সিজার বীরত্বে ব্রাজিল শেষ আটে
ঢাকা, ২৯ জুন:
প্রকাশ : ২৯ জুন, ২০১৪
মাঠের ঠিক মাঝখানে নেইমারকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে রাখলেন ডেভিড লুইজ। যেন সবুজ মাঠে ফুটে রইলো দুটি হলুদ ফুল। গ্যালারিতেও তখন হলুদের বন্যা। লাল হয়ে গেল নীল। শোকের রং যে লালও হয় কাল দেখা গেল বেলো হরিজন্তেতে। জারার চোখ অশ্র“সজল। পিনিলাও কাঁদছেন। কাঁদছে চিলি। তাদের রোমাঞ্চকর অভিযান শেষ হল টাইব্রেকার ট্রাজেডির শিকার হয়ে। সানচেজদের বিশ্বকাপ শেষ। ব্রাজিল রয়ে গেল ব্রাজিলেই। জোগো বনিতা বিসর্জন দেয়া নেইমাররা নিজেদের আঙিনায় শেষ পর্যন্ত দর্শক হওয়া থেকে রক্ষা পেলেন। তাদের ত্রাণকর্তা গোলপ্রহরী জুলিও সিজার। যিনি দু’দুটি পেনাল্টি রুখে দিয়ে ব্রাজিলের জয়ের নায়ক। চিলির গণজালো জারা’র শেষ পেনাল্টি শুটআউট লক্ষ্যভ্রষ্ট হতেই বেলো হরিজন্তে যেন নেচে ওঠে আনন্দে। ২০১৪ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো’র প্রথম দ্বৈরথে ব্রাজিল টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে চিলিকে হারিয়ে পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা অমীমাংসিত থাকে ১-১ গোলে। ডেভিড লুইজের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। অ্যালেক্সিস সানচেজ সমতাসূচক গোল করেন চিলির পক্ষে (১-১)। প্রচণ্ড চাপে থাকা সেলেকাওরা শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পায় গোলকিপার জুলিও সিজারের বীরত্বে। তিনিই ম্যাচের হিরো। দু’দুটি দুর্দান্ত সেভ করে স্কলারির দলকে সিজার তুলেছেন শেষ আটে।
টাইব্রেকারে ব্রাজিলের ডেভিড লুইজ, মার্সেলো ও নেইমার গোল করলেও ব্যর্থ হন উইলিয়ান ও হাল্ক। চিলির পক্ষে গোল দুটি করেন আরানগুইজ ও দিয়াজ। পিনিলা ও সানচেজের শট রুখে দেন সিজার। জারার শট ক্রসবারে লাগে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধেও ব্রাজিল আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে। সেটপিস থেকে শুরুতেই গোটা দুয়েক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন জো এবং অস্কার। এরপর ৩০ গজ দূর থেকে নেয়া হাল্কের শট ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। চিলির গোলকিপারের ব্যস্ত সময় কেটেছে গোলপোস্টের নিচে। বারবার তিনি বিফল করেছেন নেইমারদের অবিরাম চেষ্টা।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নেইমারের ক্রস কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মেদেল। পরের মুহূর্তে নেইমারের কর্নার কিকে জো’র হেড বারের ওপর দিয়ে যায়। ১১২ মিনিটে নেইমারের ফ্রিকিকে বল পেয়েছিলেন আলভেস। কিন্তু তার দূরপাল্লার শট বারের ওপর দিয়ে যায়। ১২০ মিনিটে চিলি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল। সানচেজের চাতুর্যপূর্ণ পাসে পাওয়া বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পিনিতিয়া প্রচণ্ড শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে এবং চিলিকে হতাশ করে বল ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। পরের মুহূর্তে সুযোগ নষ্ট করেন রামিরেস। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ।
বিরতির পর হাল্ক এবং ব্রাজিলের হাসি কেড়ে নেন ইংল্যান্ডের রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েব। মানে, হ্যান্ডবলের জন্য হাল্কের গোল বাতিল করে দেন হাওয়ার্ড। সন্দেহ নেই, সাহসী সিদ্ধান্ত। ৬৪ মিনিটে ব্রাজিলের কোচ লুই ফিলিপ স্কলারি ফ্রেডকে তুলে নিয়ে জো’কে মাঠে পাঠান বদলি হিসেবে। ফ্রেড এই ম্যাচেও নিষ্প্রভ ছিলেন। মিনিটখানেক পর আরানগুইজের শট রুখে দেন ব্রাজিলের গোলকিপার সিজার। পরের মুহূর্তে সিজার আবারও দলকে বাঁচান কর্নারের বিনিময়ে। মাঝমাঠে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় গুস্তাভো ও ফারনানদিনহো দলকে সেবা দিতে না পারায় স্কলারি আরেকটি পরিবর্তন আনেন একাদশে। ফারনানদিনহোকে তুলে মাঠে পাঠান রামিরেসকে। জো সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ৭৪ মিনিটে। বাঁদিক থেকে হাল্কের ক্রসে বল পেয়েছিলেন জো। টোকা দেয়াটাই ছিল শুধু তার কাজ। মেনা শেষ মুহূর্তে চিলির রক্ষায় এগিয়ে আসেন।
ব্রাজিল এরপর অবিরাম আক্রমণ শাণাতে শুরু করে। বল দখলেও এগিয়ে থাকে তারা। চিলি এসময় বন্দি হয়ে পড়ে নিজেদের সীমানায়। ৮২ মিনিটে নেইমারের হেড সোজা আশ্রয় নেয় ব্রাভোর হাতে। মিনিট দুয়েক পর আবারও চিলিকে রক্ষা করেন এই গোলপ্রহরী। দু’জন ডিফেন্ডারে ফাঁক গলে ডান পায়ে শট দিয়েছিলেন হাল্ক। ব্রাভো ডানদিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন দলকে। ৮৭ মিনিটে চিলির কোচ সামপাওলি আরতুরো ভিদালকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান মাউরিসিও পিনিতিয়াকে। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে দানি আলভেস দলকে রক্ষা করেন।
প্রথমার্ধের বিদ্যুৎ গতির খেলা নিষ্ফল থাকে ১-১ গোলে। ব্রাজিল ধারালো আক্রমণ শাণিয়েছে। নেইমার সময়ে সময়ে প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়েছেন। সিলভার দিক থেকে বেশির ভাগ আক্রমণ করেছেন নেইমার। ডেভিড লুইজের গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। রিপ্লেতে যদিও দেখা যায়, বল জারা’র ছোঁয়া পেয়েছিল। অ্যালেক্সিস সানচেজ নিজের অব্যাহত নৈপুণ্যের ঝলক দেখিয়ে গোল শোধ করে দেন। প্রথমার্ধের শেষ পাঁচ মিনিট দু’দলই শ্বাসরুদ্ধকর ফুটবল খেলেছে। দু’দলই সমান সুযোগ পেয়েছে।
প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটে নেইমারের কর্নার কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে চিলির জারা বল নিজেদের জালেই জড়াতে যাচ্ছিলেন। ডেভিড লুইজ হয়ে বল আশ্রয় নেয় জালে। গোল শোধ করতে সময় নেয়নি চিলি। ৩২ মিনিটে তার লক্ষ্যভেদে ম্যাচে সমতা আনে তারা (১-১)। ভারগাস বলটা পেয়ে যান ডানদিকের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে। বলটা বাড়ান সানচেজকে। বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড ঠাণ্ডা মাথায় মাটিঘেঁষা শটে জুলিও সিজারের আয়ত্তের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন জালে। এর আগে কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে বেশ কিছুক্ষণ নেইমারকে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।
ব্রাজিল ও চিলি এর আগে ৬৮ বার মুখোমুখি হয়েছিল। জয়ের পাল্লা ব্রাজিলের ভারি। ৪৮ বার জিতেছিল তারা। চিলির জয় সাতটিতে। বাকি ১৩ ম্যাচ ড্র হয়। শেষবার চিলি ব্রাজিলকে হারিয়েছিল ২০০০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। এর আগে বিশ্বকাপের মূলপর্বে তিনবারই জিতেছিল ব্রাজিল। তিনবারই নকআউট পর্বে। ১৯৬২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, ১৯৯৮-র দ্বিতীয় রাউন্ডে এবং ২০১০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে।
No comments:
Post a Comment