Monday, June 30, 2014

সুন্নী জঙ্গীদের ॥ ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা ০ সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে ইরাকের দিয়ালা পর্যন্ত খিলাফত শাসন চালু ০ আবু বকর আল বাগদাদী হলেন ‘আমীরুল মোমেমীন’

সুন্নী জঙ্গীদের ॥ ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা
০ সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে ইরাকের দিয়ালা পর্যন্ত খিলাফত শাসন চালু
০ আবু বকর আল বাগদাদী হলেন ‘আমীরুল মোমেমীন’
ইরাক ও সিরিয়ায় বিরাট ভূখ-জুড়ে লড়াইরত ইসলামী জঙ্গীরা রবিবার এক আনুষ্ঠানিক ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের কথা ঘোষণা করেছে। তারা ওই দুটি দেশে তাদের দখল করা ভূখ-ে ৭ম শতকের খলিফার শাসন পুনরুদ্ধারের কথা জানিয়েছে। ওই চরমপন্থীরা তাদের দলের নাম বদল করে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) থেকে ‘ইসলামিক স্টেট’ রেখেছে এবং এর নেতা আবু বকর আল বাগদাদীকে খলিফা (রাষ্ট্রপ্রধান) বলে ঘোষণা করেছে। দলটি এ খলিফার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে বিশ্বের সব মুসলিম উপদলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দলটি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইসিল) নামেও পরিচিত। রবিবার জিহাদীদের ওয়েসবসাইটে প্রচারিত এক অডিও বিবৃতি থেকে এ কথা জানা যায়। এ পদক্ষেপ হলো দলটির জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার অভিলাষেরই সম্প্রসারণ। এটি আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের প্রতিও এক প্রত্যক্ষ উচ্চভিলাষী চ্যালেঞ্জ। আল-কায়েদা ইতোপূর্বে সুন্নী জঙ্গীদল আইসিসের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছিল। খবর এএফপি, ওয়াশিংটন পোস্ট অব ও অন্য ওয়েবসাইটের। আইসিল সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো প্রদেশ থেকে ইরাকের পূর্বাঞ্চলীয় দিয়ালা প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখ-ে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে রবিবার আইসিলের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ ধরনের ইসলামী শাসন অটোমান (উসমানিয়া) সাম্রাজ্যেই সর্বশেষ চালু ছিল। আইসিল ওই সব অঞ্চলে ক্ষমতাসীন শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। খিলাফত কায়েম করা আল-কায়েদার পক্ষত্যাগী আইসিসের দীর্ঘ ঘোষিত লক্ষ্য। দলটি চলতি বছরের প্রথমদিকে মূলধারার সংগঠনটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তখন থেকে ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট ভূখ-ের ওপর কর্তৃত্ব কায়েম করে।
জিহাদীদের মুখপাত্র আবু মোহাম্মদ আল-আদনানি বলেন, ওই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক জিহাদের এক নতুন যুগের সূচনা করছে। তিনি বলেন, আবু বকর আল-বাগদাদী সর্বত্রই মুসলমানের ইমাম ও খলিফা (আমীরুল মোমেমীন) সেই অনুযায়ী ইসলামিক স্টেট নামটিতে থাকা ইরাক ও শাম ‘(লেভান্ট) কথাগুলোর অফিসিয়াল আলোচনা ও চিঠিপত্র থেকে এখন হতে বাদ দেয়া হলো। এ ঘোষণার তারিখ থেকে দলটির অফিসিয়াল নাম হবে ইসলামিক স্টেট। তিনি বলেন, আইসিসের দিগি¦জয়ের ফলে আন্তর্জাতিক সীমানা ভেঙ্গে পড়ার স্বীকৃতিস্বরূপ আইসিস কেবল ইসলামিক স্টেট নামে পরিচিত হবে। কাতারের ব্রকিংস দোহা সেন্টারের ডিজিটিং ফেলো চার্লস লিস্টার ওই পদক্ষেপের উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য রয়েছে বলে দেখতে পান। তিনি বলেন, খলিফার শাসন পুনরুদ্ধার করা হয়েছে একটি ঘোষণা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর আন্তর্জাতিক জিহাদ আন্দোলনের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই এ ঘোষণার প্রভাব পড়বে। কারণ আল-কায়েদার সহযোগী এবং স্বতন্ত্র জিহাদী দলগুলোকে হয় এখন অবশ্যই ইসলামিক স্টেটকে সমর্থন বা এতে যোগদান করতে হবে, নয়তো এর বিরোধিতা করতে হবে। আইসিস যোদ্ধারা গত মাসে ইরাকী শহর মসুল দখল করে রাজধানী বাগদাদের দিকে এগিয়ে যায়। সিরিয়াতে তারা ইরাক-সংলগ্ন সীমান্ত বরাবর উত্তর ও পূর্ব অঞ্চলের ভূখ- অধিকার করে। জিহাদী ওয়েবসাইটের বিবৃতিতে বলা হয়, খলিফার প্রতি আনুগত্যের শপথ দেয়া এবং সমর্থন জানানো মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
সব আমিরশাসিত ভূখ-, দল, রাষ্ট্র ও সংগঠনের বৈধতাই তাদের এলাকাগুলোতে খলিফার কর্তৃত্বের সম্প্রসারণ এবং তার সৈন্যদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে। ওই ঘোষণা আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির প্রতি এক শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ। তিনিও নিজেকে বৈশ্বিক জিহাদী আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা বলে দাবি করে থাকেন। ইরাকী নেতা বাগদাদী অন্য জিহাদী দলকে অন্তর্ভুক্ত করতে আল-কায়েদার বার বার জানানো আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পর চলতি বছরের প্রথমদিকে বাগদাদীকে পরিত্যাগ করেন জাওয়াহিরি। লিস্টার বলেন, এটি বৈশ্বিক জিহাদের প্রতিনিধি হিসেবে আল-কায়েদার বৈধতার প্রতি অন্যতম হুমকি এবং বড় রকমেরই হুমকি। সহজভাবে বলতে গেলে, আবু বকর আল-বাগদাদী আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

No comments:

Post a Comment