সৈয়দ আবুল হোসেন এখন ব্যবসা দেখেন
এক সময়ের দাপুটে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিতর্কিত হয়েও বহাল তবিয়তেই ছিলেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাননি। বাদ পড়েছেন মন্ত্রিত্ব থেকেও। সাবেক এই যোগাযোগমন্ত্রী শুধু মন্ত্রিত্ব থেকেই বাদ পড়েনি বাদ পড়েছেন সংসদ থেকেও। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক ছিলেন। সেখান থেকেও বাদ পড়েন। এখন তিনি দলের কোনো পদেও নেই। তাই তার অধিকাংশ সময় কাটে নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ করেই এই তথ্য জানা গেছে। আরও জানা যায়, তিনি একসময় টিসিবির একজন সামান্য কর্মচারী ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ঘটনা। তখন সব কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত, টিসিবি ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সব ধরনের পণ্য আমদানি করত এই সংস্থাটি, রপ্তানিও করতে হতো টিসিবির মাধ্যমে। দুর্নীতিটি ছিল গম নিয়ে। দুর্নীতির ব্যাপকতা এতটাই বেশি ছিল যে, শেষ পর্যন্ত চাকরি চলে যায় তার। চাকরি চলে গেলেও লোকটির কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছিলেন টিসিবিতে চাকরি করতেই। সেই টাকা দিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান চালু করলেন। নিজের নামেই প্রতিষ্ঠান। নাম সৈয়দ আবুল হোসেন কোম্পানি লিমিটেড- সংক্ষেপে এসএএইচসিও বা সাকো। ১৯৭৫ সালে এর প্রতিষ্ঠা।
সাকো বা সৈয়দ আবুল হোসেনের মূল উত্থান এরশাদ আমলে। এরশাদের সময়ে একের পর এক ব্যবসা পেতে থাকে সাকো। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের মূল খুঁটি ছিল রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদের কয়েকজন পোষ্য পুত্র ছিল, যারা প্রকাশ্যে রওশন এরশাদকে মা বলে ডাকত। তাদের মধ্যে সৈয়দ আবুল হোসেন অন্যতম।
শোনা যায়, শেখ শহীদের শিক্ষামন্ত্রিত্ব গিয়েছিল সৈয়দ আবুল হোসেনের কারণে। আবুল হোসেনের এলাকায় একটি কলেজ করা ও এর শিক্ষাক্রম অনুমোদন নিয়ে বিপত্তি বাধে। জানা যায়, গলফ খেলতে খেলতে সৈয়দ আবুল হোসেন এরশাদকে শেখ শহীদের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিল। ওই রাতেই শেখ শহীদের মন্ত্রিত্ব চলে যায় আর নতুন শিক্ষামন্ত্রী হন কাজী জাফর। কাজী জাফরের নামও বলে দিয়েছিল সৈয়দ আবুল হোসেন। কাজী জাফর মন্ত্রী হয়েই প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তা হচ্ছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চাহিদা পূরণ।
'৯০-এর গণআন্দোলনে এরশাদের পতন হওয়ার পর ভোল পালটে ফেলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। রাতারাতি সবাইকে বিস্মিত করে নৌকায় উঠে পড়েন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সময় সরকারি চাকরি হারানো এই লোকটি তার মেয়ে শেখ হাসিনার আমলে এসে হয়েছেন মন্ত্রী। গুঞ্জন রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে মনোনয়ন কিনেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে কালকিনির আওয়ামী লীগের হাল ধরেন ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন। সেই থেকে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একবার প্রতিমন্ত্রী ও আরেকবার মন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হলেও তা ধরে রাখতে পারেননি। দুই পাসপোর্ট ব্যবহার করায় মন্ত্রিত্ব চলে যায়। তার পরের আওয়ামী লীগের আমলেও যোগাযোগমন্ত্রী হয়ে পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। বাদ পড়েন মন্ত্রিত্ব থেকে। তবে সেই লোকটিই এলাকার রাজনীতিতে এখনো কলকাঠি নাড়ছেন। মাদারীপুর সদরের একাংশ ও কালকিনি উপজেলা নিয়ে মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসন। মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনে সাবেক এই মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। এরপর থেকেই গ্রুপিং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। বাহাউদ্দিন নাছিমের মনোনয়ন বাতিল করে আবুল হোসেনের মনোনয়নের দাবিতে আবুল হোসেনপন্থি নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি দেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত আর বদলায়নি। এরপরে উপজেলা নির্বাচনে মাদারীপুরের কালকিনিতে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে বিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করে। তবে এই এলাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হলেও বসে থাকেননি তার নেতা-কর্মীরা। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে এবং একক আধিপত্য ধরে রাখতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও এলাকার প্রভাবশালীদের নিয়ে দল গুছিয়ে রাখছেন। গত ৫ বছরে যারা তার চরম বিরোধিতা করেছে তাদেরকেও তিনি তার দলে নিয়েছেন। তার সরাসরি হস্তক্ষেপে চরম বিপাকে পড়েছেন সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এমনকি উপজেলা নির্বাচনে আবুল হোসেনের সমর্থকের জয় এবং বাহাউদ্দিন নাছিম সমর্থকের পরাজয় হয়েছে বলেও মনে করছেন এলাকার মানুষ। এরকম পরিস্থিতিতে আগামীতে কোনো নির্বাচনে নাছিম দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাউকে ঘোষণা দিলে আবুল হোসেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে বা তার গ্রুপের কোনো নেতাকে সমর্থন দিয়ে যে কোনো মূল্যে নির্বাচিত করবেন- আবুল হোসেনের গ্রুপের এমন পরিকল্পনায় কালকিনির আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। আবুল হোসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সহস্রাধিক নাগরিককে চিঠি দিয়ে জানান, 'রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে শেখ হাসিনা তাকে নমিনেশন দেয়নি। তিনি কালকিনির মানুষের সঙ্গে থাকারও ঘোষণা দেন। এদিকে আবুল হোসেনপন্থি স্থানীয় নেতা লোকমান সরদার ও মসিউর রহমান সবুজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ বাহাউদ্দিন নাছিমকে বয়কট অব্যাহত রাখে। আবুল হোসেনের নেতৃত্বে এই গ্রুপের সক্রিয়তায় ক্রমেই বাহাউদ্দিন নাছিমবিরোধী নেতা-কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আবুল হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী তৌফিকুজ্জামান শাহীনকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করেন। এসব বিষয় নিয়ে সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ০১৭২৯২৬৬৫৬৬ নম্বরটিতে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/সাকো বা সৈয়দ আবুল হোসেনের মূল উত্থান এরশাদ আমলে। এরশাদের সময়ে একের পর এক ব্যবসা পেতে থাকে সাকো। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের মূল খুঁটি ছিল রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদের কয়েকজন পোষ্য পুত্র ছিল, যারা প্রকাশ্যে রওশন এরশাদকে মা বলে ডাকত। তাদের মধ্যে সৈয়দ আবুল হোসেন অন্যতম।
শোনা যায়, শেখ শহীদের শিক্ষামন্ত্রিত্ব গিয়েছিল সৈয়দ আবুল হোসেনের কারণে। আবুল হোসেনের এলাকায় একটি কলেজ করা ও এর শিক্ষাক্রম অনুমোদন নিয়ে বিপত্তি বাধে। জানা যায়, গলফ খেলতে খেলতে সৈয়দ আবুল হোসেন এরশাদকে শেখ শহীদের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিল। ওই রাতেই শেখ শহীদের মন্ত্রিত্ব চলে যায় আর নতুন শিক্ষামন্ত্রী হন কাজী জাফর। কাজী জাফরের নামও বলে দিয়েছিল সৈয়দ আবুল হোসেন। কাজী জাফর মন্ত্রী হয়েই প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তা হচ্ছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চাহিদা পূরণ।
'৯০-এর গণআন্দোলনে এরশাদের পতন হওয়ার পর ভোল পালটে ফেলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। রাতারাতি সবাইকে বিস্মিত করে নৌকায় উঠে পড়েন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সময় সরকারি চাকরি হারানো এই লোকটি তার মেয়ে শেখ হাসিনার আমলে এসে হয়েছেন মন্ত্রী। গুঞ্জন রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে মনোনয়ন কিনেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে কালকিনির আওয়ামী লীগের হাল ধরেন ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন। সেই থেকে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একবার প্রতিমন্ত্রী ও আরেকবার মন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হলেও তা ধরে রাখতে পারেননি। দুই পাসপোর্ট ব্যবহার করায় মন্ত্রিত্ব চলে যায়। তার পরের আওয়ামী লীগের আমলেও যোগাযোগমন্ত্রী হয়ে পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। বাদ পড়েন মন্ত্রিত্ব থেকে। তবে সেই লোকটিই এলাকার রাজনীতিতে এখনো কলকাঠি নাড়ছেন। মাদারীপুর সদরের একাংশ ও কালকিনি উপজেলা নিয়ে মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসন। মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনে সাবেক এই মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। এরপর থেকেই গ্রুপিং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। বাহাউদ্দিন নাছিমের মনোনয়ন বাতিল করে আবুল হোসেনের মনোনয়নের দাবিতে আবুল হোসেনপন্থি নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি দেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত আর বদলায়নি। এরপরে উপজেলা নির্বাচনে মাদারীপুরের কালকিনিতে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে বিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করে। তবে এই এলাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হলেও বসে থাকেননি তার নেতা-কর্মীরা। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে এবং একক আধিপত্য ধরে রাখতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও এলাকার প্রভাবশালীদের নিয়ে দল গুছিয়ে রাখছেন। গত ৫ বছরে যারা তার চরম বিরোধিতা করেছে তাদেরকেও তিনি তার দলে নিয়েছেন। তার সরাসরি হস্তক্ষেপে চরম বিপাকে পড়েছেন সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এমনকি উপজেলা নির্বাচনে আবুল হোসেনের সমর্থকের জয় এবং বাহাউদ্দিন নাছিম সমর্থকের পরাজয় হয়েছে বলেও মনে করছেন এলাকার মানুষ। এরকম পরিস্থিতিতে আগামীতে কোনো নির্বাচনে নাছিম দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাউকে ঘোষণা দিলে আবুল হোসেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে বা তার গ্রুপের কোনো নেতাকে সমর্থন দিয়ে যে কোনো মূল্যে নির্বাচিত করবেন- আবুল হোসেনের গ্রুপের এমন পরিকল্পনায় কালকিনির আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। আবুল হোসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সহস্রাধিক নাগরিককে চিঠি দিয়ে জানান, 'রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে শেখ হাসিনা তাকে নমিনেশন দেয়নি। তিনি কালকিনির মানুষের সঙ্গে থাকারও ঘোষণা দেন। এদিকে আবুল হোসেনপন্থি স্থানীয় নেতা লোকমান সরদার ও মসিউর রহমান সবুজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ বাহাউদ্দিন নাছিমকে বয়কট অব্যাহত রাখে। আবুল হোসেনের নেতৃত্বে এই গ্রুপের সক্রিয়তায় ক্রমেই বাহাউদ্দিন নাছিমবিরোধী নেতা-কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আবুল হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী তৌফিকুজ্জামান শাহীনকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করেন। এসব বিষয় নিয়ে সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ০১৭২৯২৬৬৫৬৬ নম্বরটিতে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
__._,_.___
No comments:
Post a Comment