Sunday, June 29, 2014

প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামে ফের জলাবদ্ধতা ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামে ফের জলাবদ্ধতা ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শনিবার রাত থেকে টানা বর্ষণের ফলে ফের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে। ফলে রবিবার দিনভর নগরীতে ছিল তীব্র যানজট এবং জনজীবনে চরম ভোগান্তি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড মীরসরাই অংশেও ছিল একই চিত্র।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ১৫২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মৌসুমী বায়ুর কারণে আরও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য কোন সতর্কতা সঙ্কেত নেই।
চট্টগ্রামে শনিবার রাত থেকে কখনও থেমে থেমে, কখনও একটানা ভারি ও মাঝারি বর্ষণে নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে যায়। নগরীর হালিশহর, বড়পুল, ছোটপুল, আগ্রাবাদ, শুলকবহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, জিইসি মোড়, চকবাজার, চাক্তাই, রাজাখালিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। কোন কোন স্থানে ছিল হাঁটু থেকে কোমর পানি। ফলে জনসাধারণকে পথ চলাচলে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ব্যাহত হয় জনজীবন। বৃষ্টিতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে ওঠে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ছাড়াও কয়েক দিনের বর্ষণে সড়কের কার্পেটিং নষ্ট হয়ে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল ছিল অত্যন্ত ধীরগতিতে। এর ফলে যানবাহনগুলোকে একই স্থানে থেমে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবস্থা ছিল আরও বেহাল। গত শুক্রবার থেকেই মহাসড়কের সীতাকু- ও মীরসরাই এলাকায় যাত্রীসাধারণের ভোগান্তির শেষ ছিল না। বিশেষ করে ভাটিয়ারি থেকে বারো আউলিয়া পর্যন্ত যানজট ছিল তীব্র। যানবাহনগুলোকে চলতে হয় শম্বুকগতিতে। চার লেনের কাজ অনেকটাই শেষ হওয়ায় শুকনো সময়ে ভোগান্তি অনেকটা কেটেই গিয়েছিল। কারণ মহাসড়কের গাড়িগুলো মাঝে-মধ্যে চলাচল করেছে নতুন সড়কেও। কিন্তু বৃষ্টিতে মাঝখানের আইল্যান্ড কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় বাস-ট্রাকগুলো সুযোগ বুঝে এদিক-ওদিক ওঠানামা করতে পারছে না। তাছাড়া বর্ষণের ফলে আইল্যান্ডের মাটি সড়কের ওপর আছড়ে পড়ায় পুরনো সড়কেও যান চলাচল অনেকটাই দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে যাত্রীদের এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে চার-পাঁচ ঘণ্টা।
চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে পণ্য ডেলিভারি কমে গেছে। আবহাওয়া বৈরি থাকায় বন্দর বহির্নোঙ্গরে জাহাজে পণ্য ওঠানামা রবিবারও বিঘিœত হয়।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে পড়ায় মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি চিন্তা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজ উদ্যোগে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। সংস্থাটির আগ্রাবাদ অফিসে এ কক্ষ চালু হয়েছে। খানা-খন্দক ও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শুরু করা হবে শীঘ্রই। প্রয়োজনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় সারাদেশে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে এটিই স্বাভাবিক। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গত ২০ জুন থেকে চার দিনের জন্য জলাবদ্ধ ছিল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এ চার দিনে মানুষের কষ্ট ছিল সীমাহীন। হাঁটু থেকে বুক পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর অন্তত অর্ধেক অংশ। ভবনগুলোর নিচতলা ডুবে যাওয়ায় অধিবাসীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছিল।

No comments:

Post a Comment