Sunday, March 30, 2014

প্রেসিডেন্সির গণভোটে বিড়ম্বিত টিএমসিপি-র নালিশ কমিশনে

প্রেসিডেন্সির গণভোটে বিড়ম্বিত টিএমসিপি-র নালিশ কমিশনে

presi
এই সময়: লোকসভা নির্বাচনের মুখে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ আয়োজিত গণভোটের ফলাফল ঘিরে শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক টানাপোড়েন৷ এই ফলকে হাতিয়ার করে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ থেকে যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুগত বসুর অপসারণ দাবি করেছে সিপিএম৷ বস্তুত, গণভোটের ফলেও সেই দাবিই সমর্থিত হয়েছে৷ অন্য দিকে, এই ফলে বিড়ম্বিত শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লাগু হয়ে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভোটের প্রচারে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে সে জন্য রেজিস্ট্রারের শাস্তি দাবি করেছে৷ টিএমসিপি-র সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে শনিবার এমনকী নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানিয়েছেন৷ প্রবীরবাবুর অবশ্য বক্তব্য, 'এ বিষয়ে কিছুই বলার নেই৷ কারণ, আমি সাতেও নেই পাঁচেও নেই৷' ছাত্র সংসদের সহসভাপতি অমরদীপকুমার সিংহেরও দাবি, 'কোনও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নিয়ে এই গণভোট আয়োজন করা হয়নি৷ প্রেসিডেন্সির স্বার্থের কথা ভেবেই এই গণভোট৷ এর সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই৷ আদর্শ আচরণবিধিরও কোনও সম্পর্ক আছে কি না, আমাদের জানা নেই৷' মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার থেকেই ছাত্রছাত্রীদের এই গণভোট এবং এতে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গ হয় না বলেই মত বহু প্রশাসনিক কর্তারও৷

প্রেসিডেন্সির গণভোটের ফলকে যাদবপুরে সিপিএম যে হাতিয়ার করবে, তা অবশ্য স্পষ্ট ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর কথায়৷ তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্সির গণভোট নিয়ে নির্বাচনে আমরা সরাসরি হয়তো প্রচার করব না, কিন্ত্ত সুগত বসুকে ঠিক করতে হবে তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক মতামতকে গুরুত্ব দেবেন কি না?' সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলতন্ত্র কায়েম হয়েছে বলে এক সময় সুগতবাবুর মতো তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ শিক্ষাবিদরাই অভিযোগ তুলতেন৷ এখন সেই শিক্ষাবিদ নিজেই তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়ানোয় দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এসে গেল৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও মেন্টর-পদ থেকে প্রকারান্তরে সুগতবাবুর অপসারণ চেয়েছেন৷ উত্তরবঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, 'রাজনীতি করা আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে থাকা এক জিনিস নয়, হয় তাঁকে রাজনীতি করতে হবে, নয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে থাকতে হবে৷'

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শুক্রবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে থাকতে পারেন, তা হলে সুগত বসুর প্রেসিডেন্সির মেন্টর-পদে থাকায় অন্যায় কোথায়?' মন্ত্রীর এই বক্তব্য সম্পর্কে বিমানবাবুর মন্তব্য, 'অনেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলছেন৷ দুটো বিষয় কিন্ত্ত এক নয়৷ আচার্য নীতি নির্ধারণ করেন না৷ কিন্ত্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে যাঁরা থাকেন, তাঁরা নীতি নির্ধারণ করেন৷' তা ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী কোনও দলের লোক নন৷ পদাধিকার সূত্রেই যে তিনি আচার্য হন, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন সিপিএম নেতারা৷

সিপিএম নেতৃত্ব যখন সুগতবাবুর উপর চাপ বাড়াতে চাইছে তখন তৃণমূল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপরেই পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছে৷ এই উদ্দেশ্যেই শনিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন৷ শঙ্কুর দাবি, 'কোনও শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক প্রচার করা যায় না৷ এর ফলে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধিও ভঙ্গ হয়েছে৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করা হয়েছে৷ তাই রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে তাঁর পদত্যাগ চেয়েছি৷' প্রেসিডেন্সির গণভোটের পিছনে সিপিএম ও মাওবাদীদের হাত রয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ৷ সমগ্র ঘটনায় যাঁরা যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত দাবি করেছেন তিনি৷ এই বিষয়ে রাজ্যের সহকারী মুখ্য-নির্বাচন অফিসার অমিতজ্যোতি ভট্টাচার্যের বক্তব্য, 'আমরা অভিযোগ পেয়েছি৷ আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷'

No comments:

Post a Comment