তিকরিতে সেনা অভিযান, বিমান হামলা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জুন, ২০১৪
ইরাকের তিকরিত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিদ্রোহীদের ওপর অভিযান চালানো শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। শহরটির নিয়ন্ত্রণে থাকা আইএসআইএলের (ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভ্যান্ট) সঙ্গে শুক্রবার তাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ৯০ আইএসআইএল সদস্য নিহত হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার শহরটির আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে সেনা কমান্ডোদের নামতে দেখা গেছে। এছাড়া বিমান হামলার জন্য অভিযানে একটি যুদ্ধবিমানও অংশ নিয়েছে। ভিডিওতে শহরটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার তিকরিতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি হেলিকপ্টারকে নামতে দেখা গেছে। এছাড়া ওই অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে বলেও জানা গেছে। বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী বাইজিতে অবস্থিত দেশটির সবেচেয়ে বড় তেল শোধনাগার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার এক ভিডিও প্রকাশের পর তিকরিতে এ অভিযান চালানো হল।
এদিকে ১০ ও ১১ জুন আইএসআইএলের হাতে বন্দি হওয়া সেনা সদস্যদের মধ্যে অন্তত ১৯০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
চার গ্যাসক্ষেত্র সুন্নি যোদ্ধাদের দখলে : ইরাকের সুন্নি যোদ্ধারা এবার দেশটির গ্যাসের প্রধান ক্ষেত্র মানসুরিয়াত আল-জাবাল দখল করে নিয়েছে। এখানে চারটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। খবর রয়টার্স।
সুন্নি যোদ্ধারা বৃহস্পতিবার মানসুরিয়াত আল-জাবাল দখল করে নেয়। রাজধানী বাগদাদ থেকে শহরটি মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। রাতভর লড়াই চালিয়ে সুন্নি যোদ্ধারা শহরটি নিয়ন্ত্রণ নেয় বলে জানিয়েছে নিরাপত্তাকর্মীরা। এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে বহু বিদেশী কোম্পানি কাজ করছে।
সুন্নি যোদ্ধারা ভূমধ্যসাগর থেকে ইরান পর্যন্ত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। তারা এখন ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমের বিশাল এলাকা এবং সিরিয়ার সঙ্গে ইরাকের সীমান্ত পারাপারসহ বেশ কয়েকটি সিরীয় শহর নিয়ন্ত্রণ করছে। ইরাকি সৈন্যদের দেয়া বহু মার্কিন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও দখল করে নিয়েছে দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া বা আইসিস নামে পরিচিত ইসলামী বিদ্রোহীরা।
অস্থির ইরাকে সংসদ অধিবেশন : চরম অস্থিরতার মধ্যেও ইরাকে রাজনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টের আহ্বানে শুক্রবার বসছে ইরাকি সংসদের অধিবেশন। নতুন সরকার গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে একে। জঙ্গিদের সামনে জোটবদ্ধ সরকারের চিত্র তুলে ধরতে এ চেষ্টা বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষকমহল।
নির্বাচিত সরকার থাকা সত্ত্বেও ইরাকে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের তিক্ততা চরমে। ইতিমধ্যে রক্তাক্ত যুদ্ধে একের পর এক শহরের দখল নিয়েছে সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভ্যান্টের। বাগদাদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে জঙ্গিরা। চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির ওপর। ইরাকের বর্তমানে যা পরিস্থিতি তা তারই ব্যর্থতার ফল বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে দাবি উঠছে ক্ষমতার পরিবর্তনের।
৫০ মার্কিন সেনা উপদেষ্টা : ইরাকে সুন্নি বিদ্রোহী-জঙ্গিদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দেশটির সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য চারটি দলে ৫০ জন মার্কিন উপদেষ্টা বাগদাদে পৌঁছেছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাগদাদে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পিত দুটি যৌথ মূল্যায়ন কেন্দ্র চালু করেছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র স্টিভ ওয়ারেনের বরাতে সিনহুয়া জানিয়েছে, ‘এই কেন্দ্রগুলোতে উপদেষ্টাদের বিভিন্ন দল থেকে নানামুখী তথ্য আসবে এবং সেগুলো সেখানে ব্যাখ্যার পাশাপাশি সমাধান করা হবে।’ ইরাকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ সেনা উপদেষ্টার অংশ এ ৫০ উপদেষ্টা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সুন্নি বিদ্রোহী জঙ্গিদের হামলা ও অভিযান সম্পর্কে মূল্যায়ন তৈরি করতে। সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশকিছু শহর দখল করে এখন রাজধানী বাগদাদের কাছাকাছি চলে এসেছে।
ইরাকে আসা যুক্তরাষ্ট্রের এই উপদেষ্টারা মার্কিন সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনীর সদস্য। বর্তমানে ইরাকে ইরাকে প্রায় ৫০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন।
No comments:
Post a Comment