Sunday, June 29, 2014

সিএসপিএসের গোলটেবিল বৈঠক ভারত-চীন দুই দেশের সাথেই আমাদের সম্পর্ক রাখতে হবে : ড. এমাজউদ্দীন

সিএসপিএসের গোলটেবিল বৈঠক
ভারত-চীন দুই দেশের সাথেই আমাদের সম্পর্ক রাখতে হবে : ড. এমাজউদ্দীন
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ জুন ২০১৪, রবিবার, ১০:২২
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) গতকাল জাতীয় প্রেস কাবে ‘ভূমণ্ডলীয় রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা করে : নয়া দিগন্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ভারত ও চীন বাংলাদেশকে কাছে পেতে চাচ্ছে। আগামী শতাব্দীতে চীন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। ভারত চীনের কাছাকাছি খুব সহজেই পৌঁছাতে পারবে না। তাই বাংলাদেশকে দুই দেশের সাথে সম্পর্ক রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) আয়োজিত ‘ভূমণ্ডলীয় রাজনীতি : দণি এশিয়ার নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিএসপিএসের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব শাহ্ আব্দুল হান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদেক খান।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ আরো বলেন, গত শতাব্দীতে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগর নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ হলেও বর্তমানে তা চলছে ভারত মহাসাগর নিয়ে। তবে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। মোদির ভারতকে আমেরিকা বিশ্বাস করে না। তিনি জনপ্রিয় হয়ে বিজয়ী হলেও অজনপ্রিয় হতে বেশি সময় লাগবে না। তাই আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের স্বার্থে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 
সাবেক ভিসি বলেন, সরকার কী করছে সে দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যতে কী হবে সেটা নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার। চার বছর আগে ভারতের আশপাশের ছোট দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব ভারতের চোখ দিয়ে দেখত। কিন্তু ইদানীং এ ধারা পরিবর্তন হচ্ছে। 
ভারত ও চীন বাংলাদেশকে কাছে পেতে চাইছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, যারা দেশের পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করবেন তারা একটি নয়, দুই দেশের সাথে সমন্বয় করেই পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করবেন।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়া কোন দিকে মনোযোগ দিচ্ছে সে দিকে না তাকিয়ে বরং ভারত, চীন, আমেরিকা তাদের দৃষ্টি কোন দিকে দিচ্ছে সে দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, মতাধররা যখন অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন, তখন বুঝতে হবে তারা অন্যায় করছেন এবং তাদের পতন শিগগিরই হবে। 
মূল প্রবন্ধে সাদেক খান বলেন, ভারতের জন্যই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। না হলে এটা তার জন্যই একটি সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। ভারত বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়ে সুবিধা নিতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 
সাবেক রাষ্ট্রদূত, গবেষক ও বিশ্লেষক এম আনোয়ার হাশিম বলেন, জাতি, ধর্ম, ভূখণ্ড, পানি, প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাইচাপা আগুনের মতো। তিনি আরো বলেন, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক এখন গভীর। ভারত চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করলেও তারা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা এ অঞ্চলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে শত শত বছর ধরে বাস করে আসছেন। কিন্তু তাদের তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ খুবই লোভনীয়। তিনি আরো বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বিচারব্যবস্থাসহ সব সেক্টর নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। কোনোটারই সার্বভৌমত্ব নেই। সেখানে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কথা বলা কেমন যেন বেমানান। তিনি বলেন, সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফরে এলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি গেলেন ছোট দেশ ভুটানে। এতে কী বোঝা যায়?
সাবেক জজ ও কলামিস্ট ইকতেদার আহমেদ বলেন, অতীত না জানলে ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। ২৩ বছরে পাকিস্তান বাংলাদেশকে যতটুকু শোষণ করেছে তার চেয়ে বেশি শোষণ করেছে ভারত। ভারতের পাঁচ লাখ লোক এ দেশে কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের কত লোক ভারতে কাজ করে? তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে ধমক দিয়ে বলে গেলেন নির্বাচনে না এলে এ দেশে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান হবে। কিন্তু সেই সুজাতা সিং কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী দল বিজেপির তল্পিবাহক হয়ে এ দেশে এলেন। ভারত বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত থেকে গরু কিংবা অন্যান্য সামগ্রী আনতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু ফেনসিডিল আনতে গিয়ে ক’জন মারা যাচ্ছে?
সভায় আরো বক্তব্য দেন, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা, গ্রিন ওয়াচ সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, নয়া দিগন্তের ডেপুটি এডিটর, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক মাসুমুর রহমান খলিলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, চলচ্চিত্র অভিনেতা শেখ আবুল কাশেম মিঠুন, মুসলিম লীগের মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, ইসলামিক স্কলার ও কলামিস্ট রুবি আমাতুল্লাহ, এআইইউবির অধ্যাপক ড. রমিত আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাত প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment