Friday, June 27, 2014

ইরাক : জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা ও পরিচিতি

ইরাক : জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা ও পরিচিতি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জুন, ২০১৪
২০১১ সালে ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহারের পর ইরাকের শিয়া এবং সুন্নি বিদ্রোহী গ্র“পগুলো তাদের অবস্থান এবং কৌশল বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করেছে। এদের কেউ কেউ মূলধারার রাজনীতিতে চলে এসেছে আবার কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিবেশী সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের ফলে আবারও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে ইরাকে আর এর সব চেয়ে বড় উদাহরণ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভ্যান্ট যারা আইএসআইএল নামে পরিচিত। ইরাকে মার্কিন অভিযানের পর থেকে বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্র“পের উত্থান হয়েছে। এদের কেউ শিয়া কেউ সুন্নি আবার কেউ কুর্দি সম্প্রদায়ের। প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে যুদ্ধ করেছে। যুগান্তর পাঠকদের জন্য ইরাকের বিদ্রোহী গ্র“পগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলÑ
১. জেনারেল মিলিটারি কাউন্সিল ফর ইরাকি রিভলিউশনারিজ
জেনারেল মিলিটারি কাউন্সিল ফর ইরাকি রিভলিউশনারিজ এ বছর জানুয়ারিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। ২০১১ সাল থেকে যেসব প্রদেশে বিদ্রোহ চলে আসছিল তারা সেসব প্রদেশে বিদ্রোহ শুরু করে।
আনবার প্রদেশে সরকারি বাহিনীর হামলা এবং ২০১৩ সালে সুন্নি সংসদ সদস্য আহমাদ আল-আলাওয়ানীকে গ্রেফতার করার কারণে এই গ্র“পটি তৈরি হয় এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। ইসলামিক আর্মি অব ইরাক এই গোষ্ঠীটিকে সমর্থন দেয়।
সুন্নি বিদ্রোহী গ্র“প : ২০১১ সাল থেকে সুন্নিদের ওপর বিভিন্ন হামলার কারণে সুন্নিদের মধ্য থেকে কয়েকটি সরকারবিরোধী বিদ্রোহী গ্র“প তৈরি হয়। সুন্নিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রামাদ এবং ফালুজায় তারা সুন্নিদের রাজনৈতিক অধিকার পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ এবং হামলা শুরু করে।
সুন্নি বিদ্রোহী গ্র“পগুলোর মধ্যে ইসলামিক আর্মি অব ইরাক সবচেয়ে বেশি পরিচিত। অন্যান্য কম পরিচিত বিদ্রোহী গ্র“পগুলো হল- আনসার আল ইসলাম, জাইস আল মুজাহিদীন, কাতেইক মাওরাত আল-ইসরিন।
এই বিদ্রোহী গ্র“পটি স্থানীয় ও বিভিন্ন উপজাতি গ্র“পগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য জেনারেল মিলিটারি কাউন্সিল ফর ইরাকি রিভলিউশনারিজ বা জিএমসিআইআর নামে একটি সহযোগিতা বোর্ড গঠন করে।
২. ইসলামিক আর্মি অব ইরাক (আইএসআই)
ইরাকের অন্যতম সুন্নি বিদ্রোহী গ্র“প ইসলামিক আর্মি অব ইরাক বা আইএসআই ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর সৃষ্টি হয়। এই গ্র“পটি ইরাকের সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা দ্বারা গঠিত হয়েছিল। তবে এরা আল কায়দার সহযোগী ছিল না। এমনকি এদের অনেক সদস্য ২০০৬-০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আল কায়দাবিরোধী অভিযানে যোগ দিয়েছিল। ২০০৭ সালের পর সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও ২০১১ সালে আবার সরকারবিরোধী বিদ্রোহ শুরু করে।
৩. নকসবন্দি বর্ডার
এই গ্র“পটি সাদ্দাম হোসেন সরকারের সিনিয়র সদস্য। ইজ্জত ইব্রাহীম আল দৌরি প্রতিষ্ঠা করেন। এরা ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির পর নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এই গ্র“পটি ইসলামিক এবং প্যান আরব ন্যাশনালিস্টের মিশ্রিত মতবাদে বিশ্বাসী।
৪. দ্য অ্যাওয়াকেনিং কাউন্সিল
দ্য অ্যাওয়াকেনিং কাউন্সিল গ্র“পটি ২০০৩ সালে আল কায়দার বিরুদ্ধে অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করার জন্য গঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন সুন্নি উপজাতীয় যোদ্ধাদের নিয়ে এই গ্র“পটি তৈরি হয়। তারা আল আনবারসহ সুন্নি অধ্যুষিত প্রদেশগুলো থেকে আল কায়দাকে উৎখাত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
গ্র“পটিতে প্রথমে ১ লাখ সদস্য ছিল। পরে এদের মধ্য থেকে ৭০ হাজার সদস্যকে নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য সরকারি চাকরি দেয়া হয়।
৫. দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভ্যান্ট
দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভ্যান্ট (আইএসআইএল) সংগঠনটি আল কায়দার সহযোগী এবং তারা গত তিন বছরে অনেক শক্তি অর্জন করেছে। এই গ্র“পটি ইরাক এবং সিরিয়া সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইএসআইএল আল কায়দার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সদস্য নিয়ে গঠিত এবং ২০০৪ সাল থেকে তারা ইরাকে সক্রিয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সুযোগে আইএসআইএল নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। এরা সিরিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং ২০১৩ সালে ইরাকে আল কায়দার সহযোগী দলগুলোকে একত্রিত করেছে।
এ বছর জুনে তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করে। তারা ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মসুলসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর নিরাপত্তা বাহিনীকে পরাজিত করে দখল করে নেয়।
তারা পশ্চিম ইরাকের জর্ডান এবং সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকির দখল নিয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু সিরিয়া এবং পশ্চিম ইরাকের বড় অংশে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বিদ্রোহীরা। এই বিদ্রোহী গ্র“পটি বিতর্কিত এবং খুবই নিষ্ঠুর হিসেবে পরিচিত। তারা সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন ইরাকি বিদ্রোহী যেমন কুর্দি এবং নকসবন্দিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আইএসআইএলের যোদ্ধার সঙ্গে কয়েক হাজার বিদেশীও রয়েছে।
শিয়া সশস্ত্র গ্রুপ
সদর ফাইটার্স
শিয়া বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্র“পগুলোর মধ্যে ধর্মীয় নেতা মুক্তাদা আল সদরের সদর ফাইটার্স সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইএসআইএলকে প্রতিরোধ এবং তাদের হাত থেকে জনগণ, দেশ, ধর্ম ও পবিত্র এলাকাগুলো রক্ষার জন্য সদর ফাইটার্স যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছে সদর। তার নির্দেশের পর বাগদাদ, কিরবুক, বসরা এবং নাজাফে ২১ জুন কয়েক হাজার যোদ্ধা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে। সদর তার বাহিনীকে শান্তি ব্রিগেড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আসাইব আহল আল হক
এটি একটি মিলিশিয়া গ্র“প যারা ইরাকে মার্কিন হামলার পর মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আসাইব ইরাকের সংসদের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসাইব মাহাদি আর্মির অংশ ছিল।
কাতাইব হিজবুল্লাহ
এরা শিয়া সম্প্রদায়ের ছোট একটি সশস্ত্র গ্র“প। ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর কাতাইব হিজবুল্লাহ গঠিত হয় এবং এরা মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনী ইরাক ছাড়ার আগ পর্যন্ত যে কয়টা গোষ্ঠী যুদ্ধ করে গেছে কাতাইব তাদের মধ্যে একটি। তারা রকেট এবং রাস্তার পাশে বোমা পুঁতে রেখে হামলা চালাত।
- See more at: http://www.jugantor.com/ten-horizon/2014/06/28/116210#sthash.xuvqyrdF.dpuf

No comments:

Post a Comment