Friday, March 21, 2014

আইন পরিবর্তন হচ্ছে , তবু ধর্ষণ বন্ধ হয় না কেন ? পলাশ বিশ্বাস

আইন পরিবর্তন হচ্ছে , তবু ধর্ষণ বন্ধ হয় না কেন ?

পলাশ বিশ্বাস
ভয়াবহ গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল ছত্তিসগঢ়ের কাঙ্কেরে। সেখানকার একটি হোস্টেলে ১১ জন নাবালিকাকে লাগাতার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নাবালিকারা যে হোস্টেলে থাকে, গত দু'বছর ধরে তার চৌকিদার ও এক শিক্ষক মিলে তাদের ওপর চরম অত্যাচার চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ধর্ষিতারা আদিবাসী। অভিযুক্ত দু'জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৬ (২)এর ২ বি এবং ৩৪ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ওই ১১ নাবালিকারই ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষায় তাদের দেহে ধর্ষণের চিহ্ন মিলেছে বলে জানানো হয়েছে। অভিযোগে তারা জানিয়েছে, এতদিন ভয়ে, লজ্জায় কাউকেই কিছু জানাতে পারেনি তারা।
শুক্রবার জেলাশাসকের কাছে খবর যাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। জেলাশাসকের নির্দেশে মহিলা আধিকারিকরা অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। জেলাশাসকের দফতর জানিয়েছে, তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এরপরই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। কাঙ্কেরের অতিরিক্ত পুলিশ আধিকারিক সি.ডি ট্যান্ডন জানিয়েছেন, ২০১২-এর অগস্ট পর্যন্ত ওই নাবালিকারা বারবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ দুই অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে।

রক্ষকই ভক্ষক
 যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে সাহসিকতার জন্য শুক্রবার যে নয় নারীকে পুরস্কৃত করেছে তাদের মধ্যে ভারতের গণধর্ষণের শিকার হওয়া নারীও রয়েছেন। তার মর্মান্তিক মৃত্যু গোটা ভারতসহ বিশ্বের জন্য ছিল এক শোকাবহ ঘটনা।
মেডিক্যালের তরুণী ছাত্রীটি (২৩) দিল্লীর চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অধিক রক্তক্ষরণের কারণে সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি পরে 'নির্ভয়া' কিংবা ভীতিহীন বলে পরিচিতি পান।
গণধর্ষণের শিকার এ নারী এ বছর 'ইউএস ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ' পুরস্কার পান। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, তার এ সাহস লাখ লাখ নারী পুরষকে ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যাদের বার্তা একটিই, 'এ ধরনের ঘটনা আর নয়'।
অনুষ্ঠানে জন কেরি মেয়েটির বাবা মায়ের দেয়া একটি মেসেজ পড়ে শোনান। সেখানে তারা বলেছেন, 'যে কেবলই আমাদের কন্যা ছিল সে একদিন পুরো পৃথিবীর হয়ে উঠবে তা আমরা কখনই কল্পনাও করিনি।'
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রাপ্ত আরো তিন নারী অনুপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন তিব্বতের কবি সারিঙ ওয়েসার। তাকে চীনা কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট দেয়নি। এছাড়া বর্তমানে গৃহঅন্তরীণ ভিয়েতনামের ব্লগার তা পঙ তান এবং সিরিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী রাজান জেইতুনাহ। তিনি বর্তমানে নিরাপত্তার স্বার্থে আত্মগোপনে আছেন।
পুরস্কার প্রাপ্ত অন্যরা হলেন আফগান নারী মালালাই বাহাদুরি। তিনি আফগান ন্যাশনাল ইন্টারডিকশান ইউনিটের প্রথম মহিলা সদস্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টাকালে চাচা তার নাক ভেঙে দেয়।
এছাড়া রয়েছেন রুশ সাংবাদিক এলেনা মিলাশিনা, নাইজেরিয়ার গণতান্ত্রিক কর্মী জোশেপিন অবিয়াজুলু অদুমাকিন, সোমালিয়ান অ্যাক্টিভিস্ট ফারতুন আদান এবং হুন্ডুরার জুলিয়েটা ক্যাসেলানোস।

নারী নির্যাতন রোধে নতুন অধ্যাদেশ আনলো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই অধ্যাদেশে চরম নির্যাতনের ঘটনায় ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ২০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। নতুন অধ্যাদেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা বদলে, একাধিক ধরনের নির্যাতনকে যৌননিগ্রহের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। জে এস ভার্মা কমিশনের সুপারিশ খতিয়ে দেখে শুক্রবার রাতে এই নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ।
দিল্লী গণধর্ষণ ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের কঠোরতম শাস্তির দাবি ওঠে। এর ফলে যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে শাস্তি নিয়ে আইন সংশোধনের ব্যাপারে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রাক্তন বিচারপতি জে এস ভার্মার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। উনত্রিশ দিনের মাথায়, কমিটি গত ২৩ জানুয়ারি সেই রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। রিপোর্টে নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় বেশ কিছু আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সুপারিশ কার্যকর করতে এবার অধ্যাদেশ জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার।
নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধর্ষণের সঙ্গেই একাধিক ধরনের নির্যাতনকে যৌন নির্যাতনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অ্যাসিড হামলাও। এছাড়া মেয়েদের পিছু নেয়া বা উত্ত্যক্ত করা (ইভটিজিং), অশালীন ইঙ্গিত, শ্লীলতাহানি বা অন্য কোনভাবে তাদের হেনস্থা করাকেও অপরাধের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ভার্মা কমিশনের সুপারিশ খতিয়ে দেখে এই নতুন অধ্যাদেশে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে দিল্লী গণধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণের ক্ষেত্রে সাবালকত্বের বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার যে দাবি উঠেছিল রিপোর্টে সে সম্পর্কে কোন সুপারিশ করেনি ভার্মা কমিশন।

দিল্লী গণধর্ষণকা- মামলায় বৃহস্পতিবার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই চার্জশিটে মৃত্যুদ-ের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রায় হাজার পাতার চার্জশিট পেশ করা হয় সাকেতে মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। তিরিশ জনের সাক্ষ্যের উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে।মৃত্যুর কাছে হার মানল বাঁচার মরিয়া লড়াই। তেরো দিনের লড়াই শেষে মৃত্যু হল দিল্লী গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণীর। ভারতীয় সময় রাত দুটো পনেরোয় তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। চিকিত্‍‍সা চলছিল সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। ধর্ষণ ভাইরাস ভারত পেরিয়ে এখন বাংলাদেশে চলে এসেছে! যখন ভারতের ধর্ষণের ঘটনা পৃথিবীজুড়ে আলোচিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ করে কয়েকজন নরপশু। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ফরিদপুর, চট্টগ্রাম এবং সাভারে ধর্ষণের ঘটনা আলোচনায় চলে আসে।

ভারত এবং বাংলাদেশে ধর্ষণ অথবা গণধর্ষণ এখন একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে এর জোরেশোরে প্রতিবাদ হলেও বাংলাদেশে হুবহু একই ঘটনা ঘটলেও জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ভেতরের পাতায় সে খবর ছাপা হয়। 

04.02.2013 Индия митинг протест изнасилование женщины
Фото: EPA
ভারতের রাজধানীতে বাসে এক তরুনীকে পাঁচজন আসামীর করা ধর্ষণের মামলার শুনানী অন্ততঃ তিনমাস ধরে চলবে, বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলি জানিয়েছে আসামী ও ফরিয়াদী পক্ষের সূত্র ধরে. শুনানী শুরু হয়েছে ৫ই ফেব্রুয়ারী. এই মামলায় ৮০ জন সাক্ষী.
গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর ছজন পুরুষ ২৩-বছর বয়সী ছাত্রী জ্যোতি সিংকে বাসে নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছিল. পরে তরুনীটি সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে মারা যায়. ভারতের বহু শহরে ব্যাপক গণমিছিল হয়েছিল এর প্রতিবাদে, যা নিয়মিত পুলিশের সাথে সংঘর্ষে পর্যবসিত হয়েছে. পুলিশ ৬ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে. তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক পাঁচজনের বিরুদ্ধে ১৩টি ধারায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে – যেমন, খুন, লুন্ঠন, সাক্ষ্যলোপের প্রচেষ্টা, অপরাধমুলক ষড়যন্ত্র ইত্যাদি. তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হতে পারে. ষষ্ঠ অভিযুক্ত অপরাধ করার মুহুর্তে নাবালক ছিল, তাই তার বিচার করা হবে পৃথকভাবে.

এসব আসামি দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা ভারতে সচরাচর হয় না।

গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, দিল্লী গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনের বয়স ১৮ বছরের ওপরে। বাকি একজন কিশোর। তার বয়স ১৮ বছরের নিচে। তবে ওই কিশোরের বয়স নির্ণয়ে পুলিশকে তার অস্থিমজ্জা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব আসামি ১৬ ডিসেম্বর দিল্লীতে দামিনী নামে এক মেডিকেল ছাত্রীকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর ফেলে দেয়। একই সঙ্গে ওই তরুণীর হবু বরকেও মেরে গুরুতর আহত করে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়।

গুরুতর আহত দামিনীকে উদ্ধার করে দিল্লীর সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সপ্তাহান্তে তার মৃত্যু হয়।

দিল্লীর এই গণধর্ষণের ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

প্রসঙ্গত, বিশ্বে যেসব নগরীতে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে দিল্লী অন্যতম একটি।

সরকারি পক্ষের আইনজীবী রাজিব মোহন জানিয়েছে, ডিএনএ টেস্টেই নতুন দিল্লিতে চলন- বাসে তরুণীকে গণর্ধষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয় জনের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজিব মোহন এ সময় আদালতে ওই তরুণী ও তার পরিবারের পরিচয় গোপন রাখার আবদেন জানিয়েছেন। দিল্লির সাকেত জেলা আদালতে গত বৃহস্পতিবার ওই ছয় জনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগপত্রে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি ও আলামত নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ একটি বন্ধ খামে ডিএনএ টেস্টের ফলাফল ও অন্যান্য প্রমাণাদি আদালতে হস-ান-র করেছে। ওই ঘটনার অভিযুক্তরা হচ্ছেন রাম সিং, তার ভাই মুকেশ এবং তাদের সহযোগী পয়ান গুপ্ত, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় ঠাকুর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে আটক ষষ্ঠজনের বয়স ১৮ বছরের নিচে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই তার বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ দায়ের করা হবে। তবে সে কিশোর কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ডাক্তারি পরীক্ষাও চালানো হচ্ছে।
এদিকে ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, আটক ছয়জনই অপরাধে জড়িত ছিল। এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি ওই অভিযোগপত্রের ৩৩ নং পৃষ্ঠায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে বিস-ারিত বর্ণনা দেয়া আছে।
ভারতের আইন অনুযায়ী, অভিযোগপত্র দাখিলের সময় আটকদের আদালতে সশরীরে হাজির হওয়া বাঁধ্যতামূলক হলেও তারা আদালতে উপসি'ত ছিলেন না।
নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের আদালতে আনা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রতিদিন শুনানিসহ এ ঘটনার বিচার চলতি সপ্তাহ শেষে শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযোগপত্রে প্রায় ৩০ জন সাক্ষীর নাম অন-র্ভূক্ত রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) আলতামাস কবীর দিল্লির সাকেত আদালত ভবনে দ্রুত বিচার আদালত উদ্বোধন করেন। ওই আদালতে প্রথম ২৩ বছর বয়সী চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওই ছাত্রীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।
গণধর্ষণের শিকার তরুণীটি গত ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রবল আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণীর জনগণ ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চাইছে।
তরুণীটির বাবাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একযোগে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। এছাড়া মেয়ের সম্মানে তার নামে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

দিল্লীর গণধর্ষণের নেপথ্যে সুশাসনের অভাবকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে কিছু আইন সংশোধনের সুপারিশের পাশাপাশি পুলিশ আর প্রশাসনের মানসিকতা পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছে বিচারপতি জে এস ভার্মা নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিশন। তবে ধর্ষকের মৃত্যুদ-ের যে দাবিতে পুরো ভারত উত্তাল হয়ে উঠেছিল, তাতে সায় দেননি কমিশনের সদস্যরা। খবর ওয়েবসাইটের। 
গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়ে ২৩ বছর বয়সী এক মেডিক্যাল ছাত্রী ক'দিন পর মারা যান। নির্মমভাবে পেটানো হয় তার বন্ধুকেও। পরে তাদের দুজনকে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে পিষে মারার চেষ্টা করে ধর্ষকরা। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়। ধর্ষকদের মৃত্যুদ-ের দাবি ওঠে। বিক্ষোভরত তরুণরা ইন্ডিয়া গেটে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতেও জড়ায়। এরপর ধর্ষণের ঘটনা ও আইন সংশোধনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিচারপতি জে এস ভার্মার নেতৃত্বে এই কমিশন করা হয়। এতে সদস্য করা হয় হিমাচল প্রদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি লাইলা শেঠ ও সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল গোপাল সুব্রামনিয়ামকে। কমিশন করার ২৯ দিনের মাথায় বুধবার ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়ে বিচারপতি ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, 'ভারতের যুবসমাজই মানসিকতা পরিবর্তন আনার পথ দেখিয়েছে। আমরা যুব সমাজের কাছে ঋণী। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তারা অত্যন্ত পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে।... এটাই সমাজে পরিবর্তন আনার প্রথম ধাপ।'
তবে মৃত্যুদ-ের দাবির সঙ্গে একমত না হয়ে ভার্মা কমিশন বলেছে, ভারতের প্রচলিত আইন কার্যকর করতে পারলেই নারীর প্রতি সহিংসত রোধ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি সম্ভব। আইনে নয়, গলদ আইনের শাসন বাস্তবায়নে। এ ধরনের মামলায় পুলিশ ও প্রশাসনের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি জে এস ভার্মা । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের একটি বড় অংশ সমাজকে 'সংকীর্ণ পিতৃতান্ত্রিক' দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। এজন্য পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কার করে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে পারার পরিবেশ তৈরির সুপারিশ করেছে কমিশন।

দ্রুত এ অপরাধের বিচার কার্যকরের জন্য গত বৃহস্পতিবার দিল্লির যন-র মন-রে শিক্ষার্থীরা কালো দিবস পালন করেছে।
ঘটনাটি স্পর্শকাতর বলে আদালতের বার এসোসিয়েশনের সদস্যরা আটকদের বয়কট করে তাদের মামলা নিতে অস্বীকৃতী জানিয়েছে।

আবার গণধর্ষণ রাজধানীর উপকণ্ঠে। দিল্লি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে, গাজিয়াবাদে, ১৯ বছরের এক তরুণীর গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের পর আইনী সংশোধনেও ধর্ষণ থামছে না।ভারতের সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আল-তামাস কবির কলকাতায় সঠিক মন্তব্যই করেছেন যে দিল্লীর একটি গণধর্ষণ নিয়ে এত হাঙ্গামা হল, কিন্তু এই ঘ ঘটনা বেনজির নয়।সারা দেশেই দলিত মেয়েদের ধর্ষন চলছে

মণিপুরে মায়েদের প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার সর্ববিদিত। দলিত নারীর প্রতি যে অবিচার চলে, দস্যুসুন্দরী ফুলন উপাখ্যানে তাঁর চালচিত্র চিত্রায়িত থাকবে চিরকাল। আদিবাসী রমনী ও মাতা সোনী সোরীর প্রতি অবিরত নির্যাতন চলছে, সে কিনা মাওবাদী।একটি মোমবাতিও বরাদ্দ নেই তাঁর জন্য বিশ্বায়িত অর্থব্যবস্থায় নারী মহার্ঘ পণ্য, নারী দেহ রাজনীতি, ক্ষমতা ও সাহিত্য সংস্কৃতির অলিন্দে ওঠার সহজতম সিঁড়ি।সমাজে নারীর অবস্থানের মাপকাঠি সবক্ষেত্রেই একই।ভোগ সর্বস্ব।ধর্মে সে শুদ্র,দাসী।কঠোর সতীত্বের অনুশীলনে বন্দী, সবরকম ত্যাগের জন্য দায়বদ্ধ। সমাজ ও ধর্মের অনুশাষনের গন্ডী ডিঙ্গি মেরে পার করতে গেলেই সে নষ্ট মেয়ে নষ্ট ডিমের মতোই।ধর্মেনারী নির্আতন শাস্তরসম্মত।ভারতবর্ষের রাজধানীতে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে মোমবাতি প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও বিপ্লব ধার্মিক ফতোয়ার আকার নিছ্ছে মৃত্যুদন্ডের ও ধর্ষকদের রাসায়নিক ভাবে নপুংসক করার দাবি ও সর্বদলীয় সম্মতিতে তত্সম্বন্ধী আইন প্রণয়নে। সত্য হল ভারতবর্ষের কর্তৃত্ব চলছে মনুস্মৃতি ব্যবস্থা ও বিধান অনুযায়ী। সেখানে নারীর অবস্থান বুঝতে হলে সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখা পড়তেই হয়। পড়তে হয় তসলিমার বিতর্কিত কালম অবশ্যই

ভারতের তামিলনাড়ূতে দলিত শ্রেণীর ওপর পুলিশের যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ একটি তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৯২ সালে রাজ্যের ভাচাতি গ্রামে পুলিশ ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারা কমপক্ষে ১৮ দলিত নারী ও কিশোরীকে ধর্ষণ এবং শতাধিক যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। চন্দনকাঠ উদ্ধারের জন্য ওই গ্রামে ওই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এ অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানকার একটি আদালত ২৬৯ জন পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। খবর বিবিসি অনলাইনের।

"অপারেশন গ্রীণ হান্ট" এর নামে এই অঞ্চলে ভারতীয় আধা সামরিক বাহিণী আদিবাসীদের গ্রামগুলোতে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ চালাচ্ছে বলে ব্যপক অভিযোগ উঠেছে। বিহারে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের ভূমি সেনা দ্বারা নিম্ন বর্ণের হিন্দু, দলিত ও মুসলমানদের উপর নির্যাতন চলছে ধর্মকে ব্যবহার করে। 

 দামিনীকে বাঁচাতে পুলিশ বা পথচারী কেউই এগিয়ে আসেনি। দিল্লীর রাজপথে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় নিহত মেডিকেল ছাত্রী দামিনীর সহযাত্রী বন্ধু জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দুষ্কৃতিরা তাদের রাস্তায় ফেলে যাওয়ার পর প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বা পথচারী কেউই তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। বারবার সাহায্য চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। এমনকি পিসিআর ভ্যানেও রক্তাক্ত বন্ধুকে তোলার সময় পুলিশ এগিয়ে আসেনি। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে এসব কথা বলেন তিনি। খবর-জি নিউজ।

ভারতে তরুণীকে গণধর্ষণের নৃশংস এ ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। রাজধানী জুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদ, তরুণীর মৃত্যুর পর শোক, মৌনমিছিল, এত কিছুর মাঝে আড়ালেই পড়েছিলেন নির্যাতিতার বন্ধু। যিনি ১৬ ডিসেম্বর রাতে তরুণীর সঙ্গে ছিলেন। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন। অবশেষে একটি টেলিভিশনে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। ভয়াবহ ওই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অকপটে জানালেন সেদিনের দুঃস্বপ্নের বাসযাত্রার কথা।

দিল্লীর চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা শুধু ভারতের সাধারণ মানুষকেই স্তব্ধ করে দেয়নি। ঘটনার নৃশংসতায় শিউরে উঠেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারাও। কিন্তু পাশবিক অত্যাচারের যন্ত্রণা তেইশ বছরের ওই তরুণীর মনোবল ভাঙতে পারেনি। তাই হাসপাতালের বেডে শুয়েই ঘটনার বর্ননা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট পরে লিখিতভাবে জানান, চাপের মুখে জবানবন্দি দিয়েছেন নির্যাতিতা। এনিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়। ঘটনার পর টিভির পর্দায় মুখ খুলে এবিষয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তরুণীর বন্ধু।

ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ রুখতে পরিবর্তন দরকার সর্বস্তরে। ঘটনার পরে টেলিভিশনের পর্দায় প্রথমবারের জন্য মুখ খুলে এমনটাই বললেন দিল্লী গণধর্ষণকাণ্ডে নিহত তরুণীর বন্ধু। তার দাবি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন দরকার।  পাশাপাশি প্রয়োজন আইনি এবং পুলিশের আচরণের পরিবর্তনও। একটাই দুঃখ। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি বন্ধুকে। তবে বন্ধুর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তির জন্য লড়ে যাবেন বলেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। জনগণের প্রতি তার অনুরোধ, নৃশংস এ ঘটনায় যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তা যেন থেমে না যায়। সেটাই হবে ওই তরুণীর প্রতি একমাত্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ইভটিজিং-নারী নিগ্রহ রুখতে নির্দেশিকা জারি



ইভটিজিং-নারী নিগ্রহ রুখতে নির্দেশিকা জারি
হিমাদ্রি সরকার

রাজ্যে একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এমনকী, শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণেও নারী নিগ্রহের ঘটনা প্রসঙ্গে একটি লাইনও উল্লেখ করা হয়নি৷ এনিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিরোধী দলগুলি৷ এবার সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশকে হাতিয়ার করে ইভটিজিং ও নারীনিগ্রহ বন্ধে একটি নির্দেশিকা জারি করল মমতার হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দন্তর৷ সেখানে ইভটিজিং বন্ধ করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ তারমধ্যে দু'টি নির্দেশ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ৷ একটি হল, বাস-ট্যাক্সির মতো সাধারণ যানবাহনে ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে তার চালক-খালাসির দায়িত্ব হবে গাড়ি নিয়ে সরাসরি নিকটবর্তী থানায় নিয়ে যাওয়া৷ তা না হলে ওই গাড়ির পারমিট বাতিল করা হবে৷ দ্বিতীয় নির্দেশটি হল, এই প্রথম কোনও সরকারি নির্দেশে সম্ভবত ইভটিজিংয়ের মতো নারীনিগ্রহের ঘটনা রুখতে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, এই ধরনের ঘটনা দেখলে পথচারী বা প্রত্যক্ষদর্শীর দায়িত্ব, চুপ করে না থেকে থানায় গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানানো৷

স্বরাষ্ট্র দন্তর সূত্রের খবর, একটি সিভিল আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণান গত বছর একটি আদেশ দেন৷ সেখানে কর্মস্থলে নারীনিগ্রহ এবং বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিংয়ের ঘটনা রুখতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব দীনবন্ধু ভট্টাচার্য সেই নির্দেশাবলী রাজ্যের সব জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দ্রুত তা কার্যকর করতে বলেছেন৷

বিচারপতি রাধাকৃষ্ণান তাঁর রায়ে বলেছেন, কর্মস্থলে নারীদের উপর যৌন নিগ্রহের ঘটনা রুখতে সংসদে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ কিন্ত্ত ইভটিজিংয়ের ঘটনা রুখতে তা পর্যাপ্ত নয়৷ ঘটনাচক্রে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনার আগেই এই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ ওই ঘটনার পর বিশেষ করে রাস্তাঘাটে বাস-ট্যাক্সির মতো যানবাহনে নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ৷ বিভিন্ন রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল৷ বাস্তবে অবশ্য তা বেশিদূর এগোয়নি৷ এরপর কলকাতায় রাজাবাজারে দিনদুপুরে চলন্ত বাসে একদল মদ্যপ যুবকের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক ছাত্রী৷ এতদিন পরেও ওই বাসটিকে শনাক্ত করা যায়নি৷ গ্রেপ্তার হয়নি অভিযুক্তরাও৷ এমনকী বাসের কোনও যাত্রী বা কোনও প্রত্যক্ষদর্শী সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি৷ এই অবস্থায় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অতিরিক্ত সচিবের এই নির্দেশ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল৷

পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, সরকারি-বেসরকারি যানবাহনের উপর এই কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হলে বাস-ট্যাক্সি-ট্রামে মেয়েদের উদ্দেশ করে কটূক্তি, ইভটিজিং বা শ্লীলতাহানির ঘটনা রোখা অনেকটা সহজ হবে৷ কারণ অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত মহিলা থানায় এসে অভিযোগ জানাতে ভয় পান৷ তবে নির্দেশ না মানলে পারমিট বাতিলের মতো পদক্ষেপ করা যাবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন তাঁরা৷ কারণ, আইনে এই সংক্রান্ত কোনও বিধান নেই৷ ওই নির্দেশিকায় বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি বসানো, পথেঘাটে সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশকর্মী নামিয়ে নজরদারি বাড়ানোসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, কয়েকটি পুলিশ কমিশনারেট ইতিমধ্যেই নারীনিগ্রহের ঘটনা রুখতে আলাদা হেল্পলাইন চালু করেছে৷ কিন্ত্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভি বসানো বা মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো এত দ্রুত অসম্ভব৷ কলকাতাতেই এই পরিকাঠামো নেই৷ রাজ্যের অন্যত্র অবস্থা আরও খারাপ৷



কী আছে নির্দেশিকায়?

বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন, মেট্রো, সিনেমা হল, শপিং মল, পার্ক, যানবাহনে সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশ কর্মী মোতায়েন করতে হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভি বসাতে হবে, যাতে কোনও ঘটনা ঘটলে অভিযুক্তকে দ্রুত ধরা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রার্থনাস্থল, সিনেমা হল, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে নিজ নিজ এলাকায় ইভটিজিং রোধে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। কোনও যানবাহনে নারীনিগ্রহের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট যানের চালক ও অন্য সদস্যদের দায়িত্ব গাড়ি নিয়ে থানায় চলে আসা। বিভিন্ন শহরে নারীনিগ্রহের ঘটনা রোধে হেল্পলাইন চালু করতে হবে.। ইভটিজিং বা ওই ধরনের ঘটনা রোধে সতর্কতামূলক নোটিস বোর্ড বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখতে হবে। পথচারী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীকেও এই ধরনের ঘটনা রোধে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। 


দিল্লী গণধর্ষণ প্রসঙ্গ প্রণব পুত্রের মন্তব্যে ফের বিতর্ক
বিডিনিউজ : দিল্লীর গণধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরতদের নিয়ে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির ছেলে পার্লামেন্ট সদস্য অভিজিৎ মুখার্জির 'লিপস্টিক মন্তব্য' নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তরুণীদের 'মেকআপ-লিপস্টিক চর্চিত নারী' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, 'গণধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন একটি নাটক। এতে অংশ নেয়া নারীরা দেখতে সুন্দর, কিন্তু তাদের দেখে শিক্ষার্থী বলে মনে হয় না আমার।' বাস্তবতার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খুব একটা সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অভিজিৎ মুখার্জির এ মন্তব্য টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পরপরই নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। অভিজিতের বোন শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ভাইয়ের এ মন্তব্যে 'বিস্মিত' হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এ মন্তব্যের জন্য পরবর্তীতে ক্ষমা প্রার্থনা করে অভিজিৎ দাবি করেছেন, নারীদের অপমানিত করার জন্য এ মন্তব্য করেননি তিনি। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে প্রতিবাদ আন্দোলনকে ন্যায্য বলেও অভিহিত করেন তিনি। এছাড়া 'সরকার আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে' তিনি নিজে এমন মনে করেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, নয়াদিল্লী বা কলকাতা যেখানেই ঘটুক, এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রশাসনের দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত অন্যদের কাছে একটি সতর্ক বার্তা পৌঁছায়।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুশির্দাবাদ জেলার জঙ্গিপুর উপ-নির্বাচনে অভিজিৎ মুখার্জি ভারতীয় পার্লামেন্টে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগে পূর্ববর্তী জনপ্রতিনিধি অভিজিতের বাবা প্রণব মুখার্জি এ আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

কান্নুর: প্যারোলে থাকা ছেলে বি‌ট্টিকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল ওড়িশার তত্‍কালীন পুলিশকর্তা বি বি মোহান্তির বিরুদ্ধে৷ এর জন্য ২০০৯ সালে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে৷ জেরায় প্রতিবারই জানিয়েছেন, ছেলের কোনও খবর তিনি জানেন না৷ ধরা পড়ার পর বি‌ট্টি মোহান্তি জানাল, তার বাবা তাকে কোনও সাহায্যই করেননি৷ 

তবে তদন্তকারী অফিসাররা মনে করছেন, ফেরার থাকার সময় অন্তত তিন জন নিকট আত্মীয় নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিল বি‌ট্টির সঙ্গে৷ সোমবার কান্নুর পৌঁছচ্ছে রাজস্থান পুলিশের একটি দল৷ তাঁরা বিট্টির ট্রানজিট রিমান্ড চাইতে পারেন৷ তবে কেরালা পুলিশ এখনও বিট্টির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে পারেনি৷ তাই তারা আদৌ ট্রানজিট রিমান্ড দিতে চাইবে কি না, তা পরিষ্কার নয়৷ শুক্রবার রাতে কেরালার কান্নুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বি‌ট্টিকে৷ তার ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ 

২০০৬ সালের মার্চে রাজস্থানের আলোয়ারে বছর ছাব্বিশের এক জার্মান তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে সাত বছরের জেল হয়েছিল বি‌ট্টির৷ কয়েক মাস জেল খাটার পর অসুস্থ মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তি পায় সে৷ তার পরই ফেরার হয়ে যায় বি‌ট্টি৷ কান্নুরের পুলিশ সুপার রাহুল আর নায়ার জানিয়েছেন, রাজস্থান পুলিশকে কান্নুরে আসার কথা বলা হয়েছে৷ সোমবার কান্নুরে রাজস্থান পুলিশের একটি দল যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জয়পুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার বিজু জর্জ জোসেফ৷ 

কান্নুর পুলিশ সূত্রে খবর, গত সাড়ে তিন বছরে কেরালায় রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছিল বি‌ট্টি৷ জাল পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমনকি রাঘব রাজনের নামে কলেজের জাল ডিগ্রি সার্টিফিকেটও জোগাড় করে ফেলেছিল সে৷ এমবিএ করার পর স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ত্রিভাঙ্কুরে প্রবেশনারি অফিসারের চাকরি নিয়েছিল রাঘব রাজন নামে৷ মালায়ালম ভাষাটাও রন্ত করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশের ভূমিপুত্রের মতোই৷ ২০০৬ সালে ফেরার হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশের পুত্তাপার্থি যায় বি‌ট্টি৷ অন্ধ্রে তিন বছর ছিল সে৷ তবে কিছু দিন পর পরই শহর পাল্টেছে সে৷ 

রাঘব রাজনের স্বরূপ জানতে পেরে রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন এস ভি রামা রাও৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই ব্যক্তিই পুত্তাপার্থিতে বি‌ট্টিকে থিতু হতে সাহায্য করেছিলেন৷ খুঁজে দিয়েছিলেন থাকার জায়গা, চাকরিও৷ গত সপ্তাহেই পুত্তাপার্থিতে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি৷ ২০০৭ সালে রাঘব রাজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়৷ রাঘবের বাবা নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন রাজীব রাজন নামে৷ রামা রাও জানিয়েছেন, সেই সময় মানসিক ভাবে বেশ খারাপ অবস্থায় ছিল বি‌ট্টি৷ উদ্যোগ নিয়ে একটি স্কুলে অঙ্ক এবং কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকের চাকরি খুঁজে দিয়েছিলেন রামা রাও৷ বাড়ির কাছে জোগাড় করে দিয়েছিলেন সস্তার বাসাও৷ নম্র, অত্যন্ত মেধাবী বছর তিরিশের ওই যুবক ধর্ষণের অপরাধী, এটা মানতে পারছেন না তিনি৷-সংবাদসংস্থা

বোনের মাথা কাটল দাদা
বাহরাইচ: আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঠিক ২দিনের মাথায় এ দেশেই আরও একবার ঘটে গেল এক লজ্জাজনক ও নারকীয় ঘটনা।

বাহরাইচের রবিপুর অঞ্চলে ঘটেছে এই নারকীয় ঘটনা। কুড়ি বছরের বোনের মাথা কেটে ফেলে দাদা নানকে। বোন মাহরুনের অপরাধ, সে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ভালবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিল। সেই ব্যক্তি তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা।

রবিবার পুলিশ সুপার বিনয় কুমার যাদব বলেন যে, মৃতার বাবা এসে পুলিশে রিপোর্ট করেন। সেই ভিত্তিতেই নানকে-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় কেস করা হয়েছে। মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠা

ভারতে ধর্ষণ বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা

on Saturday, October 13, 2012 | Saturday, October 13, 2012

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে উদ্বেগজনক হারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

গত এক মাসে এ রাজ্যে ১৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলিত মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ ও তা প্রচার করা ছাড়াও ধর্ষিতাকে হত্যার মত ঘটনাও ঘটেছে।

রাজ্যের পুলিশসহ অন্যান্য বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হোডা এ সব বিশেষ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। সমগ্র হরিয়ানায় পুলিশের টহল বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা করে বলা হয়েছে, বিপদগ্রস্ত মহিলাদের সহায়তা দেয়ার জন্য পুলিশ এক অঙ্কের টেলিফোন ব্যবস্থা বসাবে। এ সব টহল তদারকি করবেন শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া, মহিলাদের বিরুদ্ধে যে সব অপরাধ হয় তা তদন্ত করার জন্য অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হবে। অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও তদারকি করবেন এ কর্মকর্তা। এরই মধ্যে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ বিশেষ করে ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাইকোর্টকে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে হরিয়ানা রাজ্য সরকার ।

এ ছাড়া, নারীদের অভিযোগ শোনার জন্য জেলা পর্যায়ে একজন করে বিশেষ মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়টি যেন যথাযথভাবে মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় তারও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হরিয়ানা সরকার।

হোমের বিরুদ্ধে তদন্ত, প্রশ্ন বিস্তর



হোমের বিরুদ্ধে তদন্ত, প্রশ্ন বিস্তর
অমিত চক্রবর্তী

গুড়াপের হোমে অমানবিকতা নিয়ে ক্ষুব্ধ আদালত সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে৷ তারই মধ্যে শহরতলির দু'টি বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে চরম নিষ্ঠুরতার অভিযোগ উঠল৷ দু'টি হোমই দক্ষিণ শহরতলিতে৷ এক হোমে নাবালিকাকে লোহার শিকের গরম ছ্যাঁকা, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ গুরুতর জখম অবস্থায় সে এখন ভর্তি নোদাখালির এক নার্সিং হোমে৷ আর একটি হোমে অপুষ্টিজনিত কারণে দুদিন আগেই একটি শিশু মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ৷ এমনকি হোমের আবাসিকের সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবের গড়মিলের অভিযোগও উঠেছে৷

শনিবার দু'টি ঘটনারই তদন্তে আধিকারিকদের নিয়ে যান সমাজকল্যাণ দপ্তরের পরিষদীয় সচিব শশী পাঁজা৷ তার আগেই অবশ্য এলাকার কয়েকশো মহিলা জড়ো হয়ে জোর করে ঢুকে পরে হোমটিতে৷ কয়েক জন কর্মীকে মারধরও করা হয়৷ এর পরেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷

বিভিন্ন হোমে আবাসিক মেয়েদের উপর শারীরিক অত্যাচার, ধর্ষণের একের পর এক অভিযোগে সরগরম রাজ্য৷ গুড়াপের হোমে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হওয়া গুড়িয়ার মৃত্যুতে সরকার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল৷ কিন্ত্ত কয়েক মাস ধরে তদন্ত করলেও তাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্ট৷ শেষে বিরক্ত আদালত রাজ্যের যে সব হোম নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, সেইসব ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেয় সিবিআইকে৷ তারই মধ্যে নতুন করে হোমে নিগ্রহের অভিযোগ৷

এবার আবাসিক নিগ্রহের অভিযোগ নরেন্দ্রপুরের সংলাপ হোমে৷ আদালতের নির্দেশে এ বছর ২ জানুয়ারি নাদিয়ালের এক নাবালিকাকে পুলিশ হোমে নিয়ে আসে৷ নার্সিং হোমের বিছানায় শুয়ে সে বলে, 'দু'দিন পর থেকেই শ্রাবণী নামে হোমের এক দিদি অত্যাচার শুরু করে৷ আমাকে একা একটি ঘরে জোর করে আটকে রাখা হত৷ একদিন আমায় সে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চায়৷ আমি রাজি না হওয়ায় গরম লোহার রড চেপে ধরে পিছনে কোমরের নীচের দিকে৷ অজ্ঞান হয়ে যাই৷ ওরাই জল দিয়ে জ্ঞান ফেরায়৷ আর একদিন ইলেকট্রিক শক দেয় আমার হাতে৷'

এ দিন তদন্তে এসে সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরা যে তথ্য পেয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, গুরুতর জখম অবস্থায় ওই নাবালিকাকে ১১ জানুয়ারি ভর্তি করা হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে৷ সেখান থেকে ২৯ জানুয়ারি তাকে ছুটি দিয়ে মানসিক চিকিত্‍সার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা৷ তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ফের পরদিন তাকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ ২১ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে ছাড়িয়ে পরিবারের লোকেরা তাকে নাদিয়ালের নাসিং হোমে ভর্তি করেন৷ এখনও সেখানেই চিকিত্‍সাধীন মেয়েটি৷

মেয়েটির বাবা সুখেন শেখ বলেন, 'সব মিটিয়ে নেওয়ার জন্য হোম কর্তৃপক্ষ চিকিত্‍সার বেশ কিছু টাকাও দেয়৷ কিন্ত্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় পরে আর টাকা দিতে চায়নি৷' নার্সিং হোমের চিকিত্‍সকরা জানিয়েছেন, হাত, দেহের পিছন দিকে বেশ কয়েকটি জায়গায় আগেই অপারেশন হয়৷ দেহের বিভিন্ন জায়গায় ঘা হয়ে গিয়েছে৷ সংলাপ হোমের কর্তা ইন্দ্রাণী সিনহা অবশ্য কোনও অভিযোগই মানতে চাননি৷ তাঁর পাল্টা দাবি, মেয়েটির পরিবার কিছু টাকা চেয়েছিল৷ তা না দেওয়াতেই মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে৷

বছর চারেক আগে সোনারপুরেরই হরিহরপুর এলাকায় একটি হোমে অপুষ্টিজনিত কারণে এক কিশোরের মৃত্যু হয়৷ তখনই হোমগুলিতে নতুন করে নজরদারির কথা ওঠে৷ কিন্ত্ত তা যে কেবলই কথার কথা তার প্রমাণ মালঞ্চ এলাকার 'নিউ এজ সোসাইটি ফর অল' নামে বেসরকারি হোমটিতে৷ কয়েকদিন আাগে একটি বছর দশেকের বালককে অসুস্থ অবস্থায় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরদিনই তার মৃত্যু হয়৷ চিকিত্সক তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'গ্যাস্ট্রো-এন্টেরাইটিস'কে চিহ্নিত করেছিলেন৷ চিকিত্‍সকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে সময়ে পর্যাপ্ত খাবার তার পেটে না পড়াতেই তার পাকস্থলি প্রবল প্রদাহের শিকার হয়েছিল৷ আরও তিনজন কিশোর এখনও একই কারণে হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন৷ এদিন সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরা তদন্তে গিয়ে হোমে আরও তিনজনকে অসুস্থ বলে চিহ্নিত করেন৷ তাদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন তাঁরা৷ আবাসিকদের প্রতি নজর না দিলেও হোমটি নিয়মিত কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অর্থ পাচ্ছে বলে তদন্তে জানতে পেরেছেন সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরা৷ 


বিচারপতিদের কাঠগড়ায় নাগরিক সমাজ
আলতামাস কবীর, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
এই সময়: একাধিক ইস্যুতে প্রশাসনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগেই সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷ এবার নারী নিগ্রহের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে সরকারকে বিঁধলেন কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়৷ পাশাপাশি এ রাজ্যের নাগরিক সমাজের ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের শতবার্ষিকী হলে এক অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, 'নারী নিগ্রহের ঘটনায় এ রাজ্য কখনও কখনও দিল্লিকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে৷ এখানকার নাগরিক সমাজ এখনও ঘুমিয়ে আছে দেখে আমি বিস্মিত৷ নাগরিক সমাজ জেগে না ওঠা পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে৷'

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গ ধরেই এ রাজ্যের অবস্থা তুলে ধরেন রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান৷ ঘটনাচক্রে শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সূচনায় রাজ্যপালের ভাষণে রাজ্যের নারী নিগ্রহের প্রসঙ্গে একটি শব্দও উল্লেখ করা হয়নি৷ এ নিয়ে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা৷ কিন্ত্ত অশোকবাবু নারীনিগ্রহের প্রসঙ্গেই জোরদার সওয়াল করেন৷ এর আগে প্রশাসনে দলতন্ত্র নিয়ে সরাসরি রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি৷ এদিন অবশ্য তাঁর সমালোচনার অভিমুখ ছিল আলাদা৷

এদিনের আলোচনাসভায় দিল্লির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে নাগরিক সমাজ যে ভাবে রাস্তায় নেমেছিল, তাতেই প্রশাসন ও সরকার নড়েচড়ে বসেছে৷ তার জন্যই গঠিত হয়েছে ভার্মা কমিটি৷ নারী নিগ্রহ রুখতে কঠোর আইন আনার কথা ভাবতে হচ্ছে সরকারকে৷ এরপরই অশোকবাবু রাজ্যের প্রসঙ্গ তোলেন৷ তিনি বলেন, নারী নিগ্রহের ঘটনায় আমরা দিল্লির তুলনায় খুব একটা পিছিয়ে নেই৷ কখনও কখনও দিল্লিকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে রাজ্য৷ এখন নাগরিক সমাজ জেগে উঠলে তবেই এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব৷ এ প্রসঙ্গে জেসিকা লাল মামলার কথাও পাড়েন তিনি৷ তাঁর মতে, মামলাটি নিম্ন আদালতে ধামাচাপা পড়ে গেলেও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের জেরেই পরে দোষীরা সাজা পেয়েছে৷ তাহলে এখানে নাগরিক সমাজ ঘুমিয়ে রয়েছে কেন?

কেন হঠাত্ নাগরিক সমাজকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি? অনুষ্ঠানের পরে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য থেকেই পরিষ্কার যে নারী নিগ্রহের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সামনের সারিতেই রয়েছে৷ নাগরিকদের মান-সম্ভ্রম রক্ষা করা তো সরকারেরই দায়িত্ব৷ সেখানে সরকার যদি তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পারলে নাগরিক সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের এহেন মন্তব্য যে সরকারকে যে যথেষ্টই অস্বস্তিতে ফেলবে, তাতে সন্দেহ নেই৷

এর আগে কার্টুন কাণ্ড থেকে বিষমদে মৃত্যু--অনেকগুলি ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিশন৷ আবার অধিকাংশ সুপারিশ কার্যকর না করে সংঘাতের বার্তা পাঠিয়েছে রাজ্য৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী নাম করে আক্রমণ করেছিলেন অশোকবাবুকে৷ বলেছিলেন, 'বাইরে থেকে এনে যাঁকে বসিয়েছি তিনিই যেন এখন কলমের আঁচড়ে সরকার চালাচ্ছেন৷' তাতেও দমেননি টু জি মামলার চাঞ্চল্যকর রায় দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি৷ এবার নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার কথা বলে তিনি কার্যত 'দলতান্ত্রিক' সরকারের ভূমিকায় অনাস্থা প্রকাশ করলেন, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের৷



ভারতে সীমাহীন শ্রেণী বৈষম্য ও নারী নির্যাতন
spacer image
 ভারতে সীমাহীন শ্রেণী বৈষম্য ও নারী নির্যাতন
ফারুক আহমাদ আরিফ : দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারতে মানুষের মাঝে শ্রেণী বৈষম্যের আকার মহামারির ন্যায়। ভারতে হিন্দুত্ববাদী উচু বর্ণ আর ব্রাক্ষ্মাণ্যবাদের কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে দলিত সম্প্রদায় তথা কথিত নীচু জাতের যথা, হরিজন, শব্দকর, তৈলী, হাজাম, দাই, ধোপা, মানতা, চন্ডাল, মুচি, ডোম, চাড়াল, ঋষি, রবিদাস, রুহি দাস, বেহারা, মেছো, কৈবর্ত, জলদাস, নিকারী ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকার। 

এসব সম্প্রদায়ের মানুষদের বর্ণ বৈষম্যের কারণে মন্দিরে পর্যন্ত ঢুকতে মানা। মুখে ধর্মনির্পেক্ষতার কথা বললেও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে দলিত সম্পদ্রায়কে পদে পদে বাঁধার সম্মুখিন করা হয় দেশটির সর্বত্র। মানবিক, নাগরিক, সামাজিক, শিক্ষা ও রাজনৈতিকসহ সকল অধিকার থেকেই সুকৌশলে দলিত সম্প্রাদায়ের লোকদের পিছনে রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদী সমাজপতিদের আগ্রাসনের কারণে অনেকেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভারতের বাঙালুর আইন বিদ্যালয় "অস্পৃশ্যতার উপর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা আইনের প্রভাব" নিয়ে দেশের ৬টি রাজ্যের ২৪টি জেলায়, দলিত সম্প্রদায়ের ৬৪৮ জন মানুষকে নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গবেষকরা এর ফলাফল প্রদানে বলেন ৬৪৮ জন দলিত মানুষকে প্রশ্ন করে জানা যায় যে, ৫১৬ জন বলেন, তাদেরকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়না। 

১৫১ জন ব্যক্তি বলেন, তাদেরকে দেবতার মূর্তি নিয়ে শুভাযাত্রা বের করতে দেওয়া হয়না। ৫৮১ জন মতামত দেন সামাজিক বা বিবাহ অনুষ্ঠানে ঢোল-তবলাসহ নানা জাতের কোন বাজনা-বাজাতে দেওয়াহয়না, হিন্দুধর্মের উ"ু বর্ণের লোকেরা। গ্রামের ৭ শতাংশ লোকের অভিযোগ হচ্ছে তাদেরকে গ্রামের সদর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে-চলতে প্রভাবশালী উ"ু বর্ণের লোকদের জন্য মাথানত করে 'নৈব চ, নৈব চ' বলে চলতে হয়। ওদের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিতে হয়। ৯ শতাংশ জানিছেন তাদের সবসময় হাতজোড় করে কথা বলতে হয়। ১৮ শতাংশ অভিমত দেন যে, তাদেরকে এখনো উচু বর্ণের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় না। তবে একটি বড় অংশের দলিতদের কথা হচ্ছে তারা নিজের বাড়িতে অন্যদের ঢুকতে দেন। দলিত মহিলাদের উচু বর্ণের লোকদের বাড়ির কাজে লাগানো হয়, কিন্তু ভেতর বাড়িতে তাদের প্রবেশে বাঁধা রয়েছে। তাদের শিশুদের স্কুলে যেতে দেওয়া হয় কিন্তু পিছনের বেঞ্চে বসতে বাধ্য করা হয়। টিফিনের সময়ে তাদের জন্য আলাদা খাবার ব্যবস্থা করা হয়। ৪০ শতাংশ লোকের দাবি তাদের গ্রামে কোন দলিত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। এ ধরনের কাজ না করলে তাদেরকে সামাজিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে প্রতিনিয়ত। 

অদলিতদের ১৬ শতাংশ লোক দলিত সম্প্রদায়ের এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং ১৩ শতাংশ লোক মতামত প্রদানে বিরত থাকে। গবেষকরা বলেন, আমরা শুধু বাঙালাতেই এমন ৩৪ টি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। 

ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী দেশে ১৬ কোটি দলিত সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অবশ্য গত দশ বছরে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। তবে ২০১১ সালের দু'দফায় ভারতে আদমশুমারীর হিসাবে দলিতদের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। 

১৯৯৮ সালের একটি রিপোর্টে দেখানো হয়েছিল যে, ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের উপর ২৫ হাজার ৬ শ ১৭টি হামলা-সংঘর্ষ হয়েছিল। তন্মেধ্যে শুধু গুজরাটেই ৮ হাজার ৮শ ৯৪টি। অসহায় ১৮শ নারীকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল উচু বর্ণের আক্রোশে। গুজরাটের ২৬ টি জেলার ১০টি বিশেষ আদালত দলিত সম্পদ্রায়ের জন্য কোন কাজ করে না। সেখানে গেলে দলিত সম্প্রদায়ের লোকদের কোন মামলা-মোকাদ্দমা গ্রহণ করা হয় না। 

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ১৬৬ মিলিয়ন। নেপালে ৪ দশমিক ৫মিলিয়ন, পাকিস্তানে ২ দশমিক শূন্য মিলিয়ন, বাংলাদেশের সংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়ন। ধর্মের দিক থেকে বৌদ্ধ ৮৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, খ্রিষ্টান ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, শিখ ৩০ দশমিক ৭০শতাংশ, হিন্দু ২২ দশমিক ২০ শতাংশ, ইসলাম শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। 

জাতীয় তথ্য কমিশনার ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশেই শ্রেণী বৈষম্য বিদ্যমান। অনুন্নত দেশগুলোতে এটির প্রভাব বেশি, তবে দক্ষিণ এশিয়ার মাঝে ভারতে বর্ণ ও শ্রেণী বৈষম্য অত্যধিক। 

দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেণী বৈষম্য ৭টি গ্র"পে বিভক্ত রয়েছে। ভারতে শুধু ভিন্ন ধর্মালম্বীদের ক্ষেত্রে নয় বরং হিন্দু ধর্মের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা হরিজন, মুচি, তেলেগু, ডোম প্রভৃতির লোকদেরকে মানুষ হিসেবেই মূল্যায়নে আপত্তি করে থাকে। যদিও তাদের সংবিধান ও আইনে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। সেখানে বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দেশে প্রায় ৫৫ লক্ষ লোক রয়েছে দলিত সম্প্রদায়ের। ২০১১ সালে 'হিন্দুস্তান টাইমস' ও নারীবিষয়ক সংগঠন 'অক্ষরে'র যৌথভাবে একটি সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয় নারীদের উপর যৌন হয়রানীর বিষয়ে। সমীক্ষার তথ্য কর্মকর্তা এলিসা জেঙ্ক সমীক্ষাটির প্রতিবেদন প্রকাশকালে জানিয়েছেন যে, ভারতের মুম্বাইয়ের প্রায় ৯৯ শতাংশ নারী নগরীর রাস্তাগুলোকে তারা নিরাপদ মনে করেন না। আর ৯৫ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা সেখানে প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হন এবং হচ্ছেন।

এলিসা জেঙ্ক আরো বলেন, সমীক্ষাটি পরিচালনার সময় আমাদের মনে হয়েছিল যে যৌন হয়রানির হার হয়তো বেশিই হবে, কিন্তু তা এমন ভয়াবহ হবে তা আমরা কল্পনাও করিনি। অথচ ভারতের মুম্বাই নগরী নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বলে যে ধারণা ছিল, এই সমীক্ষায় সেটার অবসান ঘটল। 

সমীক্ষায় নারীরা আরো জানায়, ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ের রাস্তাগুলোতে যৌন হয়রানি তাদের উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ। তাদের ৯৫ শতাংশ জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ের রাস্তায় তারা কোনো না কোনো ধরনের যৌন হয়রানি বা আক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন। যেমন-অশ্লীল মন্তব্য, স্পর্শ বা সহিংস আক্রমণের মতো পরিস্থিতিতেও তারা পড়েছেন। তবে তারা বিষয়গুলো প্রকাশ না করে বরং চাপা দিতে চান।

সমীক্ষায় ৬৮ শতাংশ নারী এও জানিয়েছেন যে, আক্রান্ত হলেও তাদের কিছুই করার থাকে না। মাত্র ১৫ শতাংশ নারী পুলিশের সাহায্য চান এবং মাত্র ৪ শতাংশ অভিযোগ দাখিল করেন। নারীদের জন্য পুলিশের ১০৩ টি হেল্পলাইন মহারাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও মাত্র ৭ শতাংশ নারী এর সাহায্য নেন। পুলিশের ওপর আস্থা না থাকাতেই নারীরা ওই পথ মাড়ান না বলে তারা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 টাইমস ওয়ার্ল্ড২৪,কম/আনোয়ার/৮আগস্ট

দলিত ম‍‌হিলারা আজও হিংসার সহজ শিকার

অমিত দাস

ভারতীয় সংবিধান নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের কথা বললেও তথ্য ও গবেষণা বলছে অন্য কথা। স্বাধীনতার পরেও সমাজে নারীদের, বিশেষত দলিত মহিলাদের অবস্থা খুব বেশি বদলায়নি। পুরুষতান্ত্রিক জাতপাত নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় দলিত মহিলারা শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচারের শিকার হয়ে পড়ছেন।

দলিত মহিলাদের উপর অত্যাচার নিয়ে একটি সমীক্ষা করে গুজরাটের একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। যে তথ্য উঠে এসেছে তা নাগরিক বিবেককে চমকে দেবার জন্য যথেষ্ট। তথ্য জানার অধিকার আইনে মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং তামিলনাডু থেকে ২০০৪-র ডিসেম্বর থেকে ২০০৯-র নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান ও তথ্য অনুসারে জানা যায় তিনটি রাজ্যে উচ্চবর্ণের লোকেরা যে হিংসা ছড়িয়েছে তার মধ্যে কেবল ০.৭৯ শতাংশ (তিনটি মামলা) অভিযোগের ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে গুজরাটে আদৌ কোনো দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়নি। এমনকি জাতপাতের চরম নিষ্ঠুরতম একটি মামলা বিচারের জন্য আদালতে আসার পর বিচারকের প্রথম প্রশ্ন ছিল — ''আপনি কী আপস করতে চান?'' এই তথ্য ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের।

জাতপাত সংক্রান্ত অপরাধে প্রথাগত ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী দলিত মহিলারাই। তাঁরা দুই ধরনের বৈষম্যের শিকার। উচ্চবর্ণের লোকেরা তাঁদের বাড়ির বাইরে নির্যাতন করে আর নিজের ঘরে তাঁরা লিঙ্গভিত্তিক হিংসার শিকার হন।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের কমিশনের কাছে মহিলাদের অবস্থা প্রসঙ্গে দাখিল করা একটি প্রতিবেদনে ঐ সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ভারতীয় সমাজে দলিত মহিলাদের হিংসার সহজ শিকার বলে মনে করা হয়। কেন না ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা অপরাধ নিবৃত্তকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না এবং দলিত মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হিংসামূলক অপরাধকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় না।

ঐ সংগঠনের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০৪-র ডিসেম্বর থেকে ২০০৯-র নভেম্বর পর্যন্ত তিনটি রাজ্যে অদলিত ব্যক্তিরা দলিত মহিলাদের উপর যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ করেছে তার নথিভুক্ত ৩৭৯টি ঘটনার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ২০১১-র প্রথম দিকে প্রাপ্ত তথ্যটির বিশ্লেষণের পর মাত্র ১০১টি ঘটনার (২৬.৬ শতাংশ) ফলাফল জানা গেছে।

তিনটি রাজ্যে অদলিতরা পাঁচজন দলিত মহিলাকে হত্যা করে (৩টি তামিলনাডু, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে ১টি করে)। ধর্ষণ ও দল বেঁধে ধর্ষণের ৭৬টি ঘটনা (গুজরাটে ২০টি, মহারাষ্ট্রে ৩৫টি, তামিলনাডুতে ২১টি) ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে নিজ সম্প্রদায়ের লোকেদের হাতে (পরিবার সমেত) দলিত মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় তিনটি রাজ্যে ১৫জন দলিত মহিলা খুন হন (৮জন তামিলনাডু, ৪ জন গুজরাট, ৩ জন মহারাষ্ট্রে), ধর্ষণ ও পরপর ধর্ষণের ৩৭টি ঘটনা ঘটে (১৯টি তামিলনাডু, ১২টি গুজরাটে, ৬টি মহারাষ্ট্রে)। মোট ১১৭টি মামলা (৩০.৯ শতাংশ) আদালতে নিষ্পত্তির জন্য আটকে আছে এবং ১৬১টি মামলার (৪২.৫ শতাংশ) অবস্থান অজানা রয়ে গেছে। যে সমস্ত মামলার ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি, সেগুলির কোনো মীমাংসাই হয়নি বলে সমীক্ষায় জানা গেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশেষ কার্যবিবরণী যেখানে মহিলাদের উপর হিংসার উল্লেখ রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, ''দলিত মহিলারা খুন এবং ধর্ষণের মতো হিংসার লক্ষ্য হয়ে উঠছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের কাছে এবং ক্ষমতাসীন উচ্চবর্ণ ব্যক্তিদের কাছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শিক্ষা এবং তাদের অসম্মতিকে থেঁতলে বা গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে শিকার হয়ে পড়ছে।'' ঐ সংগঠনটিও এই বিষয়ে বিশেষ আলোকপাত করেছে।

সম্প্রতি মুম্বাইয়ে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনাসভায় আন্দোলনকারী এবং শিক্ষাবিদরা তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, তফসিলী জাতি এবং আদিবাসী আইনে (হিংসা প্রতিরোধ) রাজ্যের জটিলতা একটি বিরাট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। ঐ সংগঠনের পক্ষে মঞ্জুলা প্রদীপ বলেন, ''আইনটির বয়স ২০ বছর হয়ে গেছে, তবু আইনজ্ঞরাও পর্যন্ত এ সম্বন্ধে কিছু জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমেও ব্যাপারটি নেই।'' বিষয়টি থেকে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা আইনটি লাগু করার ক্ষেত্রে প্রায় নেই বললেই চলে। ফলস্বরূপ দলিতরা অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে এবং অস্পৃশ্যতার তকমা এড়াতে শহরমুখী হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি জাতপাতমূলক হিংসা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে সরকার, পুলিস এবং বিচার ব্যবস্থাকে সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

মহারাষ্ট্রের মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলের দলিত আন্দোলন কর্মী একনাথ অবধ অবশ্য এর জন্য দুর্বল রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ''আন্দোলনকারীরা এবং সাধারণ মানুষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তাঁরা রাজনীতির সাথে লড়তে পারে না।'' মহারাষ্ট্র সরকারের 'নিখুঁত গ্রাম'-র পরিকল্পনা এক্ষেত্রে উল্লেখের দাবি রাখে। জাতপাত এবং অন্যান্য অপরাধ থেকে রেহাই দেওয়ার ও বোঝাপড়ার ব্যাপারে একটি কর্মসূচী তৈরি করা হয়েছে। শ্রী অবধ বলেন, ''এটি জুলুমবাজির লাইসেন্স। দলিতদের বিরুদ্ধে সমস্তরকম প্রতিবন্ধকতাকে একত্রিত করা হয়েছে। পুলিস কোনো ঘটনা নথিভুক্ত করবে না অথবা অযথা বিলম্ব করবে; যদি তাঁরা নথিভুক্ত করেনও তবে বিভ্রান্তিমূলক তদন্ত চালাবে। সেক্ষেত্রে কোনো সাক্ষীই পাওয়া যাবে না। ১৯৯৫-র পর থেকে নথিভুক্ত করার হার ক্রমশ কম। ২০০০ সালের পর তা বন্ধই হয়ে যায়।''

একদিকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে বাস করার গর্ব অনুভব করি, অন্যদিকে গ্রামীণ ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের উপর ক্রমবর্ধমান শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্য। অথচ বৈদ্যুতিন মিডিয়ায় 'রাম রাজত্বের' ঢক্কানিনাদ, কোনটি প্রকৃত ভারতের চিত্র — তা বিচার করার ভার রইলো নাগরিক মনন ও বিবেকের হাতে। এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কিভাবে শক্তিশালী জনগণতন্ত্র গড়ে উঠবে তা নিয়ে প্রত্যেক ভারতবাসীর ভাবার সময় এসেছে।

জেন্ডার সমতা ইস্যু ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে: অমর্ত্য সেন

ঢাকা, ০৬ জানুয়ারী (প্রাইম নিউজ বিডি ডটকম)-   নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, লৈঙ্গিক বা জেন্ডার সমতা ইস্যুতে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
গত শনিবার ইন্ডিয়ান ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বোম্বেতে জি.এল.মেহতা মেমোরিয়াল স্বারক বক্তৃতায় 'ইন্ডিয়া:এ ডিফেন্স এন্ড ক্রিটিক' শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন। এই বক্তৃতায় তিনি সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তার এ বক্তৃতায় এই সময় উঠে আসে বাংলাদেশের জেন্ডার সমতা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাফল্যের মত বিষয়গুলো।
ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক 'দি হিন্দু' রবিবার তার ওই বক্তৃতা নিয়ে 'বাংলাদেশ অ্যাহেড অফ ইন্ডিয়া ইন জেন্ডার ইকুয়্যালিটি' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অর্মত্য সেনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, লিঙ্গভিত্তিক সমতা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিন্তু মানব উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে পড়েছে ভারত।
অনুষ্ঠানে সেন বলেন, 'দিল্লি গণধর্ষণ ঘটনার একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। আর তা হচ্ছে এই ঘটনা ধর্ষণ সম্পর্কে আমাদের টনক নাড়াতে সক্ষম হয়েছে। যারা বলেন যে ধর্ষণ শুধুমাত্র শহরেই ঘটে গ্রামাঞ্চলে ঘটে না তারা আসলে দলিত নারীদের ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে অজ্ঞ। তারা জানেন না যে গ্রামের ওই নারীরা প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।'
বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে সেন বলেন, 'জেন্ডার সমতাকে সমুন্নত রাখতে দেশটির প্রচেষ্টা  প্রসংশনীয়।' তিনি বলেন, 'প্রতিবেশী দেশটি সকল সামাজিক সূচকে আমাদের ছাড়িয়ে গেছে।'
তিনি উল্লেখ করেন, 'অসংখ্য নারী স্বাস্থ্যকর্মী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কারণেই মানব উন্নয়ন সূচকের সকল ক্ষেত্রে ভারতকে পিছনে ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ।'
তিনি আরও বলেন, জন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন লাভ করতে হলে ভারতের উচিত একটি শক্তিশালী কর্মীবাহিনী সৃষ্টি করা।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভারত অন্যান্য দেশের তুলনায় জিডিপির ক্ষুদ্র একটি অংশ খরচ করে। যেখানে ভারত জিডিপির মাত্র ১.২ শতাংশ খরচ করে সেখানে চীন ২.৭ শতাংশ ও ইউরোপিয় দেশগুলো ৭.৯ শতাংশ খরচ করে। তিনি বলেন, বাজার অর্থনীতিকে গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত কিন্তু তাই বলে সবকিছুর উপরে তাকে স্থান দেয়া উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন,' অনেকেই মনে করে চীন সামগ্রিকভাবে বাজার অর্থনীতি দখল করে নিয়েছে কিন্তু এটা সম্ভব নয়। বরং চীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। আর এই কারণেই তারা আজ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।'

পুলিশ মামলা না নেয়ায় ভারতে ধর্ষিতার আত্মহত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
দিওয়ালী অনুষ্ঠানে দুই দুর্বৃত্ত কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার পর থানায় মামলা করতে গিয়েছিল ভারতের পাতিয়ালায় ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী। পাঁচ মাস ধরে চেষ্টা করলেও থানা তার মামলা নেয়নি। উপরন্তু পুলিশ তাকে আরও যৌন হয়রানি করে। অগত্যা হতভাগ্য ওই কিশোরী গত শুক্রবার আত্মহত্যা করে। সুইসাইডাল নোটে সে নিজেই এ কথা লিখে গেছে।
মর্মান্তিক ওই ঘটনাটি এমন একসময় ঘটে যখন চলন্ত বাসে এক মেডিকেল ছাত্রীকে ছয় নরপশুর ধর্ষণ করার ঘটনায় দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের মসনদ কেঁপে উঠেছে। তবে 'সভ্য' ভারতে এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতিদিনই দেশটিতে এ ধরনের বহু বেদনাদায়ক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে সেগুলো লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। 'ভারতকন্যা'-খ্যাত ওই মেডিকেল ছাত্রীর (প্রকৃত নাম প্রকাশ করা হয়নি) ধর্ষণের ঘটনায় ভারতজুড়ে যখন তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে, সেই সময়ে ২৭ ডিসেম্বর, ঠিক একই ধরনের আরও একটি ঘটনা ঘটে। উত্তর প্রদেশ থেকে ৪২ বছর বয়সী এক মহিলাকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে তিন দুর্বৃত্ত ধর্ষণ করে দিল্লিতে ফেলে রেখে যায়। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর কর্ণাটকে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েশিশুকে অপহরণের পর ধর্ষণ করেছে বিবাহিত নরপশুরা। ঘটনাটি গতকাল প্রকাশ পায়। চলতি মাসের শুরুতে ভারতের হাসান জেলায় ১০ দুর্বৃত্ত ১৭ বছর বয়সী এক দলিত কিশোরীকে ১০ দিন ধরে ধর্ষণ করে।
দস্যুরানী ফুলন দেবীকে নিয়ে নির্মিত 'ব্যান্ডিট কুইন' সিনেমার মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে রোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনা বেশ আলোচনায় এলেও সেখানে এ ধরনের বর্বর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারতে ২০১১ সালে অন্তত ২৪ হাজার ২০৯ জনকে এভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে ভারতে এক লাখ নারীর মধ্যে ১৮.৯ জন ধর্ষিত হয়েছে। সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও উইকিপিডিয়া

সোমবার, দ্বাদশ শেণির এই ছাত্রী সন্ধে সাড়ে ৮টা নাগাদ গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরমের কাছে অটোয় ওঠেন ওই তরুণী। অভিযোগ, এর পরেই তরুণীর মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে তিন যুবক। তাঁকে মারধরও করা হয়। এর পর তাঁর মোবাইল ফোন, টাকা পয়সা লুঠ করে ন্যাশানাল হাইওয়েতে তরুণীকে ফেলে রেখে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

অভিযুক্তদের সকলেরই বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এখনও পর্যন্ত অঙ্কিত আর দাব্বান নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। সার্কেল অফিসার রণবিজয় সিং জানিয়েছেন ধৃতরা ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে। তৃতীয় অভিযুক্ত এখনও পলাতক।

কটূক্তির প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হলেন এক দম্পতি। ঘটনাটি  হাওড়ার বালির। গুরুতর জখম অবস্থায় মহিলার স্বামীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। ওই মহিলাকে মারধরের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিস।

হাওড়ার বালির পঞ্চাননতলায় নতুন ফ্ল্যাটে  বসবাস শুরুর পর থেকেই শান্তিতে ছিলেন না  দম্পতি। আবাসনের এক যুবক বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই মহিলাকে উত্যক্ত করত বলে অভিযোগ। শনিবার কটূক্তির প্রতিবাদ করায়  মহিলাকে মারধর শুরু করে ওই যুবক। অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে মহিলার স্বামীকেও মারধর  করে ভাঙা কাঁচের টুকরো নিয়ে তাঁর ওপর চড়াও হয়। কাঁচের টুকরোয় হাতের শিরা কেটে যায় মহিলার স্বামীর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়।

বালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। শনিবার রাতেই ওই যুবককে গ্রেফতার করে  পুলিস। 

কলকাতা: মহিলারা এরাজ্যে কত নিরাপদ, সরকার তাঁদের জন্য কত কী করেছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে গ্রামে তা প্রচারের জন্য দলের মহিলা কর্মীদের শিক্ষিত করতে 'মধুর ভুবন' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ অথচ তৃণমূলের সেই দাবির মূলে আঘাত করে রাজ্য সরকারকে ফের একবার অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি বলেছেন, নারী নির্যাতনের ঘটনায় দিল্লির থেকে পিছিয়ে নেই এরাজ্য৷ হয়তো বা এগিয়ে৷ অথচ ঘুমোচ্ছে নাগরিক সমাজ! সরকার এবং সচেতন বাঙালিকে একইসঙ্গে অস্বস্তিতে ফেলে তাঁর আহ্বান, সচেতনতা তৈরি করতে দিল্লির মতোই পথে নামুক পশ্চিমবঙ্গ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে রাজ্য লিগাল এইড সার্ভিস এবং কলকাতা হাইকোর্ট লিগাল এইড সার্ভিসের যৌথ উদ্যোগে হাইকোর্টের সার্ধশতবার্ষিকী ভবনে শনিবার এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়৷ সেখানেই তিনি এই মন্তব্য করেন৷ দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের পর রাজধানীর নাগরিক আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করে সুপ্রিম কোর্টের এই প্রাক্তন বিচারপতি দাবি করেছেন, নারী নির্যাতনবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে এধরনের গণ আন্দোলনের ভূমিকা বিশাল৷ আর এপ্রসঙ্গেই ক্ষোভের সুরে তিনি বলেছেন, এরাজ্যে নারী নির্যাতন বাড়লেও, নাগরিক সমাজ ঘুমোচ্ছে! 
নাগরিক আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে তিনি জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন৷ মনে করিয়ে দেন, জেসিকা লাল হত্যারও সুবিচার হত না যদি মানুষ রাস্তায় না নামতেন৷ তাঁর দাবি, কঠোর আইন নয়, নারীর সমান অধিকার সম্পর্কে নাগরিক সচেতনতাই বন্ধ করতে পারে নারী নির্যাতন৷ এমনকী, অনেক ক্ষেত্রে বিচারকদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ 
অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের পর বলতে উঠে দেশের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরও পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর জোর দেন৷ প্রশ্ন তোলেন মধ্য রাতে কলকাতার রাস্তায় একজন মহিলা নিজের ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারবেন না কেন? 
দুই বিচারপতি একটি বিষয়ে একমত, যে শুধু কঠোর আইন প্রণয়নে নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না৷ অর্ধেক আকাশের বিবর্ণ ছবিটা বদলাতে পারে একমাত্র সামাজিক সচেতনতা৷ 

রাজস্থানের আলোয়ারে এক জার্মান যুবতীকে ধর্ষণের অপরাধে সাত বছরের জেল হয় কিন্তু ২০০৬ সালে জামিন পেয়ে শর্ত ভেঙে পালিয়ে যান, এমনকী নাম ভাঁড়িয়ে গত তিন বছর ধরে কান্নুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে চাকরিও করছিলেন কিন্তু শেষরক্ষা হল না সহকর্মীদের কাছে ধরা পড়ে গেলেন বিট্টি মোহান্তি! ওড়িশা পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি বি বি মোহান্তির পুত্র বিট্টিকে শনিবার কেরল পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাঁকে আজই প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হলে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
জানা গিয়েছে, জামিন পেয়ে পালানোর পর আসল পরিচয় গোপন করে এমবিএ ডিগ্রি পান বিট্টি তারপর কেরলের ওই ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসারের চাকরিও জোগাড় করেন নিজের পরিচয় দেন অন্ধ্রপ্রদেশের ছেলে, রাজা রাঘব' নামে এমনকী মালয়ালম ভাষাও রপ্ত করে ফেলেন এভাবে ভালই চলছিল কিন্তু তাঁর আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ল দিল্লি গণধর্ষণের পর বিভিন্ন চ্যানেল, ইন্টারনেটে বিভিন্ন যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, দোষীদের ছবি সম্প্রচারিত হওয়ার পর ওই দোষীদের ছবির ভিড়ে জ্বলজ্বল করছে বিট্টির মুখ! সহকর্মীদের চিনতে অসুবিধা হয়নি তাঁকে পুলিশকে খবর দেন তাঁরা গত সপ্তাহে বিট্টিকে তাঁর স্থানীয় আবাস থেকে ধরা হয় জেরার মুখে অপরাধ কবুল করেন তিনি রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁর পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় কেরল পুলিশ বিট্টির বিরুদ্ধে জালিয়াতি, পরিচয় গোপন করা, প্রতারণার অভিযোগে স্থানীয় থানায় মামলা করা হয়েছে  

নয়াদিল্লি: ফের দিল্লিতে গনধর্ষণের অভিযোগ। গত ২৪ ঘন্টায় জাতীয় রাজধানীতে দুটি গনধর্ষণের ঘটনা ঘটল। দুটি ক্ষেত্রেই ধর্ষণের পর নির্যাতিতাদের নির্জন জায়গায় ফেলে দেয় দুষ্কৃতিরা। 
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে পূর্ব দিল্লির ওয়েলকাম এলাকায়। সেখানে এক ২৫ বছরের মহিলাকে একটি চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে ৪ দুষ্কৃতি।মঙ্গলবার সকালে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ভ্যান পূর্ব দিল্লির নয়া জাফরাবাদ এলাকার একটি ডাস্টবিনের কাছে অচৈতন্য অবস্থায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করে। তাঁকে গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিতা ওই মহিলার শারিরীক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে বসন্তকুঞ্জ এলাকায়। মঙ্গলবার ২২ বছরের এক ক্লাব ড্যান্সারকে ধর্ষণ করে তিন জন। ওই তরুণীর দাবি, দুষ্কৃতিরা তাঁকে কুসুমপুর পাহাড়ির একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওই তিনজন ধর্ষণ করে।পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী বসন্ত বিহারের একটি নাইট ক্লাবে কাজ করেন। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ক্লাবের বাইরে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দুজনের। তারাই ওই তরুণীকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
এরইমধ্যে গাজিয়াবাদেও দিল্লির এক ১৯ বছরের তরুণীকে অটোর মধ্যে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত ২ মার্চ তিন জনের সঙ্গে ওই তরুণী শেয়ারের অটোতে করে যাচ্ছিলেন। তরুণীর দাবি, হঠাত্ই পথ পরিবর্তন করে অটোটি দাসনার দিকে যেতে শুরু করে। এরপর তাকে দাসনার এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে দুষ্কৃতিরা।তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ১৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে ২২ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণ ও পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে মহিলাদের নিরাপত্তা ও দোষীদের কঠোর সাজার দাবিতে উত্তাল হয়েছিল দিল্লি সহ সারা দেশই। কিন্তু পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রচার স্বত্বেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। চলতি বছরে দিল্লিতে দৈনিক গড়ে প্রায় চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীতে ১৮১ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম রামচন্দ্রন রাজ্যসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে বুধবার এই তথ্য জানিয়েছেন।


চন্ডীগড়: যৌন লাঞ্ছনার অভিযোগ জানাতে গিয়েও লাঞ্ছনাই জুটল কপালে।বাবাকে নিয়ে তরনতারনে পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন এক মহিলা। কিন্তু তাঁর কথা শোনা তো দূরের কথা, উল্টে তাঁকেই প্রকাশ্যে চড় মারে, মারধর করে দুজন পুলিশকর্মী। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে শোরগোল, বিতর্কের ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মহিলার অভিযোগ, গতকাল একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে এক ট্রাকচালক তাঁর শ্লীলতাহানি করে৷ এরপর তিনি বাড়ির লোকেদের ডাকেন৷ ট্রাক চালকদের সঙ্গে শুরু হয় বাদানুবাদ৷ ওই এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টে ট্রাক চালকদের সঙ্গে মিলে তাঁর উপরেই চড়াও হন দুই পুলিশ কর্মী৷ তাঁর বাবাকেও মারধর করা হয়৷ ওই মহিলার দাবি, শেষমেশ সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান তাঁরা৷ 
পঞ্জাব পুলিশের এই ভূমিকার নিন্দায় সরব হয় সব মহল৷  এরপরই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল৷ কোন পরিস্থিতিতে কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তা এক সপ্তাহের মধ্যে তরনতারণ জেলার ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে পুলিশ। যত ক্ষমতাশালীই হোক, অপরাধীরা রেহাই পাবে না বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।গতকালই অভিযুক্ত দুই পুলিশকর্মী দেবিন্দর সিংহ ও সরজ সিংহকে সাসপেন্ড করে তাদের  বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে তবে তাদের বরখাস্ত করার দাবিতে অনড় অভিযোগকারিণী ও তার পরিজনরা৷ 
এদিকে, তরনতারনের ঘটনার আঁচ এদিন পড়েছে সংসদেও৷ পঞ্জাব সরকারের সমালোচনায় মুখর হন কংগ্রেস সাংসদেরা৷ শেষ পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন৷ পঞ্জাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন৷ 

তরনতারণের পুলিশ সুপার কানওয়ালজিত অবশ্য এর আগে দাবি করেন, মহিলার বাবা মত্ত অবস্থায় অভিযোগ জানাতে এসে পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন৷ তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কিন্তু ওই মহিলা পুলিশকে বাধা দেওয়ায় ধস্তাধস্তির জেরে মাথার পাগড়ি খুলে যায় দুই পুলিশকর্মীর ক্ষিপ্ত হয়ে তারা মারধর করে তাঁকে৷
অন্যদিকে মহিলার দাবি অনুযায়ী, অভিযুক্ত ট্রাক চালকদের বিরুদ্ধে কেন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা কোনও ব্যবস্থা নিলেন না, উল্টে মহিলা এবং তার পরিজনকেই কেন মারধর করা হল, সেবিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি পঞ্জাব পুলিশ৷


দিল্লীর নারী ধষর্ণে মর্মভেদী আর্তনাদপ্রিন্ট কর
সোনা কান্তি বড়ুয়া, টরন্টো থেকে   
মঙ্গলবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৩
 
 কামাগ্নির বশে মানুষ এমনতরো পশু এবং নিষ্ঠুর হল কেন? সত্য মেব জয়তের দেশে বিগত ১৬ ই ডিসেম্বর ২০১২ রাতে নয়া দিল্লীর চলন্ত বাসে ওঠে প্রথমে জনঅরণ্যের নরদেহধারী গুন্ডারা ছাত্রীর ছেলে বন্ধুকে আহত করে তারপর ২৩ বছরের মেডিক্যাল ছাত্রীকে পাঁচ জন নরপশু সন্মিলিত ভাবে লোমহর্ষকর ধর্ষণ করার পর উলঙ্গ করে বাস থেকে ফেলে দেয়। অহো ! মানবতার কি মর্মভেদী আর্তনাদ! অসহ্য বেদনা এবং নানা অত্যাচারে ধর্ষিতা ছাত্রীর সারা দেহ রক্তাক্ত মানব পশুর বিভীৎস দংশনে ।
 একজন পুলিশ ও মেয়েটি কে রক্ষা করতে এলো না; তেত্রিশ কোটি দেবতার ভারতবর্ষে। সৃষ্ঠি কি ডুবিল আজি প্রলয়ের গভীরে? তার দেহ মন জুড়ে ব্যাথা ও সীমাহীন বেদনার যোগফলে উক্ত পশু মানুষদের প্রতি বিপুল ধিক্কার। আমৃত্যু দুঃখের তপস্যার এই জীবন নিয়ে মানুষ  মানুষের প্রতি বিশ্বাস করে ভুল হয়ে গেল। মনুষ্য জাতির প্রতি কোন বিশ্বাস আর অবশিষ্ঠ র'লো না। অন্ধকার চারিদিকে ঘিরে ফেলেছে উক্ত ম্যাডিক্যাল ছাত্রীকে ।  ভবিষ্যতে ডাক্তার হবার আজন্মের সাধ চিরতরে বিলীন হয়ে গেল। পশু মানুষের কি মা বোন নেই? যেখানে সভ্যতার  আলো  জ্বলে সেই রাজধানীর বুকে সীমাহীন অত্যাচার অনাচারের আঁধার। জড়িয়ে ধরে আছি যে সমাজকে, সেই মানব সমাজ আমার নয়। ভদ্রবেশী বর্বর পশুমানব তাদের ক্ষণিকের  লোভ লালশার তৃষ্ণারাশি চরিতার্থ করতে গিয়ে , একজন অপাপবিদ্ধা জীবন্ত মেয়েকে পাশবিক অত্যাচার করতে করতে তার জীবন শেষ করে দিল। মাতৃজাতিকে কলঙ্কিত করতে গিয়ে নিজের বন্দে মাতরম বা মা বসুন্ধরা কে অপমানিত করেছে। সভ্য মানুষের শহরে মেয়েরা কি লেখা পড়া করতে পারবে না? পুলিশ প্রশাসন এবং রাষ্ঠ্রের দায়িত্ব কি? উত্তাল দিল্লীর মহা জনতার দাবী : 'আমরা জনঅরণ্যের নরদেহধারী পাঁচটি ধর্ষক দানবদের ফাঁসি চাই।' রাজধানী দিল্লীর পুলিশ প্রশাসন সেল ফোনের যুগে কিছুই জানে না । উক্ত ছাত্রী কে প্রথমে দিল্লীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল এবং তিনি সেখানে মারা গেলেন। কিন্তু ধর্ষিত ছাত্রীর ধর্ষন ও মৃত্যুর জন্যে ভারত সরকারই দায়ী। জনতা কে রক্ষা করাই ভারতের রাষ্ঠ্রশক্তির দায়িত্ব এবং কর্তব্য। দিল্লীর উত্তাল জনতার মন বলে,
"মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে,
সন্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। "
যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে। 
মানুষের পরশের প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে!
বিধাতার রুদ্ররোষে দূর্ভিক্ষের দ্বারে বসে
ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান। " . . 
বিপুল মানব সমুদ্রে আত্মসংযম করতে না পারলে ডোপামিন নামক মানব দেহের একটি হরমোনই সন্ত্রাস এবং ধর্ষণের জন্য দায়ী। ধর্মের নাম দিয়ে ধর্মান্ধ মন্ত্রদাতা পন্ডিত, রাজনৈতিক স্থানীয় নেতা, সন্ত্রাসী, পুরোহিত এবং শাসকগণ গোপনে মেয়ে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দেবদাসী প্রথা আজ ও বন্ধ হয় নি। দৈনিক পত্রিকা, সিনেমা এবং দূরদশনের পর্দায় শিক্ষা এবং ধর্মের নামে আত্মসংযম শিক্ষা প্রদানের সুযোগ হলে হয়তো নারী ধর্ষণ কিছুটা হলে ও কমবে। তবে চোরে বা নরপশুরা না শোনে ধর্ম কথা। পত্রিকায় ভারতের  রাজধানী দিল্লীর নারী ধর্ষণচক্র এবং মহাভারতের অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ঠ্রের রাজসভায় রাজবধূ দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ সম্বন্ধে আমরা মহাভারতে পড়েছি। উক্ত বস্ত্র হরনের বিচারের বানী আজ ও নীরবে নিভৃতে কাঁদে। হিন্দু ভারতের ধর্মান্ধ সমাজপতিগণ মনুর আইন মেনে চলে এবং পতœী স্বামীর বস্তু বলে  মহাভারতে পিতামহ ভীস্ম দ্রৌপদীকে বলেছিলেন। নারী শুধু ভোগের সামগ্রী মহবস্তু নয়; জনতা মহাভারতের পাপীষ্ঠ পরমপরার ধর্ষণের মহামারি থেকে মুক্তি পেতে  মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে হরে নারী পুরুষের পরিপূরক মাতৃজাতি এবং মানব সন্তান। নারী বা মাতৃজাতি ধর্ষণে পুরুষের পশুত্ব লাভে পুরুষেরই কলঙ্ক।
জাতিভেদ প্রথায়  গরীব শূদ্র ও দলিত মেয়েদেরকে ধর্ষণ করে ধর্মের নামে হালাল পদ্ধতি :
গরীব এবং দলিত মেয়েদেরকে নিয়ে ধর্মান্ধদের দেবদাসী প্রথায় পুরোহিত এবং মেয়ে চালানকারীদের অশুভ জোট পুলিশ ধরেছে কি?  আইনের শাসনে রাজধানী দিল্লীর পুলিশ এবং বিভিন্ন নগর প্রতিরক্ষা বাহিনীরা এক ঘন্টার ও অধিক সময় যাবত উক্ত বাসটা কোথাও থামছে না দেখে কোন কর্তব্য পালন না করে কি শুধু মহামন্ত্রীদের রক্ষায় ব্যন্ত?  রাজধানী দিল্লী কি মগের মুল্লুক?  এই জন্যে ভারতীয় রাষ্ঠ্রশক্তিই দায়ী। সাধারণ মানুষের জীবন ধারনই অভিশাপ কিন্তু মন্ত্রি মহোদয়ের মেয়ের পাশে সিকিউরিটি বিরাজমান। চতুর ধর্মান্ধ ব্রাহ্মণ জন শিক্ষার নামে কল্পিত ভগবানের চাবি নিয়ে এই ভাবে জাতিভেদ প্রথা দিয়ে  নর নারায়ণকে দলিত বানিয়েছে । কোন ও ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)। কতিপয় নরদেহধারী দানব মানবতাকে ধ্বংস করার ফলে দিল্লীতে নারী ধর্ষণ করে মেরেছে।
ধনীরা গরীব দলিত মেয়েদেরকে ধর্ষণ করলে ভারতীয় পুলিশ বা রাষ্ঠ্রশক্তি কি শাস্তি দিয়েছে ? পাপ বাপকে ও ছাড়বে না। প্রসঙ্গত: ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় পুরুষেরা হাজার হাজার বছর যাবত দলিত মেয়েদেরকে ধর্ষণ করেছে দিনের পর দিন। আইনের শাসন নেই এবং ধর্ষনের পশ্চাৎপটটি ভয়াবহ, একটি সুপ্রাচীন জাতিভেদ প্রথা নিয়ে জাতির পাঁচ হাজার বছরের চলমান বিভীষিকায় দিল্লীর চলন্ত বাসে মেডিক্যাল ছাত্রী  ও জাতির কুল কুমারী ধর্ষিত হল। ছিঃ! ভারতীয় পুলিশ প্রশাসন! ছিঃ !  আইনের শাসনে এই কি ভারতীয় সভ্যতার অবদান? ভারতীয় ধর্মান্ধ শক্তির ক্ষুধিত আষ্ফালন সহ উক্ত অমানবিক কারনে আপাপবিদ্ধা হাজার হাজার যুবতী মেয়ের কত আশা অনন্ত পিপাসার স্বপ্ন চিরতরে শেষ হয়ে গেল। 
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীর ধর্ষণ চক্রের বিভীষিকাময় সংবাদ পড়ে আমাদের মহাভারতের কথা মনে পড়ে গেল। অতীতে একদা ঋষি  পরাশর মুনি  সত্যবতী নামক যুবতী মেয়ের নৌকায় বসে নদীর অপর পারে যাবার পথে প্রথম দেখায় ঋষির কামনার অগ্নিজ্বলে উঠে এবং শেষ পর্যন্ত উভয়ের দৈহিক মিলনে মহাভারতের লেখক বেদব্যসের জন্ম হয়। ধর্মের নাম দিয়ে  মহাভারতে সত্যবতী তাঁর ছেলে মহাভারত রচয়িতা ঋষি বেদব্যাস কে (সত্যবতীর বিয়ের আগের গোপন ছেলে)তপোবন থেকে মাত্র কয়েকদিনের জন্য হস্তিনাপূরের রাজ প্রাসাদে আমন্ত্রন করে এনে তিনজন অচেনা নারী কে ধর্ষণ বা  মধুচন্দ্রিমা যাপন করার আদেশ দিলেন গর্ভবতী করার মানসে।  'অন্যায় ন্যায় হল, অসত্য সত্য হল, অধর্মযুদ্ধ হল ধর্মযুদ্ধ (নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী, দেশ, কলকাতা, নভেম্বর ০১, ১৯৯৭)। "
অনেকে ধর্মীয় দেবীদেরকে সকাল বিকাল ঘরে এবং মন্দিরে পূজা করলে ও সরকারি হিসেব বাস্তবে মেয়ে শিশুর প্রতি সীমাহীন অবজ্ঞা থেকেই ভারতীয় দম্পতিরা গর্ভস্থিত  নারী শিশুর ভ্রুন হত্যা করে মানবতার সর্বনাশ ডেকে আনছে। গৌতমবুদ্ধ শ্রীমালা সূত্রে ব্যাখ্যা করে বলেছেন মেয়ে শিশু ইচ্ছা করলে দান শীল ভাবনা সহ দশ পারমি যথাযথ ভাবে পালন করলে ভবিষ্যতে (আগামি জন্মে কঠিন সাধনায়)  বুদ্ধ হতে পারবেন। পুরোহিত ব্রাহ্মণ কি পরম পূজনীয় বুদ্ধের বাণী জনতাকে বিশ্লেষন করে বলবেন? ধোঁকাবাজি এবং নারী ধর্ষণ ভারত সহ বিশ্বের সামাজিক ব্যাধি এবং ইহা মানবজাতির রক্তের দোষ বা জিনগত ভয়ঙ্কার নেশা থেকে বাঁচতে "মন চায় চক্ষু না চায়" ধ্যান করতে হবে। মানুষ সত্য, মঙ্গল ও সুন্দরের প্রতীক। কারন আধুনিক ভারতীয় জনতা সহ বিশ্বসমাজে মানুষ বিশ্রামের সময় হারিয়েছে । হারিয়েছে জীবনের প্রশান্তি ও স্নিগ্ধতা।
লজ্জা নিরারনের জন্যে মানুষ কাপড় পরে। বলতে লজ্জা হয়, পুজার বেদীতে লিঙ্গ বা যোনী না রেখে শিবের (অবলোকিতেশ্বর বোধিসত্ত্ব) ধ্যানী মূর্তি রাখাই উত্তম মঙ্গল। দূরদর্শনের পর্দায় কামোদ্দীপক সিনেমা সহ ধর্মের নামে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের লোমহর্ষকর দৃশ্যের আলোকে কিশোর বয়সের সাইকোলোজিতে লিঙ্গ ও যোনী পূজার প্রভাবই  বাসে নারী ধর্ষণের মহামারি রোগ বৃদ্ধি করেছে। ভারতজুড়ে কামশাস্ত্রের নামে ধর্মান্ধ নেতা, জমিদার, সিনেমার মালিক ও সমাজপতিদের ভ্রষ্ঠাচার  বন্ধের জন্যে ভারতের রাষ্ঠ্রশক্তি নীরব কেন?
সবার প্রশ্ন ভারতে দলিত এবং নারীর মানবাধিকার আছে কি? আমাদের দক্ষিন এশিয়ায় গৃহ সমূহে আগে পুরুষেরা আহার করেন, পরে মেয়েরা আহার করেন। শুরু হল বিভেদ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। হিন্দু শাস্ত্রের মহামন্ত্র 'লোকা সামাস্তা সুখিনো ভবন্তু ' বাদ দিয়ে ভারতীয় সমাজের হিন্দু পুরোহিত (গীতা ৮/ ১৩ এবং ১৮ / ৪১ থেকে ৪৪)  এবং শাসকগণ সন্মিলিত ভাবে ধর্মের নাম দিয়ে (১) ব্রাহ্মণ (২)ক্ষত্রিয় (৩) বৈশ্য (৪) শূদ্র বা দলিত চতুবর্ণ সৃষ্ঠি করে অখন্ড মানব জাতিকে হিংসা বিদ্বেষ দিয়ে খন্ড বিখন্ড করেছেন।  ভারতীয় ভ্রষ্ঠাচারের মূলকারন জাতিভেদ প্রথার অভিশাপ।  মানবাধিকারের আলোতে আইনতঃ অপরাধ হলো, মানুষ মানুষকে চন্ডাল বা বিধর্মী বলে ঘৃণা করা । দেশ পত্রিকার লেখক দীপঙ্কর রায়ের মতে,  "গীতায় একজন বুদ্ধিমান আরেকজন অপেক্ষাকৃত অল্প বুদ্ধিমানকে হত্যায় প্ররোচিত করছেন। এই প্ররোচনার ফলে মানুষ নিহত হয়েছিলেন অগণ্য। এর পর হাজার বছর ধরে সেই প্ররোচনামূলক গ্রন্থটিকে একটি জাতির মহান গ্রন্থ বলে জাহির করে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা চলেছে (দেশ, কোলকাতা, জুন ২২, ১৯৯১)।" হিন্দু সমাজে মানবাধিকার না থাকায় ভারতের জাতীয় পতাকায় গৌতমবুদ্ধের অহিংসা পরমধর্ম সম্বলিত রাষ্ঠ্রীয় স্মারক চিহ্ন অশোকচক্র বিরাজমান ।
 হাজার বছর যাবত ভারতে দুঃখের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে ২৫ কোটি দলিত জনগণ
বিগত ১১ই মে, ২০১২ আনন্দবাজার পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম ছিল, "পাঠ্যে কার্টুন, সংসদে তুলকালাম।" ভারতীয় রাজ্যসভায় ভারতরত্ন্ব আম্বেদকরকে আক্রমন করতে কার্টুনে জওহরলাল নেহেরুর চাবুক নিয়ে এতো হাঙ্গামা কীসের? মানবতাকে বাদ দিয়ে জাত ও ধর্ম দিয়ে তো আজ আর মানুষের মগজ ধোলাই করা যায় না।  কারন ৬৩ বছর পূর্বে ভারতের সংবিধান প্রনেতা ভারতরতœ ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরকে অপমান করতে যে কার্টুন রচিত হয়েছিল সেই কার্টুন আবার ২০০৬ সালে  ভারতীয় নবম শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকের সিলেবাসে সংযোজিত হওয়ার কারনে দলিত বিধায়কগণ অপমানিত হয়েছেন। ভারতীয় পার্লামেন্ট ঘরে পোষে জাতিভেদ প্রথার চোর, আর ও কহে জোর, এ বড় কুটিনী ঘাগী। হিংস্র রাজনীতির পান্ডাগণ যদি কয় মিছা অতিশয় / ভারতীয় জন গণ মনে জাগে ধান্ধা।" বৈদিক সভ্যতা  অহিংসা পরম ধর্ম ত্যাগ করে মানব বা ব্রাহ্মণ হয়ে মহামানব ডঃ আম্বেদকরকে এভাবে অপমান করতে পারে কি?   সর্বভারতীয় মহান নেতা এবং স্বাধীন ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরকে প্রহারের কার্টুনে জওয়ারলাল নেহেরুর হাতে চাবুকের প্রতিবেদন ।  কট্টর হিন্দুত্ববাদীগণ কর্তৃক উক্ত কার্টুনে জওহরলাল নেহেরুর হাতে চাবুক দিয়ে  আম্বেদকরকে প্রহার করার কল্পিত অপমান বজ্রাঘাত  তুল্য। হিন্দু জাতির কলঙ্গ জাতিভেদ প্রথায় সর্বপ্রথম ২৮শে আগষ্ট ১৯৪৯ সালে আম্বেদকরকে অপমান করে উক্ত কার্টুন ভারতীয় হিন্দু সমাজের মগজ ধোলাই করতে কেশব শংকর পিল্লাই তার সম্পাদিত "শংকর সপ্তাহিকীতে "।
খৃষ্ঠপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে ঋগে¦দের (প্রথম বেদ) (১/১০৫/৮ ও ১০/৩৩/২) মতে বৈদিক ধর্ম পন্থী আর্য্যদের রাজা ইন্দ্র মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেন ।  প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বৈদিক সাহিত্যে বিরাজমান এবং প্রাচীন উপনিষদের বিভিন্ন উপদেশ বৌদ্ধধর্ম থেকে নকল করা হয়েছে বলে গৌতমবুদ্ধ ত্রিপিটকের (মধ্যম নিকায়ের ৭৫ নন্বর) মাগন্দিয় সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন।  বৈদিক উপনিষদ সাহিত্য সহ বিভিন্ন পুরাণ কাহিনীতে বৌদ্ধধর্মকে নকল করে হিন্দুধর্ম করা হয়েছে এবং হিন্দু শাসকগণ)। সচিত্র প্রতিবেদন পাঠে দলিত জনতা রবি ঠাকুরের কবিতায় জেনেছেন, .
তখন ভারতীয় দলিত সমাজ হিন্দুরাজনীতির কুচক্রে সাত পাঁকে বাঁধা থাকায় হিন্দুধর্মের অপব্যবহারের (জাতিভেদ প্রথা) বিরুদ্ধে মাথা তুলতে পারেন নি। আজ দলিত জাতি মানুষ হয়েছেন এবং দলিত মহাজনতার গণ অসন্তোষের আগুন ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রবেশ করে উক্ত নবম শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকের পরামর্শদাতাদ্বয় যোগেন্দ্র যাদব এবং সুহাস পাইশিকারকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।  রাজনীতিবিদগণকে বেদ বেদান্ত উপনিষদ / দেয়না এদের আলো /  মনটা এদের ভীষণ জঠিল / কুটিল কঠিন কালো। মানুষ নামক অত্যাচারী হিন্দু পান্ডা ও কার্টুনিষ্ঠ কেশব শংকর পিল্লাই, নবম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা যোগেন্দ্র যাদব এবং সুহাস পাইশিকার হিন্দুরাজনীতির সুতনয় বটে, গণতান্ত্রীক ভারতে তারা শুধু আম্বেদকরের মতো মহামানবকে অত্যাচার করে এবং তারা মগজে বিকার, চিন্তায় পাপী।   পা   চাটা পান্ডাগণ ব্রাহ্মণ্যরাজনীতির লাঠিয়াল। মহামানব আম্বেদকরপন্থী ভারতীয় পার্লামেন্টের বিধায়কগণ রাজ্যসভায় বলেন, "বার বার তুমি অত্যাচারী ঘুঘু সেজে খেয়ে যাও ধান /  এইবার ঘুঘু অত্যাচারী কার্টুনিষ্ঠের দল তোমাদের অত্যাচারের করবো অবসান। সরলতায় সাধুতায়, ধর্ম প্রীতি ও প্রেমের পুন্য বাঁধনে সাচ্চা কোমল বান্দা নও তোমরা।" ধর্মীয় রসের হাঁড়িতে রাজনীতিকে মজাদার করতে ভারতীয় শাসকগণ সহ ব্রাহ্মনেরা জাতিভেদ প্রথাকে যোগ করে যে দলিত বা চন্ডালের বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তারই অপমানজনক দিকটি হল  কার্টুনিষ্ঠ কেশব শংকর পিল্লাই তার স্বপ্নজগতে ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরকে প্রহার করতে  চাবুক হাতে জওহরলাল নেহেরুর চিত্র বিরাজমান। "শাসনে যতই ঘেরো, আছে বল দূর্বলেরো (বা দলিতদেরো)।"
হিংসামূলক জাতিভেদ প্রথায় জীবসেবার স্থান নেই। "রাশি রাশি বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস করে হিন্দু মন্দিরে বদলানো হয়েছিল (সম্পাদকীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩ আগষ্ট, ১৯৯৩) দক্ষিন এশিয়া জুড়ে।"   সম্প্রতি ভারতীয়  লোকসভায় স্বর্গীয় সর্বভারতীয় নেতা ও ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা ভারতরতœ ডঃ আম্বেদকরের অপমানজনক কার্টুন নিয়ে তোলপাড় হয় । ভারতের নবম শ্রেণীর সমাজ পাঠ শীর্ষক গ্রন্থে বাবা সাহেব আম্বেদকরের নামে কটূক্তিমূলক কার্টুন ভারতীয় সংখ্যা গরিষ্ট হিন্দু রাজনীতির দাদাগণের ক্রোধ, লোভ, বাসনা, ঈর্ষা এবং অহংকার প্রভৃতি মনোবিকার সমূহের পরিচয়ে  ভারতরতœ ডঃ আম্বেদকরকে মারতে জওহরলাল নেহেরুর হাতে চাবুক এবং উক্ত কার্টুন বৈদিক জাতিভেদ প্রথায় 'দলিত এবং চন্ডাল নির্যাতনের ' ইহা এক বিভীৎস চিত্র।   ভারতের পূজনীয় ব্যক্তিত্বকে কার্টুন দিয়ে অপমান করা কি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য গৌরবজনক?  ব্রাহ্মণগণ বিদেশী তুর্কী বা গ্রীকদের সাথে সসন্মানে কথা বলেন, কিন্তু একই অঞ্চলের গরীর মানুষদেরকে  হিন্দুধর্মের অপব্যবহার করে দলিত বা চন্ডাল বানিয়ে তাদেরকে পদে পদে অপমানিত করেন।  মানুষজাতির স্বজন হয়ে মুখে হিন্দুপন্ডিতগণ বলেন, "লোক সামাস্তা সুখিনো ভবন্তুু ;" কাজে ' মনুর আইন ' নিয়ে সর্বহারা গরীব জনতাকে ' চন্ডাল এবং দলিত ' বানিয়ে হাজার হাজার বছর পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জনতার প্রশ্ন: কয়লা ধুয়ে ও ময়লা গেল না কেন? পূজনীয় ব্যক্তির পূজা না করে ভারতের সভ্য সমাজে তো সংবিধান প্রণেতার কার্টুন তৈরী করে তাঁকে চাবুক দিয়ে উত্তম মধ্যম দেবার নীতিমালা ছিল না। বাংলাভাষা বৈদিক বা আর্যদের সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি হয় নি। বিবর্তনবাদী সাইকোলোজি অনুসারে, বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ এবং স্থান কাল ও পাত্র পরিবর্তনশীল।
ডঃ আম্বেদকর সহ ভারতীয় পার্লামেন্ট ভারতের সংবিধানে  বৈদিক সভ্যতাজাত জাতিভেদ প্রথাকে" বেআইনি ঘোষণা করেন এবং ভারতের রাষ্ঠ্রীয় প্রতীকে বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের "অশোক চক্র" (বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মচক্র) সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এইভাবে অহিংসার কাছে হিংসার পরাজয় এবং দলিতদের কাঁধে বন্দুক রেখে হিন্দুরাজনীতি চক্র ভবিষ্যতে কখনও উক্ত দলিত এবং চন্ডালদিগকে (গীতায় ৪ অধ্যায়ের ১৩ নম্বর শ্লোক) আর বোকা বানানো যাবে না। দলিত বা দরিদ্র নারায়ণকে অপমান করার নাটকের কার্টুনে মানবতার শিরচ্ছেদ এবং ভারতীয় হিন্দুধর্মে স্বামী বিবেকানন্দের "জীব সেবা করে যে জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর" কোথায় হারিয়ে গেল? মানবাধিকারে সমৃদ্ধ ভারতীয় সংবিধানে হিন্দুধর্ম বা গীতার জাতিভেদ প্রথার কোন স্থান নেই। ১৯৫০ সালে ডঃ আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধান রচনা সুসম্পাদন করার পর  ১৯৫৬ সালের ১৪ই অক্টোবর বাবা সাহেব ডঃ আম্বেদকর ৫০ হাজার দলিত জনতা নিয়ে ভারতের পুণা শহরে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন  করেন। রাজনীতির দাদাগণকে বুঝিয়ে দিলেন, "জন্মে কেহ শ্রেষ্ঠ বা ব্রাহ্মণ হয় না, কর্মে মানুষ উত্তম বা অধম হয় না।"
বৌদ্ধধর্মের আলোকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্মকে বৈদিক রাজা ইন্দ্র ধ্বংস করেছিল:
 হিন্দু বর্ণাশ্রম বিরোধী সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  ব্রাহ্মণদের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে 'সাম্যবাদ' নামক বই লিখেছিলেন এবং গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদন করে ঘোষণা করলেন,  "তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তার পূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, "আমি উদ্ধার করিব। আমি তোমাদেরকে উদ্ধারের বীজমন্ত্র দিতেছি, তোমরা সেই মন্ত্র সাধন কর। তোমরা সবাই সমান। ব্রাহ্মণ শুদ্র সমান। মনুষ্যে মনুষ্যে সকলেই সমান। সকলেই পাপী, সকলের উদ্ধার সদাচরণে। বর্ণ বৈষম্য মিথ্যা। যাগযজ্ঞ মিথ্যা। বেদ মিথ্যা, সূত্র মিথ্যা, ঐহিক সুখ মিথ্যা, কে রাজা, কে প্রজা, সব মিথ্যা। ধর্মই সত্য। মিথ্যা ত্যাগ করিয়া সকলেই সত্যধর্ম পালন কর। (বঙ্কিম রচনাবলী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২ থেকে ৩৮৩, সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত, কলকাতা)।
লেখক এস. বড়–য়া,  প্রবাসী  রাজনৈতিক ভাষ্যকার, বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা ও কলামিষ্ট।

ভারতে ধর্ষিতারা মুখ খুলছে...
রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১২
মানবজমিন ডেস্ক: অন্যসব দেশের মতোই ভারতেও ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বিষয়টিকে লুকিয়ে চেপে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বিচার না চেয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রচলন বেশি। কারণ এতে ধর্ষিতাকে অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সবাই হেয় করে। এমনকি বিয়ে পর্যন্ত হয় না। ফলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে পিতা-মাতাসহ সব আত্মীয়-স্বজন বিচার না চেয়ে চেপে যেত ধর্ষণের ঘটনা। তবে সমপ্রতি হরিয়ানায় একটি গণধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পাল্টে যাচ্ছে এই চেপে যাওয়ার মানসিকতা। হরিয়ানার ঘটনাটি ছিল খুবই হৃদয় বিদারক। মাত্র ১৬ বছর বয়সী দলিত শ্রেণীর হাইস্কুল পাস একটি মেয়েকে পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করেছে আট দুর্বৃত্ত। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা নিপীড়ন চালায় মেয়েটির উপর। ভিডিও করে রাখে দৃশ্যটি। ধর্ষণের পর তাকে হুমকি দেয়া হয় কাউকে বললে হত্যা করে ফেলবে। মেয়েটিও চুপ করে থাকে সম্মানের ভয়ে। এরই মধ্যে ভিডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এটি দেখে ক্ষোভে অপমানে আত্মহত্যা করে মেয়েটির বাবা। তারপরই আলোচনায় আসে বিষয়টি। বিচারের দাবি জানায় দলিত সমপ্রদায়। ভিকটিমের মা বলেন, আমরা দেখলাম স্বামীকে হারিয়ে সম্মান হারিয়েছি আমাদের আর সম্মান হারানোর কিছুই নেই। ফলে চুপ থেকে লাভ কি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এভাবেই উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাতে দলিত ও সংখ্যালঘু সমপ্রদায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। গত ৫ বছরে ধর্ষণের হার উদ্বেগজনকভাবে ২৫ ভাগ বেড়ে গেছে। গায়ে পড়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় মেয়েদের উপর নিপীড়নের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। হরিয়ানা সরকারি দল কংগ্রেসের একজন মুখপাত্র বলেন, ৯০ ভাগ ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রথমে স্বেচ্ছায় ঘটছে। ফলে তারা মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করার পক্ষে। এতে মেয়েরা তাদের চাহিদা স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করলে ধর্ষণের মতো ঘটনা কমবে বলে জানান তিনি। হরিয়ানায় ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা অনেক বেশি। আর এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন দলিত শ্রেণীর মেয়েরা। সর্বশেষ ১৯টি ধর্ষণের ঘটনায় ৬টির ভিকটিম দলিত শ্রেণীর। এতদিন মান-সম্মানের ভয়ে তাদের চুপ থাকাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে আসছিল সুযোগ সন্ধানী দুর্বৃত্তরা। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। সর্বশেষ গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি সবাইকে সাহস যোগাচ্ছে নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য।
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এখনও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে সে। সে বলেছে, আমি আমার স্বপ্ন হারিয়েছি। বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার বানানোর। এখন সেটা পূরণ করতে পারবো কিনা জানি না। ধর্ষণের বিরুদ্ধে চুপ করে না থেকে মুখ খুলে প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচারের দাবি করার পথে উৎসাহী করার জন্য অনেক সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ওমেন এসোসিয়েশনের জাগমতি বলেন, তারা অপরাধ ও অপরাধীকে নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

ভারতে এত ধর্ষণ কেন?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১০ |যে পচন বহুদিনের

আজকের এ অবস্থা ভারতে একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বরং এ পচন বহুবছর ধরে অবিরাম ভাবে ঘটে আসছে। ভারতীয় ইংরেজী দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমসের ৪/১২/১২-য়ে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে সুজাতা আনানদান তুলে ধরেছেন এ নৈতীক পচনকে ত্বরান্বিত করার কাজে দেশের রাজনৈতীক নেতাগণ কীরূপে জড়িত তার এক বিবরণ। তিনি লিখেছেন,বোম্বাইয়ে একটি মারাঠী পত্রিকা ষাটের দশকে "ধর্ষণের গাইড বুক" নামে একটি নিবন্ধে ছেপেছিল যাতে ছিল নারীধর্ষণে ধাপে ধাপে ধর্ষণকারীর কি করণীয় তার খুঁটিনাটি নির্দেশনা। বিস্ময়ের বিষয়,এতবড় নোংরা বিষয় পত্রিকায় প্রকাশের পর উক্ত গাইড বুকের লেখক,পত্রিকার সম্পাদক ও প্রশাসকের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়। বরং উক্ত লেখক আবির্ভূত হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির উপদেষ্টা,রাজনৈতীক গুরু ও দার্শনিক রূপে।ভারতীয় রাজনীতির গভীরে এরূপ দুর্বৃত্তগণ যে কতটা গভীর ভাবে ঢুকে পড়েছে এ হলো তার নমুনা। ভারতের আরেক ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা "দি হিন্দু" র ৪/০১/১৩ তারিখে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, ভারতের বিধান সভা ও লোক সভার সর্বমোট ৪,৮৩৫ সদস্যদের মধ্যে ১৪৪৮ জনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল তথা ফৌজদারি কেসের মামলা রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাও রয়েছে।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ভারতব্যাপী লক্ষ লক্ষ মহিলার মিছিল হচ্ছে। কিন্তু দেহের রোগের ন্যায় চরিত্রের রোগও কি মিছিলে বন্ধ হয়? ফলে ধর্ষণও থামেনি। হিন্দুস্থান টাইমস ৪/১/১৩ তারিখে রিপোর্ট ছেপেছে, বিহারের ভোজপুর জেলার আরা জংশনের কাছে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে একজন মহিলা যাত্রী চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। ধর্ষণ থেকে বাঁচলেও উক্ত মহিলা এখন পাটনার এক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। তরুণীটি ঝাঁপ দিয়েছিল দিবরুগড়-দিল্লি ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস থেকে। প্রকাশিত রিপোর্টে গুরুতর যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, উক্ত মহিলার উপর যারা ধর্ষণে উদ্যত হয়েছিল তারা কোন সাধারণ যাত্রী বা লম্পট ছিল না,ছিল ভারতীয় সেনা বাহিনীর সদস্য। ঘটনাটি রাতে আঁধারেও ঘটেনি,ঘটেছে ভরা বিকেলে। খবরটি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাও প্রথম পৃষ্টায় ছেপেছে। প্রশ্ন হলো,সামরিক বাহিনীর যে সদস্যরা দিনের আলোয় চলন্ত ট্রেনে ও যাত্রী ভর্তি বগীতে নারীর উপর ধর্ষনে উদ্যোগী হতে পারে তারা কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, আসামের যুদ্ধউপদ্রুত এলাকায় রাতের আঁধারে নারীদের উপরে ধর্ষণে কতটা নির্মম ও বেপরোয়া হতে পারে সেটি অনুমান করা কি এতই কঠিন? কাশ্মীরের মজলুম মুসলমানেরা তো ভারতীয় সেনা বাহিনীর সে বর্বরতার কথাটিই বার বার বলে আসছে। এরূপ নারী মাংসলোভী কত হিংস্র দুর্বৃত্ত যে সৈনিক,পুলিশ,সরকারি অফিসার ও বাসড্রাইভারের বেশে এবং আরো কতরূপ বেশ ধরে ভারতের জনপদে চলাফেরা করে সে হিসাব ক'জনের? কাশ্মীরের হাজার হাজার মুসলিম নারী লাগাতর ধর্ষিতা হচ্ছে এবং ধর্ষণের পর নিহত হচেছ তো এমন পশুদের হাতেই। যে কোন যুদ্ধে সবচেয়ে নির্যাতিত হয় নারীরা। যুদ্ধরত সৈনিকের সম্পদ লুটের চেয়ে বেশী মনযোগী হয় নারীর সম্ভ্রম লুটে। জাপানী সেনাবাহিনী যখন কোন দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠিত করতো তখন সেদেশের নারীদের জোরপূর্ব্বক গ্রেফতার করে তাদেরকে যৌনদাসী রূপে ব্যবহার করতো সৈন্যদের যৌনক্ষুধা মেটাতে।সে অপরাধের শিকার হয়েছে ভিয়েতনাম, কোরিয়া, বার্মা, ক্যাম্বোডিয়ার অগণিত মহিলা। একই ক্ষুদার্ত ভারতীয় সৈনিকদের মুখে পড়েছে কাশ্মীরের মুসলিম মহিলারা। ফলে কাশ্মীরের প্রতি গ্রামে ও প্রতি গৃহে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এজন্যই এত গণরোষ ও এত বিদ্রোহ। সে বিদ্রোহ থামাতে সেখানে ৬ লাখের বেশী ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ধর্ষণ যেখানে শক্তি ও আধিপত্যের হাতিয়ার
ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে আধিপত্য ও নির্যাতনের হাতিয়ার শুধু দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলিম নারী-পুরুষদের হত্যা নয়।স্রেফ তাদের সম্পদ লুট বা গৃহে ও দোকানে আগুণ লাগানোও নয়। বরং জঘন্য হাতিয়ার হলো মুসলিম নারীদের ধর্ষণ।ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ভারতের হিন্দুরা মুসলমানদের জানিয়ে দেয় তারা কত শক্তিশালী। মোম্বাই,গুজরাত¸দিল্লি,হায়দারাবাদ¸মুরাদাবাদ¸বেরেলী,এলাহাবাদ ও আসামের মুসলমান নারীদের বিরুদ্ধে এ অস্ত্রটি যে কতটা ভয়ানক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে সে বিবরণ বহু ভারতীয় পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টেও বেরিয়ে আসছে। ধর্ষণের পর নারীদের তারা আগুণে ফেলেছে যাতে সে অপরাধের কোন স্মৃতি না থাকে। একই অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে দলিত বা ভারতের নিন্মবর্ণের নারীদের বিরুদ্ধেও। মধ্যপ্রদেশ,অন্ধ্রপ্রদেশ,বিহার,ঝাড়খন্ডের মত প্রদেশগুলোতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশের কাজ হলো এসব এলাকায় মাওবাদী দলিতদের ঘরে আগুণ দেয়া,এবং তাদের নারীদের উপর ধর্ষণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধজয়ের উৎসব করা।

প্রখ্যাত ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতি রায়ের মতে ধর্ষণ হলো ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান ও নিন্মবর্ণের দলিতদের বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণ ও মধ্যবৃত্ত হিন্দুদের শক্তি প্রদর্শণের হাতিয়ার। কোথাও মুসলিম নির্মূলের দাঙ্গা শুরু হলেই এ অপরাধকর্মেরও প্লাবন শুরু হয়। যতদিন সে অস্ত্রটি শুধু মুসলমান ও নিন্মবর্ণের দলিতদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে ততদিন তার বিরুদ্ধে আজ কের ন্যায় রাজপথে বিক্ষোভ হয়নি। কাশ্মীর,মোম্বাই,গুজরাত, হায়দারাবাদ, মুরাদাবাদ, এলাহাবাদের ন্যায় বহুস্থানে বহু হাজার মুসলিম মহিলা বিগত বহুবছর ধরে ধর্ষণের শিকার হলেও সে অপরাধের বিচার চেয়ে একজন ভারতীয় হিন্দু মহিলাও এ অবধি রাস্তায় নামেনি। বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার মুসলিম নারী ধর্ষিতা এবং ধর্ষণের পর লাশ হলেও কোন একজন মুসলিম ধর্ষিতার লাশ দেখতে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী যায়নি,যায়নি কংগ্রেস বা অন্য কোন রাজনৈতীক দলের প্রধানগণও। কোন নারীবাদি সংগঠনও রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলে নামেনি। অথচ আজ যখন এক মধ্যবৃত্ত হিন্দু মহিলা ধর্ষিতা হলো তখন হাজার হাজার মধ্যবৃত্ত মহিলা বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে এসেছে। ধর্ষণকে ধর্ষণ, অপরাধীকে অপরাধী রূপে গণ্য করার ক্ষেত্রেও ভারতে যে চেতনাটি কাজ করে সেটিও এক সাম্প্রদায়ীক ও জাতিভেদগত চেতনা। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মস্করা আর কাকে বলে!

ভারতীয় ফিল্ম ইনডাস্ট্রি ও ধর্ষণ-পাগল পশু উৎপাদন
শত বছর পূর্বে ভারতে যখন এত থানা-পুলিশ ও আদালত ছিল না তখনও কি দেশটিতে এত ধর্ষণ ছিল? ধর্ষণ দেহের রোগ নয়,এটি চেতনাগত ও সাংস্কৃতিক রোগ। যখন কোন দেশে এ রোগের প্রকট বিস্তার ঘটে,তখন বুঝতে হবে সেদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রবলভাবে ব্যাধিগ্রস্ত। অর্থনৈতীক অগ্রগতিতে সে রোগের প্রকোপ কমানো যায় না। ভারতে এ চারিত্রিক ব্যাধিটি এখন মহামারির আকার ধারণ করছে। এ রোগটি ছড়াচ্ছে ভারতের অশ্লিল নাচগানপূর্ণ সিনেমা। মানুষ যে কতটা বেহায়া-বেশরম ও যৌনপাগল হতে পারে এবং অশ্লিলতাও যে কতটা প্রদর্শণযোগ্য হতে পারে তার নজির হলো এসব ভারতীয় ফিল্ম। পতিতাপল্লির বর্বর অশ্লিলতাকে বাজারজাত করা হয় এ ফিল্মগুলোতে। সিনেমা হলে গিয়ে বা ঘরে বসে নারী-পুরুষ,পিতা-পুত্র, ভাইবোন যখন একত্রে এসব অশ্লিল ফিল্ম দেখে তখন তাদের মাঝে মারা পড়ে লজ্জা-শরম ও শালিনতাবোধ। নীতি-নৈতীকতা ও চরিত্র ধ্বংসে মানুষকে এভাবে বিষপান করানো হচ্ছে। এমন বিবেকহীন বেহায়ার মানুষগুলো ধর্ষণে একত্রে রাজপথে নামবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সে লজ্জাহীনতা কতটা সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ হলো,দিল্লির বাসে মহিলা ধর্ষনে একত্রে যোগ দিয়েছিল সহোদর দুই ভাই। ভারতীয় ফিল্ম ইনডাস্ট্রির মূল কাজ হয়েছে বিবেকহীন,লজ্জাশরমহীন এরূপ ধর্ষণ-পাগল পশু উৎপাদন করা। এদের কারণেই ভারতে আজ প্রতি মিনিটে নারী ধর্ষিতা হচ্ছে।

ফিল্মের নামে ভারত তার নিজের ব্যাধী সে বিষাক্ত আবর্জনাগুলোকে বাংলাদেশের ন্যায় প্রতিবেশী দেশগুলোতেই ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষও সে আবর্জনাগুলো গোগ্রাসে গিলছে। ফলে অশ্লিলতা, ব্যাভিচার ও ধর্ষণ বাড়ছে শুধু ভারতে নয়,বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের মানুষের বিবেকশূণ্যতা তো আরো গভীর।দিল্লিতে এক মহিলা ধর্ষণের ঘটনায় সে দেশের শহরগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ধর্ষণের উৎসব হয়। যেমনটি হয়েছে নব্বইয়ের দশকে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাস গড়েছে সে ভয়ংকর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে। আর দেশটির সরকার ইতিহাস গড়েছে সে ভয়ানক অপরাধীকে কোনরূপ শাস্তি না দিয়ে। কোন নারীবাদী সংগঠনও তখন রাস্তায় নামেনি। অতীতে বাংলাদেশে মহিলা ধর্ষিতা হয়েছে থানার অভ্যন্তরে পুলিশের হাতে,ধর্ষিতা মহিলার লাশকে জ্বালিয়েও দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ সে ভয়ংকর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়নি,বিচারও হয়নি।সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ১৫ বছরের এক কিশোরি ধর্ষিতা হয়েছে। কিন্তু এ অবধি সে ধর্ষণেরও কোন বিচার হয়নি। বরং দেশের বর্তমান সরকার ব্যস্ত ধর্মভীরু পর্দানশিন মহিলাদের কারাগারে তোলা নিয়ে।


সেক্যুলারিস্ট প্রেসক্রিপশন

ক্ষুধা বৃদ্ধি পেলে মানুষ বেশী বেশী খায়। তেমনি যৌন ক্ষুধা বাড়লে সে ক্ষুদার্ত ব্যক্তিটিও তা মিটাতে চায়। কিন্তু ভারতের সমস্যা হলো,দেশটিতে যৌন ক্ষুধা বাড়ানোর বিপুল আয়োজন হলেও ক্ষুধা মিটানোর ব্যবস্থাটি সহজ লভ্য নয়। ভারতে মেয়েদের প্রতি এমনিতেই প্রচণ্ড ঘৃণা। এ্যাবরশনের নামে দেশটিতে লক্ষ লক্ষ নারীর প্রাণনাশ ঘটানো হয় জন্মের আগেই।ফলে মেয়েদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক কম। তারপর বিবাহ কঠিন করা হয়েছে যৌতুকের প্রকোপে। স্ত্রী অক্ষম হলেও হিন্দু ধর্মে দ্বিতীয় বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অপর দিকে পতিতাপল্লিতে গিয়ে যৌন ক্ষুধা মিটানো আর্থিক সামর্থ সবার নাই। ফলে প্রচণ্ড যৌনক্ষুধা নিয়ে হাজার হাজার পাষণ্ড নারীশিকারি পুরুষ দিবারাত্র রাজপথে ঘুরে। তাদের হাতে হামলার শিকার হচ্ছে পথের,অফিসের বা গৃহের অসংখ্য মহিলা।

ভারতবাসীর আরেক সমস্যা হলো,নিজেদের সংস্কৃতিকে আস্তাকুরে ফেলে তারা পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিকে গ্রহন করেছে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির অনুকরণে অশ্লিল ছায়াছবি,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাবকে ব্যাপকতর করেছে। কিন্তু এতে বিপদ বেড়েছে নারীর। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ফলে দারুন ভাবে বেড়েছে মানুষের যৌনক্ষুধা। কিন্তু ভারতবাসী ভূলে যায়,পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অর্থ শুধু অশ্লিল ছায়াছবি,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাব নয়। ব্যাভিচারও এ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যৌন ক্ষুধা পূরণে ব্যাভিচারকে অতি অবাধ ও সহজলভ্য করা হয়েছে। সংস্কৃতি আসে সভ্যতা থেকে। সাথে আসে সে সভ্যতার নির্মানের মূল দর্শনটিও।ভারত পাশ্চাত্য থেকে অশ্লিল ছায়াছবি,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাব নিলেও যে দর্শনটি ব্যাভিচারকে অবাধ ও সহজ-লভ্য করে সে দর্শনটি নেয়নি। ফলে বেড়েছে ধর্ষণ। অথচ পাশ্চাত্যে পেশাদার বেশ্যাদের স্থান নিয়েছে ব্যভিচারি নারীপুরুষেরা। বরং এসব ব্যাভিচারি নারীপুরুষদের কারণে পেশাদার বেশ্যারা বরফপড়া শীতের রাতে অশ্লীল সাজ্জাসজ্জা করে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়েও খরিদার পায় না। বেশ্যাদের ব্যবসা ফলে লাটে উঠেছে। বিয়ে না করে বা পতিতাপল্লিতে না গিয়ে পাশ্চাত্যে তাই আজীবন যৌনক্ষুধা মিটাতে কোন অসুবিধা হয়না। বিয়ের বদলে চালু হয়েছে বইফ্রেণ্ড,গার্লফ্রেণ্ডের সংস্কৃতি। এবং সেটি স্কুল থেকেই। ভারতের নারীদের ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে তাই বিশিষ্ট কলামিস্ট, লেখক এবং সেক্যুলারিস্ট গুরু খুশবন্ত সিং হিন্দুস্থান টাইমসে ৪/১/১৩ তারিখের এক নিবন্ধে ভারতীয় মহিলাদের প্রতি কিছু পরামর্শ রেখেছেন। সে নিবন্ধে তার মূল কথাটি হলো,পাশ্চাত্যে নারীদের ন্যায় তাদের আরো উদার হতে হবে। উত্তেজক সাজসজ্জায় শুধু পুরুষের যৌন ক্ষুধা বাড়িয়ে লাভ নাই,তাতে বরং বিপদ। সে ব্পিদ থেকে নারীদের বাঁচতে হলে পুরুষের যৌন ক্ষুধা পুরণে তাদেরকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আধা অনুসারি হয়ে লাভ নাই,অনুসারি হতে হলে সে সংস্কৃতির পুরাটাই গ্রহণ করতে হবে। তাঁর সেক্যুলারিস্ট প্রেসক্রিপশনটি হলো,অশ্লিল সিনেমা,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাবের পাশাপাশি পতিতাবৃত্তি ও ব্যাভিচারের ফ্লাডগেটগুলোকেও পুরাপুরি খুলে দিতে হবে। স্কান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন¸ব্যাভিচারকে অবাধ করার ফলে সে দেশগুলিতে ধর্ষণের ঘটনা কমেছে। খুশবন্ত সিং পাশ্চাত্যে সংস্কৃতিতে পুরাপুরি ভেসে গেছেন। তিনি চান ভারতীয়রাও তার মত ভেসে যাক। অর্থাৎ ভারতীয়দের আধা-পচন নিয়ে তিনি খুশি নন, তিনি চান পুরা পচন। কিন্তু কোন বিবেকমান ও ধর্মপ্রান মানুষের কাছে তার এ নসিহত কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

মহিলাদের অপরাধ
মহিলাদের বিপদ বাড়াতে তাদের নিজেদের অপরাধটাই কি কম? যারা কাছে লাখ টাকা আছে সে যদি টাকার বিশাল বিশাল বান্ডিলগুলো পাতলা পলিথিনের ব্যাগে ভরে মানুষকে দেখাতে দেখাতে রাস্তায় হাঁটে তবে চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীদের লোভ তো বাড়বেই। ফলে যে কোন মুহুর্তে সে অর্থই শুধু ছিনতাই হবে না,জীবননাশও হতে পারেন। আকলমন্দ ধনিরা তাই নিজেদের অর্থভান্ডার দৃশ্যমান করে রাস্তায় নামে না। ডাকাতের পাড়ায় তো তারা গরীবের বেশ ধরে। নিজের ঘরের দরজা জানালা কখনো খোলা রেখে তারা ঘুমায় না। একই বিষয় মহিলাদের বিষয়। নারীদের মহান আল্লাহতায়ালা যা দিয়েছেন তা লক্ষ টাকা বা কোটি টাকার চেয়েও দামী। এ সম্পদ অমূল্য। এটি আল্লাহর দেয়া এক বিশাল নেয়ামত, সে সাথে আমানতও। প্রতিটি নারীর উপর দায়ভার হলো সে আমানতের পূর্ণ হেফাজত। নইলে শুধু তাঁর নিজের উপর বিপদ নেমে আসে না,বিপর্যয় নেমে আসে সমাজ ও রাষ্ট্রে। ইতিহাসে বহু মানুষ খুন হয়েছে,বহু অর্থ ব্যয় হয়েছে,এমনকি বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীকে নিয়ে।তাই সে অমূল্য রূপকে সাজ-সজ্জায় আরো আকর্ষণীয় করে রাস্তায় নামলে তাতে নারীর বিপদ শুধু বাড়বেই। তখন নারী-শিকারিদের ক্ষুধা যে আরো তীব্রতর হবে এবং যে কোন সুযোগে নারীধর্ষণে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? ভারতে আজ এত নারীধর্ষণের বড় কারণ এই বেপর্দাগী।

নারীর বিপদ ও নিরাপত্তার বিষয়টি মহান আল্লাহর চেয়ে আর কে বুঝে? তাই ইসলামে হিজাব বা পর্দার অলংঘনীয় বিধান দেয়। পবিত্র কোরআনে তাই ঘোষিত হয়েছে,"হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও ম'মুমিনদের নারীগণকে বলে দিন,তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ দিয়ে (নিজেদেরকে) আবৃত করে। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না" –(সুরা আহযাব, আয়াত ৫৯)। পর্দা তাই মহান আ ল্লাহতায়ালা নির্দেশিত এমন এক বাংকার যা নারীকে নিরাপত্তা দেয় দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে। ঘর তাদের জন্য দুর্গ। পর্দানশিন মহিলার উপর হামলার ঘটনা এজন্যই কম। সৈনিক যখন তার দুর্গ ও বাংকার থেকে বেড়িয়ে আসে তখন তার বিপদও বাড়ে।নারী-শত্রু সেক্যুলারিস্টগণ তাই নারীকে গৃহ ও পর্দার বাইরে এনে তাঁকে নিরাপত্তাহীন করতে চায়। সে বিপদ কমাতে ইসলাম মোহাররাম ব্যক্তি (যার সাথে বিবাহ হারাম) ছাড়া রাস্তাঘাটে বেড়াতে বেরুনো দূরে থাক,পবিত্র হজে যাওয়াও নিষিদ্ধ করেছে। নারীরা তাদের উপর বিপদ ডেকে এনেছে আল্লাহর নির্দেশিত সে হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। অথচ মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারীর পক্ষ থেকে আল্লাহর সে বিধানের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ ঘটেছে।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতি মহিলাদের বেপর্দা করে তাদের দেহকে ব্যবসায়ীক পণ্যে পরিণত করেছে। তারা যে কারো পরম শ্রদ্ধেয়া মা,প্রিয় বোন, আদরের কন্যা এবং ভালবাসার স্ত্রী -সে পরিচয়কে ভূলিকে যৌণ খায়েশ পুরণের অশ্লীল লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর দেহ পরিনত হয়ে বিজ্ঞাপণের পোষ্টার। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এভাবে বাড়িয়েছে নারীর চরম অবমাননা ও অপমান –যেমনটি ঘটেছিল আরবের জাহলিয়াত যুগের সংস্কৃতিতে। তখন তো কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন করা হতো। ইসলাম নারীর জীবনই শুধু বাঁচায়নি, বিপুল ভাবে নারীর অধিকার এবং সন্মানও বাড়িয়েছে। তার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশতের ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে নারীর অবদানই কি কম? নবীজী (সাঃ)র পর যিনি প্রথম ইসলাম কবুল করেন তিনি কোন পুরুষ নয়,তিনি হযরত খাদিজা। যিনি ইসলামের প্রথম শহীদ হন তিনিও কোন পুরুষ নন। তিনি আরেক মহান নারী হযরত সুমাইয়া। অথচ আজ সেক্যুলারিস্টগণ নারীকে সে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বলছে।

ব্যর্থ বিচারব্যবস্থা
ভারত ও বাংলাদেশের ন্যায় দেশে নারীধর্ষণ বৃদ্ধির আরেক কারণ,বিচারব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা। বিচার ব্যবস্থার সবচেয়ে দৃষ্টিকটু সফলতা হলো,খুনি,ধর্ষণকারি ও চোরডাকাতদের বিচার থেকে দূরে রাখা।দেশে লক্ষাধিক অপরাধ সংঘটিত হলেও শতকরা ১০ ভাগেরও কি শাস্তি হয়? শাস্তি দিলেও আদালত গুরুতর অপরাধীদেরও লঘুদণ্ড দেয়। গুরুদণ্ড বরাদ্দ রেখেছে তো শুধু তাদের রাজনৈতীক শত্রুদের জন্য। ভারত তার জাতীয় বাজেটের বিশাল অংক ব্যয় করে প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর নজরদারি বাড়াতে। এটিকে বলে শত্রু শক্তির উপর নজরদারি। কিন্তু তাদের রাডার কাজ করে না নিজদেশের খুনি,সন্ত্রাসী,ধর্ষণকারি,চোরডাকাতদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মত দেশে পুলিশ,র‌্যাব,গুপ্তচর সংস্থা,আদালত ব্যস্ত রাজনৈতীক শত্রুনির্মূলে। কিন্তু নজরদারি নেই ধর্ষক ও খুনিদের বিরুদ্ধে। কারণ তারা জনগণ বা নারীদের দুষমন হলেও সরকারের দুষমন নয়। সরকারের বিভিন্ন দফতরে অতিরীক্ত লোকবলের ভিড়,অথচ আদালত গুলোতে হাজার হাজার পদশূণ্য। ফলে বিচার শেষে হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তহশিল অফিস,পরিবার পরিকল্পনা দফতর,ভূমি দফতর,পুলিশ ফাঁড়ি –এরূপ নানা দফতর থাকলেও আদালত নাই,বিচারকও নাই। অথচ ত্বরিৎ বিচার লাভ জনগণের মৌলিক অধিকার।এবং সেটি বিনামূল্যে। ইসলাম তার গৌরব কালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রাসাদতুল্য বড় বড় অফিস না গড়লেও সুবিচার দিতে কাজী বসিয়েছিল। আজ থানায় থানায় কত সরকারি ভবন। কত অফিসার। কিন্তু বিচারালয় থানা পর্যায়ে এখনো আনতে পারিনি। সরকারের প্রায়োরিটি কোথায় এরপরও কি বুঝতে বাঁকি থাকে?

বিচারকে ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্য বানানো ইসলামের শিক্ষা নয়। এটি তো ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের অবদান। তারা যেমন পতিতাবৃত্তি ও সূদী লেনদেনের ন্যায় ভয়ানক গুনাহকে ব্যবসা রূপে প্রতিষ্ঠা করেছে,তেমনি বাণিজ্য রূপে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে দেশের বিচারব্যবস্থাকেও। তাদের বিদায়ের পর পরবর্তী সরকারের কাজ হয়েছে ঔপনিবেশিক কাফেরদের বিশ্বস্থ খলিফা রূপে তাদের প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থাকে সযন্তে চালু রাখা। ফলে ন্যায় বিচার পরিণত হয়েছে দুর্লভ পণ্যে। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় বিচার কিনতে। থানা-আদালতসহ সমগ্র বিচার ব্যবস্থা অধিকৃত হয়ে আছে একপাল দুর্বৃত্তের হাতে। এদের এজেণ্ডা সুবিচার নয়,বরং তাদের নজর বিপদগ্রস্ত লোকদের পকেটের দিকে। থানার দরোজায় পা রাখা থেকেই শুরু হয় তাদের পকেট লুন্ঠন। হত্যা,ধর্ষণ,চুরিডাকাতির শিকার হতভাগা পরিবারগুলোকে বছরের পর আদালতের বারান্দায় বিচারের আবেদন নিয়ে মিছকিনের ন্যায় ঘুরতে হয়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন,কোন মুসলিম যখন শাসনক্ষমতা হাতে পায় তার মূল দায়িত্বটি হলো ন্যায় বিচারকে সুনিশ্চিত করা। হাদীস পাকে বলা হয়েছে, সুশাসন ও সুবিচারের কারণে একজন ঈমানদার শাসক পাবে ৬০ হাজার আবেদের সমগ্র ইবাদতের সমান সওয়াব। সুবিচার ইসলামে কত গুরুত্বপূর্ণ এরপরও কি ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে? অপরদিকে আল্লাহতায়ালার কাছে অতি ঘৃণিত ব্যক্তি হলো জালেম শাসক। জনগণ সরকার থেকে খাদ্য চায় না,চায় ন্যায়বিচার। চাল-ডাল,আলু-পটল জনগণ মাঠে জন্মাতে পারে। কিন্তু ন্যায় বিচারটি আশা করে সরকার থেকে। অতীতে প্রাসাদতুল্য বড় বড় অফিস না গড়েও মুসলমানগণ সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসভ্যতা গড়ে তুলেছেন। মানুষ তখন চোর-ডাকাত, খুনি-সন্ত্রাসী ও ধর্ষণকারি রূপে গড়ে না উঠে চরিত্রবান মানুষ রূপে বেড়ে উঠেছে। রাষ্ট্র তখন অপরাধমুক্ত হয়েছে। পৃথিবী পৃষ্ঠে তখন সুশাসন ও শান্তি নেমে এসেছে। নারীকে তখন ধর্ষিত হতে হয়নি,মানুষকে গুম বা লাশও হতে হয়নি। তখন হাজার হাজার মাইল জনগণ নিরাপদে ভ্রমণ করতে পেরেছে,চলার পথে চোরডাকাতের হাতে পড়তে হয়নি। সিল্করুটের ন্যায় বহুহাজার মাইলের নিরাপদ বাণিজ্য রুট গড়ে উঠেছে পাহাড়-পর্বত, মরুভূমির মধ্য দিয়ে। সভ্যতার গুণাগুণ পরিমাপে এগুলোই তো মূল মাপকাঠি। সেটি সম্ভব হয়েছিল ন্যায় বিচারককে নিশ্চিত করার ফলে। তখন বিচারকের আসনে বসেছেন নবীজী (সাঃ)। বসেছেন হযরত আবুবকর (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)এর মত মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা। অথচ আজ বসছে খায়রুল হকের মত ব্যক্তিগণ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এই ব্যক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন।(সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ,৩০/৫/১১)। অথচ সরকারের ত্রাণ তহবিলের প্রতিটি পয়সা সংগৃহীত হয় হঠাৎ দুর্যোগে পড়া দুস্থ্য মানুষদের সাহায্যের জন্য। অথচ অতি উচ্চ বেতনের চাকুরিজীবী হয়েও জনাব খায়রুল হক দুস্থ্য জনগণের ভাণ্ডারে হাত দিয়েছেন। একাজ তো পকেটমারদের। প্রশ্নহলো এমন পকেটমারদের থেকে কি ন্যায় বিচার আশা করা যায়? সম্ভব হয় কি খুন,চুরিডাকাতি ও ধর্ষনের বিচার?

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন কেন ব্যর্থতার মুখে?
মশামাছি জন্ম নেয় ও বেঁচে থাকে দুষিত আবর্জনাময় পরিবেশে। তাই তাই শুধু মশক নিধন করে মশামাছির উপদ্রব কমানো যায় না। মশার জন্মভূমিতেও হাত দিতে হয়। ভারতে ও বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে ধর্ষণকারিগণ বনেজঙ্গলে বা রাস্তাঘাটে বেড়ে উঠেনি। বেড়ে উঠেছে সমাজে, এবং একটি চেতনাকে ধারণ করে। সেটি সেক্যুলার চেতনা। সে চেতনার মূল কথা জীবনে ভোগের আনন্দ বাড়ানো। ভোগের আনন্দ বাড়াতে যেমন এরা অশ্লিল নাচ দেখে,তেমনি পর্ণ ফিল্ম ও উলঙ্গতাপূর্ণও ছায়াছবি দেখে। সে সম্ভোগ বাড়াতেই তারা নারীদেহে হাত দেয়, তাদের ধর্ষণ করে। ফলে ধর্ষণ নিজেই কোন রোগ নয়,বরং ভয়ানক এক রোগের লক্ষণ মাত্র। সে রোগটি হলো সেক্যুলারিজম –তথা ইহজাগতিক ভোগলিপ্সা। ম্যালেরিয়া রোগ হলে প্রচণ্ড জ্বর উঠবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। প্যারাসিটামলে জ্বর কমলেও ম্যালেরিয়া সারে না।

মগজে ইসলাম শক্ত স্থান পেলে ব্যক্তি যেমন নামায-রোযা, হজ-যাকাতে মনযোগী হয়,তেমনি সেক্যুলরিজম মগজে বাসা বাঁধলে ব্যক্তি নাচের ক্লাব,নাট্যপাড়া, মদের দোকান, সিনেমা হল, পর্ণফিল্ম ও পতিতাপল্লি খুঁজে। গরুছাগল যেমন ঘাস খাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকে, সেক্যুলার মানুষগুলোও তেমনি বেঁচে থাকে জীবনের আনন্দ বাড়াতে। ধর্মকর্ম বা পরকালের বিচার নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। ফলে যৌনক্ষুধা মিটাতে ব্যাভিচার তাদের কাছে অতি প্রিয়, তবে সুযোগ পেলে ধর্ষণের ফুরসতও তারা হাত ছাড়া করেনা। মিস্টার ডমিনিক স্ট্রস কান ইন্টারন্যাশনাল মানেটরি ফ্যান্ড (আই্এম এফ)এর প্রধান ছিলেন।কথা ছিল,ফ্রান্সের বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট সারকোজীর বিরুদ্ধে সোসালিস্ট পার্টির প্রাথী রূপে প্রতিদ্বন্দীতা করবেন। কিন্তু সে আশা তাকে ছাড়তে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিউয়র্কের হোটেল রুমে মহিলা ঝারুদারকে একাকী পেয়ে তার উপর ধর্ষনে তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ জন্য তাঁর আই্এম এফ-এর চাকুরি গেছে,অবশেষে ঝারুদারকে বহু অর্থ দিয়ে আদালতের বাইরে তাকে নিষ্পত্তি করতে হয়েছে। এই হলো ফ্রান্সের এক সেক্যুলারিস্ট গুরুর কাণ্ড। এরাই ফ্রান্সে মুসলিম স্কুল ছাত্রীদের মাথায় রুমাল বাঁধাটি আইন করে নিষিদ্ধ করেছে। অপরদিকে ব্রিটিশ সেক্যুলারিজমের ফ্রাগশিপ প্রতিষ্ঠান হলো বিবিসি। বিবিসির অতি বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন জিমি স্যাবিল। তাকে ব্রিটিশ রানী স্যার উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ২০১১ সালে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু এখান প্রকাশ পাচ্ছে তার প্রচণ্ড নেশা ছিল নাবালিকা ধর্ষণে। তার হাতে ধর্ষিতা হয়েছে অর্ধশতেরও বেশী কিশোরী। তার যৌণ লিপ্সার শিকার হয়েছে এমনকি হাসপাতালের অসুস্থ্য বালিকারাও। তাদের অনেকেই এখন মুখ খুলছেন।পাশ্চাত্য অপরাধ জগতের গভীরে লুকিয়ে থাকা বিশাল হিমশৈলের এ হলো সামান্য টুকরো মাত্র। অথচ এরূপ ধর্ষণকারিরা ইসলামের হিজাবের মধ্যে নারী নির্যাতন দেখতে পায়! ব্যাভিচারকে অবাধ করে দিয়েও পাশ্চাত্যের নারীরা বাঁচছে না। ভারতে যত নারী-ধর্ষণ হয় তার চেয়ে বেশী হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

ধর্ষণ কোন দেশেই ধর্মপ্রাণ মানুষের হাতে ঘটে না। ঘটে ধর্মবিবর্জিত সম্ভোগবাদী সেক্যুলারিস্টদের হাতে। তবে কোন দুর্বৃত্ত যদি ধর্মের লেবাস পড়ে এমন দুষ্কর্ম করে তবে সেটি অন্য কথা। মশামাছি যেমন দুর্গন্ধময় আবর্জনায় বেড়ে উঠে, ধর্ষণকারিরাও তেমনি বেড়ে উঠে সেক্যুলারিজমের জরায়ুতে। ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে সমাজ থেকে সে জরায়ুকেও তাই সরাতে হয়। ভারতের আধুনিক নারীদের ব্যর্থতা তারা স্রেফ রোগের সিম্পটম দমনের দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে মূল রোগটি চিনতে। ব্যর্থ হয়েছে সে রোগের জন্মভূমি চিনতেও। তাই মূল রোগটি থেকেই যাচ্ছে। ফলে ভারতে দিন দিন বৃদ্ধি পাবে যেমন ব্যাভিচার, তেমনি ধর্ষণও। ধর্ষণবিরোধী এ আন্দোলনও যে তাই ব্যর্থ হবে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে?

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৫ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

অচ্ছুৎদের উত্থানপর্বে দলিত সাহিত্য: এনড্রিউ বানকম্বে

ক্যাটাগরী: 

সভ্যতা আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আর্থ-সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় রাখলে সামাজিক বৈষম্য এখন কতটা বিরাজমান? তাহলে বোধকরি কেউ কেউ এমন প্রশ্নকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতে পারেন এবং কেউ কেউ বড়জোর বিজ্ঞতার সাথে উন্নতির পরস্পর ধাপগুলো দেখিয়ে খানিকটা স্বীকারোক্তির সাথে এও জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, সামান্য যেটুকু বৈষম্য রয়েছে তা সমাজ এবং প্রশাসন দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে। যদি প্রশ্ন করা হয়, আজকের যুগে দাসপ্রথা আছে কি না? তাহলে নিশ্চয়ই সবাই সজোরে ডানে থেকে বামে মাথা নাড়িয়ে একবাক্যে 'না' সূচক জবাবই প্রদান করবে। কারণ, ইতিহাস মোতাবেক দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে সেই উনিশ শতকে। সন্দেহাতীতভাবেই সেই বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে উচ্চ এবং নিচ এই দুই স্তরের ভেদাভেদ করা মানবজাতির মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। তাই, হোক তা ধর্মীয় জাতপাত বা বর্ণবাদ অথবা অর্থনৈতিক অবস্থান- শ্রেণী বৈষম্যের প্রচলন যুগ যুগ ধরেই প্রচলিত থাকে। ফলে কোন না কোন ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের সত্তা ক্রমাগতভাবে বৈষ্যম্যের শিকার হতে থাকে। 'দলিত' হলো তেমনই এক বৈষম্যের দৃষ্টান্ত।
উনিশ শতকে 'দলিত' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন জ্যোতিরাও ফুলে। মারাঠি ভাষা থেকে আগত 'দলিত' শব্দটির অর্থ অবিকশিত, অবদমিত, নিষ্পেশিত। দলিত গোত্রভূক্তরা সামাজিকভাবে 'অচ্ছুৎ' রূপেও বিবেচিত হয়ে থাকে। দলিতদের পেশাগত জীবনই মূলত এর কারণ। কসাই, মানুষ ও প্রাণীর বর্জ্য পরিস্কারক, আবর্জনা পরিষ্কারক হিসেবে দলিতদের দেখা যায়। দলিতরা মল, নালা-নর্দমা ও রাস্তাঘাট পরিষ্কারের কাজ করে বলে সমাজে তাদের অপবিত্র বলে গণ্য করা হয় । ফলে দলিতদের একঘরে করা হয় সমাজ ও সামাজিক আচার হতে। তাদের বিদ্যালয় ও উপাসনালয়ে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা। আগে এমনকি তাদের বসতি গড়ে তুলতে হতো গ্রাম বা শহরের বাইরে। ভারতে দলিত জনগোষ্ঠী বেশী দেখা গেলেও নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশেও এই সম্প্রদায় আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠই হিন্দু হলেও বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, এমনকি মুসলিম ধর্মাবলম্বী দলিতও রয়েছে । ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন সময় আইন পাশ করা হয়েছে। ফলে রক্ষণশীল ভারতে দলিতদের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নানা পর্যায়ে দলিতরা জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। অবশ্য প্রধানত হিন্দু দলিতদেরই এই অগ্রযাত্রায় প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখা যায়। ঘুঁটে কুড়ানি থেকে রাজরানী হওয়ার দৌড়ে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দলিত জনগোষ্ঠী। ১৯৯৭ সালে ভারতের দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অধিষ্ঠিত কে.আর. নারায়ণ একজন দলিত ছিলেন। দলিত গোত্রভূক্ত মায়াবতী ২০০৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন ।
রাজনৈতিক অঙ্গনে দলিত সম্প্রদায়ের সাফল্যময় অন্তর্ভূক্তিকরণের পাশাপাশি, দলিত সাহিত্য সমাজে এক বিপ্লব জাগাতে সক্ষম হয়। মাহাত্মা ফুলে এবং আমবেদকারই সর্বপ্রথম দলিতদের সামনে তুলে ধরেন তাদের লেখার মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় অসংখ্য দলিত মারাঠি, হিন্দি, তামিল, পাঞ্জাবি ভাষায় লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ১৯৬০ সাল নাগাদ ভারতে বেশ কিছু দলিত সাহিত্যিকদের পদচারণা শুরু হয়। এক্ষেত্রে লিটিল ম্যাগাজিনগুলো বেশ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। শ্রীলংকায় ১৯৬০ সাল পরবর্তীকালে দলিত সাহিত্যিক দমিনিক জিভা মূল ধারার লেখক হিসেবে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন।
দলিত সাহিত্যের ক্রমিক বিকাশ নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা 'দি ইনডিপেন্ডেন্ট'-এ একটি পর্যবেক্ষণমূলক ও তথ্যপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয় গত ৩০শে জুন ২০১০-এ। দিল্লি থেকে এনড্রিউ বানকম্বে রচিত প্রতিবেদনটির অনুবাদ এখানে দেয়া হলো।
…………………………….
ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার অজয় নাভারিয়া না হেসে পারেন না বলেই ফোঁড়ন কাটেন তাঁর 'ভিন্নধর্মী' পেশাজীবিতা নিয়ে। দিল্লির একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ' বিষয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। ঊনচল্লিশ বছর বয়স্ক দলিত ও অচ্ছুৎ এই ব্যক্তির পূর্বসুরিদের জন্য কয়েক প্রজন্ম আগেও হিন্দু শাস্ত্রালোচনায় নিষেধাজ্ঞা ছিল, এর অন্যথা হলে জীবন বিপন্ন হতো। যাদের হুকুম তটস্থতার সাথে তামিল করতে হতো, এখন তাদেরকেই দীক্ষা দেয়ার পুলক সত্যিই তাঁর চেহারাকে হাস্যোজ্জ্বল করে তোলে।
তিনি বলেন, "পঞ্চাশ বছর আগে একে অপরাধ বলে গণ্য করা হতো। আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবি এবং আপনিও ভেবে দেখুন, যদি আমি সে সব ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করতাম তবে আমাকে হত্যা করা হতো"। দিল্লির এক সময়কার চাকচিক্যময় বৃটিশ ধাঁচের নকশার কনট প্লেসের কফির দোকানে বসে কথা বলছিলেন তিনি। ১৯৩১ সালে নির্মিত কনট প্লেস, যা সিপি নামেও পরিচিত, নতুন দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বৃত্তাকার বিপনী বিতান। একে দিল্লির বানিজ্যিক কেন্দ্রও বলা চলে। সেখানে একটি ভগ্নপ্রায় কফির দোকানের এককোণায় বসে বলছিলেন তিনি, "তবে গণতন্ত্র আমাকে শক্তিশালী করেছে। এটি ক্ষমতা দিয়েছে নিচু গোত্রীয়দের এবং সাহায্য করেছে একটি অত্যাধুনিক সমাজ গড়ে তুলতে।"
নাভারিয়া ভারতীয় সাহিত্যের পরিব্যাপ্ত ভুবনে একটি নীরব সংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিজের মতো করে। দীর্ঘ সময় ধরে নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে কেবল নিজস্ব ও স্থানীয় ভাষায় লেখালেখির চর্চা করেছেন। মূলধারার সাহিত্যচর্চা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর হালে দলিত লেখকদের প্রায়ই বগলদাবা করে নিচ্ছেন দেশের বড় মাপের প্রকাশকরা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাধাকৃষ্ণ প্রকাশনীর কথা, তারা এখন তাদের প্রকাশনাগুলোকে হিন্দি, ভারতের উত্তরাঞ্চলের মিশ্র ভাষা এবং আরো অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা শুরু করেছে।
ইতিপূর্বে চোখে না পড়লেও, ঔপন্যাসিক, কবি এবং ছোটগল্পকাররা সাহিত্য-বাজারে বড় রকমের সুযোগ এবং অভিবাদন লাভ করছেন ইদানীংকালে। এখন তো দলিত পত্রিকা, দলিত সাহিত্য-ফোরামের দুটো প্রতিযোগী দল রয়েছে খোদ দিল্লিতেই। দলিত সাহিত্যের ওয়ার্কশপও হচ্ছে। 'দলিত সাহিত্য' -কে ঘিরে যে ক্রমবর্ধিত গুরুত্ব এবং উচ্ছ্বাস তার আরও প্রমাণ দেয়া যায়। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্যিকদের স্বর্গ বলে খ্যাত বাৎসরিক মিলনসভা- জয়পুর সাহিত্য উৎসবে এ বছর অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন নাভারিয়া ।
ভারতীয় সমাজ কখনও কখনও কঠোর, এমনকি নিষ্ঠুরও বটে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, মানুষকে চারটি প্রধান গোত্রে (এবং হাজার হাজার উপগোত্রে) বিভক্ত করার পুরাতন শ্রেণীবিন্যাস, আর কোথাও এতোটা জোরালোভাবে দেখা যায় না। ঐহিত্যগতভাবে, গোত্র ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দেয় গোত্রীয়রা কোথায় বসবাস করবে, কী প্রকারের জীবিকা নির্বাহ করবে এমনকি তারা কী খাদ্য গ্রহণ করবে তাও। যারা গোত্র বহির্ভূত, তাদেরকে অশূচি এবং অশুদ্ধ হিন্দু বলে গণ্য করা হতো এবং তাদের কর্ম নির্ধারিত হতো শৌচাগার পরিষ্কার, চামড়া তৈরি এবং পথঘাট ঝাড় দেয়া ইত্যাদি।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দলিতরা এভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে। এমনকি বর্তমানকালের রক্ষাকবজ আইন ও এর কলেবরে বেড়ে ওঠা শহুরে সমাজ থাকা সত্ত্বেও এখনও অজস্র ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অত্যাচার, বৈষম্য এবং আক্রমণের শিকার। দক্ষিণ ভারতের মানবাধিকার সংস্থার যৌথ সহযোগী, তামিল নাড়ু অচ্ছুৎ উচ্ছেদ ফ্রন্ট কর্তৃক একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে শ্রেণী ও কাঠামোগত বৈষম্যের যে সকল তথ্য-পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমত স্তব্ধ করে দেয়ার মতো।
এতে বিষদভাবে প্রকাশিত নানাবিধ অবমাননাকর তথ্য থেকে কিছু কিছু বৈষম্যমূলক আচরণ দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন, উচ্চগোত্রীয়দের সম্মুখে মুঠোফোন ব্যবহারে দলিতদের উপর নিষেধাজ্ঞা। ধোয়া কাপড় পরিধানেও মানা ছিল। কেবলমাত্র নারিকেলের খোলের মধ্যে চা পানের অনুমতি ছিল, তাও আবার মেঝেতে হাঁটু গেঁড়ে বসে। মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল তাদের জন্য। তাদেরকে বাধ্য করা হতো বিষ্ঠা খেতে। তাদের নারীদের ধর্ষণ করা হতো এবং জীবন্ত দগ্ধ করা হতো।
এখন পর্যন্ত দলিত জনসংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন, যা ভারতের জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান ধীরে ধীরে উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে যে এই সম্প্রদায়কে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করার সময় এসেছে। এই অগ্রযাত্রায় শামিল হয়ে ভারতের বৃহত্তর অঞ্চল উত্তর প্রদেশে নিচু গোত্রের ভোটাররা তিনবার দলিত গোত্রভুক্ত মায়াবতী কুমারীকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করেছিল।
জনসংখ্যার ঘনত্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল দলিত সাহিত্যের বিকাশেও, কারণ সম্ভাব্য বিশাল সাহিত্য-বাজারকে সামনে রেখে প্রকাশকরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠছিলেন। যেমনটা নাভারিয়া বলেন, "তারা তাদের ব্যবসাই করবে। তারা তো আর যাজক নয়। লাভের দেখা পেলে তবেই তো তারা প্রকাশনায় তৎপর হবে। নয়তো নয়।"
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লেখালেখি নিয়ে উদীয়মান আরো এক জনপ্রিয় মুখ রামনিকা গুপ্তা। যদিও তিনি দলিত গোত্রভূক্ত নন, কিন্তু যুদ্ধরত আম আদমী (Yuddhrat Aam Aadmi) নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকার উদ্যোক্তা। পত্রিকাটি পূর্ববর্তী প্রান্তিক লেখকদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিল। রামনিকার মতে, তিনি ও তার তিন সহকারি মিলে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে গত দু'দশকে ভারতজুড়ে প্রায় ১,৫০০ দলিত লেখককের লেখা প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠিত প্রকাশকরাও নিয়মিতই তার শরণাপন্ন হন নতুন সাহিত্য-মেধা সম্পর্কে খোঁজখবর করতে। রামনিকা অবশ্য এই শর্তেই সহযোগিতা করেন যে, প্রকাশকদের পেপারব্যাক প্রকাশনা ছাপতে হবে, যা সাধারণ পাঠকের জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী ।
কর্মক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া একতলা বাসার বসার ঘরে বসে রামনিকা পর্যবেক্ষণ করেছেন, দলিত সাহিত্যিকদের সাহিত্য রচনার বিষয় নিয়ে ঘাটতি হয় না কখনও। তিনি প্রভাবশালী লেখক এবং দলিত নেতা বি. আর. আমবেদকারের উদ্ধৃতি পুনরাবৃত্তি করে বলেন, প্রান্তিক মানুষদের নিজস্ব সাহিত্য থাকা প্রয়োজনীয় যেখানে তারা নিজেদের জীবনগাঁথার প্রকাশ ঘটাবে।
দলিত এবং আদিবাসীদের সমস্যা নিয়ে প্রায় ডজনখানেক বইয়ের রচয়িতা মিসেস গুপ্তা গোত্রপ্রথা নিয়ে বলেন, "ভারতীয় সংস্কৃতি বৈষম্যবাদী। এই দেশ অপব্যবহার করতে জানে। প্রত্যেকেই ভাবে 'সে আমার চেয়ে নিচু' অথবা 'আমি তার চেয়ে উঁচু'। আমরা যা বলার চেষ্টা করছি তা হলো, আমরা সকলেই সমান এবং যদি কেউ দুর্বল থাকে তো আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি উঠে দাঁড়াতে।"
ভারতের শহরাঞ্চলে জেগে ওঠা সচেতনতা ও সক্রিয়তার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অগ্রগামী সাহিত্যচর্চা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে বলেই দলিত সাহিত্যিকরা মনে করেন। যেখানে গ্রামাঞ্চলে গোত্রবাদীতা সর্বজনীন, সেখানে শহরের নানাবিধ উদাহরণে বোধগম্য হয় যে, ব্যক্তি বিশেষের গোত্রপ্রথা বিলুপ্তপ্রায়। শহুরে দলিতরা নিজেদের অধিকারের দাবিতে এখন অনেক বেশি সংঘবদ্ধ।
দীর্ঘ সময় ধরে সাহিত্যচর্চা এবং সক্রিয়তায় তৎপর অনিতা ভারতী একটি দলিত সাহিত্য ফোরামের মাসিক সভায় অংশগ্রহণ করতে দিল্লি চলেছেন। তিনি বলেন, "ক্রমবর্ধনশীল সচেতনতার তৈরি হচ্ছে। জনগণ এখন অনেক শিক্ষিত এবং তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে চায়।"
ভারতী বলেন, বৈষম্য নিরসনে দলিতদের হালের শ্রমসাধ্য উদ্যম বজায় রাখতে সাহিত্যচর্চার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নিচুজাতের প্রতি আক্রমণাত্মক ঘটনাবলী নিয়ে দলিত লেখকদের উদ্দেশ্যে ভারতী বলেন, "তারা এখন এই বিষয়ে লিখতে পারে। তাছাড়া, মানুষ এখন উপলব্ধি করছে যে তারা দলিতদের সাথে খারাপ আচরণ করে এসেছে অতীতে এবং দলিত সাহিত্য সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।"
নিজের দ্বিতীয় উপন্যাস নিয়ে ব্যস্ত নাভারিয়াও এই বক্তব্যে সম্মত। যখন তিনি তার প্রথম উপন্যাস লেখেন, নাম উধার কে লোগ (পিপল ফ্রম দি আদার সাইড), তার কোন সন্দেহ ছিল না যে, এর প্রধান সমালোচনাকারী হয়ে উঠবে মধ্যবিত্তরা, যারা হলো শহুরে দলিতগোষ্ঠী। নাভারিয়া'র লেখায় বিভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে গোত্রবাদীতা কীভাবে তার জীবনে প্রভাব ফেলেছে। এই কাহিনীতে বর্ণিত হয়েছে, দলিত পরিচয় আবিস্কারের পর একজন যৌনকর্মী-প্রেমিকা কর্তৃক দলিতের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা। "আমি দলিত সচেতনতা নিয়ে লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মধ্যে এই তাড়না আমি অনুভবও করেছি বহুবার", নাভারিয়া জানান।
১২/১৩ বছর বয়সে, স্কুলছাত্র থাকাকালীন সময়ে নাভারিয়া একটি পীড়াদায়ক, অপমানজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। সে সময় দলিত শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছিল। তার শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে এসে জানালেন, নাম তালিকাবদ্ধ করার সুবিধার্থে কেবল নিচুগোত্রের শিক্ষার্থীরা যেন উঠে দাঁড়ায় । "আমি কখনও দাঁড়াইনি। আমি বরং প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম [মেধাবৃত্তির জন্য আবেদন করতে]", নাভারিয়া স্মৃতি রোমন্থন করেন, "আপনি শুনে হয়ত বেশ লজ্জিতই হবেন, এক বন্ধু আমাকে বলে উঠেছিল,'তুমি দেখতে মোটেও দলিতদের মত নও।' আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম,'দলিতদের চেহারা কেমন হয় বলে তোমার ধারনা?'
নাভারিয়া সেই প্রস্তাবনা ও পরামর্শকে খারিজ করেন, যার প্রবণতা কেবলমাত্র "বিশুদ্ধ" দলিত ইস্যু এবং জেনে বুঝে নিজেদের দলিত হিসেবে উপস্থিত করে সহমর্মিতা আদায়, যা নতুন প্রজন্মের লেখকেরা হরহামেশাই করে থাকেন। তিনি মনে করেন, এই প্রবণতা জাতি-বৈষম্যকে দুর্বল বা ভঙ্গুর করার পরিবর্তে আরো পোক্ত ও জোরালো করে। তিনি যুক্ত করেন, 'যেখানে সমাজেই বিভাজন আছে সেখানে সাহিত্যে কেন বিভাজন থাকবে না? প্রকাশকেরা এই বিভাজনকে উৎসাহিত করেন না যদিও, কিন্তু প্রতিফলিত করেন ঠিকই।' 'বর্ণপ্রথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ণগোত্রহীন ভারতকে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না । একজন ব্যক্তি যদি হিন্দু পরিচয়ে পরিচিত হন তবে নিশ্চিতভাবে তিনি বা তার গোত্র কোন না কোন বর্ণের অর্ন্তভুক্ত হবেন।'
ইংরেজি ভাষায় প্রকাশনার প্রথাকে অগ্রাহ্য করার বড় কাজটি বাকি রয়ে গেছে এখনও। সত্যি হলো, লেখকেরা সেই মাধ্যমেই কাজ করেন যেখানে পাঠকেরা সহজেই দীক্ষিত হতে পারে। যদিও ভারতী এবং অন্যান্যরা বলেন, এলিটবর্গীয়দের সুনজর পেতে ইংরেজি মাধ্যম এখনও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রয়ে গেছে।
নাভারিয়া এরকম আরও অজস্র বাধাবিঘ্ন প্রত্যক্ষ করেন আগামীতে, তবে সেগুলো মোকাবিলা করার সামর্থও তার রয়েছে। "লেখালেখি আমার পেশা নয়, নেশা", দিল্লির গরম হলদে সূর্যটা যখন আকাশের গা বেয়ে পিছলে পড়ছিল, তখন কফি শেষ করতে করতে বলছিলেন তিনি। "যদি আমার মাথায় নতুন কোন আইডিয়া আসে তাহলে আমি ঘুমাতেই পারি না। দু'তিন রাত ধরে আমি নির্ঘুমই থাকি, যতক্ষণ না কাজটা শেষ হয়। এটা আসলে সমাজের কাছে একরকম দায়বদ্ধতা বলা চলে।"
মূল প্রতিবেদনটির লিংক: http://www.independent.co.uk
***
লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল: সাময়িকী, ২৮.৭.২০১০
কাঁদছে মানবতা, গর্জে ওঠো বাংলাদেশঃ ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই

ক্যাটাগরী: 

Rapist
মাত্র দিন কয়েক আগেই ভারতের ধর্ষনকারীদের বিরূদ্ধে কলম ধরেছিলাম। এখন দেখুন, আমাদের নিজেদের দেশও কত ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের এই জঘন্য ধর্ষনকারীদের অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা করেছে নির্যাতিত অসহায় ঐ মেয়েটিরই একজন বান্ধবী। বিশ্বাস করা যায়? একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের জীবনের এত বড় সর্বনাশ ও নির্মম নির্যাতন করতে সহ-অপরাধী হলো সেও। তার কী শাস্তি হওয়া উচিত? একই সাথে ঐ পাঁচ নরপশুর কী শাস্তি হওয়া উচিত? ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রমতি জয়ললিতা জয়ারামের প্রস্তাব মতো বাংলাদেশেও ধর্ষনকারীদের ইনজেকশন দিয়ে খোজা করে তারপর ইরানের মতো প্রকাশ্যে উলঙ্গ করে যৌনাঙ্গে আঘাতের পর আঘাত করে রক্তাক্ত শরীরে মুখের মধ্যে লোহার বিশাল বড়শি গেঁথে আগে ল্যাম্পপোস্টে ঝুলানো, তারপর নির্মমভাবে পিটাতে পিটাতে মুমূর্ষু হলে এরপর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য নতুন আইনের প্রস্তাব করছি। কিংবা, বিকল্প হিসেবে, সমপরিমান ব্যথা দিয়ে সৌদী আরবের মতো প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করার মাধ্যমে এই বর্বর অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। কতজন এ প্রস্তাবের সমর্থনে দাঁড়াবেন জানি না, কিন্তু এহেন কঠোর ও নির্মম শাস্তি না দিলে ধর্ষনের মতো ভয়াবহ, জঘন্য অপরাধ আর কমবে না। অন্ততঃ একজন ধর্ষনকারীকে বা গণধর্ষণের মতো বীভৎস অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে এ শাস্তি দেওয়া আবশ্যক। একটি সুস্থ সমাজ হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশের সামনে এর কোন বিকল্প নেই।
আর এ শাস্তি প্রদানের প্রক্রিয়াটি শুরু হোক টাঙ্গাইলের এই অসহায় বোনটির মামলা থেকেই। ইতোমধ্যেই নরপশু গুলো ধরা পড়েছে। রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে তাদের। কিন্তু এখানেই্ শেষ নয়, শুরু মাত্র। আমাদের দেশে আইনী প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ, জটিল এবং নারীর প্রতি হয়রানিমূলক। এটি আমূল পাল্টাতে হবে। আমি মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দের কাছে আকূল আবেদন জানাই আপনারা উপরে বর্ণিত পন্থায় ধর্ষণকারীর/কারীদের বিচার করা যায় এমন একটা আই্ন প্রণয়ন করুন। বিশেষ করে নাট্যব্যক্তিত্ব ও আইনজীবী তারানা হালিম, এডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি প্রমুখ তরুণ ও সোচ্চারকণ্ঠ এমপি মহোদয়াবৃন্দের প্রতি এই অনুরোধটুকু রাখছি। আইন ও বিচার মন্ত্রণায়ে কর্মরত আমাদের সম্মানিত কর্মকর্তাগণও এক্ষেত্রে পালন করতে পারেন অগ্রণী ভূমিকা। সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত সম্মানিত আই্নজীবী বন্ধুগণের প্রতি অনুরোধ – এই ধর্ষনকারীসহ অন্য কোন ধর্ষনকারীর পক্ষেই দয়া করে আপনারা আর কোর্টে দাঁড়াবেন না। নিজেদের পেশাকে কলঙ্কিত হতে দেবেন না। আর গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ, ঐ পাষন্ড শয়তান পিশাচদের ছবি, তাদের পরিবারের পরিচিতিসহ বিস্তারিত আপনারা প্রকাশ করুন – প্রথম পাতায়, রেড ব্যানার-হেডে, কয়েক কলাম জুড়ে। ধর্ষনকারীদের একটি ডেটাবেইজ তৈরি করুন। তা প্রকাশ করে, প্রয়োজনবোধে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামজিক ওয়েবসাইটে এমনিক ইউটিউবে প্রকাশ করে বাঙালী জাতিসহ সারা বিশ্বকে জানান কত জঘন্য শ্রেণীর পুরুষ লুকিয়ে আছে আমাদের সমাজেরই কোন কোন অংশে। নতুন নতুন ঘটনার আড়ালে সেই সব নরপশু অপরাধীদের খবর প্রচার যেন চাপা পড়ে না যায়। এ লক্ষ্যে প্রতিটি পত্র-পত্রিকায় ধর্ষনকারীদের ছবিসহ বিশেষ একটি কর্ণার চালু করে ক্যাপশনে ঘৃণাজনক বিশেষণসহ খবর ছাপিয়ে তার পুরো পরিবারকে একঘরে করার জন্য প্রত্যহ বিশেষ সংবাদ ছাপার ব্যবস্থা আপনারা করুন আপনারা। কেননা, প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন প্রান্তে কারও না কারও মা, বোন, কন্যা, জীবনসাথী, তরুণী যুবা, কর্মজীবী নারী, এমনকি অসহায় প্রতিবন্ধী নারী পর্যন্ত এ ভয়ংকর অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এইতো ক'দিন আগেই ব্র্যাক ক্লিনিকের এক মেধাবী চিকিৎসক একই ক্লিনিকের এক ওয়া্রড বয়ের হাতে খুন হলেন। সাহসী ও সংগ্রামী ঐ তরুণী চিকিৎসককে শহীদের সম্মান জ্ঞাপন করা হোক। পুলিশ বাহিনীর প্রতি অনুরোধ, ধর্ষনবিরোধী একটি বিশেষ এলিট ফোর্স গঠন করুন আপনারা। র‍্যাবের প্রতি অনুরোধ – মাসে অন্ততঃ একজন ধর্ষনকারীকে প্রথমে লিঙ্গ কর্তন করে এরপর ক্রসফায়ারে দিন। দুর্ভাগা এ বাঙালী জাতি আপনাদের বীরের বেশে বরণ করবে। অন্ততঃ এক্ষেত্রে ক্রসফায়ারের সমালোচনা আমরা, সচেতন নাগরিক সমাজ করবো না। যেভাবেই হোক, ঐ নরপশুদের ক্ষমা নেই। বিচার হতেই হবে।
গতকালের (২ জানুয়ারী, ২০১৩) প্রথম আলোতে টাঙ্গাইলের মধুপুরের অসহায় ঐ বালিকার ওপর ভয়ন্কর ও বীভিষীকাময় নির্যাতনের খবরটি দ্বিতীয় পাতায় এক কলামে ছেপেছিল, দারুন মর্মাহত হয়েছিলাম। আজ অবশ্য আশান্বিত হয়েছি এই দেখে যে ফলো-আপ খবরটি প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। গতকাল কোন একটি পত্রিকা (নাম মনে করতে পারছিনা বলে দুঃখিত, টেলিভিশনের সংবাদপত্র পর্যালোচনায় একনজর দেখলাম) প্রথম পাতায় ধর্ষনকারীদের ছবিসহ ছেপেছে। বিডিনিউজ২৪.কম গুরুত্বসহ খবরটি জাতীয় শিরোনাম করেছে। ধন্যবাদ তাঁদেরও। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বি.এন.ডাব্লিউ.এল.এ.) অসহায় মোয়েটি ও তাঁর পরিবারকে আইনী সহায়তা দিচ্ছে। কৃতজ্ঞতা BNWLA'র সংগ্রামী আইনজীবীবৃন্দের প্রতি।
একবিংশ শতাব্দীর এক দশক পেরিয়ে গেলেও ক্যান্সারের মতো আমাদের সমাজের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এবং মানবতার বিশেষতঃ নারীত্বের প্রতি চরম অবমানাকর এ অপরাধ এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে এবং তা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। বিবিসি ২ জানুয়ারী, ২০১৩ তারিখে ভয়ঙ্কর এ নির্যাতনের খবরকে তাদের বিশ্বসংবাদের শিরোনাম করেছে। ধন্যবাদ বিবিসি। আশা করি আপনারা নিয়মিত ফলো-আপ রাখবেন ও জানাবেন, ঠিক যেভাবে ভারতের নয়াদিল্লীর খবরটির ক্ষেত্রে জনমত গঠনে আপনারা অবদান রেখেছেন। এখন, আমাদের নাগরিক সমাজ, এনজিও, মানবাধিকার সংগঠন, শিক্ষক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ – আপনারা জেগে উঠুন। ধর্ষনবিরোধী ও ধর্ষকবিরোধী প্রবল এক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে কী ভাবে সারা দেশ এক হয়ে দিল্লীর সেই পিশাচগুলোর বিচারসহ নারীর সার্বিক নিরাপত্তার দাবীতে এক হয়ে ফুঁসে উঠেছিল, এমনকি নতুন ২০১৩ বর্ষবরণের সবগুলো অনুষ্ঠান তারা বর্জন করেছে। পুরো ভারত এক হয়ে ঐ অসহায় মেডিকেল ছাত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। যদিও তাকে বাঁচানো যায়নি। অসহায় ও নির্মমভাবে জীবনের আকুতি জানিয়ে ঐ শহীদ ভারতকণ্যা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জানান দিয়ে গেছেন ভারত-বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া নারীর জন্য কত ভয়াবহ একটি অঞ্চল। প্রমাণ মিলল, বছরের প্রথম দিনেই আমাদের বাংলাদেশেও ঠিক তেমনি আরেকটি দুঃস্বপ্নের নতুন বছর শুরু হলো, টাঙ্গাইলের মধুপুরের এক নিভৃত পল্লীতে অসহায় একটি মেয়ে, কারও বোন, কারও আদরের কন্যা, ধর্ষিত হলো কয়েক দিন ধরে। ক'জন নরপশু হায়েনা মিলে ধ্বংস করল তার শৈশব, কৈশর, নারীত্ব আর মানবিক মর্যাদা। আজ সে পুরুষরূপী কোন মানুষ দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছে। অন্য সব শিশুদের মতো স্কুলে নতুন বছরে বই হাতে আনন্দ করে যেতে পারলো না অভাগা মা আমাদের। মানবতার চরম শত্রু, নরপিশাচদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ আমাদের সেই ছোট্ট কিশোরী বোন, আমাদেরই কন্যা আজ মৃত্যুশয্যায়। সৃষ্টার দয়ায় সুস্থ হয়ে উঠলেও সারা জীবন এই বীভিষীকা সে ভুলতে পারবে কি? কখনো আর সুস্থ্ মনে কোন মানুষকে সরলভাবে বিশ্বাস করতে পারবে কি সে? ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে সে আজ জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছে। তার মানসিক স্বাস্থ্য ধ্বংসের মুখে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তার শরীর আর স্বাভাবিক হবে কি না, আর কোন দিনও সুস্থ্-স্বাভাবিক হয়ে সে চলেত পারবে কি না তার সবটুকু নির্ভর করছে সঠিকভাবে চিকিৎসার ওপর, কাউন্সেলিং, মানবিক দরদ, যত্ন আর নিবিড় পরিচর্যার উপর এবং সর্বোপরি ঐ নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক, কঠোর ও নির্মম শাস্তি প্রদানের উপর। এ আজ বাংলাদেশের সকলের প্রাণের দাবী। সমগ্র বাঙালী জাতির দাবী। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের একটি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি জয়ললিতা সেই প্রস্তাবগুলোই এনেছেন, যা দেশটির ধর্ষনবিরোধী আন্দোলনকারীদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো। ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের সর্বোচ্চ নেত্রী শ্রীমতি সোনিয়া গান্ধীও এসব দাবী মেনে নিয়ে সংশোধিত নতুন আইন প্রণয়েনর কাজ হাতে নিয়েছেন। অচিরেই তাঁদের রাষ্ট্রে ধর্ষন এবং নারীর প্রতি সর্বপ্রকার নির্যাতন বন্ধ করতে নতুন আইন প্রণীত হতে চলেছে। দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ বিচারালয় গঠনও করা হচ্ছে।
আমাদের দেশেও অনুরূপ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করে ধর্ষনের মামলাগুলোর স্বল্পতম সময়ে নিস্পত্তি ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক, কঠোর ও নির্মম শাস্তি প্রদানের দাবী জানাচ্ছি। আমরা বাঙালীরা এত আবেগী ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জাতি – ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিতে পারি, মহান মুক্তিযুদ্ধ, পহেলা বৈশাখ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস এসব প্রশ্নে শত শত লাইন লিখে বা বলে নিজেদের জাহির করতে পারি আমরা। কিন্তু আমরা কি খোঁজ রাখি প্রতিদিন আমাদের গ্রামে-গঞ্জে আনাচে-কানাচে, স্কুল-কলেজে যেতে-আসতে, শহরের গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফেরার পথে, রাত্রে-দিনে কত মা-বোন-কন্যাশিশু এ ভয়ন্কর ও জঘন্য অপরাধের শিকার হচ্ছেন? মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে যে জাতির জন্ম, যে রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, সেই বাংলাদেশ, সেই আমরা বাঙালীরা কি পারবো না, এ সমাজকে প্রতিনিয়ত মধ্যযুগের কাছে নিয়ে যাচ্ছে এমন একটি বর্বর অপরাধ, ধর্ষনের মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী ক্রাইম আর ধর্ষণকারীদের মতো জঘন্য সমাজের কীট, নরপশু পিশাচদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে, তাদের সামাজিকভাবে চিহ্নিত এবং বয়কট করতে?
আমরা কি পারবো না আমাদের মা-বোন-কন্যা-জায়াদের জন্য একটি সুস্থ বাংলাদেশ গড়তে? হায় অভাগা দেশ, হায় রবীন্দ্রনাথ, হায় নজরুল, হায় জীবনানন্দ, কোথায় তোমাদের সেই বাংলা? এ ধরণীতে আজ দলিত, নিগৃহীত নারীর সর্বোচ্চ সম্পদ – তার নারীত্ব, নিদারুনভাবে আজ লাঞ্ছিত মানবতা। কালো শ্বাপদরে ভয়াল ছোবলে প্রতিনিয়ত ডুকরে কাঁদছে ঐ আমাদের সাথী, অর্ধাঙ্গিনী। আর কতো সইবে আমাদের বাংলাদেশ? আর কত ঘুমাবে বাঙালী? জাগো, দোহাই তোমার, একটু জাগো। জোর কণ্ঠে বলো – এ দেশ কোন ধর্ষনকারীর নয়। ঐ নরপশুদের বিচার ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে হবেই হবে। জাগো বাহে . . . . . কোন্টে সবাই . . . . ।
-দেওয়ান মাহমুদ
অটোয়া
০২.০১.২০১৩
***
ফিচার ছবি: http://www.globalnews.ca থেকে সংগৃহিত

সর্বমোট ৩৯টি মন্তব্য করা হয়েছে

  1. মাহাবুব১৯৯৫ বলেছেন:1
    [ধর্ষণের জন্য বেপর্দাকে দায়ী করা জাতিয় মন্তব্য মুছে দেয়া হলো: ব্লগ টিম]
  2. মৌমাছি বলেছেন:2
    কঠিনতম শাস্তি হওয়া উচিৎ ।
  3. Image-Unavailableসাঈদা বলেছেন:3
    ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে ছেলে-মেয়ে উভয়কে সংযত আচারণ করতে হবে । শুধু একক ভাবে কারো দোষ দিয়ে লাভ নেই ।
  4. Image-UnavailableMd. Sakhawat Ansary বলেছেন:5
    [ইংরেজি ও রোমান হরফে লেখা মন্তব্য প্রকাশ করা হয় না। বাংলায় মন্তব্য করুন। নাম বাংলায় লিখুন : ব্লগ টিম]
  5. Image-Unavailableসায়মন বলেছেন:6
    সব সময়ই শুনে আসছি, বাংলাদেশে নাকি নারী নির্যাতন আইন খুব কঠোর। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখলাম বা শুনলাম না কারো দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হয়েছে। হাইরে আমার সোনার বাংলাদেশ। এ দেশে খুন করলে খুনের কোন বিচার নাই। স্বয়ং দেশের রাষ্ট্রপতি মাফ করে দেন। আর সেখানে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ তো তুচ্ছ ব্যাপারী হবে উনাদের কাছে। সত্যি আমি এবং আমরা খুবই নির্বাক, অসহায় এবং বঞ্চিত।
  6. বলি যে –
    "জাগো বাহে কোনঠে সবাই" -
    আরও বলি –
    "ধর্ষিতা বাংলাদেশ দেখিতে চাহিনা আমরা আর" – এ আজ আমাদের সবার আওয়াজ।।
  7. Image-UnavailableBENAZIR বলেছেন:9
    আমি বিশ্বাস করি ধর্ষক ও দুর্নীতিবাজ এরা সমান পাপে পাপী। এদের শাস্তি একটাই তা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।
  8. সালমা কবীর বলেছেন:10
    নারী নারীর শত্রু, এটা নারী সংগঠনগুলো পর্যালোচনা করে দেখবেন বলে আশা করি।সুপারিশসমূহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ অতিসত্বর তাদের বিবেচনায় আনবেন। আর যা-ই হউক র্ষণকারীর প্রকাশ্যে শাস্তি হওয়া উচিত।ধন্যবাদ।
  9. Image-Unavailableছাতক পাখি বলেছেন:11
    দেওয়ান মাহমুদ ভাই,আপনাকে ধন্যবাদ। যে মেয়েটির কথা লিখলেন সে আমার বোন। শুধু আমার না ,সে বাংলার প্রতিটি ভাইয়ের বোন । সবার প্রতি অনুরুধ ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্য দিবালোকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত থেমে যাবেন না।
  10. Image-UnavailableDark Justice বলেছেন:12
    " Dont' me how to dress!
    Tell them not to rape!!! "
    কথাটা ঠিক আছে…।
    তবুও … মে দেরও শালীন পোশাক পরা উচিত…
    ছেলেদেরও দৃষ্টি সংযত করতে হবে…।
    সবার উচিত যাতে আমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর না হয় তার জন্য নিজেকে সংযত করা…।।
    মে দের উচিত সংযত হয়ে পোশাক পরা, আর ছেলেদের উচিত নিজের মনুশত্তের জাগ্রত কোঁড়া…।
  11. Image-Unavailableকাজি বলেছেন:13
    কাঁদছে মানবতা, গর্জে ওঠো বাংলাদেশঃ
    ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি চাওয়ার চেয়েও বড় কথা তারা যেন আইনের ফাক দিয়ে বেরিয়ে না যায়।
    কারণ আমাদের দেশে ধর্ষণএর যে আইনি প্রসেস তাতে পদে পদে ধর্ষিতার অপমান হতে হয় অনেক সময়তো ধর্ষণকারীকে বিয়ে করতে বাধ্য করে সমাজ।
    তাই সকল আইনি বাধা দূর করে সঠিক বিচার যেন হয় সে দিকে সবার মন দেয়া উচিত।
    আর সকল মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ তারা কেস বাই কেস ফলোআপ করবেন।
    দেখা গেল 2-4 দিন খুব লেখা লেখি হলো তারপর অপরাধীর সাজা হলো না, খালাস পেল, না মাজে কিছু দালাল এসে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে আপোষ করলো, কিছুই আর জানতে পারি না
  12. আর কতো সইবে আমাদের বাংলাদেশ? আর কত ঘুমাবে বাঙালী? জাগো, দোহাই তোমার, একটু জাগো।
  13. এস দেওয়ান বলেছেন:15
    কোনো বিবাহিত পুরুষ কোনো মেয়েকে ধার্ষণ করেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই । আমি অধিকাংশ ধর্ষণের ক্ষেত্রে দেখেছি অববাহিত যুবকরাই এই কাজটি করে থাকে । তার মানেটা এই দাঁড়ায়- নারী তাদের কাছে সহজ লভ্য নয় বলেই তাঁরা জোর পূর্বক নারীকে পাবার চেষ্টা করে । কথায় আছে না- "অভাবে স্বভাব নষ্ট" । অবিবাহিত ছেলে-মায়েদের মিলনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের কঠোর অনুশাসনের ফলে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে । ধর্ষণ একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে যতটা না ক্ষতি করছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে নারীকে দেওয়া পুরুষের অপবাদ । সামাজিক অপবাদই ধর্ষণের চেয়ে নারীকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ।
    ধর্ষণ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিৎ, তার সাথে নারীকে দেওয়া সামাজিক সকল অপবাদেরও অবসান হওয়া উচিৎ ।
  14. Image-Unavailableসুমন দত্ত বলেছেন:16
    আপনারা যারা ভাবছেন পোশাক এই ঘৃণ্য কাজে উৎসাহ প্রদান করে, তাদের আসলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
    এই অপরাধ এর পিছনে সবচেয়ে বড়ো যে কারন, তা হলো শিক্ষার অভাব।
    আমি একজন বাংলাদেশি মহিলাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ২টি বাপার -
    ১। একটি মেয়ে খুব ভালো মতো পর্দা দিয়ে কাপড় পরলো, কিন্তু তারপরেও কতগুলো ছেলে তাকে টিইস করলো রাস্তায়। এতে কার দোষ ছিলো?
    ২। একই অবস্থায় একটি মেয়ে নিজের ইচ্ছায় খোলামেলা কাপড় পরলো ( যেটা তার গনতান্ত্রিক অধিকার ), তারপরেও রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ছেলেগুলো তাকে টিইস করলো। এক্ষেত্রে দোষ কার?
    সেই মহিলার উত্তর ছিল -
    ১। ছেলেদের।
    ২। মেয়েটির।
    অথচ, ২ বারই ছেলেগুলো বদমাইশ ছিলো…তাদের শিক্ষা-চিন্তাধারা ছিলো নিচুমানের…
    এর থেকেই বোঝা জায় আমাদের দেশের মানুষের চিন্তা ভাবনা কতোটুকু নিচে নেমেছে…
    এইভাবে চিন্তা করলে কোনোদিনও এই অপরাধ নিরুল করা সম্বভ নয়। এই অপরাধ এর একমাত্র অপরাধি হল এই ঘৃণ্য অপরাধি…মেয়েদের কোনও দোষ নেয়… আশা করি বাপারটা ক্লিয়ার হয়েছে…
    সঠিক শিক্ষা এবং কঠোর আইনই পারে এই অপরাধকে ঠেকাতে…
  15. মজিবর বলেছেন:17
    এমন ভয়ংকর শাস্তি হক যে কেউ একাজ থেকে বিরত হবে।
  16. Image-UnavailableJASHIM বলেছেন:18
    আমরা প্রতিনিয়ত পাপের খুললেই দেখসি ফ্রন্ট পেজ এ দেয় হসসে রেপ এর কেস গুলি, আমরা ও খুব মজা করে পরসি, কিন্তু আমাদের দেশ এর পৃমে মিনিস্টার মেয়ে, অপো৛িট দল এর নেত্রী মেয়ে, ম্যাক্সিমাম নেতা রায় মেয়ে, কিন্তু মেয়ের কী নিরাপত্তা পেয়েসে, আমাদের mayer তুল্য মাদাম নেতা র কী মেয়েদের এই কষ্ট দেখসেন না, আমি র লিকতে পারসী না, চোখে জল এসে জসসে। আল্লাহ আমাদের মা বোন দের কে হেফাজত করেন।
  17. Image-Unavailableহাকিম বলেছেন:19
    এদেরকে ফাসি দেয়া উচিত
  18. ধন্যবাদ দেওয়ান মাহমুদ ভাই এমন একটি লেখা পোষ্ট করার জন্য।
    ধষর্কদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আপনার প্রতিটি মতামতের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি সহমত পোষণ করছি। এমন কঠোর আইন আর এই আইনের কার্যকারিতাই হয়েতা এই নির্মম অণ্যায় এতটুকু হলেও কমাতে পারবে।
  19. প্রকাশ্যে ফাঁসি দিলে তো সেটাকে বর্বর আইন বলে আবুল মকসুদরা মানব বন্ধন করবে। তখন কি করবেন?
  20. মাহাবুব১৯৯৫ বলেছেন:22
    মানুস আর পশু এক হলে মানবতা আর কথা বলে না,
  21. Image-Unavailableআলী আকবর বলেছেন:23
    মহাজোট সরকারের ৪ বছরে ১৩ হাজার ধর্ষণ : নারী নির্যাতন ৬৭ হাজার
    বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৪ বছরে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ১২৯৭১ জন। এ সময়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৭ হাজার ২২৯টি। এছাড়া যৌতুক ও নানা কারণে স্বামীগৃহে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৫ জন নারী। তন্মধ্যে স্বামীগৃহে নির্যাতনের ফলে জীবন দিতে হয়েছে প্রায় দেড় সহস্রাধিক নারীকে। এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৪২ জন। বাস্তবের তুলনায় পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। গত চার বছরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।
    পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা যায়
    ধর্ষণ ১২৯৭১
    ২০০৯ সালে ২ হাজার ৯৭৭ জন
    ২০১১ সালে ৩ হাজার ২৪৩ জন
    ২০১১ সালে ৩ হাজার ৩৪৪ জন
    ২০১২ সালে ৩ হাজার ৪০৭ জন (১১ মাসে)
    সর্বমোট ধর্ষণ- ১২৯৭১ জন (৩ বছর ১১ মাসে)
    নারী নির্যাতন ৬৭২২৯ জন
    ২০০৯ সালে ১২ হাজার ৯০৬টি
    ২০১০ সালে ১৬ হাজার ২১২টি
    ২০১১ সালে ২০ হাজার ৬৬ জন,
    ২০১২ সালে ১৮ হাজার ৪৫টি (১১ মাসে)
    সর্বমোট নারী নির্যাতন – ৬৭২২৯ জন (৩ বছর ১১ মাসে) Your text to link…
  22. Image-Unavailablemamun বলেছেন:24
    এদের শাস্তি একটাই তা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।
  23. Image-Unavailableপ্রামাণিক জালাল উদ্দিন বলেছেন:25
    প্রিয় লেখক,
    শুভেচ্ছা।
    মানবতার প্রতি সকলের মমত্ববোধ থেকে এটা আশা করা যায় যে, ধর্ষন সহ সকল অপরাধমূলক কার্যকলাপ, অচিরে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এখনই সকলের সচেতন হওয়া জরুরী।
    ধর্ষণসহ অপরাধকে কার্যকরী রুপে বন্ধ করতে হলে শুধু কঠিন শাস্তিই সব নয়, বরং সমাজ ব্যবস্থা থেকে দ্রুত নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যা হয়তো এখনো নেওয়া হয় নি….যার কারণেও সমস্যাগুলো ঘটছে। সে দিকে নজর না দিয়ে কঠিন প্রকাশ্য শাস্তি, ধর্ষনসহ অনুরুপ অপরাধকে নির্মূল করতে পারবে বলে, আমি বিশ্বাস করি না। আর প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া আরেক মানবাধিকার লংঘন হবে।
    ভাল একটি লেখার জন্য লেখকে ধন্যবাদ জানাই।
    ভাল থাকবেন।
  24. ধর্ষণ কারিদের ফাঁসী হওয়া উচিত,সাথে সাথে এই দেশ থেকে ইনডিয়ান চ্যানেল ভন্ধ হওয়া উচিত।আমাদেরকে আল্লাহ হেফাজত কুরুন।রাসুল সাঃ এর সাহাবিদের মত আমাদের জীবন দান করুন। আমিন
  25. আজ আমাদের সমাজের কি হয়ে গেল? এখন আমাদের মা-বাবা এই ভয়ে আমাদের বাসা থেকে বের হতে দেন না কারণ পরিবেশ এখন মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। সেদিন আমি অনেকদিন পর আমার বান্ধবীর সাথে বাইরে ঘুরতে গিয়েছি, মামনি হঠাৎ কল দিল, বললো,
    এই মুহূর্তে ঘরে এস। এসে শুনি সাভারের ঘটনাটা। মামনি বললো, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া বন্ধ। ঘুরাফেরা বন্ধ। আমি বললাম, কিন্তু কেন? আম্মু বললো, যুগ খারাপ। আমার বান্ধবীরও অবস্থা একই। এখন আমাদের কি করা উচিৎ? যুগ খারাপ তাই লুকিয়ে থাকবো? নাকি যারা যুগটাকে খারাপ করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে একটি নিরাপদ সমাজ গড়বো?
  26. Image-UnavailableShobuj বলেছেন:28
    ধর্ষণের হার অনুযায়ী ২০৬টি দেশের মধ্যে শীর্ষ ৫ দেশ South Africa, Australia, Canada, Zimbabwe, U.S.A: অন্যদিনে ধর্ষণের হার সবচেয়ে কম ৫টি দেশ Saudi Arabia, Azerbaijan, Yemen, Indonesia, Oman
    ধর্ষণের হার অনুযায়ী ২০৬টি দেশের মধ্যে প্রথম ৫ দেশঃ
    ১) South Africa: প্রতি ১০ লক্ষনারীতে ১১৯৫ জন ধর্ষিত হয়।
    ২) Australia: প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৭৭৭ জন ধর্ষিত হয়।
    ৩) Canada : প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৭৩৩ জন নারী ধর্ষিত হয়।
    ৪) Zimbabwe: প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৪৫৭ জন নারী ধর্ষিত হয়।
    ৫) U.S.A: প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৩০১ জন নারী ধর্ষিত হয়।
    এবার দেখুন তালিকার শেষের ৫ টি দেশ: (যেসব দেশে ধর্ষণের হার সবচেয়ে কম)
    ১) Saudi Arabia: শেষের দিক থেকে ১ নম্বর। এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ২ জন ধর্ষিত হয়।
    ২) Azerbaijan: শেষের দিক থেকে ২ নম্বর। প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৩ জন ধর্ষিত হয়।
    ৩) Yemen: শেষের দিক থেকে ৩ নম্বর। প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৪ জন ধর্ষিত হয়।
    ৪) Indonesia : এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৫ জন ধর্ষিত হয়।
    ৫) Oman: এখানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ১৮ জন ধর্ষিত হয়।
    Source: Official cold case investigations for rape records.
  27. মাহাবুব১৯৯৫ বলেছেন:29
    ইভটিজিংয়ের এই ছোঁয়াচে রোগটা ইদানিং খুব বেড়ে গেছে। পেপার-পত্রিকা, রেডিও-টিভি ও সভা-সমাবেশ করে এর বিরুদ্ধে যতই প্রচারণা চালানো হচ্ছে, এসম্পর্কে যুবক-তরুণদের আগ্রহ ততই বাড়ছে। আমরা বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, এটি আরও বেশি মহামারী আকার ধারণ করেছে আদালতের একটি রায়ের কারণে। ইভটিজিং একটি ব্যধি, একটি আযাব। আর আযাব আসে আল্লাহর নাফরমানীর কারণে। আদালত সেই 'আসা'টাকে সহজ করে দিয়েছে। কারণ, তারা রায় দিয়েছেন বোরকার বিরুদ্ধে। আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে। এই রায়ের মাধ্যমে প্রকারান্তরে ইভটিজিংকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কোনও কৃষক যদি ঘরের দরজা উন্মুক্ত রাখে, সেই দরজা দিয়ে ঢুকে চুরি করা চোরের জন্য কিছুমাত্র কঠিন থাকে না।
  28. ত্যাড়া কথা বলেছেন:30
    এটা আমার প্রথম ব্লগ লেখা।
    কারো খারাপ লাগলে কিছু করার নাই।
    কেউ এখনি গর্জে উঠবে না। কারন এখনো গর্জে উঠার লেভেলের কেউ ধর্ষিত হয়নি।
    ভারতে ওই লেভেলের কেউ ধর্ষিত হয়েছিল নির্মম ভাবে।
    যেদিন দেখবেন ওই রকম নির্মম ভাবে সেই লেভেলের কেউ ধর্ষিত হয়েছে সেদিন গর্জে উঠবে সবাই।
    সেই অপেক্ষায় রইলাম………………আমার বাংলাদেশ।
  29. নাহুয়াল মিথ বলেছেন:31
    :cry: :cry: :cry:
  30. আইবি.সোহেল বলেছেন:32
    যে কারণে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে সে কারণগুলো চিহ্নিত করে তার প্রতীকার জরুরী। পাপীকে নয় পাপকে বধ করা আবশ্যক।
  31. মো:সালেহীন বলেছেন:33
    অপরাধীর বিচার হোক এটাই চাই
  32. Image-Unavailableমো: শওকত আলী বলেছেন:35
    যারা ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোষাককে দায়ী করছেন, তাদের প্রতি প্রশ্ন, চার বছরের শিশুটি কি অশালীন পোষাক পরেছিলো ? আর আমার জানামতে বাংলাদেশে যত হাই সোসাইটির মেয়েই হোক না কেন, খুব বেশি অশালীন পোষাক সচরাচর কেউ পরে না। দুই একজন কেবল ব্যতিক্রম থাকতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মেয়েরা কি পোষাক পড়লো, সেটা বড় কথা না। আপনার ছেলেকে আপনি কতটুকু ভদ্রতা, সৌজন্যতা এবং অপরকে সম্মান করা শেখাচ্ছেন সেটাই বড় কথা।
  33. দৈনিক জনকন্ঠ-র সম্পাদকীয় পাতায় আমার এ বিষয়ক লেখার লিংকটি শেয়ার করছি –
    Your text to link…
  34. Image-Unavailableহিমেল বলেছেন:37
    আমাদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হচ্ছে আমরা একটি মেয়েকে নিজের বোন মনে করতে পারিনা।
  35. তমাল৮৪ বলেছেন:38
    ভাই অনুমতি দিলে একটা কথা বলি?
    শিক্ষা টা ও একটা বিষয়, শিক্ষিত মানুষ এ কাজ করেছে এটা আমি শুনিনি ।
    এটা অশিক্ষিত লোকদের কাজ। ফল বিক্রেতা, ড্রাইভার, বখাটে এসব ই বেশি ।
    ধর্ষক দের গলাকাটা বেশি অমানবিক হয়ে যায়,
    কাটা যায় তবে গলা না……।

ছত্তিশগড়ে মাওবাদঃ এক বিহঙ্গম দৃষ্টি -- দ্বিতীয় পর্ব

রঞ্জন রায়

  1.  সত্তরের দশকে কোলকাতার নকশালপন্থী আন্দোলন দমন করে এলিটবর্গের চোখে টাফ  অফিসার হিসেবে খ্যাতিপ্রাপ্ত প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রণ্‌জিৎ গুপ্ত নিজের মেমোয়ার্সে লিখেছেন যে সেই সময়ে মধ্যবর্গীয় নকশালপন্থী নেতারা ছিলেন রোম্যান্টিক স্বপ্নদর্শী। এঁদের সামরিক ব্যাপারে কোন সংগঠিত চিন্তাভাবনা ছিল না। ফলে দু'তিন বছরের মধ্যেই এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু উনি খেয়াল করেছিলেন যে আশির দশকে অন্ধ্র প্রদেশে কোন্ডাপল্লী সীতারামৈয়ার নেতৃত্বে  ক্ষমতা বিস্তার করা পি ডব্লিউ জি বা পিপল্‌স্‌ ওয়ার গ্রুপ সামরিক ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক হয়ে প্রস্তুত হয়েছে। এরা অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল এলাকা ধরে দক্ষিণবঙ্গে  ছড়িয়ে পড়লে আগের কায়দায় নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্র এর পক্ষে কঠিন হবে। আজকে তৃতীয় সহস্রাব্দের প্রথম দশকের শেষে দেখা যাচ্ছে এটা অনেকখানি সত্যি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।  বিশেষ করে সীতারমৈয়ার দলত্যাগ, ধরা পড়া ও মৃত্যুর পরে মুপল্লা লক্ষ্মণ রাও বা গণপতির নেতৃত্বে পুরনো সিপিআই (এম-এল) ও পিপলস্‌ ওয়ার গ্রুপের  সমন্বয়ে আজকের সিপিআই(মাওবাদী) প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কথায় সবচেয়ে বড় আভ্যন্তরীণ বিপদ। অন্ধ্র-উড়িষ্যা-ঝাড়খন্ড-বস্তার-বিহার ও রাঢ়বাংলায় এদের দমন করতে তৈরি হয়েছে সংযুক্ত কম্যান্ড। অপারেশনে লাগানো হয়েছে সিআরপি, ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস্‌, ইন্ডো- টিবেটান বর্ডার ফোর্স ইত্যাদির সঙ্গে লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে ভারতের  সামরিক বাহিনী। বস্তারের জঙ্গলে খুলতে হয়েছে জাঙ্গল-ওয়ারফেয়ারের ট্রেনিং কলেজ। আর নকশালপন্থী-থুড়ি আজকের মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্যের ডাগ আউট হল ছত্তিশগড়ের বস্তার এলাকার অবুঝমাড় । সেখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে আজকের সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে ওদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লড়াই।

            কোন সন্দেহ নেই যে সামরিক প্রশিক্ষণ ও আধুনিক হাতিয়ার ব্যবহার করার ব্যাপারে বর্তমান মাওবাদীরা প্রাক্তন নকশালপন্থীদের থেকে একযুগ এগিয়ে আছে। 'তীব্র শ্রেণীঘৃণা থাকলে আদিম হাতিয়ার দিয়েও লড়াই করা যায়' গোছের চারদশক আগের নীতিতে এদের আস্থা নেই। একে ৪৭ স্তরের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় হাতিয়ার, ল্যান্ডমাইন ইত্যাদির প্রয়োগে এরা দক্ষতা  অর্জন করেছে। অ্যামুনিশনের সাপ্লাই এতটাই যে বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের সামরিক শক্তির সঙ্গে এনকাউন্টারে এরা কয়েকঘন্টা ধরে গোলাগুলি চালিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি চোখ টানে এদের রণকৌশল। যেভাবে প্রশিক্ষিত কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের সার্চপার্টিকে এরা প্রলুব্ধ করে নিজেদের পছন্দমত জায়গায় এনে ঘেরাও করে মোক্ষম হামলা করেছে তা শুধু ছত্তিশগড়ের  সরকার ও পুলিশবিভাগকে নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহমন্ত্রালয়কেও চিন্তায় ফেলেছে।

           উপদেষ্টা হিসেবে পাঞ্জাবে খালিস্তানি দমনের সামরিক ব্লু-প্রিন্ট বানানোর জন্যে খ্যাতিপ্রাপ্ত কে এস গিলকে আনা হয়েছিল। একবছর পর তিনি ফিরে গেছেন। হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় প্যালেস্তাইনে অ্যান্টি-গেরিলা ওয়ারের অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত ইজরায়েলি অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যে আনা হবে কি না!

        কোয়লিবেড়া, কোরাবোড় ও  দক্ষিণ বস্তারের বিভিন্ন এলাকায় বুবি ট্র্যাপ দিয়ে সাঁজোয়া গাড়ি উড়িয়ে দেয়া ও তারপর হতভম্ব সরকারি বাহিনীর ওপর সুবিধাজনক অবস্থান থেকে গুলি চালিয়ে শেষ করে দিয়ে হাতিয়ার ও গোলাবারুদ লুঠ করে ফিরে যাওয়া-- মোটামুটি এই হল মাওবাদী আক্রমণের রণকৌশল।একেকটি হামলায় সরকারি বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা দশ-বিশ-পঁচিশ-পঁচাশ থেকে পঁচাত্তর অব্দি দাঁড়িয়েছে। বস্তারের সংলগ্ন ওড়িষ্যার কোরাপুটে  কয়েকশ' মাওবাদী গেরিলার শহরে ঢুকে জেল ভেঙে বন্দীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার মত দুঃসাহসিক ঘটনাও ঘটেছে। গত মাসে ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর থেকে প্রায় দেড়শ' কিলোমিটার দূরে মৈনপুরের কাছে কৃষকদের জমির পাট্টা ও লোন বিতরণের জন্যে আয়োজিত জনসভার থেকে ফেরার সময় মন্ত্রীর কনভয়ের ওপর হামলা হয়। অল্পের জন্যে মন্ত্রী বেঁচে যান, মারা যায় ওনার বডিগার্ড ও কিছু সরকারি কর্মচারি। জানা যায় যে হামলার পর মাওবাদী গেরিলারা যখন কাছে এসে দেখে যে পেছনের কিছু জীপে আরোহীরা সাদাপোষাকের পুলিশ নয়, সাধারণ কৃষক মাত্র, তখন ক্ষমা চেয়ে ওদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

          নিঃসন্দেহে এইসব ঘটনার প্রভাব পড়েছে সরকারি বাহিনীর মনোবলের ওপর। রাজ্যপুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব প্রকট হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জোয়ানেরা অভিযোগ করেছেন জঙ্গলে ঠিকমত রসদ, মশারি ও অ্যান্টি মসকুইটো ক্রিম না পাওয়া নিয়ে। সরগুজা জেলায় একটি কিশোরীকে গেরিলা সমর্থক অজুহাতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার পর গ্রামবাসীরা সরকারি বাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে বিক্ষোভ জানায়। তদন্তে পুলিশের গল্পটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সরিয়ে দেয়া হয়েছে ছত্তিশগড়ের ডায়রেক্টর জেনারেল অফ পোলিস বিশ্বরঞ্জনকে।

              কিন্তু ছবিটি এতটা একরঙা নয়। ভারত সরকারের গৃহমন্ত্রালয়ের তৈরি ব্লু-প্রিন্টে গত দু'বছর ধরে চলছে অপারেশন গ্রীন হান্ট।
         
               দন্ডকারণ্যের অন্তর্গত বস্তারের অধিকাংশ এলাকা আদিম ঘন জঙ্গলে ঢাকা। আর আছে কেশকাল ঘাঁটি ইত্যাদি পাহাড়। প্রতি বর্ষায় ইন্দ্রাবতী নদী প্লাবিত হয়ে বস্তারকে কার্যতঃ দুভাগে ভাগ করে। ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্ত্ববিদ প্রয়াত ডঃ সংকালিয়া সত্তরের দশকের শুরুতে রামচন্দ্রের লংকা আসলে  দক্ষিণ বস্তার, সমুদ্র মানে বর্ষার ইন্দ্রাবতী নদী, আর রাক্ষস মানে উত্তর ভারতীয়দের চোখে বস্তারের জঙ্গলের আদিবাসী -- এইসব বলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু করেছিলেন।
    অপারেশন গ্রীন হান্ট মানে এই ঘনসবুজ এলাকাকে মাওবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করা।
          
        তার জন্যে স্ট্র্যাটেজি হল এক, গ্রামগুলো যাতে মাওবাদীদের সাপ্লাই বেস না হয় তার জন্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে মার্কিন সেনার ব্যবহার করা কায়দায় স্ট্র্যাটেজিক হ্যামলেট বানিয়ে তাতে গ্রামবাসীদের আলাদা করে রেখে স্পেশাল পুলিশ ফোর্স বা স্থানীয় যুবকদের হাতে বন্দুক দিয়ে ওদের দিয়ে নজরদারি করানো। দুই, মাওবাদীদের শহুরে নেটওয়ার্ককে নষ্ট করা; সিমপ্যাথাইজারদের চিহ্নিত করে ব্যাপক জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিষ্ক্রিয় করা। তিন, মাওবাদীদের হিংসা, সন্দেহের বশে আদিবাসীদের নির্বিচারে মেরে ফেলার ঘটনাকে প্রচারের আলোয় এনে মাওবাদীদের 'গরীবের ভগবান' জাতীয় ভাবমূর্তিটিকে মিথ প্রতিপন্ন করা। চার, যে সব ব্যবসায়ীরা বা বড় শিল্পপতিরা মাওবাদী এলাকায় নিজেদের ব্যবসা- বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জন্যে মাওবাদীদের সমানান্তর প্রশাসনকে প্রোটেকশন মানি বা ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের কোণঠাসা করে মাওবাদী আন্দোলনের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করিয়ে দেয়া।

          অনেক বুদ্ধিজীবি অভিযোগ করেছেন অপারেশন গ্রীন্‌হান্টের আসল উদ্দেশ্য ভারতের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের ও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনালদের জন্যে বস্তারের খনিজ সম্পদ লুঠের দরজা খুলে দেয়া। ওনাদের কথা অনুযায়ী মাওবাদী আন্দোলন আসলে এই মাল্টিন্যাশনালদের রাক্ষসী আগ্রাসন থেকে বস্তারের বনজ ও খনিজ সম্পদ রক্ষার জন্যে আদিবাসী মারিয়া-মুরিয়া জনজাতির প্রতিরোধ। এই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন লেখিকা অরুন্ধতী রায়, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখা, অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ি, দিল্লির অধ্যাপক ও মানবাধিকার কর্মী নন্দিনী সুন্দর, পরিবেশবাদী মেধা পাটকর ও অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবি। আপাত দৃষ্টিতে কথাটা সত্যি মনে হয়। বস্তারের জঙ্গলে ইস্পাত শিল্পের জন্যে বিশাল জমি অধিগ্রহণ করেছে টাটা ও পাওয়ার-জায়ান্ট এস্‌সার গ্রুপ। শোনা যায় সলওয়া জুড়ুম , যার স্থানীয় হাল্বী ভাষায় অর্থ 'সার্বজনীন শান্তি', নামের  মাওবাদী-প্রতিরোধী আন্দোলনের পেছনে এদের আর্থিক সাহায্য কাজ করছে।

           টাকার উল্টোপিঠটি দেখা যাক। সিপিআই(মাওবাদী) দলের রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টো , যা কি না অন্তরজালের পাতায় সহজলভ্য, বলছে ওরা ক্ষমতায় আসলে পরে ভারতকে শত্তিশালী শিল্পোন্নত দেশ বানাবে। এর সঙ্গে  তৃতীয় বিশ্বের যেকোন ওয়েলফেয়ার স্টেটের পক্ষে সওয়াল করা যেকোন রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টোর কিছু পলিটিক্যাল জার্গন ছাড়া মৌলিক তফাৎ কোথায়! আর প্রাকৃতিক সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার না করার কথা কোথাও বলা নেই। তাহলে? আবার এদিকে ঘটেছে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এস্‌সার কোম্পানী থেকে মাওবাদীদের নিয়মিত টাকা পৌঁছানোর এজেন্ট ঠিকাদার বি কে লালাকে পুলিশ মাওবাদী প্রতিনিধির হাতে ১৫লাখ দেয়ার সময় বামাল গ্রেফতার করেছে।তারপর পুলিশ দন্তেওয়াড়া জেলার কিরন্দুলে এস্‌সার কোম্পানীর হেডকোয়ার্টারে গিয়ে ওদের জেনারেল ম্যানেজার ডি এস সি বি বর্মাকে ইন্টারোগেট করেছে। বিগতস্থানীয় স্টেট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের লেনদেন পরীক্ষা করে দেখেছে।

     বিগত ১৩ সেপ্টেম্বরে মাওবাদী আন্দোলন প্রভাবিত ৬০ জেলার কলেক্টরদের নিয়ে এক ওয়ার্কশপে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী চিদাম্বরম জানাচ্ছেন যে মাওবাদী হামলায় মারা গেছে ২৯৭ জন, আর অন্য টেররিস্ট হামলায় ২৭ জন এবং উগ্রবাদী হামলায়  ৪৬ জন। তাই একদিকে চিদাম্বরম মাওবাদীদের অস্ত্রসমর্পণ বা রাজনৈতিক বিচারধারা বর্জনের মত পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনার টেবিলে বসতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে রাজধানী রায়পুরের মানা বিমানবন্দরের কাছে ৪০০ একড় জমি নিয়ে তৈরি হবে এয়ারফোর্সের বেস স্টেশন। আরেকটি হবে ভিলাইয়ের কাছে নন্দিনীতে।  ইতিমধ্যেই লজিস্টিক সাপোর্টের নামে রায়পুরে স্থাপিত হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর  ১) ছত্তিশগড়-ওড়িষ্যা সাব-এরিয়া হেডকোয়ার্টার,২) টেরিটোরিয়াল আর্মি বেস্‌, ৩)ইন্ডিয়ান মিলিটারি স্কুল, ৪) জাঙ্গল ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং সেন্টর(নারায়ণপুর, বস্তার), ৫) ২১০০ একর জমি নিয়ে কাউন্টার  ইন্সার্জেন্সি ট্রেনিং সেন্টর, সরাইপালী।

             বর্ষা চলে যাচ্ছে। নতুন ডিজি নবানীর সঙ্গে প্রথম সমীক্ষা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিং বলছেন--   জঙ্গল মেঁ ঘুসকর মারো নকসলিয়োঁ কো। রাজ্যের গৃহমন্ত্রী ননকীরাম বলছেন যে সরগুজা জেলায় মাওবাদীদের নিকেশ করার কাজ সম্পূর্ণ। এবার বস্তারের পালা।

              এবার মাওবাদীদের ক্ষয়ক্ষতির দিকটা দেখা যাক। কেন্দ্রীয় কমিটির তাত্ত্বিক নেতা কোবাড গান্ধী জেলে, নাগপুরের দলিত বস্তিতে দীর্ঘদিন কাজ করা ওনার স্ত্রী অরুন্ধতী গান্ধী বস্তারের জঙ্গলে অপুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে যক্ষ্মায় মারা গেছেন। ভারত সরকারের সঙ্গে  আলোচনায় রাস্তা তৈরি করতে ভারপ্রাপ্ত চেরকুরি রাজকুমার 'আজাদ'কে কথিত এনকাউন্টারে মেরে ফেলা হয়েছে। কোলকাতার নারায়ণ সান্যাল বা 'বিজয়' সত্তর বছর বয়সে ছত্তিশগড়ের জেলে আজীবন কারাবাসের দণ্ডভোগ করছেন। যদিও সুপ্রীম কোর্ট সলওয়া জুড়ুম আন্দোলন এবং নিয়মকানুনের বাইরে আইন শৃংখলা রক্ষার জন্যে আদিবাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়াকে বে-আইনী ঘোষণা করেছে, কিন্তু ছত্তিশগড় সরকার পুরোনো এসপিও দের নতুন বাহিনীর নামে নিয়োগপত্র দিয়ে বৈধতা দিচ্ছে।

        সবচেয়ে লোকসান বোধহয় এই যে ব্যাপক ছত্তিশগড়ের সমতলে জনসাধারণের মধ্যে, বিশেষত: কৃষকদের মধ্যে মাওবাদী আন্দোলনের কোন সমর্থন নেই। বিশ বছর আগে বস্তারের তেন্দুপাতা ঠিকেদারদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন, আদিবাসী মহিলাদের ওপর বহিরাগতদের যৌনশোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ ইত্যাদির মাধ্যমে মাওবাদীরা আপামর জনসাধারণের মনে একটি শ্রদ্ধার আসন পেয়েছিল। আজকে নির্বিচারে গাঁয়ের লোকদের সন্দেহের বশে হত্যা, পুলিশের চর অভিযোগে বিরোধী রাজনীতির লোকদের গলাকাটা সমতলের লোকদের কাছে মাওবাদীদের ভয় ও ঘৃণার পাত্র করে তুলেছে।

        সমতলের কৃষকদের জন্যে কোন আন্দোলন মাওবাদীরা করছে না, ওদের কোন সংগঠন নেই। তাই এতদিন গরীবের জন্যে কাজ করেও মানবাধিকার কার্যকর্তা ডঃ বিনায়ক সেন সুপ্রীম কোর্টে জামিন পেলেও রায়পুর শহরে থাকতে পারছেন না। রাজদ্রোহের অপরাধী নকশাল নেতা নারায়ণ সান্যালের চিকিৎসার জন্যে ওনার জেলের মধ্যে তিরিশবার দেখা করা সাধারণ লোক মেনে নিতে পারছে না। ব্যাপারটা এখন দুদিক থেকেই 'আমরা-ওরা'য় দাঁড়িয়ে গেছে। মাওবাদীরা বস্তারে ইন্সট্যান্ট জাস্টিস (খানিকটা দাঁতের বদলে দাঁত, চোখের বদলে চোখ গোছের) দিয়ে জনতার রক্ষক হয়েছিল। আজ ওদের ক্যাঙ্গারু কোর্ট (অরুন্ধতী রায় যাই বলুন) ছত্তিশগড়ে বিবমিষা তৈরি করেছে। ফলশ্রুতি- সমতলে জন আন্দোলনের স্পেস ভীষণভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এখানে এখন মানবাধিকারের কথা বলা অপরাধ। অধিকাংশ এনজিও সন্দেহের তালিকায়।
        
        আর বস্তারের জনগোষ্ঠি মারিয়া-মুরিয়া-বাইসন মারিয়ারা বিস্তীর্ণ ছত্তিশগড়ের ওরাঁও-গোঁড়-কঁওয়র-বিঁঝওয়ার ইত্যাদি আদিবাসীদের থেকে মূলত: আলাদা। বস্তারের উপভাষাও ছত্তিশগড়ি নয়, হল্বী। ওটা অন্ধ্র এলাকার তেলেগু ভাষার সঙ্গে মেলে। তাই শংকর গুহনিয়োগী ও যোগী রায়েরা সত্তরের দশকে বস্তারে ঘাঁটি বানাতে ব্যর্থ। একই কারণে নব্বইয়ের দশকে অন্ধ্র প্রদেশে গ্রে-হাউন্ডের তাড়ায় পুরনো নকশাল আন্দোলনের ঘাঁটি শ্রীকাকুলাম,খাম্মাম আদি থেকে লং মার্চ করে দক্ষিণ বস্তারে ঘাঁটি গড়ে তুলতে পেরেছেন গণপতি-কিষেণজীরা। আজ ওদের সর্বভারতীয় হেডকোয়ার্টার হল বস্তারের অবুঝমাড়, যেখানে কয়েকদশক আগে আদিবাসীদের ঘোটুল প্রথা বা কিশোর-কিশোরীদের একসঙ্গে একধরণের কমিউনে থেকে সাবালক হয়ে ওঠার প্রথা নিয়ে ফিলিম বানাতে বিবিসির লোকজন এসেছিল।
         
        সব মিলিয়ে ছত্তিশগড়ে বর্তমান মাওবাদী আন্দোলনের ছবিটা কী? কিইবা এর ভবিষ্যত?  ব্যাপক ও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে। অন্ধ্র প্রদেশের ভারভারা রাও বা গদ্দারের মত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের লোক এখানে সামিল হন নি। ওদের আন্দোলন বস্তারের দুর্গম পাহাড়-জঙ্গলের টেরেন ছেড়ে সমতলে ছড়াতে পারছে  না। কেমন যেন শ্রীলংকার লিট্টে আন্দোলনের শেষ দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সমুদ্র দিয়ে ঘেরা জাফনা আর সমতল ও শিল্পাঞ্চলের বিস্তার দিয়ে ঘেরা বস্তারের পরিণতি একই। চিদাম্বরমরা ভেতরে তলোয়ার শানাচ্ছেন আর বারবার নিঃশর্ত আলোচনার কথা বলে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য সরকারের তুলনায় মাওবাদীদের একগুঁয়ে, অমানবিক প্রতিপন্ন করা। যাতে আগামী মিলিটারি অপারেশনের সময় মাওবাদীরা কোথাও কোন সহানুভূতি না পায়। আজকের বস্তারে একদিকে সরকারি বাহিনী ও এসপিও, অন্যদিকে মাওবাদী গেরিলারা। মাঝখানে জাঁতা কলে পিষছে আদিবাসীরা।
          স্থানীয় কবি শাকির আলীর ভাষায়ঃ
           তুমি কোন দলে -- মাওবাদীদের?
           -- না।
            তবে কি সরকারের ?
           -- তাও নয়।

           আমি হচ্ছি সেই আদিবাসী বুড়ো,
           যে বসে আছে পুড়ে যাওয়া কুঁড়ে ঘরের সামনে।
           যার একছেলে গেছে পুলিশের গুলিতে, আরেকটি মাওবাদীদের।
           যে ভুলে গেছে নিজের অতীত,
           যার ছানিপড়া চোখে ধরা দেয় না ভবিষ্যৎ।

    (পরের পর্বে সমাপ্য)
    পূর্বপ্রকাশ ঃ 'আজকের দিন' 


Re: ছত্তিশগড়ে মাওবাদঃ এক বিহঙ্গম দৃষ্টি -- দ্বিতীয় পর্ব

  1. পড়ে চলেছি। শেষ পর্বের পরে লিখবো। এখন শুধু এটাই বলি যে কথাটা সত্যি, সব পক্ষের গোলা-বারুদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে জনসাধারণ। এর একটা বড় দায় হল সংসদীয় দলগুলোর, যারা সত্যি সত্যি কখনোই বিরোধী হয়নি। শাসক হবার দিকেই যাদের প্রাণপণ নজর থেকেছে। না হলে মাওবাদীরা তো হাওয়ায় বাড়তে পারে না! বনবাসী জনজাতির মানুষের দিকে যদি স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর সত্যি নজর থাকতো তাহলে তাদের বঞ্চনার অবসান হয়নি কেন? কেন তাদের এখনো এমন ভয়ঙ্কর জীবন? কেন কেউ হাতে অস্ত্র নেওয়ার পরে মিটিং হয়, কমিশন হয়, নানা প্রকল্প হয় উন্নয়নের। আগে হতে পারতো না? আর সেই উন্নয়নের প্রকল্পের মধ্যেও আগে থাকে রাস্তাঘাট পাকা করা, সশস্ত্র সরকারের গাড়ি ছুটবে বলে? জল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, জীবিকার মতন বুনিয়াদী সমস্যা রাস্তাঘাট হয়ে গেলেও যে তিমিরে প্রায় সে তিমিরেই থাকে কেন? মানুষ যদি মানুষের ন্যূনতম সম্মানীয় জীবন পায় মাওবাদীরা থাকতে পারে নাকি?

    মানুষ শান্তি প্রিয়। সে অযথা রক্তপাত-হানাহানি চায় না। তাই তার দায় নেওয়ার কথা বলে যখন মাওবাদীরা লড়াইটাকে শুধু অস্ত্রের লড়াইতে নিয়ে যাচ্ছে, কিছুটা সরকারের চালে পা দিয়েই- তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেবেই। নিচ্ছেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে। আবার সরকার, বিরোধী স্পেসটায় মাওবাদীদের প্রবেশের বিষয়টা সামনে রেখে মানুষের কথাগুলোকে গুলিয়ে দিচ্ছে, বিরোধী মানেই মাওবাদী তকমা দিয়ে। তাতে তারও সুবিধে। দাঁত-নখ বের করে সে তার নিজের নাগরিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সংবিধান যতটুকু মানবাধিকার বা নাগরিক অধিকার দিয়েছে তাকেও হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে। কেন না মাওবাদী বলে দিলেই আর সংবিধানের মান্যতার দায় তার থাকে না।

    সত্যিই কি তাই? একদমই নয়। যাঁরা সংবিধান বানিয়েছিলেন তাঁরা নাগরিকের জন্য যে সব রক্ষাকবচগুলো, বিরোধী স্পেসের জন্য যা রেখেছিলেন তাকে এখন সরকার নানা এক্সট্রাজুডিসিয়াল আইনের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। মিডিয়ার একাংশের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এই যে বিনায়ক সেন কাজ করতে পারছেন না নারায়ণ স্যান্যালের সঙ্গে তিরিশবার দেখা করেছেন বলে, এখানে দেখছি রঞ্জনদা বলছেন রায়পুরের মানুষ এটাকে মেনে নিতে পারছেন না বলে এমন হচ্ছে। এটার পিছনে তথ্য কি? উল্টো দিকের কথা হল, রমন সিং-এর সরকার ওনাকে থাকতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষের কথা মিডিয়ায় সামনে আসছে যখন তখন সে তার ভয়ে বলা কথা। কে ঠিক এবারে কে বলবে?

    এই যে সাধারণ মানুষের বিনায়ককে না মানার তত্ত্ব এমন কত তত্ত্ব তো সব পক্ষই দিয়ে চলেছে। কে জানলো সাধারণ মানুষ কি চাইছেন? সরকার? মিডিয়া? মাওবাদী? যেখানে ওপিনিয়ন ম্যানুফ্যাকচারড এবং সেন্সরড সেখানে সত্যি-মিথ্যে কে জানে? যেখানে সোনি সোরির বাবাকে মাওবাদীরা গুলি করে পুলিশের চর বলে, আর ভুয়ো কাগজ দিয়ে তাকেই জেলে রাখে সরকার, সেখানে সত্যি-মিথ্যের বিচার হয় কি ভাবে? ভারতের যে কোনো আদালতে কোনো বন্দী মাওবাদী জাতীয় তকমা পেলে তার কথা শুনে কি বিচারকরা তাকে জেল-হাজতে পাঠান বা পুলিশি হেপাজতে? নাকি ওটাই কনভেনশন বলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন? কত কত মানুষ স্রেফ মিথ্যে মাওবাদী তকমায় বন্দী? সত্যি মাওবাদী বন্দী যারা তাদের বিচারও এত অস্পষ্ট কেন? কেন বিনা বিচারে একটা মানুষও জেলে থাকে এ দেশে? সত্যি-মিথ্যের সীমানাটা এতটাই দুর্বল যে তার অজুহাতে যার হাতে ক্ষমতা সে যা খুশী করে চলে, বলে চলে।

    বনের গ্রামগঞ্জ থেকে তুলে এনে ঘেরাটোপে শুধু মাওবাদীদের থেকে পৃথক করতে সরকার রাখছে নাকি মানুষগুলোকে? এই সুযোগে সে বড় বড় শিল্পমালিকদের জন্য গ্রাস করে নিচ্ছে সম্পদ, যার প্রাথমিক অধিকার হল বনবাসীদের। তার বিনিময়ে সেই বনবাসী কি পাচ্ছে? যার সঠিক প্রয়োগে গোটা দেশ উপকৃত হতে পারে, সেই খনিজ চলে যাচ্ছে অশোধিত কাঁচামাল হয়েই বিদেশে। আর দেশের শিল্প শুধু সেই ব্রিটিশের পাটের দালালের মতন কাঁচামাল, বড়জোর শোধিত হলে ইস্পাত ইত্যাদির ফর্মেই চালান দিয়ে সন্তুষ্ট। এই যে যাচ্ছে এই ভাঁড়ার এ শেষ হয়ে যাবে কদিন পরেই। তখন কি হবে? বৃহৎ শিল্পের শ্রম নিবিড় চেহারা এখন কতটা সম্ভব? মানুষ তাহলে কাজ পাবে কোথায়? ক্ষুদ্র শিল্পকে ধীরে ধীরে হত্যা করা হল কেন গোটা ভারত জুড়ে? বৃহৎ শিল্পই কি শুধু পারে, তার বিকল্প কিছু আছে? এসব আলোচনা কই হয়েছে? সরকার করেছে সিরিয়াসলি? শিল্পের যে প্রয়োজন তার জন্য সত্যি কি সঠিক কোনো সরকারী পরিকল্পনা আছে? খুব অপরিস্কার এর উত্তরগুলো। মঙ্গল বা বৃহষ্পতির থেকে ভবিষ্যতের খনিজ সংগ্রহ করার প্রথম পদক্ষেপ নাসার অভিযান, তাই ভারতও সে কাজ করবে- এমন সব নানাবিধ হাওয়াগাড়ি পরিকল্পনা রাজধানীর অলিন্দে ঘোরে-ফেরে। তার বেশী?


    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বিধানসভায় যখন বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতির কথা বলছেন তখন তাঁর এই প্রতিক্রিয়ার তাৎক্ষণিক কারণগুলো কি কি নিয়ে অনেকেই সরব দেখছি। সে ঠিক-ভুল বাদ দিয়েই বলছি (মমতা যা বলেন সব ভুল এমন মনে হয় না আমার, আগেও যেমন যা বাম করছে সব ভুল মনে হয়নি) , কথাটা কি খুব অন্যায্য? বিচার ব্যবস্থা কি প্রশ্নের উর্ধে নাকি? আদালত অবমাননার একটা বিধি আছে বলে, যা সাদা চোখে দেখা যায় তার কথা কেউ বলতে পারবে না? যদি বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী না হয় তাহলে রমন সিং-এর ছত্তিশগড়ের মতন গুন্ডা স্টেট-এর বিরুদ্ধে মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

    দেখাই তো যাচ্ছে সংসদীয় বাকী দলগুলো মাঝেসাঝে দূর থেকে হাত-পা নেড়েই ক্ষান্ত, মানুষের দায় তারা নিচ্ছে না। নিলে রমন সিং থাকে কি করে এত কিছুর পরেও? কি করে চিদাম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল? কি করে মাওবাদীরাই শুধু এই সব অঞ্চলে প্রধান বিরোধী হয়ে দাঁড়ালো? কি করে স্বাধীনতার পরে সুস্থ শ্বাস নেবার ইচ্ছে থাকা মানুষোগুলো আজ প্রায় শ্মশানে দাঁড়ালো? অনেক প্রশ্ন, আর উত্তর মোটেও সহজ কিছু না।

Re: ছত্তিশগড়ে মাওবাদঃ এক বিহঙ্গম দৃষ্টি -- দ্বিতীয় পর্ব

  1. লেখা,টা সত্যি দারুণ। আগের বার মেদবর্জিত বলেছিলা্‌ম, এত জটিল পরিস্থিতির এত সহজ সিনপ্টিক ভিউ চট করে বের করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। মতামতের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে কিছু কোনওদিনই বলিনা, আজও বলবনা। একমত না হওয়ার বাঙলির পুরুষানুক্রমিক জাতধম্মে দখলআন্দাজি করবনা। লেখার স্টাইলটা নিয়ে বলব, এক মিলিমিটারও মেদ নেই, ঝরঝরে।

Re: ছত্তিশগড়ে মাওবাদঃ এক বিহঙ্গম দৃষ্টি -- দ্বিতীয় পর্ব

  1. তো শেষমেশ পুজিবাদের মানবিক সংস্করণ ও ''গণতন্ত্রের মধ্যবিত্ত'' চলন ,এই তো?

Re: ছত্তিশগড়ে মাওবাদঃ এক বিহঙ্গম দৃষ্টি -- দ্বিতীয় পর্ব

  1. রঞ্জন রায়,

    এই পর্ব থেকেও অনেক কিছু জানলাম। দৃশ্যতই জনবিচ্ছিন্ন অস্ত্র নির্ভর রাজনীতিতে [কথিত মাওবাদে] শেষ পর্যন্ত সমাজ বিপ্লব সম্ভব নয়, অহেতুক রক্তপাতের পর এর ভবিষ্যত নকশালবাদী তথা আত্নঘাতিতার চোরাবালিতে; ইতিহাসের লীলা এই যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না এবং আরেক লীলা যে, ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় [আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র/বুবি ট্রাপ/এনকাউন্টার স্বত্ত্বেও]। এই পোড়া দেশ [এবং এপার বাংলা] শেষশেষ টাইগাম বামই পেলো, ঝান্টু/মিল্লাত বাম তো অজস্র, কিন্তু কাঙ্খিত দিন বদল আর হলো কই?

    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। চলুক।

উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকার বনাম কংগ্রেস

  1. উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার অভিযোগে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে বিরোধী দলগুলি৷ আর কংগ্রেস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ন্যায়যাত্রা মিছিল বের করলে, লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ গ্রেপ্তার হন রাজ্য কংগ্রেস সভানেত্রী৷
    বিরোধীদের চাপের মুখে মায়াবতী
    উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে - এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির৷ হালে একের পর এক খুন, ধর্ষণ, কৃষকদের ওপর গুলিবর্ষণ ইত্যাদি ঘটনা তারই জলন্ত নমুনা৷ শুধুমাত্র গত দু'সপ্তাহেই ১৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ যার মধ্যে আছে দলিত কিশোরী ও মহিলা৷
    কংগ্রেস পার্টি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করলে, পুলিশ প্রশাসন তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ ন্যায়যাত্রা নামের ঐ প্রতিবাদ মিছিল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে, পুলিশ মিছিলের ওপর লাঠিচার্জ করে৷ আটক করে প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী রীতা বহুগুনাকে৷ মিছিল কভার করতে গিয়ে কিছু সাংবাদিক আহত হন৷ মায়াবতী প্রশাসনকে ফ্যাসীবাদী অভিহিত করে রীতা বহুগুনা বলেন, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ বন্ধ করতে পারেনা কোনো সরকার৷ মায়াবতী প্রশাসনের সেই চেষ্টা হাস্যকর৷
    অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন৷ কড়া হাতে এর মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন৷ পাশাপাশি একথাও বলেন যে, খুন ও ধর্ষণের ঘটনা অন্য রাজ্যেও হয়৷ কংগ্রেস শাসিত মহারাষ্ট্র তার উদাহরণ৷ কাজেই শুধু উত্তরপ্রদেশ এককভাবে চিহ্নিত করা অন্যায়৷ এইসব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করছে বলেন তিনি৷ উত্তরপ্রদেশের একটি নাবালিকাকে ঘর্ষণের চেষ্টায় বাধা দিতে গেলে কিশোরীর দুটো চোখ নষ্ট করে দেয় দুষ্কৃতিরা৷ সে এখন দিল্লিতে চিকিৎসাধীন৷ রাহুল গান্ধী আজ মেয়েটিকে দেখতে যান৷
    নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত মায়াবতী
    চিকিৎসা বিভাগের দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস করায়, খুন হন রাজ্যের চিফ মেডিক্যাল অফিসার বি.পি সিং৷ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ নয়ছয় করার ঘটনায় ডেপুটি মেডিক্যাল অফিসার যোগেন্দ্র সাচানকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দলের এক বড় নেতাকে বাঁচাতে সাচানকে খুন করা হয়৷ জেলবন্দি থাকাকালিন রহস্যজনকভাবে তিনি মারা যান৷ কেউ বলছেন তিনি আত্মহত্যা করেন৷
    পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা-পারসোল গ্রামে কৃষক আন্দোলনের সময় মহিলারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে কংগ্রেস সম্পাদক রাহুল গান্ধী মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছিলেন, তা খারিজ করে দেয় জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন৷
    মোটকথা আগামি বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ভোট৷ এসময় শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলা প্রচলিত রাজনৈতিক কৌশল৷
    প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
    সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

DW.DE

ধর্ষণ একটি রাজনৈতিক ইস্যু

  1. ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে তিনদিনে ১০টি ধর্ষণের ঘটনার পর ব্যাপারটি মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী এবং বিরোধীপক্ষের মধ্যে সত্যিই একটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
    তিনদিনে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে উত্তর প্রদেশে
    ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ৷ আরেক হিসেবে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির মধ্যে একটি৷ তিনদিনে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা৷ দু'টি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহিলাকে গণধর্ষণ করার পর জীবন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে৷ এক মহিলা তার আগ্রাসনকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়৷ বিরোধীপক্ষ বলছে, এ'সব মহিলাদের রক্ষা করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর৷ মায়াবতী বলছেন, দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, বিরোধীপক্ষ বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে৷
    রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ফলে চাপের মুখে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী
    মায়াবতীর নিজের দল হল বহুজন সমাজ পার্টি, একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল৷ কেন্দ্রীয় শাসকজোটে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের বক্তব্য হল, মায়াবতী প্রদেশ শাসন করার নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেছেন৷ উচ্চপদস্থ কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মায়াবতী মহিলাদের দুর্দশা উপেক্ষা করছেন, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাদের বাস, সেই সব মহিলাদের দুর্দশা৷ রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান রীতা বহুগুণা বলেছেন, মায়াবতী ক্ষমতা গ্রহণ করার সময় থেকেই উত্তর প্রদেশে মহিলাদের পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে শুরু করেছে, বিশেষ করে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে৷
    ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা৷ কমবয়সী মেয়েরাই অধিকাংশ তার শিকার হয়েছে৷ সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যেও এ'টা অবিশ্বাস্য, অভূতপূর্ব এবং পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য৷ সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তর প্রদেশে সব ধরনের অপরাধীরা যেন অবাধে তাদের কার্যকলাপ চালাবার সুযোগ পেয়েছে, যেন সরকার ও প্রশাসন বস্তুত ব্যর্থ হয়েছে৷ মায়াবতী স্বয়ং একদিকে মহিলা, অন্যদিকে সমাজের বঞ্চিত অংশের প্রতিনিধি৷ এছাড়া তাঁর কড়া প্রশাসনের জন্য নাম আছে৷ অথচ দেখা যাচ্ছে, সেই মায়াবতীই যেন ব্যর্থ হতে চলেছেন৷
    প্রতিবেদন: মুরলী কৃষ্ণণ/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
    সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

DW.DE




No comments:

Post a Comment