Sunday, June 29, 2014

দেদার বিদেশ সফরের খরচ জুগিয়েছেন সারদার গৌরী সেন

দেদার বিদেশ সফরের খরচ জুগিয়েছেন সারদার গৌরী সেন

Sudipto-Sen
চিত্রদীপ চক্রবর্তী

এ কালের গৌরী সেন কে? কেন, সুদীপ্ত সেন!

বিমানে উঠতে প্রবল ভয় ছিল সারদা-কর্তার৷ তাই নিজে বিদেশে যেতেন না৷ কিন্ত্ত নানা সেলেব্রিটি থেকে রাম-শ্যাম-যদু-মধুদেরও বিদেশ যাওয়ার খরচ অকাতরে বিলিয়ে গিয়েছেন সুদীপ্ত!

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, মাত্র দেড় বছরে সারদার সৌজন্যে আটটি বিদেশ সফর হয়েছে৷ যার মধ্যে অনেক সফরেই ছিলেন মিডিয়া গ্রুপের সিইও কুণাল ঘোষ৷ শুধুমাত্র বিদেশ সফরের জন্যই সারদা সংস্থা খরচ করেছে কয়েক কোটি টাকা৷ যা আমানতকারীদের কাছ থেকে সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের নামে সংগ্রহ করা হয়েছিল৷

সিবিআই সূত্রের খবর, কুণাল ঘোষকে জেরা করার পর তাঁর কাছ থেকে একটি ছবির অ্যালবাম বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ সেই অ্যালবামের ছবি থেকেই এই বিদেশ সফরের বিবরণ জানা গিয়েছে৷ ইতিমধ্যে আলিপুর আদালতে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে ওই অ্যালবাম বাজেয়াপ্ত করার কথাও জানানো হয়েছে৷

জানা গিয়েছে, মোট আটটি বিদেশ সফরের মধ্যে একটি সফরে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে সারদার৷ সেটি জর্ডন সফর৷ ওই সফরে নিজের চ্যানেলের প্রতিনিধিকে পাঠাতে গিয়ে সুদীপ্ত সেন খরচ করেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা৷ তবে এই সফরের ওপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে জর্ডনের পর্যটন দপ্তর সারদাকে সাহায্য করায় খরচের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল৷ একটি সফরে আমেরিকার লাস ভেগাসে একটি অনুষ্ঠানে শিল্পীদের নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল সারদা৷ শিল্পীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখেছিলেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার৷ সারদা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর রজতবাবু অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিনি শুধুমাত্র শিল্পীদের যাতায়াতের বিষয়টিই দেখেছিলেন, অন্য কিছু নয়৷

সিবিআই জানতে পেরেছে, লাস ভেগাসে সারদার বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মীকেও পাঠানো হয়েছিল৷ সুদীপ্ত সেন তাঁদের জানিয়েছিলেন, সারদার রিয়েলিটি ব্যবসার জন্য অনাবাসী ভারতীয়দের (এনআরআই) উত্‍সাহিত করার জন্য তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করতে৷ এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তিন ব্যাগ ব্রোশিওর তৈরি করা হয়৷ কিন্ত্ত বিদেশে যাওয়ার সময় কর্মীরা তা আর নিয়ে যাননি৷ ওই অনুষ্ঠানটি সারদার পক্ষ থেকে স্পনসর করা হয়েছিল৷

তদন্তকারী এক অফিসার জানান, ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কুণালবাবু লন্ডনে গিয়েছিলেন 'স্বপ্নের লন্ডন' নামে একটি অনুষ্ঠান করার জন্য৷ সেখানেও মোটা টাকা ব্যয় করা হয়েছিল৷ হঠাত্‍ করে ওই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাদের সুবিধে দেওয়া হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এর কিছু দিন পর লন্ডনে আবার ৬-৭ জন কর্মীর একটি দল পাঠান সুদীপ্তবাবু৷ আমেরিকার বাল্টিমোরেও ওই সময়ের মধ্যে নিজের কর্মীদের একটি দলকে পাঠান সুদীপ্তবাবু৷ এমনকি, অনাবাসী ভারতীয়দের কাছে নিজেদের ব্যবসা জনপ্রিয় করার জন্য সারদার ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তকে কম্বোডিয়া পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত কার্যত খালি হাতে ফিরে আসেন তিনি৷ সোমনাথবাবু, কুণালবাবু এবং সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন বর্তমানে জেল হেফাজতে থাকায় অবশ্য তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি৷

তদন্তকারী সংস্থার এক আধিকারিক বলছেন, 'বিদেশে বড় কোনও ইভেন্ট হলে মিডিয়া থেকে অবশ্যই প্রতিনিধি পাঠানো হয়৷ আবার বিদেশের অনুষ্ঠান স্পনসর করলেও লোক যায়৷ কিন্ত্ত এ ভাবে দেড়-দু' বছরের মধ্যে এতবার বিদেশ যাত্রার সঠিক কারণ আমাদের জানা প্রয়োজন৷' যেমন, ২০১২ সালে কুণালবাবুর নেতৃত্বে একটি বড়সড় দলকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়৷ চ্যানেল টেন ছাড়া অন্য সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও সেই সফরে ছিলেন৷ এ ছাড়াও দুবাইতে নিজের ব্যবসার জন্য এক ব্যবসায়ীকে পাঠিয়েছিলেন সুদীপ্তবাবু৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য দেখা গিয়েছে, কোনও বিদেশ সফর থেকেই সারদার কোনও লাভ হয়নি৷ মাঝখান থেকে সংস্থার কয়েক কোটি টাকা গচ্চাই দিয়েছেন সুদীপ্ত 'গৌরী' সেন!

No comments:

Post a Comment