Monday, March 31, 2014

দাগিদের জেলে ভরবই, হুঙ্কার মোদীর

দাগিদের জেলে ভরবই, হুঙ্কার মোদীর

modi
এই সময়, নান্দেড় ও আকোলা: রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এর আগেও করেছেন নরেন্দ্র মোদী৷ কংগ্রেস সহ-সভাপতির তোলা নানা অভিযোগের জবাবও দিয়েছেন৷ কিন্ত্ত এই প্রথমবার ক্ষমতায় এলে তাঁর সরকার কোন পথে হাঁটতে চলেছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী৷ মহারাষ্ট্রের নান্দেড়ে কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বনের কেন্দ্রে প্রচারে এসে রাহুল গান্ধীর দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তিকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলেন মোদী৷ সেই সঙ্গে ইউপিএ সরকারের দুর্নীতির পরিণাম নিয়ে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন৷ আর কালো টাকা নিয়ে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভোঁতা করে দিয়ে তাঁর ঘোষণা, দেশের টাকা যারা লুঠ করেছে তাদের জেলে যেতে হবে৷

রবিবার নান্দেড়ের সভায় সরাসরি অশোক চহ্বন ও রাহুল গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে মোদী বলেন, 'শাহজাদা তো বলেছিলেন আদর্শ কেলেঙ্কারিতে জড়িত সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না৷ তা অশোক চহ্বনকে ভোটে লড়ার টিকিট দেওয়াটাই বুঝি ব্যবস্থা নেওয়ার নমুনা!' মুম্বইয়ের আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত অশোক চহ্বনকে দলের টিকিট দেওয়া নিয়ে এর আগে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সনিয়া গান্ধী ও রাহুল৷ ভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করে সনিয়া বলেছিলেন, অশোকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি৷ তাঁর ভোটে লড়ার উপরেও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই৷ কংগ্রেসের সেই যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে মোদী এ দিন বলেন, 'কারগিলের শহিদ পরিবারের প্রাপ্য যারা নিজেদের পকেটে ভরেছে, নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না৷' দুর্নীতি প্রসঙ্গে তাঁর সরকারের নীতি কী হবে তার ইঙ্গিতও এ দিন দিয়েছেন মোদী৷ চাঁচাছোলা ভাষায় তাঁর মন্তব্য, 'দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে৷ তাঁরা কোন দলের তা আমি দেখব না৷' দুর্নীতিতে জড়িত রাজনৈতিক নেতাদের মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত গড়া হবে বলেও জানিয়েছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে তাঁর আশ্বাস, যাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে তাঁদের ভয় নেই৷

কংগ্রেসের ইস্তাহারে কালো টাকা দেশে ফেরানোর জন্য বিশেষ দূত নিয়োগ করার কথা বলেছেন রাহুল৷ কিন্ত্ত এ দিন মোদী তার থেকে একধাপ এগিয়ে বলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে কালো টাকা দেশে তো ফেরানো হবেই, সেই টাকা দরিদ্রদের উন্নয়নের কাজে লাগানো হবে৷ তাঁর কথায়, 'কংগ্রেস কালো টাকা ফিরিয়ে আনবে না৷ কারণ ওরা জানে বিদেশে কাদের টাকা আছে৷ যারা দেশকে লুঠ করেছে তাদের জেলে যেতে হবে৷'

অশোক চহ্বনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নান্দেড়ের স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রভাবের কথা ভেবেই অনেক টানাপোড়েনের পর তাঁকে টিকিট দিতে বাধ্য হয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড৷ এ দিন মোদী অশোক চহ্বনকে সামনে রেখে মূলত রাহুলকেই আক্রমণের নিশানা করেন৷ ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির অভিযোগ যে এ বারের ভোটে অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে তা বুঝেই বেশ কিছুদিন ধরে রাহুল নিজেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ ইউপিএ সরকারের অপকর্মের কলঙ্ক যাতে তাঁর গায়ে না লাগে তার জন্য কখনও কখনও সরকারের নীতির সঙ্গে নিজের দূরত্বও বজায় রাখার সচেতন চেষ্টা করছেন তিনি৷ কলঙ্কিত নেতাদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের আনা অর্ডিন্যান্স বাতিল করার জন্য তাঁর মন্তব্যে যে জন্য চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে৷ কিন্ত্ত অশোক চহ্বনের মতো নেতাকে টিকিট দিতে বাধ্য হওয়ায় তার সুযোগ পুরোদমে কাজে লাগালেন মোদী৷

রবিবার নান্দেড়ের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের আকোলাতেও সভা করেন মোদী৷ সেখানেও তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্যই ছিল ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা৷ বিদর্ভের চাষিদের দুরবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, 'শাহজাদা বলছেন গুজরাট মডেলের বেলুন ফুটো হয়ে যাবে৷ তা উনি তো ২০১২ সালে ছ'বার গুজরাটে গিয়ে এই কথাই বলেছেন৷ কিন্ত্ত গুজরাটের মানুষ তো কংগ্রেসের বেলুনকে উড়তেই দিল না ওই রাজ্যে৷' এ দিন তাঁর আক্রমণ থেকে ছাড় পাননি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পাওয়ারও৷ মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে আর একটি সভায় তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তো মহারাষ্ট্রেরই বাসিন্দা৷ কিন্ত্ত এ রাজ্যের কৃষকরা যখন মরছেন তখন তাঁদের নিয়ে একটি কথা বলারও সময় নেই তাঁর৷ অথচ ক্রিকেট নিয়ে তিনি রোজ কত কথাই বলছেন৷' ভিড়ে ঠাসা জনসমাবেশে তাঁর ঘোষণা, 'আমরা শপথ নিলাম এই দেশ ও মহারাষ্ট্র থেকে এনসিপি-কে দূর করব৷'

No comments:

Post a Comment