Monday, June 16, 2014

ফিক্সড ডিপোজিট করার আগে করের কথা মাথায় রাখুন

ফিক্সড ডিপোজিট করার আগে করের কথা মাথায় রাখুন

ফায়ে ডি'সুজা 

ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে মেয়াদি আমানত বহু পরিচিত বন্ধুর মতো৷ অনেকেই বিনিয়োগের শুরু এবং শেষ বলতে ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটই বোঝেন৷ অনেক আবার মিউচুয়াল ফান্ড বা অন্য লগ্নি প্রকল্পে আশানুরূপ রিটার্ন না পেয়ে ফের ফিক্সড ডিপোজিটে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ মেয়াদি আমানতের কার্যপদ্ধতি সরল৷ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আপনি ব্যাঙ্ককে আপনি কিছু টাকা জমা রাখলেন৷ মেয়াদ শেষে ব্যাঙ্ক আপনাকে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদসমেত আপনার আমানত ফেরত দেয়৷ অর্থাত্‍, কোনও ফিক্সড ডিপোজিটে মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট রিটার্ন পাওয়ার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত৷ এতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মতো ঝুঁকি নেই৷ আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার সময় ব্যাঙ্ক উঠে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ কিস্তির টাকা (যেমন, সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের ক্ষেত্রে) দিতে ভুলে যাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই৷ আমাদের বাবা-মা, ঠাকুর্দা-ঠাকুমারাও মেয়াদি আমানতে টাকা রাখা পছন্দ করতেন৷ তাদের কাছে এটি অনেকটা জীবানুনাশক হিসাবে হলুদের ব্যবহারের মতো ছিল৷ আমাদের ঠাকুমারা যদি এর থেকে উপকার পেয়ে থাকেন, তা হলে মেয়াদি আমানতে টাকা রেখে আমরাও উপকৃত হব না কেন? 

সত্যিটা হল, মেয়াদি আমানত একটি অসাধারণ বিনিয়োগ মাধ্যম৷ তবে, আমাদের বিনিয়োগের এটাই একমাত্র উপায় নয়৷ আজ আমাদের নাগালে বিনিয়োগের যত মাধ্যম রয়েছে, আমাদের ঠাকুর্দা-ঠাকুমাদের সময়ে তত সুযোগ ছিল না৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ওঁদের সময় ইন্টারনেটের প্রচলন ছিল না৷ কিন্ত্ত, আমাদের প্রজন্মের কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা থাকায় বিনিয়োগ সম্পর্কে বহু তথ্য ও পরামর্শ আজ আমাদের হাতের মুঠোয়৷ মেয়াদি আমানতের মতো বিশ্বাসযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যমে টাকা গচ্ছিত রাখতে আমি কোনও মতেই বারণ করছি না৷ আমি যেটা বলতে চাইছি তা হল, সুনির্দিষ্ট কিছু চাহিদা পূরণ করতেই মেয়াদি আমানত ব্যবহার করা উচিত্‍৷ 

মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে যেটা বোঝা দরকার সেটা হল আয়করের প্রভাব৷ যখনই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার আপনাকে বলবেন, 'আপনার মেয়াদি আমানতের উপর আপনি বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ পাবেন,' তখন আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার গচ্ছিত টাকার সুদের উপর আপনাকে আয়কর দিতে হবে৷ কাজেই, আপনি যদি ১০ শতাংশ কর দেন, তাহলে আপনার মেয়াদি আমানত থেকে প্রকৃতপক্ষে ৮.১ শতাংশে হারে সুদ পাবেন৷ আপনি যদি ২০ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দেন, তা হলে ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিটে প্রাপ্ত সুদের হার (কর পরবর্তী) কমে দাঁড়াবে যথাক্রমে ৭.২ শতাংশ এবং ৬.৩ শতাংশ৷ কাজেই মেয়াদি আমানতে বিনিয়োগের আগে আপনাকে কি হারে কর দেন সেটা মাথায় রাখুন৷ 

মেয়াদি আমানতে টাকা রাখার আগে দ্বিতীয় যে বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন সেটি হল, কেন মেয়াদি আমানতে টাকা রাখতে চান? কিছু ক্ষেত্রে মেয়াদি আমানত অত্যন্ত কার্যকরী৷ যেমন, আপতকালীন প্রয়োজনে টাকা জমাতে চাইলে৷ বস্ত্তত, আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত্‍ তিন মাসের আয়ের টাকা আলাদা করে মেয়াদি আমানতে সরিয়ে রাখা, যেন এক দিনের আগাম নোটিসে ওই টাকা তুলে নেওয়া যায়৷ নিয়মিত বিনিয়োগের অভ্যাস তৈরি করতে হলে রেকারিং ডিপোজিটের কথা ভাবতে পারেন৷ স্বল্পমেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করতে হলে মেয়াদি আমানতের জুড়ি নেই৷ যেমন, ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া, অল্পদিনের মধ্যেই পরিবারে কোনও বিবাহের অনুষ্ঠান থাকলে সেখানে খরচের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেয়াদি আমানতে টাকা রাখতে পারেন৷ প্রবীণ নাগরিকরা তাদের সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসাবেও মেয়াদি আমানত ব্যবহার করতে পারেন৷ অপেক্ষাকৃত বেশি হারে সুদও পাবেন৷ তাছাড়, সুদ-বাবদ আয়ের উপর অনেক কম হারে আয়কর দিতে হয় প্রবীণ নাগরিকদের৷ 

মতামতের জন্য ই-মেল করুন এই ঠিকানায়- bb.eisamay@gmail.com 

(লেখিকা ইটি নাও চ্যানেলের উপস্থাপক ও পার্সোনাল ফিনান্স বিভাগের এডিটর৷ এই নিবন্ধে প্রকাশিত মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত) 
http://eisamay.indiatimes.com/business/think-about-tax-before-going-for-fixed-deposit/articleshow/36650159.cms

No comments:

Post a Comment