আমাদের নারী ফুটবলারদের বিশ্বকাপ ভাবনা
প্রকাশ : ২৯ জুন, ২০১৪
ব্রাজিলে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ৩২টি দেশ অংশ নিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ আসরে। মাঠে গিয়ে দেখতে না পারলেও ঘরে বসেই টেলিভিশনের পর্দায় খেলা দেখছেন আমাদের জাতীয় মহিলা ফুটবলাররা। অন্যদের মতো তারাও কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ ব্রাজিলের ভক্ত। আবার কেউ অন্য কোন দলের। বিশ্বকাপ নিয়ে তাদের পছন্দ-অপছন্দের কথা তুলে ধরেছেন ওমর ফারুক রুবেল আলোকচিত্রী ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
১০ নম্বর অংকিত ব্রাজিলের জার্সি কিনেছি : সুইনু প্রু মারমা
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক ও সেন্টার মিডফিল্ডার তিনি। আরেক ভাষায়, প্লে-মেকার। যিনি গোল করাতে পছন্দ করেন। তার কাজও এটি। শুধু গোল করাতে নয়, গোল করতেও পারেন সুইনু প্র“ মারমা। প্রতি চারবছর পরপর মুখিয়ে থাকেন কখন আসবে বিশ্বকাপের আসর। এবার খেলা হচ্ছে তার পছন্দের দল ব্রাজিলের দেশে। সুইনু প্র“ মারমা ব্রাজিলের একজন অন্ধ সমর্থক।
সুইনু বলেন, যখন থেকে ফুটবল খেলি, তখন থেকেই টেলিভিশনে খেলা দেখি। ২০০৬ সাল থেকে আমি ফুটবল খেলি। ওই সময়ে এতটা ভালো করে খেলা দেখা হয়নি। তবে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিলের খেলা দেখেছি। কিন্তু বিশ্বকাপ না জেতায় খুব হতাশ হয়েছিলাম। ব্রাজিলের স্ট্রাইকার নেইমারকে আমার খুব পছন্দ। তার গোল করার পদ্ধতিগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। আসলে যুগে যুগে হয়তো নেইমার একজনই জন্ম নেন। এই যুগে তিনিই সেরা। ক্রোয়েশিয়া ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে চারটি গোল করে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন। আশাকরি ফাইনাল অবধি ব্রাজিল যেতে পারলে নেইমারই গোল্ডেন বুট জিততে পারবেন। আর নেইমারের এই ঝলক বজায় থাকলে বিশ্বকাপ জিতবে স্বাগতিকরাই। বিশ্বকাপের আগেই আমি ব্রাজিলের জার্সি কিনেছি। নেইমার ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেন। আমার জার্সি নম্বরও তাই। সে জন্যই আমি ১০ নম্বর অংকিত ব্রাজিলের জার্সি কিনেছি। সেটা পরেই আমি ব্রাজিলের খেলা দেখি।
বসনিয়ার বিপক্ষে মেসির গোল ছিল চোখ ধাঁধানো : সাবিনা খাতুন
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক গোল উৎসব করেছেন তিনি। জাতীয় লীগেও হ্যাটট্রিক, ডাবল হ্যাটট্রিক এমনকি ত্রিপল হ্যাটট্রিকও করেছেন স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুন । দেশসেরা এই স্ট্রাইকার এখন মজেছেন বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে। রাত-বিরেতের কোনো ম্যাচই তিনি বাদ দেন না। আর্জেন্টিনার ম্যাচ বাদ দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। কারণ তিনি আর্জেন্টিনার সমর্থক। তার চেয়ে বেশি ভক্ত আর্জেন্টাইন বরপুত্র স্ট্রাইকার লিওনেল মেসির।
সাবিনা খাতুন বলেন, আমি গোল করতে পছন্দ করি। মাঠে নামলেই গোলের নেশা পেয়ে বসে। কারণ আমি একজন স্ট্রাইকার। যার ফলে আমার পছন্দ স্ট্রাইকার মেসিকেই। তার অসাধারণ কিছু গোলও আমি দেখেছি। মেসির বাঁ-পায়ে কি জাদু রয়েছে তা আজও আমি বুঝতে পারি না। তার গোলগুলো এত সুন্দর, ওই গোলের প্রেমেই পড়ে গেছি আমি। আমি যখন বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থক। পত্রিকায় আমি দিয়াগো ম্যারাডোনার ‘ঈশ্বরের হাত’র কথা পড়েছি। পত্রিকায় সেই গোলের ছবিও দেখেছি। রেফারির চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি যা দেখিয়েছেন, তাতে আমি মুগ্ধ। ম্যারাডোনার উত্তরসূরি আর্জেন্টিনায় এখন রাজত্ব করছেন মেসি। এই বিশ্বকাপেও তার দুটি গোল আমি দেখেছি। বসনিয়ার বিপক্ষে মেসির গোলটি ছিল চোখ ধাঁধানো। আর ইরানের বিপক্ষে তো আর্জেন্টিনার রক্ষাকর্তা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। তার বাঁ-পায়ের ওই বাঁকানো শটটি এখনও আমার চোখে ভাসছে।
দেশসেরা স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুন বলেন, টানা দু’ম্যাচ জিতে ইতিমধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। যদিও বিশ্বকাপে তাদের যাত্রা অতটা ভালো নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস মেসি-ডি মারিয়া-অ্যাগুয়েরা এই ত্রয়ী সময় মতো জ্বলে উঠবেন। সেই প্রত্যশায় থাকলাম। আর্জেন্টিনাকে ফাইনাল অবধি নিয়ে যাবেন।
আমার পছন্দের ফুটবলার ডেভিড ভিয়া : অম্রা চিং মারমা
দলের অন্যরা যখন ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার সমর্থক, তখন অম্রা চিং স্পেনের। কেন? জিজ্ঞেস করতেই অম্রা চিং বলেন, আমি সব সময় স্প্যানিশ লীগের খেলা দেখি। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার খেলাটাই বেশি দেখা হয়। সেই সূত্রে বার্সেলোনা ক্লাবের ভক্ত আমি। মজার কথা হল বার্সেলোনায় খেলা লিওনেল মেসি কিংবা নেইমার নন, ডেভিড ভিয়াই তার পছন্দের ফুটবলার।
অম্রা বলেন, আমার কাছে আর্জেন্টিনার মেসি বা ব্রাজিলের নেইমারের চেয়ে স্পেনের ডেভিড ভিয়ারের খেলাই বেশি ভালো লাগে। দুর্দান্ত সব গোল করান এবং করেন। অসাধারণ একজন ফুটবলার তিনি। জাদুর মতো লাগে তার খেলা। কেবলমাত্র তার জন্যই আমি স্পেন দলের সমর্থক। সবচেয়ে বড় কথা হলো স্পেনের টিকি-টাকা ফুটবলও আমার খুব পছন্দ। ছোট ছোট পাসে তাদের খেলা এত সুন্দর যে, আমি যতই দেখি ততই মুগ্ধ হই।
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই স্পেন বিদায় নেয়ায় হতাশ অম্রা চিং মারমা। তিনি বলেন, আমার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, গেল আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিশ্বকাপ এত আগেই শেষ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে অবসর নিয়ে ফেললেন আমার পছন্দের ফুটবলার ডেভিড ভিয়া। তারপরও আমি স্পেনের সমর্থক। ভিয়ার পরেই আমার পছন্দের ফুটবলার ইনিয়েস্তা। তিনিও স্প্যানিশ লীগে বার্সার হয়ে খেলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আগের দু’ম্যাচে হারলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ভিয়ার করা প্রথম গোলটি দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। ম্যাচে স্পেন জিতেছে। কিন্তু গোল করার পর ভিয়ার কান্না দেখে আমি নিজেও কেঁদেছি। আমি বুঝতে পেরেছি কতটা কষ্টে তিনি কেঁদেছেন। শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠেছেন, কেন আগেই এই গোল পেলেন না, তাহলে হয়তো এত আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হতো না তার দলকে- এই ভেবেই হয়তো তিনি কেঁদেছেন। যাই হোক, পরের বিশ্বকাপে ফের সুসংগঠিত হয়েই ফিরবে স্পেন, এই প্রত্যাশায় রইলাম।
এবার বিশ্বকাপ জিতবে মেসিরাই : আছিয়া খাতুন বীথি
জাতীয় মহিলা দলের নির্ভরযোগ্য সেন্টার মিডফিল্ডার আছিয়া খাতুন বীথি। ২০০৪ সাল থেকেই খেলছেন ফুটবল। আর যখন থেকেই ফুটবল মাঠে পা রেখেছেন, তখন থেকেই দেখছেন বিশ্বকাপ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ও স্প্যানিশ লীগের মতো খেলাগুলো। ২০০৬ ও ২০১০ সালের পর এবারের বিশ্বকাপের খেলাগুলোও দেখছেন বীথি। বিশ্বকাপে তার পছন্দের দল আর্জেন্টিনা। খেলা বুঝতে শেখার পর থেকেই আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে আসছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
আছিয়া খাতুন বীথি বলেন, আমি সব সময়ই আর্জেন্টিনার একজন অন্ধ ভক্ত। সবাই হয়তো ম্যারাডোনা কিংবা মেসির খেলা দেখেই আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমি একটু ভিন্ন। আমার কাছে ভালো লাগে আর্জেন্টিনার ডি মারিয়া, হিগুয়েইন এবং অ্যাগুয়েরার খেলা। তাদের ড্রিবলিং আর গতি দেখে আমি মুগ্ধ। বার্সেলোনায় তো তাদের খেলা আমি সব সময়েই দেখি। তবে বিশ্বকাপে দেশের হয়ে তাদের লড়তে দেখছি।
বীথি আরও বলেন, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আমি আর্জেন্টিনার জার্সি কিনেছি। বিশ্বকাপে রাতে ঘরে বসে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে টেলিভিশনে মেসি, হিগুয়েনদের খেলা দেখেছি। প্রিয় দলের জার্সি পরে খেলা দেখার আনন্দই আলাদা। আমার বিশ্বাস, এবার বিশ্বকাপ জিতবে মেসিরাই। যেখানে বড় অবদান থাকবে ডি মারিয়া, হিগুয়েইন ও অ্যাগুয়েরাদের।
No comments:
Post a Comment