ভাঙছে শৃঙ্খলের দেয়াল
রুখসানা কাজল
নারীর জন্য শিক্ষা এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ভারতবর্ষের প্রতিটি নারী অসীম কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে সেই সব মহাপুরষকে যারা নারীর অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে কাজ করে গেছেন ধর্মের মরফিনে মোড়া সমাজ ও পরিবারের বিরুদ্ধে। নারী আজ শিক্ষা ও কর্মের অধিকার পেয়েছে। পেয়েছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের বিভিন্ন পথ। এমনকি বহু নারী নিজেই পরিবার প্রতিপালন করছে। একাকী থাকছে। কিন্তু এদের সংখ্যা কতটুকু ?
সাংসারিক অশান্তির কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলমিশ-সমঝোতা সৃষ্টিতে মুরব্বিরা প্রায়ই মেয়েকে শাসন করার জন্য কয়েকটি অমুল্যবান উদাহরণ দেন। তার মধ্যে একটি খুব উচ্চমার্গের। এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে, স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয় ত স্বামী স্ত্রীকে প্রথমে বোঝাবে । তাতেও কাজ না হলে তিরস্কারসহ মৃদু প্রহার মানে লাঠি দ্বারা পেটাতে পারবে। আর তাতেও কাজ না হলে মৃদু থেকে চরম পেটানোর নসিহত হাদিসে ইরশাদ করা হয়েছে। এই হাদিসটা যখনই শুনতাম তখন ই স্বামী নামের এক ভয়ানক নিষ্ঠুর রাগী পুরুষের চেহারা মনে ভেসে আসত। ইসলাম মানে জানি শান্তি । কিন্তু একি অশান্তি। স্বামীর কাছে মার খেয়ে সংসার করতে হবে? ভাত নরম হলে বা শক্ত হলে, তরকারিতে নুন না হলে বা বেশি হলে, বোরখা পরতে না চাইলে বা পরতে চাইলে, শরীর দিতে চাইলে বা না চাইলে, চাকরি করতে চাইলে বা না চাইলে, সন্তান নিতে চাইলে বা না চাইলে—- মারের কি শেষ থাকে আর।
সনাতন হিন্দু ধর্মেও স্ত্রীকে পেটানোর অনুশাসন জারি রয়েছে । সহমরণ, সতীদাহ, বৈধব্যের আমরণ যন্ত্রণাটন্ত্রনা ত ছিলই কিন্তু নারীকে প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হবে মারের পর, মার খেয়ে ইসলাম ধর্মের ওই হাদিসের মতো হুবহু অনুশাসন দেখে চমকে উঠলাম। বিষয়বস্তু, বৈশিষ্ট্য, তাদের প্রতি ব্যবহারের এক উল্লেখযোগ্য হাদিস বা অনুশাসনের জান্তব উদাহরণ রয়েছে দুটি পরস্পর বিপরীত স্রোতে বয়ে যাওয়া ধর্মে। সনাতন হিন্দু ধর্মেও বৃহদারণ্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য বলেন, ‘স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে ‘কেনবার’ (ক্রয়) চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে।’ অর্থাৎ নারীর জন্য প্রেম নয়, ভালবাসা নয়, অনুরোধ বা উপরোধ নয়। নারী না বলতে পারবে না কোন মতে, কোন কিছুতেই। তাহলেই প্রহার। কিন্তু প্রতিবাদ উঠেছে ওই মানবিক মানুষগুলোর ভেতর থেকেই। আর তাই পিতা, ভাই , বন্ধু, প্রেমিক, স্বামীরাই নারীকে আলোর রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
এখনও রাষ্ট্রীয় আইনকে অমান্য করে এদেশে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। বাবা-মা নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে নাবালিকা মেয়ের বয়স ১৮। বাংলাদেশের বৃহত্তর কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে নিয়োজিত লাখ লাখ নারী এবং পুরুষ শ্রমিক অল্প বয়সেই বিয়ে করে ফেলছে। সন্তানের বাবা-মা হচ্ছে। বিয়ে টিকছে কম । ভাংছে বেশি । ঢাকার কাওরানবাজারস্থ কয়েকটি পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরত স্বল্প শ্রমিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত জরিপে জানা গেছে যে তারা বিবাহিত ত বটেই । এমনকি তাদের সন্তান রয়েছে। জাকির নামের এক শ্রমিক জানায়, দু’বছর আগে সে বিয়ে করে। কেন বিয়ে করলে? ইনকাম করি তাই বিয়ে করলাম। হুজুরও বলল যে ইনকাম করে তার বিয়ে করা ফরয। কিন্তু জাকিরের বয়স একুশ মাত্র। একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে জাকিরের কিশোরগঞ্জের কোন গ্রামে। বউ সেভেনে পড়ত বিয়ের সময়।
রাহেলার বয়স ১৭। এক মেয়ে আছে । বিয়ে করলে যে এই বয়সে? রাহেলার উত্তর, মসজিদের হুজুর বলল। তা ছাড়া ইনকাম করি, একা গ্রামে যাই-আসি। কে কখন কি করে বসে সেই ভয়ে বাপ-মা বিয়ে দিল। ভাল আছ ? রাহেলার অপুষ্ট শরীরে অসুখী ভঙ্গি । খুব জোরে থু থু ফেলে, মেশিনে শব্দ তুলে ঢেকে দিল নিজের জীবন । অথচ কর্মক্ষেত্রে এদের সকলেরই প্রায় অবিবাহিত পরিচয় লেখা। কারণ সরকারের হিউমান রিসোর্স বিভাগ এর ভয়ে। অর্থাৎ কাগজে-কলমে এরা অবিবাহিত দেখালেও স্বল্প আয়ের এই শ্রমিকরা বিবাহিত এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নীরবে এক বিরাট ক্ষতিকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূর করতে গিয়ে এরা সাতপাঁকে আরও বেশি জড়িয়ে যাচ্ছে দারিদ্র্যের সঙ্গে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের দুটি একই বয়সের মেয়ে, যারা বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের ভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশে থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা দু’জনেই মনে করে বিয়ে করতেই হবে এমন কোন জোর জবরদস্তি করা নিহায়ত অন্যায়। কোন মানুষ তার ইচ্ছা হলে বিয়ে করতে পারে আবার নাও করতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে তারা এটাও মনে করে যে চাপিয়ে দেয়া বিবাহ এই প্রথাকে না মেনে চলতে গেলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা দৃঢ় করতে হবে। পরিবারের সঙ্গে লড়াই করা যায়, সমাজকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখানো সম্ভব কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা খুব কঠিন। অথচ উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত কর্মজীবী নারী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দিব্যি একাকী জীবন যাপন করছে।
তুলনামূলকভাবে ভারত বাংলাদেশ থেকে অগ্রগামী হলেও নারীর অবস্থান প্রশ্নে সামাজিক দিক দিয়ে মোটেই সুখকর পরিবর্তনের উদাহরণ নয় ভারত। বধূ হত্যা, পারিবারিক সহিংসতায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কন্যা সন্তানের ভ্রƒণ হত্যা ইত্যাদিতে ভারত বর্তমানে নারীর জন্য নিরাপত্তাহীন একটি দেশ। নির্বাচনের বিজয় মিছিল থেকে পরাজিত বিপক্ষ সমর্থকের কন্যা সন্তানকে তুলে নিতে না পেরে প্রশাসনের নাকের সামনেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ঘর কে ঘর। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ত তাহলে জাহিলিয়াতের যুগ চলছে। পাকিস্তানে পারিবারিক সম্মানের জন্য প্রকাশ্যে আদালতের সামনেই বাবা, ভাই, ভাইপোদের মারপিটে হত্যা করা হয় নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করা ফারজানা পারভিনকে। পারিবারিক সম্মানের জন্য বউ, মেয়েকে খুন করা, বিক্রি করা, ভোগে দেয়া পাকিস্তান, আফগানিস্তানে কোন অপরাধ নয়। মেয়েরা এই ঘৃণ্য কার্যক্রমের প্রতিবাদ করলেই সেটা অপরাধ । মালয়েশিয়ায় ঘটে গেছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম ধর্ষণ। বাংলাদেশে গ্রাম, শহরে ধর্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নানা নারী। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই অন্তত কয়েকটি ধর্ষণের খবর থাকছেই। এর প্রধানতম কারণ আমাদের ধর্মাশ্রিত পারিবারিক আবহাওয়া। শিক্ষিত সচেতন বলে যাদের ভাবা হয় তারাও মেয়ে সন্তান জন্মালে হাসতে হাসতে বলে ফেলে ‘লস প্রজেক্ট’। দরিদ্র আর অশিক্ষিতদের কথা ত ছেড়েই দিলাম।
পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে ধর্মের বয়ানে নারীকে কেবলই ভোগের সামগ্রী এবং সন্তান জন্মদানের পাত্র ছাড়া আর কিছুই ভাবা হয় না সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও একটি পরিবর্তন এসেছে। পরিবার যতই শঙ্কিত হোক না কেন সমাজ ভাঙ্গছে । আর এই ভাঙ্গার পেছনে শিক্ষা এবং অর্থনীতি জোরালো ভূমিকা রাখছে। মেয়েরা এখন বিয়ে নামক চাপিয়ে দেওয়া প্রথাটাকে গ্রাহ্যে না এনে নিজের মতো করে বাঁচতে চাইছে। বিয়ে করছে তবে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করে। ভবিষ্যতের যে কোন বিপদের মোকাবেলা করার সাহস রেখে। কিন্তু দেশে এই সংখ্যাটি খুব কম। কিন্তু তারপরও এটি একটি শুভ সূচনা যে কেবল ধর্মের অনুশাসনের কারণে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য মেয়েরা বিয়েতে আগ্রহী হচ্ছে না। বিয়ে তখনই করছে যখন বিয়ে করার মতো মন,সাহস এবং সঠিক সময় তারা মনে করছে ঠিক তখন। আজকাল শহরে একলা চাকরিজীবী মেয়েদের বাসা ভাড়াও দেয়া হচ্ছে। অযথা কৌতূহল দেখানোর প্রবণতা কমে এসেছে। কিন্তু কতসংখ্যক নারী পারছে এমন সুযোগ নিতে? তবে সুখের বিষয় ক্রমেই শৃঙ্খলের দেয়াল ভাঙ্গছে। সমাজে শুভ পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই পরিবর্তনকে ধর্ম দিয়ে আর রাখা বেঁধে সম্ভব হবে না।
সাংসারিক অশান্তির কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলমিশ-সমঝোতা সৃষ্টিতে মুরব্বিরা প্রায়ই মেয়েকে শাসন করার জন্য কয়েকটি অমুল্যবান উদাহরণ দেন। তার মধ্যে একটি খুব উচ্চমার্গের। এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে, স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয় ত স্বামী স্ত্রীকে প্রথমে বোঝাবে । তাতেও কাজ না হলে তিরস্কারসহ মৃদু প্রহার মানে লাঠি দ্বারা পেটাতে পারবে। আর তাতেও কাজ না হলে মৃদু থেকে চরম পেটানোর নসিহত হাদিসে ইরশাদ করা হয়েছে। এই হাদিসটা যখনই শুনতাম তখন ই স্বামী নামের এক ভয়ানক নিষ্ঠুর রাগী পুরুষের চেহারা মনে ভেসে আসত। ইসলাম মানে জানি শান্তি । কিন্তু একি অশান্তি। স্বামীর কাছে মার খেয়ে সংসার করতে হবে? ভাত নরম হলে বা শক্ত হলে, তরকারিতে নুন না হলে বা বেশি হলে, বোরখা পরতে না চাইলে বা পরতে চাইলে, শরীর দিতে চাইলে বা না চাইলে, চাকরি করতে চাইলে বা না চাইলে, সন্তান নিতে চাইলে বা না চাইলে—- মারের কি শেষ থাকে আর।
সনাতন হিন্দু ধর্মেও স্ত্রীকে পেটানোর অনুশাসন জারি রয়েছে । সহমরণ, সতীদাহ, বৈধব্যের আমরণ যন্ত্রণাটন্ত্রনা ত ছিলই কিন্তু নারীকে প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হবে মারের পর, মার খেয়ে ইসলাম ধর্মের ওই হাদিসের মতো হুবহু অনুশাসন দেখে চমকে উঠলাম। বিষয়বস্তু, বৈশিষ্ট্য, তাদের প্রতি ব্যবহারের এক উল্লেখযোগ্য হাদিস বা অনুশাসনের জান্তব উদাহরণ রয়েছে দুটি পরস্পর বিপরীত স্রোতে বয়ে যাওয়া ধর্মে। সনাতন হিন্দু ধর্মেও বৃহদারণ্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য বলেন, ‘স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে ‘কেনবার’ (ক্রয়) চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে।’ অর্থাৎ নারীর জন্য প্রেম নয়, ভালবাসা নয়, অনুরোধ বা উপরোধ নয়। নারী না বলতে পারবে না কোন মতে, কোন কিছুতেই। তাহলেই প্রহার। কিন্তু প্রতিবাদ উঠেছে ওই মানবিক মানুষগুলোর ভেতর থেকেই। আর তাই পিতা, ভাই , বন্ধু, প্রেমিক, স্বামীরাই নারীকে আলোর রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
এখনও রাষ্ট্রীয় আইনকে অমান্য করে এদেশে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। বাবা-মা নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে নাবালিকা মেয়ের বয়স ১৮। বাংলাদেশের বৃহত্তর কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে নিয়োজিত লাখ লাখ নারী এবং পুরুষ শ্রমিক অল্প বয়সেই বিয়ে করে ফেলছে। সন্তানের বাবা-মা হচ্ছে। বিয়ে টিকছে কম । ভাংছে বেশি । ঢাকার কাওরানবাজারস্থ কয়েকটি পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরত স্বল্প শ্রমিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত জরিপে জানা গেছে যে তারা বিবাহিত ত বটেই । এমনকি তাদের সন্তান রয়েছে। জাকির নামের এক শ্রমিক জানায়, দু’বছর আগে সে বিয়ে করে। কেন বিয়ে করলে? ইনকাম করি তাই বিয়ে করলাম। হুজুরও বলল যে ইনকাম করে তার বিয়ে করা ফরয। কিন্তু জাকিরের বয়স একুশ মাত্র। একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে জাকিরের কিশোরগঞ্জের কোন গ্রামে। বউ সেভেনে পড়ত বিয়ের সময়।
রাহেলার বয়স ১৭। এক মেয়ে আছে । বিয়ে করলে যে এই বয়সে? রাহেলার উত্তর, মসজিদের হুজুর বলল। তা ছাড়া ইনকাম করি, একা গ্রামে যাই-আসি। কে কখন কি করে বসে সেই ভয়ে বাপ-মা বিয়ে দিল। ভাল আছ ? রাহেলার অপুষ্ট শরীরে অসুখী ভঙ্গি । খুব জোরে থু থু ফেলে, মেশিনে শব্দ তুলে ঢেকে দিল নিজের জীবন । অথচ কর্মক্ষেত্রে এদের সকলেরই প্রায় অবিবাহিত পরিচয় লেখা। কারণ সরকারের হিউমান রিসোর্স বিভাগ এর ভয়ে। অর্থাৎ কাগজে-কলমে এরা অবিবাহিত দেখালেও স্বল্প আয়ের এই শ্রমিকরা বিবাহিত এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নীরবে এক বিরাট ক্ষতিকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূর করতে গিয়ে এরা সাতপাঁকে আরও বেশি জড়িয়ে যাচ্ছে দারিদ্র্যের সঙ্গে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের দুটি একই বয়সের মেয়ে, যারা বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের ভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশে থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা দু’জনেই মনে করে বিয়ে করতেই হবে এমন কোন জোর জবরদস্তি করা নিহায়ত অন্যায়। কোন মানুষ তার ইচ্ছা হলে বিয়ে করতে পারে আবার নাও করতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে তারা এটাও মনে করে যে চাপিয়ে দেয়া বিবাহ এই প্রথাকে না মেনে চলতে গেলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা দৃঢ় করতে হবে। পরিবারের সঙ্গে লড়াই করা যায়, সমাজকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখানো সম্ভব কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা খুব কঠিন। অথচ উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত কর্মজীবী নারী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দিব্যি একাকী জীবন যাপন করছে।
তুলনামূলকভাবে ভারত বাংলাদেশ থেকে অগ্রগামী হলেও নারীর অবস্থান প্রশ্নে সামাজিক দিক দিয়ে মোটেই সুখকর পরিবর্তনের উদাহরণ নয় ভারত। বধূ হত্যা, পারিবারিক সহিংসতায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কন্যা সন্তানের ভ্রƒণ হত্যা ইত্যাদিতে ভারত বর্তমানে নারীর জন্য নিরাপত্তাহীন একটি দেশ। নির্বাচনের বিজয় মিছিল থেকে পরাজিত বিপক্ষ সমর্থকের কন্যা সন্তানকে তুলে নিতে না পেরে প্রশাসনের নাকের সামনেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ঘর কে ঘর। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ত তাহলে জাহিলিয়াতের যুগ চলছে। পাকিস্তানে পারিবারিক সম্মানের জন্য প্রকাশ্যে আদালতের সামনেই বাবা, ভাই, ভাইপোদের মারপিটে হত্যা করা হয় নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করা ফারজানা পারভিনকে। পারিবারিক সম্মানের জন্য বউ, মেয়েকে খুন করা, বিক্রি করা, ভোগে দেয়া পাকিস্তান, আফগানিস্তানে কোন অপরাধ নয়। মেয়েরা এই ঘৃণ্য কার্যক্রমের প্রতিবাদ করলেই সেটা অপরাধ । মালয়েশিয়ায় ঘটে গেছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম ধর্ষণ। বাংলাদেশে গ্রাম, শহরে ধর্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নানা নারী। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই অন্তত কয়েকটি ধর্ষণের খবর থাকছেই। এর প্রধানতম কারণ আমাদের ধর্মাশ্রিত পারিবারিক আবহাওয়া। শিক্ষিত সচেতন বলে যাদের ভাবা হয় তারাও মেয়ে সন্তান জন্মালে হাসতে হাসতে বলে ফেলে ‘লস প্রজেক্ট’। দরিদ্র আর অশিক্ষিতদের কথা ত ছেড়েই দিলাম।
পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে ধর্মের বয়ানে নারীকে কেবলই ভোগের সামগ্রী এবং সন্তান জন্মদানের পাত্র ছাড়া আর কিছুই ভাবা হয় না সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও একটি পরিবর্তন এসেছে। পরিবার যতই শঙ্কিত হোক না কেন সমাজ ভাঙ্গছে । আর এই ভাঙ্গার পেছনে শিক্ষা এবং অর্থনীতি জোরালো ভূমিকা রাখছে। মেয়েরা এখন বিয়ে নামক চাপিয়ে দেওয়া প্রথাটাকে গ্রাহ্যে না এনে নিজের মতো করে বাঁচতে চাইছে। বিয়ে করছে তবে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করে। ভবিষ্যতের যে কোন বিপদের মোকাবেলা করার সাহস রেখে। কিন্তু দেশে এই সংখ্যাটি খুব কম। কিন্তু তারপরও এটি একটি শুভ সূচনা যে কেবল ধর্মের অনুশাসনের কারণে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য মেয়েরা বিয়েতে আগ্রহী হচ্ছে না। বিয়ে তখনই করছে যখন বিয়ে করার মতো মন,সাহস এবং সঠিক সময় তারা মনে করছে ঠিক তখন। আজকাল শহরে একলা চাকরিজীবী মেয়েদের বাসা ভাড়াও দেয়া হচ্ছে। অযথা কৌতূহল দেখানোর প্রবণতা কমে এসেছে। কিন্তু কতসংখ্যক নারী পারছে এমন সুযোগ নিতে? তবে সুখের বিষয় ক্রমেই শৃঙ্খলের দেয়াল ভাঙ্গছে। সমাজে শুভ পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই পরিবর্তনকে ধর্ম দিয়ে আর রাখা বেঁধে সম্ভব হবে না।
No comments:
Post a Comment