Sunday, March 30, 2014

‘মোল্লা মুলায়ম’-এ আস্থা নেই মুসলিমদের

‘মোল্লা মুলায়ম’-এ আস্থা নেই মুসলিমদের

গৌতম হোড়

মুজফফরনগর:
 নিস্পৃহ মুখে কথাটা ছুড়ে দিলেন নাঙ্গলা মাদোর গ্রামের বছর পঁচিশের জাঠ যুবক মধুর বালিয়ান, 'গতবারেও অজিত সিংয়ের নলকূপে ভোট দিয়েছি৷ কিন্তু এ বার বিজেপি ছাড়া আর কিছু ভাবছি না৷' পরের প্রশ্ন করার আগেই মধুরের সাফ কথা, 'দাঙ্গার পর সব সমীকরণ বদলে গিয়েছে৷ জাঠ বলুন, গুজ্জর বলুন বা অন্যরা, হিন্দু হলেই পদ্মে বোতাম টিপবে৷'

পরিবর্তন অন্য দিকেও৷ নাঙ্গলা মাদোর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জোহরি গ্রাম৷ দাঙ্গার সময় এই গ্রামেরই যুবক সালাউদ্দিনকে মারা হয়েছে৷ সে তার পেয়ারার খেত দেখতে গিয়েছিল৷ ভরদুপুরে খেতের মধ্যেই তাকে মেরে চলে যায় দাঙ্গাকারীরা৷ তার পর অনেক চক্কর কেটে, অনেক ধরাধরির পর সরকারের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা পেয়েছে সালাউদ্দিনের পরিবার৷ কিন্ত্ত তার পরেও তাঁর ভাই গিয়াসুদ্দিন ও তার বন্ধুদের কাছে এই ভোট অনেক হিসাব-নিকেশ চোকানোর সুযোগ৷ খুব ধীরে ধীরে গিয়াসুদ্দিন বলছিল, 'সাব, দাঙ্গা তো একমাত্র সরকারই ঠেকাতে পারত৷ কোথায় ঠেকাল? দাঙ্গায় যতজন মারা গিয়েছে, তার থেকে বেশি মানুষ মরল ত্রাণ শিবিরে৷ এর পর কি আর সাইকেলে ভোট দেওয়া যায়? আমরা তো নীল হাতিতেই বোতাম টিপব৷' সাইকেল হল মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টির ভোটের প্রতীক৷ সেই মুলায়ম, অযোধ্যায় করসেবকদের উপরে গুলি চালাবার পর যাকে মোল্লা মুলায়ম বলা হত৷ সেই মুলায়ম, যাঁর যাদব-মুসলিম সমীকরণ ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ম্যাজিক দেখিয়েছে৷ কিন্ত্ত সব অঙ্ক পাল্টে গিয়েছে মুজফ্ফরনগরের দাঙ্গার পর৷ মোল্লা মুলায়মের উপর থেকে মুজফ্ফরনগর তো বটেই, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলিমদেরই ভরসা চলে গিয়েছে, তাঁদের ভরসা এখন বহেন মায়াবতী৷

হবে নাই বা কেন? মুজফ্ফরনগরে বিজেপি প্রার্থী সঞ্জীব বালিয়ানকে জাঠেদের প্রথম মহাপঞ্চায়েতের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তিনি দাঙ্গায় অভিযুক্ত নেতাদের একজন৷ বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী কাদির রানা৷ তিনি মুজফ্ফরনগরে মুসলিমদের পঞ্চায়েতের প্রধান বক্তা ছিলেন৷ তাঁর প্রতিও অভিযোগের আঙুল কম উঠছে না৷ মুজফ্ফরনগর-ঘেঁষা বিজনৌরে অমিত শাহের হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে বিজেপি প্রার্থী বদল করে দাঁড় করিয়েছে আর এক দাঙ্গা অভিযুক্ত বিধায়ক ভরতেন্দু সিংকে৷ কৈরানাতে বিজেপির প্রার্থীও দাঙ্গা-অভিযুক্ত বিধায়ক৷ মুজফফরনগর দাঙ্গায় যে তিন জন বিধায়কের নাম এফআইআরে আছে তাঁরা সকলেই লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী৷ মুজফ্ফরনগর শহরে বসে রামলাল বলছিলেন, 'চিন্তাভাবনার কোনও অবকাশই নেই৷ এ বার ভোট বিজেপিতে৷'

জোহরিতে যখন গিয়াসুদ্দিনদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন হঠাত্‍ আসলাম বলে উঠলেন, 'ওই দেখুন, রামপাল যাচ্ছে৷ আমাদের পরের গ্রাম মনসুখপুরে এই রামপালই একজনকে গুলি করে মেরেছে৷ শয়তান৷' তার পরেও ধরা পড়েনি? আসলামের জবাব, 'কে ধরবে? সরকারের উপরমহল থেকে নির্দেশ এসেছে, কোনও ব্যবস্থা যেন না নেওয়া হয়৷' আসলামের গলায় ক্ষোভ ঝরে পড়ছিল৷ ক্ষোভ কম ছিল না নাঙ্গলা মাদোরের মধুর বা কাওয়ালের ধর্মপালের৷ কাওয়ালের এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা থেকেই মুজফ্ফরপুরে গণ্ডগোলের সূত্রপাত৷ মধুর ও ধর্মপালের অভিযোগ, 'মেয়েটির দুই ভাইকে পিটিয়ে মেরে দিল৷ তার পরেও পুলিশ কাউকে ধরল না৷ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিল না৷ বলল, উপরমহলের নির্দেশ৷ এ রকম অত্যাচার হবে, তার কোনও প্রতিকার হবে না?'

জোহরি, মনসুখপুর, কাওয়াল, মুজফ্ফরনগর ঘুরে কথা বলতে বলতে বুঝলাম, আপাত শান্তির পিছনে রয়ে গিয়েছে কতটা অবিশ্বাস, কতটা ক্ষোভ, কতটা মেরুকরণ৷ এখনও ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মুজফ্ফরনগর৷ অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই৷ দু'পাশের আখের খেত চিরে রাস্তা চলে গিয়েছে৷ মাঝে মাঝে আম বা পেয়ারার বাগান৷ নাঙ্গালের পাশে থানায় ইন্সপেক্টর রোহিতাস সিং বলছিলেন, 'আপাত ভাবে সব শান্ত৷ কিন্ত্ত ভিতরে ভিতরে কী হচ্ছে তা বলতে পারব না৷' দাঙ্গার পর থানার সব পুলিশকর্মীকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে৷ সব পুলিশ এখানে নতুন৷
http://eisamay.indiatimes.com/nation/muslim-voters-does-not-believe-in-mulayam-singh-yadav/articleshow/32918729.cms?

No comments:

Post a Comment