Monday, June 30, 2014

রমজানে পেঁয়াজ থেকেই সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারসাজি

রমজানে পেঁয়াজ থেকেই সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারসাজি
এম শাহজাহান ॥ পেঁয়াজু ইফতারিতে শামীমার প্রথম পছন্দ। কালেভদ্রে কখনও খাওয়া হলেও ইফতারিতে এক টুকরো পেঁয়াজু তাঁর চাই-ই-চাই। শুধু শামীমা নয়, রমজানে রোজাদারদের কাছে সাধারণ এ খাবারটি হয়ে ওঠে অতি অসাধারণ। কিন্তু সেই পেঁয়াজুর প্রধান অনুষঙ্গ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। রোজার মধ্যে শুধু পেঁয়াজ থেকেই সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এর পেছনে এক শ্রেণীর অসাধু ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, দেশে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। তাই রমজানে পণ্যটির দাম বাড়বে না। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দেয়া হতে পারে। কিন্তু সরকারের এসব পদক্ষেপ থাকার পরও দাম বাড়ায় উদ্বিগ্ন সাধারণ ভোক্তারা। তাঁদের প্রশ্ন পেঁয়াজের দাম ফের তিন অঙ্কের ঘর অতিক্রম করবে না তো?
সূত্রমতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত রফতানি মূল্য বাড়ানোর পর থেকেই দেশে পেঁয়াজ নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কারণ ভারত থেকে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকেও কিছু পেঁয়াজ আনা হয়। বিশেষ প্রয়োজনে তুরস্ক, পাকিস্তান এবং চীন থেকেও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির তথ্যমতে, গত এক মাসে আমদানিকৃত পেঁয়াজে ৩০ এবং দেশীটিতে প্রায় ১৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে বাংলাদেশে রফতানিকৃত পেঁয়াজের মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ১৫০ মার্কিন ডলার থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করার পর থেকে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
তবে রমজানে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, রোজায় পেঁয়াজের দাম যাতে না বাড়ে সে চেষ্টা করছে সরকার। দেশীয় মজুদ এবং আমদানির যে তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে তাতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। তার পরও যদিও দাম বাড়তে থাকে তাহলে সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করবে। তিনি বলেন, ভারত থেকে আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন ভোমরা, হিলি, সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে অন্তত্ব ২শ’ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকছে। ভারত রফতানি মূল্য বাড়ালেও তার প্রভাব নেই আমদানিতে। ফলে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
যদিও বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের এ বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ না করে শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও পেঁয়াজ আমদানিকারক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের নাসিকের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে আমদানি কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। ফলে রোজায় দাম বাড়তেও পারে। বর্তমান দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে।
সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা
রোজা সামনে রেখে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট চক্র অসাধু ব্যবসায়ীরা বসে নেই। দেশের শতাধিক পেঁয়াজ আমদানিকারক ও মজুদদার, লক্ষাধিক খুচরা ব্যবসায়ী পেঁয়াজ থেকে বাড়তি মুনাফা করতে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। গত বছর রোজা ও কোরবানির আগে পেঁয়াজের দাম তিন অঙ্কের ঘর অতিক্রম করে। সে সময় ২০ টাকার পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ১২০-১৫০ টাকায়। ওই সময় ট্যারিফ কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশি কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পায়। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসেব করে দেখেছে এবারও কারসাজির আশ্রয় নিয়ে শুধু রোজায় পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে ৪৫০ কোটি টাকা।
কারণ ভারত থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ প্রায় ১২ টাকা দরে আমদানি করা হয়। আমদানি থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদসহ সব ধরনের খরচ এবং মুনাফা বাবদ আরও ৭ টাকা যোগ হয়ে প্রায় ১৯ টাকা খরচ পড়ছে। কিন্তু খুচরা বাজার থেকে ক্রেতারা কিনছেন ৩৫-৪০ টাকা দরে। এক কেজি পেঁয়াজে সিন্ডিকেটের পকেটে চলে যাচ্ছে ২০ টাকা। ওই হিসাবে শুধু রোজায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা কমপক্ষে ৪৫০ কোটি টাকা পেঁয়াজের ব্যবসা থেকে হাতিয়ে নেবে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment