Saturday, June 28, 2014

নিজামীর সুস্থতার রিপোর্ট পাওয়ার পর রায়ের সিদ্ধান্ত যুদ্ধাপরাধী বিচার

নিজামীর সুস্থতার রিপোর্ট পাওয়ার পর রায়ের সিদ্ধান্ত
যুদ্ধাপরাধী বিচার
বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মতিউর রহমান নিজামীর শারীরিক সুস্থতার রিপোর্ট পাওয়ার পরই ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। নিজামীর রায় ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মীর কাশেম আলীর মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসিকিউশনপক্ষ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রমজান মাসেও রায় ঘোষণার কোন অসুবিধা নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
উল্লেখ্য, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখার ৯০ দিনের মাথায় রায় ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া আরও ৮টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তা এত দেরি হয়নি। রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখার পর ২৪ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে এর রায়গুলো ঘোষণা করা হয়েছে। আর নিজামীর মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ৪ বার সিএভি রাখা হয়েছে। সর্বশেষ রায় ঘোষণার জন্য ২৪ জুন দিন নির্ধারণ ছিল। অপেক্ষমাণ রাখার ৯৩ দিনের মাথায় ওই দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দিনে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও হঠাৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিঠি আসে মতিউর রহমান উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। তাঁকে ট্রাইব্যুনালে আনা সম্ভব নয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল-১ আসামি ও প্রসিকিউশন পক্ষের আইনগত মতামত শুনে চতুর্থ দফায় রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখেন। পাশাপাশি আসামির স্বাস্থ্যগত রিপোর্ট প্রদানের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করে। এই নির্দেশ পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার একটি রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে- মতিউর রহমান নিজামীর আগের চেয়ে স্বাস্থের উন্নতি হয়েছে, তবে পুরোপুরি সুস্থ নয়। পুরোপুরি সুস্থ হলে আদালতকে আবারও জানানো হবে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জেলা জজ) একেএম নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, আসামি মতিউর রহমান নিজামীর সুস্থ রিপোর্ট পাওয়ার পরই রায় ঘোষণার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। কারা কর্তৃপক্ষ একটি রিপোর্ট দিয়েছে। আবার তারা আরেকটি রিপোর্ট প্রদান করবে। এর পর ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রসিকিউশনের প্রসিকিউটরদের মগজে সিআরপিসি ঘুরপাক খাচ্ছে। এই আইনের অর্থ বুঝছে না। তাদের সিআরপিসির বাইরে আসতে হবে। ১৯৭৩ সালের আইনটা বিশেষ আইন। এই আইনে ট্রাইব্যুনালকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন বার বার জামায়াতের ফাঁদে পা দিচ্ছে। এখন ডিফেন্স থেকে বার বার বলা হবে আসামি অসুস্থ, তা হলে কী হবে। প্রয়োজনে রুলস সংশোধন করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, দরকার হলে ট্রাইব্যুনাল জেলে গিয়ে রায় শুনিয়ে দেবে। রমজান মাসে রায় ঘোষণা করা যাবে কিনা, এ বিষয়ে তিনি বলেন, রমজান মাসের সঙ্গে রায়ের কোন সম্পর্ক নেই। রমজানের সঙ্গে মানবিকতার কোন সম্পর্ক নেই। চুরি-খুনির বিচার রমজান মাসে করা যাবে না, তা কোন আইনে নেই।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চীফ প্রসিকিউটর হায়দার আলী জনকণ্ঠকে বলেছেন, আসামি অসুস্থ থাকলে তাঁকে হাজির করা যায় না। সেক্ষেত্রে সুস্থ হলেই তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। আর আসামি এখন ট্রাইব্যুনালের কাস্টডিতে আছে। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, উনার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছি না। এ বিষয়ে উনার নলেজ কম। পাশাপশি তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে ট্রাইব্যুনালের কোন রায় হলে অসুবিধা নেই।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রথম কথা হলো আসামির অনুপস্থিতে রায় দেয়ার কোন বিধান নেই। যদি পলাতক ঘোষণা করে বিচার করা হয় সেক্ষেত্রে রায় ঘোষণা করা যাবে। যেমনটি হয়েছিল বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আযাদ ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খানের ক্ষেত্রে। কোন আসামির উপস্থিতিতে বিচার হলে তাঁর উপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করতে হবে- এটাই আইনের বিধান। আদালত আইনের দ্বারা পরিচালিত। নির্ধারিত আইন ও বিধান না থাকলে আদালত তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বলে রায় দিতে পারেন। রুলসের ৪৬(এ) এই কথা বলা আছে। তিনি আরও বলেন অনেকে বলছেন, আদালত অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বলে রায় দিতে পারেন। কিন্তু উনারাই তার ব্যাখ্যা ভাল করে দিতে পারবেন। উনাদের ব্যাখ্যা আমি বলতে পারব না। আইনের বিধানের বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। তিনি আরও বলেন, আমি আশা করছি মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় ঘোষণার পর মীর কাশেম আলীর মামলার রায়ও ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রুলসের ৪৩(এ) তিনটি অবস্থার কথা বলা হয়েছে- (১) জামিন থাকাকালীন অবস্থায় যদি ট্রাইব্যুনালে আসার ক্ষেত্রে ব্যর্থ ঘটে, (২) হাজতে থাকা আসামি যদি ট্রাইব্যুনালে আসতে অস্বীকৃত জানায় ও (৩) দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে যদি কোন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা সম্ভব না হয়। সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে চলমান বিচার কার্যক্রম অথবা যে কোন আদেশ সেটা ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতে দিতে পারে। আর ৪৬(এ) তে বলা হয়েছে- এই বিধিবিধানে আদালতের সীমারেখা দেয়া থাকে অথবা অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বলে ট্রাইব্যুনাল ন্যায বিচারের স্বার্থে যে কোন আদেশ বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment