার পড়লে প্রভু বিজেপিকে আরো বেশি দেবে। কাজেই বিএনপির ত্বরিত অভ্যর্থনাকে কাউন্টার করতে গিয়ে এক লাফেই বাংলাদেশকে মোদির ‘দ্বিতীয় ঘর’ হিসেবে গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মোদির প্রতি ভালোবাসা নিক্ষেপের এ নিলামে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এমন দর হাঁকিয়েছেন যে তাকে অতিক্রম করা আর কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।
১৫৩ জন ফাও এমপি এবং বাদবাকি সিটে শতকরা ৫ ভাগের কম ভোটের বদৌলতে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রথমে শুধু একটু বসতে চেয়েছিল। বলেছিলেন, শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই এ নির্বাচন। এভাবে একটু বসতে পেরে শুইয়ে পড়েছে। এখন চার হাত পা মেলে সুখের ঢেঁকুর তুলছে। পাঁচ বছরের এক দিন আগেও ক্ষমতা থেকে নামবেন না। শেখ সেলিম বলছেন, আর কোনো অপশক্তি কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

গণতন্ত্রের কথা বলে বলে এরা দেশে দানবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। দেশের জনগণ নয়, বাইরের দেবতা এবং দেশের ভেতরের দানবরাই সরকারের বড় শক্তি। সবচেয়ে কষ্ট লাগে তারপরও এরা গণতন্ত্রের বুলি আওড়াচ্ছে। তাদের এ গণতন্ত্র দানবদের জন্য, দানবদের কর্তৃক এবং সর্বদা দানবদের সেবায় নিবেদিত। দেশী-বিদেশী দানবরাই তাদেরকে টিকিয়ে রাখবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন। পুরো দেশটিকেই যদি এ দানবদের আহার হিসেবে দিতে হয় তাতেও তারা পিছুপা হবেন না। কাজেই কোনোরূপ রাখ ঢাক না রেখেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ দানবদের পক্ষ নিয়েছেন। এটা নিয়ে দেশের মানুষ কী ভাবল তা নিয়ে থোড়াই কেয়ার করেন। কারণ তার ক্ষমতায় টিকে থাকা আর না থাকা এখন আর এ দেশের মানুষের ইচ্ছে বা পছন্দের ওপর নির্ভর নয়।

গণতন্ত্রের কথা বলে বলে আমরা দানবতন্ত্র বা দৈত্যতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি। এখন এ রাষ্ট্রের প্রতিটা অঙ্গ থেকে কোনো মানব নয়, শুধু দানব পয়দা হচ্ছে। ওই দৈত্যদের দিয়ে প্রতিপক্ষ দমনে সরকার তার নিজের কাজ করিয়েছে। সেই দৈত্যরাই নিজেদের প্রয়োজনে এখন ভাড়া খাটা শুরু করেছে। হিসাবটি পানির মতোই সহজ। যারা এত দিন এ দানবটি বেড়ে উঠতে সহায়তা করেছেন তারাও এত দিনে বিষয়টি টের পেয়েছেন। ৭১ টিভির মোজা বাবুরাও এখন দেখা যাচ্ছে সোজা কথা বলা শুরু করেছেন।

এ দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে মোদি বা অন্য কাউকে এ অতিরিক্ত তৈলমর্দনটি করার আদৌ প্রয়োজন পড়ত না। এখন এক নেত্রী ‘ইনডিসেন্ট প্রপোজাল’ দিচ্ছেন তো অন্য নেত্রী তড়িঘড়ি অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীও পিছিয়ে নেই। এ দেশের প্রতি সামান্য দরদ রয়েছে এমন কারো পক্ষে পরিস্থিতিটি মোটেই প্রীতিকর নয়। কারণ আমাদের রাজনৈতিক এ দুর্বলতার সুযোগে প্রতিপক্ষ অনেক সুযোগ গ্রহণ করে বসবে। তাতে ১৬ কোটি মানুষসহ এ দেশটি চরম বিপদে পড়ে যাবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটাই উপায় আমাদের রাজনীতিকে আমাদেরই ঠিক করতে হবে।

যারা বিষয়টি (মোদি-কীর্তন) নিয়ে সব দলকেই একসাথে সমালোচনা করছি তারাও এ অবস্থা সৃষ্টির পেছনের মূল কারণগুলো নির্ণয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছি। যখন মূল অপরাধীকে চিহ্নিত করা জরুরি তখন আমরা এর দায় পুরো রাজনীতির ওপর চাপিয়ে দিয়ে সমাধানের পথটি অসম্ভব করে তুলি। যখন যে অপরাধ করে তখন তাকেই শুধু পাকড়াও করতে পারতাম তবে আমাদের আজ এ দুর্গতি হতো না।

এখনো সময় পার হয়ে যায়নি। আমাদের বোধটি ফিরিয়ে আনতে এখনো যদি মুক্ত মনে নিজেদের পুরনো ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিই তবে এখনো সমাধান রয়েছে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কাদের জন্য এবং কারা একে একে এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেতর থেকে এভাবে দুর্বল করছে। গণতন্ত্রের মূল শত্রুদের চিহ্নিত করতে না পারলে আবারো একই গর্তে এবং একই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে পড়ে যাবো।

 তথাকথিত এক-এগারো থেকে খোলাখুলিভাবে এবং এর আগে থেকে গোপনে গোপনে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস বা দুর্বল করার জন্য এ মিশনটি শুরু করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম বিবর্জিত কিছু মেধাহীন ও বাচাল সুশীল জাতিকে আজকের অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। এদের সাথে যোগ দিয়েছিল কিছু সুযোগসন্ধানী সামরিক ও বেসামরিক আমলা। তারা হঠাৎ করে কিছু ফেরেশতা আমদানি করে দেশটিকে স্বর্গ বানিয়ে ফেলার স্বপ্ন দেখায়।

এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিভিন্ন দুর্বলতা এ দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছিল। জনগণের এ হতাশাকে এরা সুকৌশলে খোদ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। তখন এরা এমন এক চিকিৎসক হয়ে আবির্ভূত হয় যে, গলাব্যথার জন্য গলাটিই কেটে ফেলার প্রেসক্রিপশন দেয়। পুরো রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলে। বাইরের উপদেশ আর টাকার থলিগুলো তখন থেকেই ব্যবহার হচ্ছিল। এদের মধ্যে কেউ এ কাজটি করেছে বুঝে আবার কেউ (পেশাগত জীবনে সৎ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সামরিক আমলা) না বুঝে, নেহাত অজ্ঞতা বা ক্ষোভের বশে; কিন্তু দেশ ও জাতির কী ক্ষতিটি করে গেছেন তা তারা টের পাননি। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ সব গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আজ তছনছ করে দিয়েছে।

সেই খেসারত আমাদের আজো টানতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিপক্ষ আজ শক্তিশালী হয়েছে এ গণতন্ত্রের জন্য। আমরা রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়েছি এ গণতন্ত্রহীনতার জন্য। গণতন্ত্রের পরিবর্তে দানবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে আমরা কেউ রক্ষা পাবো না। নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র কিংবা ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেরাও এই দানবতন্ত্রের প্রডাক্ট ও বেনিফিসিয়ারি ছিলেন। তারপরও নিজেদের রক্ষা করতে পারেননি। এটাই দানবতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।

কাজেই নিজেদের মধ্যকার ছোটখাটো মতপার্থক্য ভুলে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে এ দানবতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সব কিছুর বটম লাইনে এসে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, পরম করুণাময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং জনগণের শক্তিই (চবড়ঢ়ষব’ং চড়বিৎ) এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মূল গ্যারান্টি।

এ ছাড়া অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতার নিয়ামক নয়। বাইরের কোনো শক্তি বিএনপি বা অন্য কাউকে কখনোই ক্ষমতায় বসাতে বা নামাতে পারবে না। বরং এ মূল শক্তির স্ফুরণ ও সমন্বয় ঘটাতে পারলে বাদবাকি মেকি শক্তিগুলো বুদবুদ আকারে মুহূর্তেই উবে যাবে।
লেখকের সাথে ফেসবুকে সংযুক্ত থাকতে ভিজিট করুন :

মিনার রশীদ minarrashid@yahoo.com
www.facebook.com/minar.rashid
http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=NDkyNzg=&s=Nw==
__._,_.___

No comments:

Post a Comment