মোদীর হাওয়ায় পদ্মফুলের রমরমা
গৌতম হোড়
মিরাট: মিরাট শহর ছাড়িয়ে বুলন্দশহর যাওয়ার মূল রাস্তা থেকে অনেকটা ভিতরে দোতাই গ্রাম৷ মূল রাস্তার যে রকম ছন্নছাড়া হাল, অখিলেশ যাদবের রাজত্বে তার থেকে বরং গ্রামের রাস্তার অবস্থা সামান্য ভাল৷ ট্র্যাক্টরে আখ চাপিয়ে চিনিকলে নিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সী জাঠ হেম সিং৷ ট্র্যাক্টর থামিয়ে প্রশ্ন করলাম, ভোট তো এসে গেল, কেউ প্রচারে এসেছিল? উত্তরটা আসতে সময় লাগল না৷ বিশাল চেহারার জাঠের জবাব, 'কেউ আসেনি, আর এলেই বা কী হবে?' কেন? বিন্দুমাত্র ধানাই পানাই না করে হেম সিংয়ের জবাব, 'আরে ভাজপা, ভোট তো ভাজপাকেই দেবে সকলে৷' কেন, বিজেপির প্রার্থী রাজেন্দ্র আগরওয়াল অনেক কাজ করেছেন বুঝি? মুখ কুঁচকে হেম সিং বললেন, 'কিছুই করেননি৷ না না, নিজের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে শুনেছি৷ আমাদের জন্য কিচ্ছু নয়৷ তাঁকে তো ধরতেই পারা যায় না৷' তার পরেও তাঁকে ভোট দেবেন? 'ওঁকে তো ভোট দেব না, বিজেপিকেও দিচ্ছি না, ভোট তো দেব নরেন্দ্র মোদীকে৷ মোদী লা জবাব নেতা৷ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য ভোট দেব৷'
কিছুক্ষণ আগেই গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা আরএসএসের এক নেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল৷ তিনি বলছিলেন, 'আমি তো ভাবছি নোটায় ভোট দেব৷ ওই রাজেন্দ্র আগরওয়ালকে ভোট দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই৷ কোনও কাজ তো করেইনি, তার উপর এমন সব অভিযোগ আছে যে কী বলব৷ আমরা চাইনি রজেন্দ্র প্রার্থী হোক৷ কিন্ত্ত এর পরেও দেখবেন ও জিতে যাবে৷ জিতবে মোদীজির জন্য৷' আর সেটা জানেন বলেই বোধহয় মিরাট শহরে তো বটেই, চারপাশের গ্রামেও সে ভাবে প্রচারে যাচ্ছেন না দু-বারের সাংসদ রাজেন্দ্র৷ তিনি জানেন, মোদী হাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ ভেসে যাবে, মোদী হাওয়াই মানুষকে টেনে আনবে বুথে এবং তাঁরা কমলে ছাপ দেবেন৷ রাজেন্দ্র আগরওয়ালের রুটিন এখন সকালের দিকে সামান্য প্রচার, তার পর ব্যবসার কাজ দেখা, বিকেলে আবার একটু আধটু সভা, তার পর স্থানীয় চ্যানেলে বিতর্কে অংশ নেওয়া৷ বেশ গায়ে হাওয়া লাগিয়েই ঘুরছেন তিনি৷
মিরাটের হোটেল মালিক কৌশিক আর্য বলছিলেন, 'রাজেন্দ্রর প্রচার করার দরকারটাই বা কী৷ দেখুন না, কংগ্রেসের প্রার্থী নাগমা থেকে শুরু করে বিএসপি ও এসপি-র প্রার্থী সকলেই মুসলিম৷ একে মোদী হাওয়া, তার উপর বাকিরা মুসলিম, হিন্দু বলতে তো শুধু রাজেন্দ্র আগরওয়াল৷ মুজফ্ফরনগর দাঙ্গার পর যে ধরনের মেরুকরণ হয়েছে, এর পরেও যদি এই অবস্থায় তিনি জিততে না পারেন তো বলার কিছু নেই৷' প্রতিটি কথাই অক্ষরে অক্ষরে সত্যি৷ মুজফ্ফরনগরের জন্য বিজেপির পক্ষে যে ভাবে হিন্দু ভোট একত্রিত হয়েছে, তাতে জাতপাতের অঙ্কটা অনেকটাই মুছে গিয়েছে৷ না হলে জাঠেদের ভোট তো নিশ্চিত ভাবে অজিত সিংয়ের রাষ্ট্রীয় লোকদলে যাওয়ার কথা৷ বিশেষত ইউপিএ সরকার জাঠদের সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার পরে৷ একে মুজফ্ফরনদর দাঙ্গা, তার উপর মোদী মোদী রব, এই দুয়ে মিলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে এখন বিজেপির রমরমা৷
মিরাট থেকে বিজনৌর৷ বিজনৌরের পর বুলন্দশহর, খুরজা, মেওয়ানা হয়ে আলিগড় পর্যন্ত ছবিটা একই৷ বিজনৌর শহরে 'সচ কে সাথ' বলে একটা ছোট কাগজ চালান একরামউদ্দিন৷ তাঁর কথায়, 'সচ বলছি, মোদীর প্রভাব তো আছেই৷ এখন মোদীকে যে হারাতে পারবে, মুসলিমরা তাঁকেই ভোট দেবে৷' সে তো মুসলিমদের মনোভাব হবে বোঝা গেল, কিন্ত্ত এ রকম মোদী, মোদী আওয়াজ উঠছে কেন? মেওয়ানার কাছে গ্রামের বাসিন্দা রবি গুপ্তার ব্যাখ্যা, 'সবাইকে দেখেছি৷ একবার মোদীকেও দেখে নি৷' আলিগড়ে স্থানীয় একটি হিন্দি দৈনিকের বার্তা সম্পাদক মুকেশ কুমারের অভিজ্ঞতা হল, 'অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামেও দেখছি, আপ-এর প্রার্থী প্রচারে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত গ্রামবাসীরা তাঁদের হাতজোড় করে বলছেন, এ বার মোদীকে দেব৷ পরের বার আপনাদের কথা ভাবব৷' এই প্রত্যন্ত গ্রামে মোদীর কথা কী ভাবে পৌঁছল? মুকেশের জবাব, 'কেন টিভি আছে না?' বোকাবাক্সর দৌলতে সব খবর পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সর্বত্র৷ নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী, কেজরিওয়ালের কথা সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে আম আদমির অন্দরমহলে৷ টিভি প্রচারে ফল হয় না কে বলল?
মুজফ্ফরনগরের নাঙ্গলা মাদোরের মধুর বালিয়ান বলছিলেন, 'দেখুন সাব, দাঙ্গা যদি নাও হত, তা হলেও মোদীকে ভোট দিতাম৷ আমরা যুবকরা একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি৷ জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে৷ কিন্ত্ত এই আশাটুকু এ বার আঁকড়ে ধরতে চাই৷' মোদীর প্রতি এই আশার আলোই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে অন্তত পদ্মফুল ফোটাচ্ছে৷ সে জন্যই এই এলাকার গোটা ১৪ আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনেই অ্যাডভান্টেজ বিজেপি৷
এর পরেও আর টাকা লাগিয়ে, দিন-রাত এক করে প্রচারে নামে কোন বেকুব? তাই বোধহয় রাজেন্দ্ররা এতটা নিশ্চিন্ত৷ তার উপর মোদী নিজে মিরাট, বাগপত-সহ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সভা করে গিয়েছেন৷ তারও তো বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে৷ সাধে কি বিজেপি ভোটের দিনগুলিতে মোদীকে দিয়ে ১৮৫টা সভা করাচ্ছে৷ এ বার মোদীর জন্যই পদ্মফুলের এত রমরমা, অন্তত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই সুফলা জমিতে৷
মিরাট: মিরাট শহর ছাড়িয়ে বুলন্দশহর যাওয়ার মূল রাস্তা থেকে অনেকটা ভিতরে দোতাই গ্রাম৷ মূল রাস্তার যে রকম ছন্নছাড়া হাল, অখিলেশ যাদবের রাজত্বে তার থেকে বরং গ্রামের রাস্তার অবস্থা সামান্য ভাল৷ ট্র্যাক্টরে আখ চাপিয়ে চিনিকলে নিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সী জাঠ হেম সিং৷ ট্র্যাক্টর থামিয়ে প্রশ্ন করলাম, ভোট তো এসে গেল, কেউ প্রচারে এসেছিল? উত্তরটা আসতে সময় লাগল না৷ বিশাল চেহারার জাঠের জবাব, 'কেউ আসেনি, আর এলেই বা কী হবে?' কেন? বিন্দুমাত্র ধানাই পানাই না করে হেম সিংয়ের জবাব, 'আরে ভাজপা, ভোট তো ভাজপাকেই দেবে সকলে৷' কেন, বিজেপির প্রার্থী রাজেন্দ্র আগরওয়াল অনেক কাজ করেছেন বুঝি? মুখ কুঁচকে হেম সিং বললেন, 'কিছুই করেননি৷ না না, নিজের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে শুনেছি৷ আমাদের জন্য কিচ্ছু নয়৷ তাঁকে তো ধরতেই পারা যায় না৷' তার পরেও তাঁকে ভোট দেবেন? 'ওঁকে তো ভোট দেব না, বিজেপিকেও দিচ্ছি না, ভোট তো দেব নরেন্দ্র মোদীকে৷ মোদী লা জবাব নেতা৷ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য ভোট দেব৷'
কিছুক্ষণ আগেই গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা আরএসএসের এক নেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল৷ তিনি বলছিলেন, 'আমি তো ভাবছি নোটায় ভোট দেব৷ ওই রাজেন্দ্র আগরওয়ালকে ভোট দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই৷ কোনও কাজ তো করেইনি, তার উপর এমন সব অভিযোগ আছে যে কী বলব৷ আমরা চাইনি রজেন্দ্র প্রার্থী হোক৷ কিন্ত্ত এর পরেও দেখবেন ও জিতে যাবে৷ জিতবে মোদীজির জন্য৷' আর সেটা জানেন বলেই বোধহয় মিরাট শহরে তো বটেই, চারপাশের গ্রামেও সে ভাবে প্রচারে যাচ্ছেন না দু-বারের সাংসদ রাজেন্দ্র৷ তিনি জানেন, মোদী হাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ ভেসে যাবে, মোদী হাওয়াই মানুষকে টেনে আনবে বুথে এবং তাঁরা কমলে ছাপ দেবেন৷ রাজেন্দ্র আগরওয়ালের রুটিন এখন সকালের দিকে সামান্য প্রচার, তার পর ব্যবসার কাজ দেখা, বিকেলে আবার একটু আধটু সভা, তার পর স্থানীয় চ্যানেলে বিতর্কে অংশ নেওয়া৷ বেশ গায়ে হাওয়া লাগিয়েই ঘুরছেন তিনি৷
মিরাটের হোটেল মালিক কৌশিক আর্য বলছিলেন, 'রাজেন্দ্রর প্রচার করার দরকারটাই বা কী৷ দেখুন না, কংগ্রেসের প্রার্থী নাগমা থেকে শুরু করে বিএসপি ও এসপি-র প্রার্থী সকলেই মুসলিম৷ একে মোদী হাওয়া, তার উপর বাকিরা মুসলিম, হিন্দু বলতে তো শুধু রাজেন্দ্র আগরওয়াল৷ মুজফ্ফরনগর দাঙ্গার পর যে ধরনের মেরুকরণ হয়েছে, এর পরেও যদি এই অবস্থায় তিনি জিততে না পারেন তো বলার কিছু নেই৷' প্রতিটি কথাই অক্ষরে অক্ষরে সত্যি৷ মুজফ্ফরনগরের জন্য বিজেপির পক্ষে যে ভাবে হিন্দু ভোট একত্রিত হয়েছে, তাতে জাতপাতের অঙ্কটা অনেকটাই মুছে গিয়েছে৷ না হলে জাঠেদের ভোট তো নিশ্চিত ভাবে অজিত সিংয়ের রাষ্ট্রীয় লোকদলে যাওয়ার কথা৷ বিশেষত ইউপিএ সরকার জাঠদের সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার পরে৷ একে মুজফ্ফরনদর দাঙ্গা, তার উপর মোদী মোদী রব, এই দুয়ে মিলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে এখন বিজেপির রমরমা৷
মিরাট থেকে বিজনৌর৷ বিজনৌরের পর বুলন্দশহর, খুরজা, মেওয়ানা হয়ে আলিগড় পর্যন্ত ছবিটা একই৷ বিজনৌর শহরে 'সচ কে সাথ' বলে একটা ছোট কাগজ চালান একরামউদ্দিন৷ তাঁর কথায়, 'সচ বলছি, মোদীর প্রভাব তো আছেই৷ এখন মোদীকে যে হারাতে পারবে, মুসলিমরা তাঁকেই ভোট দেবে৷' সে তো মুসলিমদের মনোভাব হবে বোঝা গেল, কিন্ত্ত এ রকম মোদী, মোদী আওয়াজ উঠছে কেন? মেওয়ানার কাছে গ্রামের বাসিন্দা রবি গুপ্তার ব্যাখ্যা, 'সবাইকে দেখেছি৷ একবার মোদীকেও দেখে নি৷' আলিগড়ে স্থানীয় একটি হিন্দি দৈনিকের বার্তা সম্পাদক মুকেশ কুমারের অভিজ্ঞতা হল, 'অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামেও দেখছি, আপ-এর প্রার্থী প্রচারে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত গ্রামবাসীরা তাঁদের হাতজোড় করে বলছেন, এ বার মোদীকে দেব৷ পরের বার আপনাদের কথা ভাবব৷' এই প্রত্যন্ত গ্রামে মোদীর কথা কী ভাবে পৌঁছল? মুকেশের জবাব, 'কেন টিভি আছে না?' বোকাবাক্সর দৌলতে সব খবর পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সর্বত্র৷ নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী, কেজরিওয়ালের কথা সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে আম আদমির অন্দরমহলে৷ টিভি প্রচারে ফল হয় না কে বলল?
মুজফ্ফরনগরের নাঙ্গলা মাদোরের মধুর বালিয়ান বলছিলেন, 'দেখুন সাব, দাঙ্গা যদি নাও হত, তা হলেও মোদীকে ভোট দিতাম৷ আমরা যুবকরা একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি৷ জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে৷ কিন্ত্ত এই আশাটুকু এ বার আঁকড়ে ধরতে চাই৷' মোদীর প্রতি এই আশার আলোই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে অন্তত পদ্মফুল ফোটাচ্ছে৷ সে জন্যই এই এলাকার গোটা ১৪ আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনেই অ্যাডভান্টেজ বিজেপি৷
এর পরেও আর টাকা লাগিয়ে, দিন-রাত এক করে প্রচারে নামে কোন বেকুব? তাই বোধহয় রাজেন্দ্ররা এতটা নিশ্চিন্ত৷ তার উপর মোদী নিজে মিরাট, বাগপত-সহ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সভা করে গিয়েছেন৷ তারও তো বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে৷ সাধে কি বিজেপি ভোটের দিনগুলিতে মোদীকে দিয়ে ১৮৫টা সভা করাচ্ছে৷ এ বার মোদীর জন্যই পদ্মফুলের এত রমরমা, অন্তত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই সুফলা জমিতে৷
http://eisamay.indiatimes.com/nation/modi-wave/articleshow/32977913.cms?
No comments:
Post a Comment