পিছিয়ে শিক্ষায়, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আদায়েও গা নেই রাজ্যের
স্নেহাশিস নিয়োগী
উচ্চশিক্ষায় নথিভুক্ত ছাত্রছাত্রী সংখ্যার (জিইআর) নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ২৪ নম্বরে৷ পড়ুয়া-পিছু খরচের নিরিখে ২৩ নম্বরে৷ দেশে প্রতি হাজার কিলোমিটারে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনেও এ রাজ্য পিছনের সারিতে, ১৩ নম্বরে৷ হাল ফেরাতে পরিকাঠামো খাতে চাই বিপুল অর্থ৷ কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা) প্রকল্পে রয়েছে অর্থ জোগানের সংস্থান৷ কিন্ত্ত সেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আদায়ের ক্ষেত্রেও একই রকম পিছিয়ে রাজ্য৷ উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো বড় রাজ্য তো বটেই, পড়শি ওডিশা, এমনকী ত্রিপুরাও এ ক্ষেত্রে কয়েক কদম পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে৷
সময়মতো বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) না পাঠানো, দিল্লির সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি নানা কারণেই বরাদ্দ আদায়ের ক্ষেত্রেও এই পিছিয়ে পড়া৷ দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় রুসা-য় সারা দেশে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে ২২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা খরচ করার কথা৷ তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৬৫ শতাংশ অর্থাত্ ১৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা দেবে৷ বাকি ৩৫ শতাংশ রাজ্য সরকারগুলির দেওয়ার কথা৷ সরকারি সূত্রের খবর, গত দশ মাসে রাজ্য সরকারের কপালে মাত্র ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা জুটেছে৷ গোটা দেশের মধ্যে রাজ্যের স্থান সেই ১৮ নম্বরে৷ যেখানে ত্রিপুরাও পেয়েছে ১৭.৭৪ কোটি টাকা, ওডিশা তার প্রায় দ্বিগুন, ৩৪.১৩ কোটি টাকা৷
কেন রাজ্যের এই হাল? কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং রাজ্য শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, নতুন কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, হস্টেল-সহ নানা পরিকাঠামো তৈরির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট সময়মতো জমা দেওয়া খুবই জরুরি৷ কোন খাতে কত খরচ হবে, কোথায় কত দিনের মধ্যে ওই সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হস্টেল ইত্যাদি করা হবে, কেন্দ্রকে তা-ও সময়ের মধ্যে জানাতে হয়৷ সেই মতোই কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে৷ কিন্ত্ত রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এ সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে রাজ্য৷ এর পাশাপাশি দপ্তরে ঘন ঘন অফিসার বদল, এমনকি মন্ত্রী-বদলও রয়েছে গাফিলতির মূলে৷ দিল্লিতে এ সংক্রান্ত বৈঠকগুলিতে নানা সময়ে বিভিন্ন অফিসার রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন৷ ফলে একটি বৈঠকে এক অফিসার যা বলে এসেছেন, পরের বৈঠকে অন্য অফিসার আবার অন্য কথা বলেছেন৷ সমন্বয়ের চূড়ান্ত অভাবই প্রকট হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও একই অভিযোগ করেছে৷
দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে গত ১৭ জুন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে রুসা নিয়ে সব রাজ্যের উচ্চশিক্ষাসচিবদের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে, তাতেও সরকারি গড়িমসিই স্পষ্ট৷
দিল্লির ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া উচ্চশিক্ষাসচিব বিবেক কুমারকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি৷ আবার রুসা-য় রাজ্যের প্রতিনিধি তথা উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহার বক্তব্য, 'আমি কিছুই জানি না৷ যদিও দিল্লিতে তিন-চারটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম৷ কিন্ত্ত পরবর্তী ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি৷' উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, এটা চূড়ান্ত বরাদ্দের টাকা নয়৷ প্রস্ত্ততিমূলক প্রকল্পের টাকা৷ রুসা-র বরাদ্দ পাওয়ার জন্য রাজ্যের প্রকল্প তৈরির কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে৷ দিল্লিতে পেশ করার আগে এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনও চাওয়া হবে৷
এমনিতে রুসা-র তহবিল বরাদ্দের ফর্মুলায় একশো শতাংশের মধ্যে বেস ফান্ডিংয়ে ২০, জনসংখ্যার (১৮-২৩ বছর) নিরিখে ৪০, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘনত্বে ১০, উচ্চশিক্ষায় খরচে ১০, গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিওয় ১০ এবং বিশেষ সমস্যায় ১০ ধরা হয়৷ কী ভাবে বেশি বরাদ্দ আদায়ে সফল হল ত্রিপুরা? পড়শি রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা পরিকাঠামো উন্নয়ন ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজ তৈরির জন্য যে সব প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম, সেগুলি অনুমোদিত হয়েছে৷ সেই খাতে বরাদ্দ অর্থ আসা ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই রাজ্যে একটি ইংরেজি-মাধ্যম কলেজ ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে৷ তবে এই ধরনের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় টাকা পেতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী থেকে সচিব পর্যায়ে তদ্বিরও করতে হয়৷ যে সব রাজ্য সেটা করে, তারাই ভালো সাড়া পায়৷'
সব ব্যাপারে পিছিয়ে থেকেও সেই গরজেরই বড় অভাব পশ্চিমবঙ্গের৷
বরাদ্দ আদায়ে এগিয়ে
উত্তরপ্রদেশ ১০৫.৬৯ ওডিশা ৩৪.১৩ অন্ধ্রপ্রদেশ ২৯.০৯ ত্রিপুরা ১৭.৭৪ পঞ্জাব ১৭.৩১ অসম ৯.৬৩ আন্দামান ও নিকোবর ৫.৮৫
(কোটি টাকার হিসাবে)
http://eisamay.indiatimes.com/state/rusa-west-bengal-is-way-behind-to-attain-fund-for-education/articleshow/37508361.cms?
স্নেহাশিস নিয়োগী
উচ্চশিক্ষায় নথিভুক্ত ছাত্রছাত্রী সংখ্যার (জিইআর) নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ২৪ নম্বরে৷ পড়ুয়া-পিছু খরচের নিরিখে ২৩ নম্বরে৷ দেশে প্রতি হাজার কিলোমিটারে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনেও এ রাজ্য পিছনের সারিতে, ১৩ নম্বরে৷ হাল ফেরাতে পরিকাঠামো খাতে চাই বিপুল অর্থ৷ কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা) প্রকল্পে রয়েছে অর্থ জোগানের সংস্থান৷ কিন্ত্ত সেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আদায়ের ক্ষেত্রেও একই রকম পিছিয়ে রাজ্য৷ উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো বড় রাজ্য তো বটেই, পড়শি ওডিশা, এমনকী ত্রিপুরাও এ ক্ষেত্রে কয়েক কদম পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে৷
সময়মতো বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) না পাঠানো, দিল্লির সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি নানা কারণেই বরাদ্দ আদায়ের ক্ষেত্রেও এই পিছিয়ে পড়া৷ দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় রুসা-য় সারা দেশে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে ২২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা খরচ করার কথা৷ তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৬৫ শতাংশ অর্থাত্ ১৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা দেবে৷ বাকি ৩৫ শতাংশ রাজ্য সরকারগুলির দেওয়ার কথা৷ সরকারি সূত্রের খবর, গত দশ মাসে রাজ্য সরকারের কপালে মাত্র ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা জুটেছে৷ গোটা দেশের মধ্যে রাজ্যের স্থান সেই ১৮ নম্বরে৷ যেখানে ত্রিপুরাও পেয়েছে ১৭.৭৪ কোটি টাকা, ওডিশা তার প্রায় দ্বিগুন, ৩৪.১৩ কোটি টাকা৷
কেন রাজ্যের এই হাল? কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং রাজ্য শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, নতুন কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, হস্টেল-সহ নানা পরিকাঠামো তৈরির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট সময়মতো জমা দেওয়া খুবই জরুরি৷ কোন খাতে কত খরচ হবে, কোথায় কত দিনের মধ্যে ওই সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হস্টেল ইত্যাদি করা হবে, কেন্দ্রকে তা-ও সময়ের মধ্যে জানাতে হয়৷ সেই মতোই কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে৷ কিন্ত্ত রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এ সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে রাজ্য৷ এর পাশাপাশি দপ্তরে ঘন ঘন অফিসার বদল, এমনকি মন্ত্রী-বদলও রয়েছে গাফিলতির মূলে৷ দিল্লিতে এ সংক্রান্ত বৈঠকগুলিতে নানা সময়ে বিভিন্ন অফিসার রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন৷ ফলে একটি বৈঠকে এক অফিসার যা বলে এসেছেন, পরের বৈঠকে অন্য অফিসার আবার অন্য কথা বলেছেন৷ সমন্বয়ের চূড়ান্ত অভাবই প্রকট হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও একই অভিযোগ করেছে৷
দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে গত ১৭ জুন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে রুসা নিয়ে সব রাজ্যের উচ্চশিক্ষাসচিবদের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে, তাতেও সরকারি গড়িমসিই স্পষ্ট৷
দিল্লির ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া উচ্চশিক্ষাসচিব বিবেক কুমারকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি৷ আবার রুসা-য় রাজ্যের প্রতিনিধি তথা উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহার বক্তব্য, 'আমি কিছুই জানি না৷ যদিও দিল্লিতে তিন-চারটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম৷ কিন্ত্ত পরবর্তী ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি৷' উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, এটা চূড়ান্ত বরাদ্দের টাকা নয়৷ প্রস্ত্ততিমূলক প্রকল্পের টাকা৷ রুসা-র বরাদ্দ পাওয়ার জন্য রাজ্যের প্রকল্প তৈরির কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে৷ দিল্লিতে পেশ করার আগে এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনও চাওয়া হবে৷
এমনিতে রুসা-র তহবিল বরাদ্দের ফর্মুলায় একশো শতাংশের মধ্যে বেস ফান্ডিংয়ে ২০, জনসংখ্যার (১৮-২৩ বছর) নিরিখে ৪০, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘনত্বে ১০, উচ্চশিক্ষায় খরচে ১০, গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিওয় ১০ এবং বিশেষ সমস্যায় ১০ ধরা হয়৷ কী ভাবে বেশি বরাদ্দ আদায়ে সফল হল ত্রিপুরা? পড়শি রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা পরিকাঠামো উন্নয়ন ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজ তৈরির জন্য যে সব প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম, সেগুলি অনুমোদিত হয়েছে৷ সেই খাতে বরাদ্দ অর্থ আসা ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই রাজ্যে একটি ইংরেজি-মাধ্যম কলেজ ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে৷ তবে এই ধরনের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় টাকা পেতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী থেকে সচিব পর্যায়ে তদ্বিরও করতে হয়৷ যে সব রাজ্য সেটা করে, তারাই ভালো সাড়া পায়৷'
সব ব্যাপারে পিছিয়ে থেকেও সেই গরজেরই বড় অভাব পশ্চিমবঙ্গের৷
বরাদ্দ আদায়ে এগিয়ে
উত্তরপ্রদেশ ১০৫.৬৯ ওডিশা ৩৪.১৩ অন্ধ্রপ্রদেশ ২৯.০৯ ত্রিপুরা ১৭.৭৪ পঞ্জাব ১৭.৩১ অসম ৯.৬৩ আন্দামান ও নিকোবর ৫.৮৫
(কোটি টাকার হিসাবে)
http://eisamay.indiatimes.com/state/rusa-west-bengal-is-way-behind-to-attain-fund-for-education/articleshow/37508361.cms?
No comments:
Post a Comment