বিদেশী প্রভুদের কাছে কান্নাকাটি বন্ধ করুন
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ২৮ জুন, ২০১৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে না এসে ভুল করেছেন। ঠেকাতে পারেননি। এখন বিদেশী প্রভুদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করছেন, নালিশ করছেন। এসব কান্নাকাটি বন্ধ করুন। বিদেশীরা আপনাকে ক্ষমতায় আনবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিদেশী প্রভুদের ওপর নয়, দেশের মানুষের শক্তিতে বলীয়ান। দেশের জনগণই আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় আনে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর মানুষ প্রথমে উপলব্ধি করে দেশে জনগণের সরকার এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু তারেক-কোকোর টাকা নয়, সুইস ব্যাংকের টাকাও দেশে ফেরত আনা হবে। তিনি দাবি করেন, খালেদা জিয়ার ছেলের পাচার করা টাকা দেশে প্রথম আনতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সুইস ব্যাংকে কার কার কত টাকা আছে সে তালিকাও আনব। টাকা ফেরত কিভাবে আনতে হবে সেটাও করব। কার কোথায় কত টাকা আছে খুঁজে বের করা হবে। তাতে উনিও (খালেদা) ধরা খাবেন। একটা যখন এনেছি বাকিগুলোও আনবো।
দলের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল।
এর আগে বিকাল ৩টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুুন নিয়ে আসতে থাকেন সভাস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিকাল ৪টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে সভামঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বক্তৃতা শুরু করেন ৫টা ৩৪ মিনিটে এবং শেষ করেন ৬টা ২৬ মিনিটে। প্রায় এক ঘণ্টার এ বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের জন্ম, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে দলটির ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান হত্যা, বিএনপির শাসনামল, নির্বাচনের আগে বিএনপির ধ্বংসাÍক রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির রোল মডেল। আমরা আজ পরনির্ভরশীল নই, আত্মনির্ভরশীল। সবাই বলেছিল পদ্মা সেতু হবে না। আমরা বলেছিলাম হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, খালেদা জিয়া কোনোদিনই চান না দেশের বাচ্চারা পাস করুক। আমাদের পাশের দেশে ৯৮ শতাংশ পাস করে। আমাদেরও সেটা হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজধানীর উন্নয়ন সবার চোখে পড়ার মতো বলেও জানান শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ত এমন দাবি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার খন্দকার মোশতাক। এই মোশতাকের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা মদদ দিয়েছে? খন্দকার মোশতাক সংবিধান পরিবর্তন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। আর সেনাপ্রধান হিসেবে পছন্দ করেছিলেন জিয়াউর রহমানকে। উপ-সেনা প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমন। উপ-সেনা প্রধান নামে কোনো পদ ছিল না। সেই পদ তৈরি করে জিয়াউর রহমানকে দেয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান গাদ্দারি করেছিল খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে।
তিনি বলেন, বেইমানি করে যারা ক্ষমতায় আসে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীর জাফরও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। খন্দকার মোশতাকও পারেননি। মোশতাক বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন জিয়াউর রহমান তাদের সমর্থন দিয়েছিলেন। জিয়া ক্ষমতা দখলের পর ১৯টা ক্যু হয়েছিল। শত শত অফিসারকে হত্যা করেছে এই জিয়াউর রহমান। এই দেশটা যেন স্বাধীনতার সুফল না পায়, স্বাধীনতার চেতনায় যেন দেশের মানুষ না চলতে পারে সেই ষড়যন্ত্রই করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। মোশতাক গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ করেছিল, আওয়ামী লীগকে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ হল হীরার টুকরার মতো যার রশ্মি মানুষের সেবায় নিয়োজিত। জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। অনেক সেক্টর কমান্ডারকে হত্যা করেছে, এতবড় গাদ্দারি সে (জিয়াউর রহমান) বাংলার মানুষের সঙ্গে করেছে। ১৯৭৫-’৯৬ পর্যন্ত হত্যা-গুম আর ষড়যন্ত্র পেয়েছে বাংলার মানুষ। স্বাধীনতার চিহ্নগুলোকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথায় আছে যে নলে আগমন সে নলেই গমন। অর্থাৎ বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া হত্যার এতকাল পর জিয়ার ন্ত্রী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন আমরা নাকি জিয়াকে হত্যা করেছি। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, আমরা কেন হত্যা করতে যাব? এরশাদ একটা বাক্স নিয়ে আসলো আপনি-আপনার ছেলে তো দেখতে চাইলেন না সে বাক্সে লাশ আছে কিনা? কেবিনেটের সিদ্ধান্ত একটি, বাড়ি নিয়ে নিলেন দুটি। এরশাদ সাহেব ভাবী সাহেবের যতœ করতে একটু কার্পণ্য করেননি। রহস্যটা কি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন এই ক্যু হল একমাত্র আমি জিল্লু চাচার (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান) শ্বশুর বাড়িতে বসে স্টেটমেন্ট লিখলাম গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যেন অক্ষুণ্ন থাকে। কারণ আমাদের ভয় ছিল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্শাল ল জারি করা হয় কিনা। আমি ঢাকা এসে সেজ ফুপুর বাসায় উঠলাম। জিয়াউর রহমান আমাকে ৩২ নাম্বারের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমার বাবা-মার নামে মিলাদ পড়াতে দেয়নি। আমি যাযাবরের মতো ঘুরেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করি, এরশাদ কিভাবে ক্ষমতা নেয়ার সুযোগ পায় আপনি যদি তাকে মদদ না দেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলতেন, বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সুইজারল্যান্ড হিসেবেই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলার। আমাদের এখন কারও কাছে হাত পাততে হবে না। উন্নত দেশ হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি উন্নত দেশ হিসেবে দাঁড় করাব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম-আন্দোলন সব কিছু হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য। যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল আওয়ামী লীগই পেরেছিল সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে। বাঙালি জাতি আজ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে তার সব কিছু দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিশাল ইতিহাস। বাঙালির যতটুকু প্রাপ্তি তার সবটুকুই আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। দুর্ভাগ্য সব ঝড়ঝাপটা আওয়ামী লীগের ওপর। মানুষ মন্ত্রী হওয়ার জন্য দল ত্যাগ করে। আর জাতির পিতা দলকে সুসংগঠিত করার জন্য মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment