Saturday, June 28, 2014

জঙ্গীবাদ দুর্নীতি সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে ॥ দেশ এগিয়ে যাবেই ০ সংসদে বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ০ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মাথায় রেখেই বাজেট দেয়া হয়েছে। অতীতে বাস্তবায়ন করেছি, এবারও বাস্তবায়িত হবে ০ ২০২১ সালের আগেই দেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে

জঙ্গীবাদ দুর্নীতি সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে ॥ দেশ এগিয়ে যাবেই
০ সংসদে বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী 
০ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মাথায় রেখেই বাজেট দেয়া হয়েছে। অতীতে বাস্তবায়ন করেছি, এবারও বাস্তবায়িত হবে 
০ ২০২১ সালের আগেই দেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে
সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, কষ্টার্জিত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। নির্বাচন ঠেকিয়ে দেশ ও গণতন্ত্র ধ্বংস করে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়ারও অপচেষ্টা হয়েছে। এ অপচেষ্টা ব্যর্থ করে নির্বাচন হয়েছে, আমরা সরকার গঠন করেছি। জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। কেউ এ অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।
সুইস ব্যাংকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, অতীতেও দেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা টাকা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। এখন সুইস ব্যাংকে কে কত টাকা পাচার করেছেন, তার তালিকা চেয়েছি। তালিকা পেলেই বুঝা যাবে কার কত টাকা জমা রয়েছে। আমরা পাচারকৃত দেশের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে দেশের কাজে লাগাব। প্রস্তাবিত বাজেটকে অত্যন্ত সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী ও কল্যাণকর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও আমরা সব বাজেট বাস্তবায়ন করেছি, ইনশাল্লাহ এ বাজেটও বাস্তবায়ন করব। এ বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের উন্নতি ও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
শনিবার জাতীয় সংসদে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ^ও আজ বিস্মিত যে কিভাবে একটি দেশ এত স্বল্প সময়ে এতটা এগিয়ে যেতে পারে। এর একটিই কারণ আমাদের প্রধান সম্পদ দেশপ্রেম। দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ ও মমত্ববোধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতার জন্য যে দল ত্যাগ স্বীকার করে, সে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলে মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়। দেশ ও মানুষের নিরাপত্তাও থাকে। আর যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করে- তাদের হাতে দেশের উন্নয়ন হয় না। দেশ ও মানুষ নিরাপদ থাকে না। ভোগবিলাস আর দেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট এবং নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতেই তারা ব্যস্ত থাকে। দেশের কোন উন্নয়ন করে না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এর পর কণ্ঠভোটে সংসদে অর্থবিল-২০১৪ পাস হয়। আজ রবিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। তবে এ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। নির্বাচন ঠেকিয়ে তারা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তবে তারা সফল হয়নি। নির্বাচন হয়েছে, আমরা সরকার গঠন করেছি। অত্যন্ত সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী গণমুখী বাজেটও দিয়েছি।
দেশের উন্নয়ন ও বাজেট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শক্ত হাতে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন করেছি। সুইস ব্যাংক থেকে আমাদের দেশের কার কত টাকা রয়েছে তার তালিকা চেয়েছি। তালিকা পেলেই জানা যাবে সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা জমা রয়েছে। আমরা অবশ্যই পাচারকৃত এসব অর্থ ফেরত এনে দেশের কাজে লাগাব।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সফলতার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষমতাকে ভোগবিলাসে ব্যবহার করার জন্য আমরা আসিনি। আমরা জনগণের সেবা ও কল্যাণের জন্য এসেছি। জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ আছে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই দায়িত্ববোধ নিয়েই কাজ করছি, যা দেশের জনগণও নিশ্চয় বুঝেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন এদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে চলেছি।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অত্যন্ত সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে সংসদ নেতা বলেন, হঠাৎ করে আমরা এ বাজেট দেয়নি। দেশের মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের একটি অর্থনৈতিক নীতিমালা ও দর্শন রয়েছে। সে লক্ষ্যে আমরা দলের ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনী ইশতেহারও দিয়েছি। দলের সেই অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং ইশতেহার বাস্তবায়নের প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট দিয়ে থাকি। এবারও সেভাবেই বাজেট দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই অর্থমন্ত্রী এ বাজেট দিয়েছেন। গত সময়গুলোর তুলনায় তিনগুণ বাড়িয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছে। সাধারণত বাজেট দেয়ার সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, কিছু লোক বাজেটকে ‘গরিব মারার বাজেট’ বলে সমালোচনা করার সুযোগ পায়- এবার সেটিও হয়নি। এ বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি- তাও পূরণ হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া না দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে তাঁরা বাজেটের সমালোচনা করার কোন সুযোগই পাননি। কেননা, আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থেই কাজ করি এবং সে অনুযায়ীই বাজেট দেয়া হয়েছে। তবে কিছু লোক আছেন, আমরা যতই কাজ করি তাদের কোন কিছুই ভাল লাগে না, সবকিছুতেই কিন্তু দোষ খোঁজেন। আমাদের এত উন্নয়ন কর্মকা- কোনকিছুই তাদের চোখে পড়ে না। আগে মাত্র একটি বেসরকারী টিভি ছিল। আমরা অনেক বেসরকারী টেলিভিশনের ল্যাইসেন্স দিয়েছি। এতগুলো টিভি চ্যানেলে এখন তাদের মধ্যরাতে সবকিছুতেই সমালোচনা করারও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বাজেটকে ‘অবাস্তব, উচ্চাভিলাষী, বাস্তবায়ন হবে না’ নানা কথাও তাঁরা বলছেন। রাত জেগে তাঁরা এমন সমালোচনা করে কী লাভ করেন জানি না। অতীতেও বাজেট দেয়ার পর অনেকে অনেক সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি আমরা পারি। দেশে এখন ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ রয়েছে, রফতানি আয় ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পেয়েছে। আমরা উন্নয়ন বাজেটের ৯৬ ভাগ বাস্তবায়ন করেছি। অতীতের কোন সরকার এত পরিমাণ উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
শত চক্রান্ত মোকাবেলা করে গণতন্ত্র রক্ষায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সংসদে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। সংসদে মাইক ভেঙ্গেছে, ফাইল ছুঁড়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে, যা সত্যিই লজ্জাজনক। সংসদকে যেন তারা খিস্তিখেউড়ের জায়গায় পরিণত করেছিল। দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে তারা দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ’৯৬ সালেও বিরোধী দলের নামে সংসদে বিএনপি মাইক ভেঙ্গেছে, বিটিভির ক্যামেরাম্যান পর্যন্ত তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। এখন সংসদে সেই অবস্থা নেই। এখন আর সংসদে বিরোধী দল ‘মাসলম্যানের’ ভূমিকায় নেই। বর্তমান বিরোধী দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে এসেছে, বিরোধী দল হিসেবে জনগণের কল্যাণে সরকারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করছে।
এ প্রসঙ্গে সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এখানে রওশন এরশাদ গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন, যেগুলো জনগণের কল্যাণে লাগবে সেগুলোই বলেছেন। এখানে ফাইল ও চেয়ার ছোড়া, ফোল্ডার ছিড়ে ফেলা সেগুলোও নেই। এতে তরুণ প্রজন্ম অন্তত গণতন্ত্রের চর্চা শিখতে পারছে।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, আমি ভাল পানি খাই। কিন্তু আমি তো দেশী পানি খাই। কিন্তু উনার (বিরোধী নেত্রী) টেবিলে বিদেশী পানির বোতল। উঁনি বিদেশী পানি খান। খাদ্যে ভেজাল ও নদীর পানিতে দূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, খাদ্যে যে ভেজাল মিশ্রিত করা হচ্ছে তা সরকার কঠোরহস্তে দমন করার উদ্যোগ না নিলে অনেকেই জানতেই পারতেন না। আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে খাদ্য ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, অতীতের সরকারগুলো নদী দূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে আজ দেশের অবস্থা এমন হত না। জাতীয় পার্টিও অনেকদিন ক্ষমতায় ছিল তারাও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা নদী দূষণরোধসহ নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।
নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের নারকীয় নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে তারা বীভৎস কায়দায় শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, নিরীহ-অবলা গরুও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তারা নির্বাচনে না এসে আন্দোলনের নামে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চেয়েছিল। কেন তারা এটা করতে চেয়েছিল তা জানি না। কিন্তু শত ষড়যন্ত্র করেও তারা নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে, সরকার গঠিত হয়েছে, সংসদে আমরা জনগণের কল্যাণে প্রথম বাজেট পেশ করেছি। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হবে। আমরা এটা করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটকে অত্যন্ত সময়োযোগী ও যুগোপযোগী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র দল আওয়ামী লীগ, যাদের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিশন রয়েছে। আমরাই পারি দেশকে এগিয়ে নিতে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই বাজেটটি দেয়া হয়েছে। অতীতে প্রতিটি বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করেছি, এবারের বাজেটও আমরা বাস্তবায়িত করব ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, অতীতে প্রতিটি বাজেট প্রণয়নের পর বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বাজেটের সমালোচনা করে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু এবারের বাজেটের পর কোন জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। মানুষের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের বাস্তবমুখী যে বাজেট দেয়া হয়েছে, তাতে কারও কিছু বলারও নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে- এটাই বাস্তবতা। আমরা ভোগবিলাস কিংবা নিজেদের আখের গোছাতে ক্ষমতায় আসিনি, আমরা জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়ন করতে ক্ষমতায় এসেছি। দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে দেশে স্বাধীনতা এনেছে। এ দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ রয়েছে। দেশের উন্নয়ন করতে হবে- এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঘাটতি বাজেট প্রসঙ্গে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, বাজেটে ৫ ভাগ ঘাটতি কোন ক্ষতি হয় না। মানুষ সুফল পাচ্ছে কি না এটাই বড় কথা।
সরকারের সফলতা ও উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, সমাজের সর্বস্তরের শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছি। ২ কোটি কৃষককে ‘কৃষি সহায়তা কার্ডের’ মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। সম্পদ সীমিত হলেও বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্দ্বী ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুত ছিল মাত্র ৩২শ’ মেগাওয়াট। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ১১ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। আরও নতুন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে চাই। শিক্ষিত জাতি গঠনে আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ ওয়েব পোর্টাল গড়ে তুলেছি। এখন দেশের ৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ১১ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ বাংলাদেশে আসছে অভিজ্ঞতা নিতে কিভাবে আমরা এত অল্প সময়ে ডিজিটাল দেশ গড়ে তুললাম।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলে দেশের মানুষ উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন পাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যাতে রাজধানী বা শহরমুখী না হয় সেজন্য সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। গ্রামের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আমরা এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়াতে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশন রিপোর্ট দিলে বেতনভাতা আবারও বাড়ানো হবে।
বাজেটের ওপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর সারচার্জ বাদ দিয়ে মোবাইল ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী বিবেচনা করতে পারেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হয়। ১৬ কোটির দেশে ৮ কোটি মোবাইল সিম। তাই আমি বলব মোবাইল ফোন আমদানির ওপর সারচার্জ বাদ দিয়ে ব্যবহারকারীর ওপর সারচার্জ আরোপ করা হোক। আর সেই টাকা শিক্ষা ও শিক্ষা অবকাঠামো খাতে দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশে মোবাইল সেট তৈরির পক্ষে। আমরা চাই এ শিল্প দ্রুত বিকাশমান হয়ে উঠুক। কিন্তু ব্যবহারের হার এত বেশি যে দেশীয় উদ্যোক্তরা তাদের প্রয়োজনীয় সেট সরবরাহ করতে পারছে না। তাই সেট ও যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর কর বাদ দেয়া উচিত। আবাসন খাতে মন্দা চলছে উল্লেখ করে তিনি আবাসন খাতে ফ্ল্যাট ও দালান বিক্রির ক্ষেত্রে উৎস কর কমানোর প্রস্তাব করেন। পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। পুঁজিবাজার গতিশীল ও স্থিতিশীল রাখতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বাজারের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় না ঘটে সেজন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০২১ সাল লাগবে না তার আগেই আমরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ইনশাল্লাহ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবই।

http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment