জেগে ওঠে আরেক নগর
আসিফুর রহমান সাগর
অফিস সেরে ঘরে ফেরা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া, মার্কেটের কেনাবেচা শেষ হলে ফাঁকা শহরে সোডিয়ামে আলো নিষ্প্রাণ জ্বলে। ফিকে আলোয় চিরচেনা পথও অচেনা মনে হয়। একে একে যখন বাসায় বাসায় বাতি নিভে আসে তখন জেগে ওঠে আরেক শহর। রাজধানীর অধিকাংশ মানুষের কাছে সেই শহর অচেনা।
রাজধানীর রাত মানে কাওরান বাজার, সোয়ারীঘাট, সদরঘাট, সায়েদাবাদ, টিকাটুলীর মোড়, গুলিস্তান, কমলাপুর, মতিঝিল, দৈনিক বাংলার মোড়, ফকিরেরপুল, শাহবাগ, মালিবাগ, মগবাজার মোড়, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের মতো কিছু স্পটে জীবিকা, জরুরি প্রয়োজনে মানুষের চলাচল। পাইকারি বাজারে চলে মানুষের হট্টগোল, কেনাবেচা। সারাদেশ থেকে সবজিবোঝাই ট্রাকের দীর্ঘ সারিতে রীতিমত জ্যাম লেগে যায় কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ীর পাইকারি বাজারে। সব ব্যস্ততাই ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য। তরকারি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা রাতের বেলাতেই আসেন তরকারি কিনতে। এরপর ভ্যানে করে খুচরা বাজারে নিয়ে গিয়ে ডালা সাজিয়ে অপেক্ষা করেন ক্রেতার। জেগে থাকেন কমলাপুর রেলস্টেশনের দোকানিরা। সরগরম থাকে সদরঘাট। জেগে থাকে মিডিয়াপাড়া।
রাত দুইটাতেও টিএসসির মোড়ে ছাত্রদের জটলা। হল ছেড়ে বেরিয়ে চলছে আড্ডা। গলা ছেড়ে গান গাইছে উদীয়মান কোন গায়ক। বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরে সেই গানের সুরে দুলছে। পলাশী, নীলক্ষেতের মোড়েও চায়ের দোকানে ছাত্রদের জটলা। রাতের বেলা রসনাবিলাসী মানুষের আরেকটি প্রিয় স্থান হলো পুরানো ঢাকার খাবার দোকানগুলো। দল বেঁধে আসেন সবাই ঐতিহ্যবাহী খাবারের টানে। নান্না মিয়ার হোটেলের মোরগ পোলাওয়ের টানে ছোটেন সবাই। সেখানে না পেলে নাজিরাবাজারে। তা নাহলে সদরঘাট। আর ভরসা কমলাপুর স্টেশনের সামনের হোটেলগুলো। পুরানো ঢাকার খাবারের টান যেমন, আধুনিক রেস্টুরেন্টগুলোতেও ভিড় কম নয়। গুলশান, বনানি ১১ নম্বর সড়কের রেস্টুরেন্টগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত ভরপুর থাকে খাবার আর আড্ডার টানে ছুটে আসা মানুষের ভিড়ে।
ঢাকা শহর নিয়ে বাসিন্দাদের বিরক্তির শেষ নেই। জ্যাম, ক্রমবর্ধমান বাসা ভাড়া, অটোরিকশা চালকের সঙ্গে দরদাম, বাসের ভিড়- সবকিছু নিয়েই ত্যক্ত-বিরক্ত। সবাই এক পর্যায়ে ভাবে ইশ! সেই ফেলে আসা গ্রামের দিনগুলি যদি ফিরে পাওয়া যেত; কিন্তু ছুটিছাঁটায় বাড়ি যাবার পরে তিন দিন না পেরোতেই সেই বিরক্তিকর শহরের ডাক উপেক্ষা করা যায় না। ঢাকায় ফিরেই সেই যানজট, সেই প্রতিদিনের ১০-৫টা অফিস; কিন্তু তারপরও দিন শেষে এই শহরটাকে বড় আপন মনে হয়। মন বলে, 'তোমাকে ভালবাসি ঢাকা- 'ভাল মন্দ মিলায়ে সকলি'।
No comments:
Post a Comment