Monday, June 2, 2014

“বারবাজারের প্রত্ন নিদর্শন-৩”


“বারবাজারের প্রত্ন নিদর্শন-৩”
তুলোর রাজ্য ঝিনাইদহ,বারবাজার ষ্টেশনে নেমেই মনেহলো লীলা মজুমদারের কোন গল্পের রাজ্যে ঢুকে গিয়েছি।ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ষ্টেশন ও গার্ড হাউস গুলো দাঁড়িয়ে আছে রেল-লাইনের ধার ঘেঁষে উজ্জল সবুজ গ্রামের প্রান্তে।রিক্সার বালাই এখানে নেই,ভ্যান আর ইজিবাইকই এখানকার সম্বল;তাই প্রত্নস্থল ঘুড়ে দেখতে ভ্যানেই চড়ে বসলাম।১ম গন্তব্য শাহী মাহাল,নাম শাহী মাহাল কিন্তু আজ তা ধ্বংসাবশেষ মাত্র।এখানে ওখানে গর্ত,ঝোঁপ-ঝাড়,জঙ্গল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বাড়ী-ঘড় এই হচ্ছে আজকের শাহী মাহাল!তবে এখানে প্রচুর ইট ও পাথর ছাঁড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,ভ্যান থেকে নেমে হেটেই দেখলাম ১ গ্রামবাসী নূরুল হক্বের সাথে।বিঘার পর বিঘা জুড়ে বিস্তৃত এই ধ্বংসাবশেষ।প্রতিরক্ষা প্রাচীরের ভিত খুব ভালোমতোই বোঝা যায়,ইটের তৈরী এই পাচিল নিদেনপক্ষে ১৫-১৬ ফুট চওড়া হবে;অর্থাৎ যা কিনা পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহারের সমান পুরু।আমার মনে আছে কুমিল্লার শালবন বিহারের দেওয়াল এত পুরু যে আমরা ৬/৭ বন্ধু মিলে পাশাপাশি এর দেওয়ালের উপর দিয়ে হেটেছিলাম।আর এই প্রাচীর শুধু গৌড়ের বাইশ গজী প্রাচীরের চাইতে প্রস্থে কম।নূর আমাকে জিজ্ঞাস করলো আমি প্রাসাদের তোরণ দেখতে চাই কি না।আমি কোথায় তা জিজ্ঞাস করতেই জানালো এই গ্রামের পরে ১টা গ্রাম আছে তারপরেরে গ্রামে! আমি শুনে আশ্চর্য্য হলেও সামলে নিলাম,যখন মনেকরলো সোনারগাঁর বার-ই-মাজলিস প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের দৈর্ঘই হচ্ছে আড়াই কিলোমিটার।শাহী মাহালের এখানে সেখানে প্রচুর কালো গ্রানাইট পাথরের টুকরা ও স্তম্ভও পরে থাকতে দেখলাম,লতা-পাতার কাজ করা অপূর্ব সুলতানী স্থাপত্য।শাহী মাহলের পর দু’টি বিরাট দিঘী দেখলাম,ঐতিহাসিক সুত্রমতে এই বারবাজারে ৬কুড়ি ৬টি দিঘী ছিল! এখানে ওখানে বিরাট বিরাট দিঘী কথাটির সত্যতাই প্রমাণ করে,পাশ থেকে দেখলে ছোট-খাট পাহাড় মনেহলেও ওগুলো আসলে দিঘীর পাড়!নামের আদল বদল হওয়া দু’টি দিঘীও দেখলাম।যার মাঝে বড়টির নাম সওদাগরের দিঘী,আয়তন-৩৬ বিঘা।আর ছোটটির নাম রাণীমাতার দিঘী,আয়তন-৩৩ বিঘা।এগুলোর কথা আগেই পড়েছিলাম তাই মাপ বলতে পারলাম।আদল বদলের কথা বলছিলাম এজন্য যে-হিন্দুরা কখনও পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা কোন দিঘী খনন করতো না,অপরপক্ষে মুসলিমরা উওর-দক্ষিণে লম্বা কোন দিঘী খনন করতো না।অর্থাৎ সওদাগরের দিঘীটিই প্রকৃতপক্ষে রাণীমাতার দিঘী,আর রাণীমাতার দিঘীই সওদাগরের দিঘী।এখানকার বেড় দিঘীটি কিন্তু দেখার মত,বর্গাকার বেড় দিঘীর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১২০০ ফুট।আর বিশাল এই দিঘীর মাঝেই আছে ১বিঘার ১টি দ্বীপ,ইতিহাসবিদদের কোন সন্দেহই নেই যে এখানে স্বয়ং কোন সুলতান বাস করতেন।কারণ এখানে(দ্বীপে) সুলতানী আমলের প্রচুর ইট,রঙীন টালী ও ইসলামী নকশাদার পাথরের স্তম্ভ আছে।আর মুসলিম কি হিন্দু বাংলার স্বাধীন শাসকদের বিরাট দিঘীর মাঝে অবস্থিত দ্বীপে প্রাসাদ নির্মাণ করে থাকা ছিল ১টি অভ্যাস-ঐতিহ্য।খুব ইচ্ছে ছিল দ্বীপে যাওয়ার এই বেড় দিঘীর বিবরণ যেদিন পড়েছি সেদিন থেকেই।সে ইচ্ছে আমার পূর্ণ হলো,আমার ক্ষনিকের সঙ্গী নূর ভাইয়ের ব্যাবস্থাপনাতেই নৌকার বন্দোবস্থ হলো।দ্বীপে এমন জমী খুব কমই আছে-যেখানে কোন না কোন ধ্বংসাবশেষ নেই-এমনকি পাকা মেঝে পর্যন্ত।আরেকটি দিঘীর কথা না বললেই নয়,এটিও বর্গাকার দিঘী-আমি এর বিবরণ আগে পড়িনি-এবারে দেখলাম।কাকচক্ষু জলের এই বিরাট দিঘীর চারিপাশে কেউ না কি শাবল দিয়ে ১টা গুতাও দিতে পারে না-শুধু ইট ও পাথরে লাগে।ব্যাপারটার সত্যতা দেখলাম পদ্মের কারুকাজ করা কালো আগ্নেয় শিলা ও নুড়ির মত হয়ে যাওয়া ইটের ছড়াছড়ি দেখে।কোন সন্দেহ নেই-এটি প্রাক-মুসলিম যুগের পুরাকীর্তি,কারণ ইট বেশি প্রাচীন হয়ে গেলেই গোলকের আকার ধারণ করে ক্ষয়ে যেতে যেতে।নূর আমাকে জানালেন এই দিঘী ছিল প্রাসাদের মাঝখানে,আর এই প্রাসাদেই বাস করতেন এখানকার মানুষদের মুখে মুখে উচ্চারিত শ্রীরাম রাজা।হাসিল বাগে বেশ কয়েকটি সুলতানী আমলের পাঁকা কবর দেখলাম।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ নূনগোলা দিঘীর ছবিটি নিচে দেওয়া হলো
Like · 
  • 4 people like this.
  • Mohammad Mahdi Hassan Pleas share more pictures. Have you tested the age of those artifacts ?
  • Rumman Bin Akbar ভাই আমি ক্যামেরা নিয়ে যাইনি,মোবাইলে যা তুলেছিলাম যা সামান্য,আর আমি পরীক্ষা না করলেও এগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর আগেই পরীক্ষা করে-এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আমি জেনে শুনেই গিয়েছিলাম,তবে যেগুলোর ব্যাপারে আমার নিজের নিশ্চিত ধারণার কথা বলেছি-তাতে আমি নিশ্চিত,ওগ...See More
  • Malay Sanyal Rumman Bin Akbar, apni padma chap thaka iter chobi niychilen ki? ekta post korben pls...kothay kono lekha nei?
    4 hrs · Like · 1

No comments:

Post a Comment