Saturday, June 28, 2014

আমার ভালোবাসার কথা দোলনচাঁপা জানে, তাই এতো গন্ধ ছড়ায় শ্বেতশুভ্র বর্ষার ফুল

আমার ভালোবাসার কথা দোলনচাঁপা জানে, তাই এতো গন্ধ ছড়ায়
শ্বেতশুভ্র বর্ষার ফুল
মোরসালিন মিজান ॥
বাতাসে খুব দোলে- এমন নয়। তবে নামটি দোলনচাঁপা। ভারি সুন্দর নাম। তার চেয়ে বেশি আকর্ষণ ঘ্রাণে। কী যে মিষ্টি এর ঘ্রাণ! নাকের কাছে নিয়ে শুকতে হয় না। অনেক দূর থেকে আপনি আসে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। কবির ভাষায়- আমার ভালোবাসার কথা দোলনচাঁপা জানে/ তাই এতো গন্ধ ছড়ায়।
ইট-পাথরের জঞ্জাল আর দূষণের নগরী ঢাকায়ও দিব্যি আছে দোলনচাঁপা। ঠিক এই মুহূর্তেও ফুলটি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পথে ছুটছে কিশোর বিক্রেতারা। কয়েকটি ডাঁটা একত্রিত করে চমৎকার তোড়া তৈরি করে বিক্রি করছে তারা। গাড়ি-রিকশা থামিয়ে অনেকেই কিনছেন। ফুলপ্রেমীদের কথা তো বলাই বাহুল্য, পথশিশুদের ডেকে কিনে নিচ্ছেন দোলনচাঁপা। দামের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। যার কাছে যত নেয়া যায়। যে যত দিয়ে পারেন। তবে দোকানিরা যথারীতি দাম হাঁকান। এর পরও সত্য, ফুল কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। তাই গাঢ় সবুজ পাতার ভিড়ে উঁকি দেয়া শুভ্র সাদা ফুলটি নিয়ে ঘরে ফেরেন সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষ।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মা জানান, দোলনচাঁপার পৈত্রিক নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভারতে আছে বহুকাল। কম দিন হয়নি বাংলাদেশেও। হ্যাঁ, আরও অনেক দেশে দেখা যায়। তবে সব দেশেই দারুণ জনপ্রিয় দোলনচাঁপা। এ ফুল প্রধানত সাদা রঙের হয়। পুরোপুরি ফুটলে ফুলগুলোকে মনে হয় এক একটি সাদা প্রজাপতি। মৃদুমন্দ বাতাসে যখন গাছগুলো হেলে দুলে ওঠে তখন যে কারও মনে হবে, মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির দল। জানা যায়, এ কারণে দোলনচাঁপাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি বলে ডাকা হয়। আরেকটি নাম গারল্যান্ড ফ্লাওয়ার।
তবে দিনের প্রথমভাগে বাটারফ্লাইদের অত দেখা মেলে না। কারণ দোলনচাঁপা ফুল ফোটে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে। রাতে মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়ায়। অনেকের ঘুম কেড়ে নেয়। এভাবে বিশেষ প্রিয় হয়ে ওঠে ফুলটি।
বাংলাদেশের ফুল নিয়ে গবেষণা করেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়। তিনি জানান, দোলনচাঁপার প্রায় ৪০টির মতো প্রজাতি আছে। কোনটির রং হলদেটে। কোনটি আবার লাল।
দোলনচাঁপার পাতা লেন্স আকৃতির। লম্বায় আট থেকে চব্বিশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। চওড়ায় হয় দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত গাছের উপরের অংশে ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি পুষ্পমঞ্জরি দেখা দেয়। ফুল ফোটা শেষ হলে কাণ্ড শুকিয়ে যায়। তবে গোড়া থেকে আবার নতুন কাণ্ড জন্ম নেয়। দোলনচাঁপা গাছ দেখতে অনেকটা আদা বা হলুদ গাছের মতো। এ গাছ তিন ফুটের মতো উঁচু হয়। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না- এমন জায়গায় ভাল জন্মে। তবে দিনের আলোয় বড় অসহায় দোলনচাঁপা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই এ ফুল শুকিয়ে যায়। আর শীতে শুকোয় গোটা গাছ। অবশ্য একই গাছ গ্রীষ্মকালে ফের জেগে ওঠে। আর জেগে ওঠে বলেই রক্ষা! দোলনচাঁপার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের মন।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment