Saturday, June 28, 2014

সংঘাত পরিহার করে সমঝোতার পথে আসুন সংসদে ভাষণে বিরোধী নেতা রওশন

সংঘাত পরিহার করে সমঝোতার পথে আসুন
সংসদে ভাষণে বিরোধী নেতা রওশন
সংসদ রিপোর্টার ॥ সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে সমঝোতার পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আসুন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করি। দেশে একটি সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করি। অতীতে কোন বিরোধী দলই সরকারকে সহযোগিতা করেনি। আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চাই। প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাই।
শনিবার সকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা চলাকালে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এই আলোচনায় অংশ নেন।
বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের বেশিরভাগই ছিলো ফরমালিন, খাদ্যে ভেজাল ও পরিবেশ দূষণ বিষয়ে। খাদ্যে ভেজালের দাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবখানেই ভেজাল। খাদ্যে-ওষুধে এমনকি ধনে পাতায়ও ফরমালিন। আমরা ফরমালিন খাচ্ছি। এতে একটা সুবিধা আছে। তা হচ্ছে আমাদের ডেডবডি কবরে পচবে না। পোকায়ও আমাদের খাবে না। আমরা আউলিয়া হয়ে যাব। তিনি বলেন, ফরমালিন বন্ধে শুধু কয়েকটা ফল পরীক্ষা করে দেখলেই হবে না। ফরমালিনের অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো ইচ্ছা করলেই এটা বন্ধ করতে পারেন বলে তিনি দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে থাকেন, তাহলে তো আপনাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের মানুষকে ফরমালিন খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। শুধু ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করলে হবে না। যেসব পণ্যে ফরমালিন ব্যবহৃত হচ্ছে. সেগুলোও পরীক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু একটি আইন করেছিলেন খাদ্যে ভেজাল দিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ফাঁসি। আমরা সেই আইনের ব্যবহার দেখতে চাই। খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু যদি ১৯৭৪ সালে উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন এ সময় তা পারি না?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উনি কাদের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চান? আগামী প্রজন্ম ফরমালিন খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্মকে বাঁচান। খাদ্যে ভেজালে চীনের মতো যাবজ্জীবন ও ফাঁসির দণ্ড রেখে আইন করে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে রওশন এরশাদ বলেন, অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী ও দক্ষ গবর্নর থাকার পরও কীভাবে শেয়ার বাজারে ধস ও হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটলো? ডেসটিনি সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাত করলো? তিনি বলেন, একের পর এক ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকছে না ব্যাংকের ওপর। ব্যাংকে টাকা রাখতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ব্যাংকের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। ওই সব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত তরে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বাজেটের আকার যেমন বিশাল, ঘাটতিও তেমন বড়। অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার পর সাধারণ মানুষ জিডিপির প্রবৃদ্ধি কত, রাজস্ব আদায় কত হবে, দেশের উন্নয়ন হবে কিনা, এসব নিয়ে ভাবে না। তারা জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, না কমবে? এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত। এই বাজেটে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে ছদ্মবেশে জনগণের দুঃখ কষ্ট দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনি ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে গেলে দেখবেন বায়ু দূষণের ভয়াবহ চিত্র। মানুষের মধ্যে হাহাকার। খাদ্যে ভেজাল, বায়ু দূষিত, পানি দূষিত। নদী মারা যাচ্ছে। বেকার সমস্যা বাড়ছে। তাহলে জনগণ যাবে কোথায়? তিনি বলেন, ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। এজন্য প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রতি জেলায় একটি করে হাইকোর্টে বেঞ্চ বসানোর ব্যবস্থা করুন। বিমান, রেল ও টেলিফোনকে প্রাইভেট সেক্টরে দিয়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই ॥ আমু

বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যারা আলোচনার কথা বলেন. তাদের মনে রাখা উচিত প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময় যারা আলোচনাকে বানচাল করেছিল, তাদের সঙ্গে আবার কিভাবে আলোচনা হবে? যারা এই সরকারকে মানেন না, তাদের সঙ্গে কি করে আলোচনা হবে আমি ভেবে পাই না। তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকে মানে না তাদের সঙ্গে কি করে এদেশের মানুষের আপোস হতে পারে। তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কিসের আপোস আমি উপলব্ধি করতে পারি না।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, যারা সরকার মানেন না, দেশ মানে না, সংবিধান মানে না তাদের সঙ্গে কিভাবে আলোচনা হবে? অতীতে যেমন সব অপশক্তিকে মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে আগামীতেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, এর আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। এবার উনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে তার সেই কথার প্রমাণ দেবে। তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment