Monday, June 30, 2014

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সুবহানের নির্দেশে চাচা জব্বার শেখকে গুলি করে হত্যা করা হয় সাক্ষী আলী রানার জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সুবহানের নির্দেশে চাচা জব্বার শেখকে গুলি করে হত্যা করা হয়
সাক্ষী আলী রানার জবানবন্দী
স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের তারাইল উপজেলার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। রবিবারই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট, আটক ও নির্যাতনের মতো ৬টি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৭তম সাক্ষী আলী রানা শেখ জবানবন্দীতে বলেছেন, মসজিদের সামনে আমার চাচা জব্বার শেখ সুবহানের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে সুবহানের নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। আজ ১৮তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনপক্ষের ১৯তম ও সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা এসএম ইদ্রিস আলীকে আসামিপক্ষের জেরা অব্যাহত রয়েছে। জেরা সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশ প্রদান করেছে।
সৈয়দ হাসান আলী ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের তারাইল উপজেলার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। রবিবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন শাখায় জমাও দেয়া হয়েছে। রবিবার ধানমন্ডিস্ত তদন্ত সংস্থার সেফ হোমে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার পর দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা হরিদেব নাথ প্রসিকিউশন শাখায় গিয়ে প্রসিকিউটর (জেলা জজ) হৃষিকেশ সাহার নিকট ঐ রিপোর্ট জমা দেন। এ সময় প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান জানান, হাসান আলীর বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রবিবারে তার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হবে। প্রসিকিউশন এই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্র্রাইব্যুনালে দাখিল করবে। হাসান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট, আটক ও নির্যাতনের মতো ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জনকে হত্যা, ১২ জনকে অপহরণ ও আটক এবং ১২৫টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরিদেব নাথ ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজদসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুস সুবহান ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৭তম সাক্ষী আলী রানা শেখ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন। আজ ১৮তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।
জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমার নাম আলী রানা শেখ, পিতা-শহীদ রুস্তম শেখ, মাতা-মোছাঃ রোকেয়া খাতুন (মৃত)। ঠিকানা-গ্রাম : ভাড়ারা পূর্ব জামুয়া, থানা ও জেলা পাবনা। আমার বর্তমান বয়স ৫৬ বছর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে আমার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর। আমি লেখা পড়া জানি না। তবে নাম দস্তখত করতে পারি। আমি ব্যবসা করি।
প্রসিকিউশনের সাক্ষী আরও বলেন, মাওলানা সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনারা আমাদের বাড়িতে ঢুকে বাবা রুস্তম শেখ, চাচা জব্বার শেখ, নুরুল শেখ, সিরাজ শেখ, আব্দুল মজিদ শেখ ও তালেব শেখকে ধরে ভাড়ারা শাহী মসজিদের সামনে নিয়ে যায়। এছাড়াও গ্রামের দিলবার শেখ, গেদম সরদার, খোকন শেখ ও তার ছেলে কাদের শেখ, হাকিম সরদার, কেতা সরদার, আকবর শেখ, হারুন অর রশিদ শেখসহ অনেককে ধরে এনে মসজিদের সামনে জড়ো করে।
মসজিদের সামনে আমার চাচা জব্বার শেখ সুবহানের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে সুবহানের নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাক্ষী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ৫ জ্যৈষ্ঠ সকাল আটটার দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আমাদের গ্রাম ঘেরাও করে। মাওলানা সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনারা তাদের বাড়িতে ঢুকে বাবা রুস্তম শেখ, চাচা জব্বার শেখ, নুরুল শেখ, সিরাজ শেখ, আব্দুল মজিদ শেখ, তালেব শেখকে ধরে ভাড়ারা শাহী মসজিদের সামনে নিয়ে যায়। এছাড়াও গ্রামের দিলবার শেখ, গেদম সরদার, খোকন শেখ ও তার ছেলে কাদের শেখ, হাকিম সরদার, কেতা সরদার, আকবর শেখ, হারুন অর রশিদ শেখসহ অনেককে পাকিস্তানী সেনারা ধরে এনে মসজিদের সামনে জড়ো করে। ভাড়ারা শাহী মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে এসব দেখেছেন। মসজিদের সামনে আমার চাচা জব্বার শেখ সুবহানের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে সুবহানের নির্দেশে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাবা-চাচাদের ধরে আনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। এছাড়া সুবহানের নির্দেশে এদিন পাকিস্তানী সেনারা গ্রামের কালি কোমল পালকেও হত্যা করে। ভাড়ারা শাহী মসজিদের সামনে থেকে চাচা জব্বার শেখকে হত্যা করার পর আটক ১০-১২ জনকে সেখান থেকে পাকিস্তানী সেনারা গাড়িতে করে নূরপুর বিদ্যুতকেন্দ্রে পাকিস্তানী সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। পরদিন সেখান থেকে আটকদের আটঘরিয়া থানার দেবোত্তর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়া সিরাজকে (অন্য একজন) ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাকিদের বাঁশবাগানের কাছে নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলে ৬ জনের মৃত্যু হয়।
এটিএম আজহারুল ইসলাম ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ১৯তম ও সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা এসএম ইদ্রিস আলীকে আসামিপক্ষের জেরা অব্যাহত রয়েছে। জেরা আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইবুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রবিবার সাক্ষী এসএম ইদ্রিস আলীকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আজহারের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। ১৫ জুন সাক্ষ্য দেয়ার পর ২২ জুন তাকে জেরা শুরু করেন একই আইনজীবী। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে এ পর্যন্ত আজহারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও ১৮ সাক্ষী। তাঁদের মধ্যে সপ্তম সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে বৈরী ঘোষণা করেছেন প্রসিকিউশনপক্ষ।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment