হুঙ্কার সার, নিহত সমর্থককে স্বীকারই করল না সিপিএম
অমিত চক্রবর্তী ও শুভেন্দু হালদার
রায়দিঘি: মণি নদীর বাঁধের মানুষজন বছর আঠাশের সফিউল মোল্লাকে চেনেন সিপিএম সমর্থক হিসাবেই৷ শুধু, সফিউলই নন, নদী বাঁধের উপর বসবাসকারী শ'দেড়েক পরিবারের অনেকেই এতদিন পর্যন্ত ছিলেন বাম সমর্থকই৷ কিন্ত্ত মৃত্যুর পরে সফিউলকে দলীয় সমর্থক হিসাবে মানলই না সিপিএম৷ অথচ ক'দিন আগেই রাজ্যে তাঁদের দলীয় কর্মী, সমর্থকরা আক্রান্ত হলেও প্রশাসন নীরব দর্শক বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু-সহ বাম প্রতিনিধিদল৷ রাজ্যের কোথাও বাম কর্মী, সমর্থকেরা আক্রান্ত হলে পথে নামার হুমকি দিলেও, সফিউল খুন হওয়ার পর রবিবারও সে গ্রামে দেখা গেল না কোনও বাম নেতাকে৷
ঘটনার পরে এ দিন সকালে সরস্বতীপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, যে বাড়িগুলিকে নিয়ে গোলমাল চলছিল, তার অনেকগুলিতেই মানুষ নেই৷ পরিস্থিতি থমথমে৷ রবিবার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, শিউলি সাহার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল যান ওই এলাকায়৷ মৃত সফিউল মোল্লার বাড়িতে কোনও বাম নেতা না-গেলেও, তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূলের প্রতিনিধি দল৷
আসলে নব্য তৃণমূলীদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে সিপিএম নয়, আদি তৃণমূলীদের উপরই আস্থা রেখেছিলেন সফিউল মোল্লারা৷ ঘটনায় রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন মোল্লা এবং সিপিএম জোনাল কমিটির সদস্য বিমল ভান্ডারি-সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে রায়দিঘি থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে৷ কিন্ত্ত জেলা পার্টির একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, কান্তিবাবুর নামে না হয় অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ কিন্ত্ত বাকি নেতারা কী করছিলেন? গোলমালের ঘটনায় এলাকা ছেড়েছে সিপিএম সমর্থক পরিবারগুলিও৷
রায়দিঘির খাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সরস্বতীপাড়ায় নদীর বাঁধে দেড়শোটি পরিবারকে বসানো হয়েছিল বাম জমানাতেই৷ রাজনৈতিক আনুগত্যও তাঁদের এতদিন পর্যন্ত অটুট ছিল সিপিএমের প্রতিই৷ কিন্ত্ত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে ওই এলাকায় বসবাসের জন্য এক একটি পরিবারের কাছে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে সদ্য দলে যোগ দেওয়া নব্য তৃণমূল নেতা ওয়াজেদ আলি খামারু৷ সে ছিল কংগ্রেসের উপপ্রধান৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কংগ্রেসের টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়ে হেরেছিল ওয়াজেদ৷ লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসে ভিড়ে যায় সে৷
সেই সময় থেকেই টাকা চাওয়া নিয়ে সফিউলের সঙ্গে বচসা শুরু হয় খামারুর৷ সফিউলদের এক আত্মীয়ের কথায় সে বলত, 'টাকা আমরা পাব কোথা থেকে? আর দেবই বা কেন?' এই পরিস্থিতিতে তাঁরা দ্বারস্থ হন হাফিজুল গাজি, হাসান গাজিদের মতো আদি তৃণমূল নেতাদের৷ তাঁরা আশ্বস্ত করেন, ওই এলাকায় থাকার জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না তাঁদের৷ এই রফার বিনিময়ে সফিউল-সহ গ্রামের অন্যান্য বাম সমর্থক পরিবারগুলি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা সকলেই যোগ দেবেন তৃণমূলে৷ সফিউলের মধ্যস্থতাতেই চলছিল দলবদলের সেই আলোচনা৷ এরই মধ্যে খুন হয়ে গেলেন সফিউল মোল্লা৷ তবে এই ঘটনায় আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল, মুখে হুঙ্কার ছাড়লেও দলীয় কর্মী, সমর্থকদের জান কিংবা মান রক্ষায় ব্যর্থ বাম নেতারা৷ এমনকি সফিউলের মৃত্যুর পরেও বিপন্ন পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে পারছেন না তাঁরা৷
অমিত চক্রবর্তী ও শুভেন্দু হালদার
রায়দিঘি: মণি নদীর বাঁধের মানুষজন বছর আঠাশের সফিউল মোল্লাকে চেনেন সিপিএম সমর্থক হিসাবেই৷ শুধু, সফিউলই নন, নদী বাঁধের উপর বসবাসকারী শ'দেড়েক পরিবারের অনেকেই এতদিন পর্যন্ত ছিলেন বাম সমর্থকই৷ কিন্ত্ত মৃত্যুর পরে সফিউলকে দলীয় সমর্থক হিসাবে মানলই না সিপিএম৷ অথচ ক'দিন আগেই রাজ্যে তাঁদের দলীয় কর্মী, সমর্থকরা আক্রান্ত হলেও প্রশাসন নীরব দর্শক বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু-সহ বাম প্রতিনিধিদল৷ রাজ্যের কোথাও বাম কর্মী, সমর্থকেরা আক্রান্ত হলে পথে নামার হুমকি দিলেও, সফিউল খুন হওয়ার পর রবিবারও সে গ্রামে দেখা গেল না কোনও বাম নেতাকে৷
ঘটনার পরে এ দিন সকালে সরস্বতীপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, যে বাড়িগুলিকে নিয়ে গোলমাল চলছিল, তার অনেকগুলিতেই মানুষ নেই৷ পরিস্থিতি থমথমে৷ রবিবার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, শিউলি সাহার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল যান ওই এলাকায়৷ মৃত সফিউল মোল্লার বাড়িতে কোনও বাম নেতা না-গেলেও, তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূলের প্রতিনিধি দল৷
আসলে নব্য তৃণমূলীদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে সিপিএম নয়, আদি তৃণমূলীদের উপরই আস্থা রেখেছিলেন সফিউল মোল্লারা৷ ঘটনায় রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন মোল্লা এবং সিপিএম জোনাল কমিটির সদস্য বিমল ভান্ডারি-সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে রায়দিঘি থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে৷ কিন্ত্ত জেলা পার্টির একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, কান্তিবাবুর নামে না হয় অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ কিন্ত্ত বাকি নেতারা কী করছিলেন? গোলমালের ঘটনায় এলাকা ছেড়েছে সিপিএম সমর্থক পরিবারগুলিও৷
রায়দিঘির খাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সরস্বতীপাড়ায় নদীর বাঁধে দেড়শোটি পরিবারকে বসানো হয়েছিল বাম জমানাতেই৷ রাজনৈতিক আনুগত্যও তাঁদের এতদিন পর্যন্ত অটুট ছিল সিপিএমের প্রতিই৷ কিন্ত্ত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে ওই এলাকায় বসবাসের জন্য এক একটি পরিবারের কাছে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে সদ্য দলে যোগ দেওয়া নব্য তৃণমূল নেতা ওয়াজেদ আলি খামারু৷ সে ছিল কংগ্রেসের উপপ্রধান৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কংগ্রেসের টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়ে হেরেছিল ওয়াজেদ৷ লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসে ভিড়ে যায় সে৷
সেই সময় থেকেই টাকা চাওয়া নিয়ে সফিউলের সঙ্গে বচসা শুরু হয় খামারুর৷ সফিউলদের এক আত্মীয়ের কথায় সে বলত, 'টাকা আমরা পাব কোথা থেকে? আর দেবই বা কেন?' এই পরিস্থিতিতে তাঁরা দ্বারস্থ হন হাফিজুল গাজি, হাসান গাজিদের মতো আদি তৃণমূল নেতাদের৷ তাঁরা আশ্বস্ত করেন, ওই এলাকায় থাকার জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না তাঁদের৷ এই রফার বিনিময়ে সফিউল-সহ গ্রামের অন্যান্য বাম সমর্থক পরিবারগুলি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা সকলেই যোগ দেবেন তৃণমূলে৷ সফিউলের মধ্যস্থতাতেই চলছিল দলবদলের সেই আলোচনা৷ এরই মধ্যে খুন হয়ে গেলেন সফিউল মোল্লা৷ তবে এই ঘটনায় আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল, মুখে হুঙ্কার ছাড়লেও দলীয় কর্মী, সমর্থকদের জান কিংবা মান রক্ষায় ব্যর্থ বাম নেতারা৷ এমনকি সফিউলের মৃত্যুর পরেও বিপন্ন পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে পারছেন না তাঁরা৷
No comments:
Post a Comment