বাংলা-ভারত যৌথ বাজার ॥ বাড়ছে ক্রেতা, কমছে বিক্রেতা
বালিয়ামারী বর্ডারহাট
আবু জাফর সাবু ॥ কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারীর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাজার বর্ডারহাট এখন কেমন চলছে তা সরেজমিনে দেখতেই সম্প্রতি গাইবান্ধা থেকে সাতজন সাংবাদিক ব্রহ্মপুত্র নৌপথে গাইবান্ধার বালাসী থেকে রাজিবপুর পরিদর্শন করেন। কিন্তু বর্ডারহাটে গিয়ে দেখা গেল যে উদ্দেশ্য নিয়ে দুই দেশের এ যৌথ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। নানা সমস্যা সঙ্কটে তাই উভয় দেশের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে এখন চরম হতাশা বিরাজ করছে।
রাজিবপুর জেলা পরিষদ থেকে রৌমারী-ঢাকা সড়কের বটতলার মোড়ের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। আর সেই বটতলা থেকে বালিয়ামারীর বর্ডারহাট দেড় কিলোমিটার। এক কিলোমিটার সড়ক পাকা হলেও বাকিটা কাঁচা মাটির রাস্তা। রাস্তা চিকন অপ্রশস্ত এবড়ো থেবড়ো। জিঞ্জিরাম নদীর পার পর্যন্ত চলে গেছে চিকন মাটির সড়কটি। বালিয়ামারী গ্রামের এ নদীর ঘাটে বাংলাদেশ বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির একটি চেক পোস্ট। ওই চেক পোস্টের ভেতর দিয়েই অনুমতিপত্র দেখিয়ে নদী পেরিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাজার বর্ডার হাটে। নদীতে একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকোর কোথাও কোথাও বাঁশের টুকরো ভেঙ্গে ফাঁক হয়ে গেছে। খুব সাবধানে এ সাঁকো দিয়ে নদী পার হয়ে যেতে হয় বাজারে। বাজারের সম্মুখে বড় উঁচু একটি সাইনবোর্ড, তাতে বড় করে ইংরেজীতে লেখা বর্ডারহাট।
হাটের এলাকাটা ঘন কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। দুই পাশে দুটি বড় বড় গেট। নিজ নিজ এলাকায় গেট পাহাড়ায় বিজিবি ও বিএসএফ’র জওয়ানরা। এল প্যাটার্নের ২টি লম্বা শেডসহ ৮টি টিনের খোলা শেড কিছুটা ফাঁকে ফাঁকে সব একই মাপের। বাংলাদেশ অংশের দিকে ৪টি শেড আকাশী রংয়ের পতাকা টাঙানো, ভারতীয় অংশের ৪টি শেডে উজ্জ্বল হলুদ পতাকা ওড়ানো হয়েছে। উভয় দেশের বিক্রেতারা খোলা শেডে বস্তায় তাদের পণ্য নিয়ে বসে আছে ক্রেতারা ঘুরে ফিরে তা কিনছে।
কেনাবেচা হচ্ছে কৃষিপণ্য বস্তায়, মাপামাপি গনাগনি কারবার নেই। ভারতীয়রা এনেছে শুধু পাহাড়ি এলাকার তেতুল, বেল, সুপারি আর কলা এবং মশলার মধ্যে ১ কেজির প্যাকেট করা জিরা। আর বাংলাদেশীরা শুধুই প্লাস্টিকের নানা ধরনের সামগ্রী বালিশ আর পুরাতন বিদেশী কাপড়। এই হলো বর্ডারহাটের পণ্য। ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যে বিচিত্র সব পোশাকের শুধুই পাহাড়ি গারো ২২ নারী-পুরুষ দেখা যায়। তাদের মধ্যে নারী বেশি। অনেকেই আবার বিক্রেতা এবং ক্রেতা দুটোই। বাংলাদেশের ক্রেতা অনেক বেশি, দেখে মনে হলো ওরা সব ব্যবসায়ীদের নিয়োজিত সব শ্রমজীবী মানুষ ভারতীয় বস্তাভর্তি মাল কিনেই মাথায় নিয়ে ছুটছে নদীর ঘাটে। বাজারে ভারতের কৃষিপণ্য কিছুটা সস্তাই মনে হলো। এক বস্তা কাঁচা সুপারি ২ হাজার টাকা, দেড়শ’ দুশো পাকা বেলের বস্তা ৪শ’ এবং পাকা তেতুল দেড় হাজার টাকা। পণ্যগুলো খেতে ভাল। আর এক কেজি জিরা দেড়শ’ টাকা। বর্ডারহাটে খাবারের কোন দোকান নেই তবে দু’পাশে দুটো করে টয়লেট রয়েছে।
বর্ডারহাটের ৫০ গজ দূরেই কাঁটাতারের বেড়া এবং সঙ্গে চলাচলের রাস্তা। মাঝে মাঝে উঁচু সার্চ লাইট ও ওয়াচ টাওয়ার। কতো সুরক্ষিত আর সাজানো সীমান্ত ভারতের। আর বাংলাদেশের সীমান্ত শুধু চিহ্নিত করা যায় মাঝে ত্রিকোনা সীমানা খুঁটি দেখে। কাছেই ২শ’ গজ দূরে মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়। সে দেশের কাকড়ি পাড়াগ্রাম সঙ্গেই লাগোয়া। আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধখ্যাত সেই মাইনকার চর থানাহাট ৪ কিলোমিটার উত্তরে। মুশকিল হলো বর্ডারহাটে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যায় না। এমনকি মোবাইলে ছবি তোলা বা অযথা ঘোরাফেরা করতে ও বাধা দেয় বিজিবি ও বিএসএফরা।
বর্ডারহাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় ২০১১ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশের রাজিবপুরের বালিয়ামারী এবং আর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার আমপাতি মহুকুমার মহেন্দ্রগঞ্জ থানার কালাইয়ের চর সীমান্তের ১০৭২ নম্বর মেইন পিলারের ১৯ নম্বর সাব পিলারের পাশে উভয় দেশের সীমান্তে দুই পাশের ৭৫ মিটার করে ৪ বিঘা জমিতে বর্ডারহাট বসে।
নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে দুই দিন সোমবার ও বুধবার শুধু হাট বসে এবং সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। হাট বসার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জমে ওঠেনি এর বেচাকেনা। বর্ডারহাটে বাংলাদেশের বিক্রেতারা জানান, হাটে ক্রমেই ভারতীয় ক্রেতা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে বিক্রেতা। বাংলাদেশের ক্রেতা বাড়ছে। কমে যাচ্ছে বিক্রেতা। অথচ নিয়মানুযায়ী প্রতিহাটে উভয় দেশের ২৫ জন করে ৫০ জন বিক্রেতা এবং ৩শ’ জন করে ৬শ’ জন ক্রেতা আসার কথা। বাংলাদেশ থেকে বর্ডারহাটে ক্রেতা বা দর্শনার্থী হিসেবে যেতে পূর্বেই রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া নির্ধারিত বিক্রেতাদেরও অনুমতি পাস সংগ্রহ করতে হয়।
ভারতীয় পণ্যের মধ্যে সুপারি, আদা, জাম্বুরা, কমলা, গোলমরিচ, জিরা, শিমলা আলু ও কসমেটিকস সামগ্রী বাংলাদেশের কচুমুখি, আলু, আখ, তৈরি বালিশ, গামছা, গার্মেন্টস পোশাক, সাবান, এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন ও কসমেটিকস সামগ্রী বেচাকেনার অনুমতি আছে। কিন্তু এখন ভারতের সীমানা কিছু কৃষিপণ্য ও মশলা আসে। এগুলো হলো সুপারি, বেল, আদা, পিঁয়াজ, তেঁতুল, কলা ও জিরা মশলার প্যাকেট। আর বাংলাদেশের নানা প্লাষ্টিক সামগ্রী, বালিশ ও পুরাতন কাপড় ছাড়া আর কোন পণ্য সেখানে আসে না।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর এ হাট নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক এবং ২০১১ সালের ৮ মে প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের প্রজ্ঞাপনে হাটের পণ্য তালিকায় বলা হয়েছিল স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত বা উৎপাদিত বলতে সীমান্ত হাটটি সীমান্ত সংলগ্ন যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলায় প্রস্তুতকৃত বা উৎপাদিত পণ্যকে বুঝাবে। এ কারণে সে সময় নানা সামগ্রী স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত নয়- এ অজুহাতে ভারতের কাস্টমস ও বিএসএফ তাদের দেশের ক্রেতাদের বাংলাদেশের পণ্য কিনতে দেয়নি। শুধু উভয় দেশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী হাটে বেচাকেনা করা যাবে বলে তারা ভারতের বিক্রেতাদের লেবু, আদা, কলা, তেঁতুল, বেল, লটকোন, সুপারি ও মশলা ছাড়া অন্য পণ্য হাটে বিক্রির জন্য আনতে দেয় না।
হাটে খুচরা বিক্রির কথা থাকলেও ভারতীয়রা বস্তাভর্তি করে পণ্য আনে এবং বস্তা হিসেবে মূল্য ধরে বিক্রি করে। ফলে খুচরা ক্রেতার শুধু জিরার প্যাকেট ছাড়া অণ্য কিছু কেনার উপায় নাই। এ ছাড়া হাটে যাওয়ার জন্য কাঁচা রাস্তা ও জিঞ্জিরাম নদীতে ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহন সমস্যা। পণ্য পরিবহন করত নৌকা দিয়ে। বাজার থেকে শ্রমিক দিয়ে নৌকার ঘাটে মাল এনে নৌকায় তুলে ওপাড়ে নিতে হয়। আবার সেখান থেকে শ্রমিক দিয়ে বস্তা নিয়ে একেক করে পার হতে হয় বাংলাদেশের বিজিবির চেক পোস্ট। সে সঙ্গে ব্যাংকের কোন কাউন্টার না থাকায় ভারতীয় টাকা তাৎক্ষণিকভাবে বদলে নেয়ার সমস্যায় ভুগছেন বাংলাদেশের বিক্রেতারা।
জানা গেছে, হাট সংলগ্ন বাংলাদেশে বালিয়ামারী, মন্ডলেরপাড়া, সান্দারপাড়া, জালছিরাপাড়া, কড়াইডাঙ্গিপাড়া, আলগারচর, লাঠিয়ালডাঙ্গা, ব্যাপারীপাড়া, জাউনিয়ারচর, মিয়াপাড়া ও বাউলপাড়া গ্রামের ক্রেতা-বিক্রেতা এবং ভারতের বলদানগিরি, ওয়াদাগিরি, জানগিরি, মারহালিপাড়া, কালাইচর, গান্ধীপাড়া, কুচপাড়া, হাজংপাড়া, বংশীপাড়া ও ঢাকঢাকিপাড়া গ্রামের ক্রেতা-বিক্রেতারা সাধারণত নিয়মিত কেনাবেচা করতে আসে। এ ছাড়া প্রতিদিন বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরাও আসে এ হাট দেখতে।
রাজিবপুর জেলা পরিষদ থেকে রৌমারী-ঢাকা সড়কের বটতলার মোড়ের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। আর সেই বটতলা থেকে বালিয়ামারীর বর্ডারহাট দেড় কিলোমিটার। এক কিলোমিটার সড়ক পাকা হলেও বাকিটা কাঁচা মাটির রাস্তা। রাস্তা চিকন অপ্রশস্ত এবড়ো থেবড়ো। জিঞ্জিরাম নদীর পার পর্যন্ত চলে গেছে চিকন মাটির সড়কটি। বালিয়ামারী গ্রামের এ নদীর ঘাটে বাংলাদেশ বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির একটি চেক পোস্ট। ওই চেক পোস্টের ভেতর দিয়েই অনুমতিপত্র দেখিয়ে নদী পেরিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাজার বর্ডার হাটে। নদীতে একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকোর কোথাও কোথাও বাঁশের টুকরো ভেঙ্গে ফাঁক হয়ে গেছে। খুব সাবধানে এ সাঁকো দিয়ে নদী পার হয়ে যেতে হয় বাজারে। বাজারের সম্মুখে বড় উঁচু একটি সাইনবোর্ড, তাতে বড় করে ইংরেজীতে লেখা বর্ডারহাট।
হাটের এলাকাটা ঘন কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। দুই পাশে দুটি বড় বড় গেট। নিজ নিজ এলাকায় গেট পাহাড়ায় বিজিবি ও বিএসএফ’র জওয়ানরা। এল প্যাটার্নের ২টি লম্বা শেডসহ ৮টি টিনের খোলা শেড কিছুটা ফাঁকে ফাঁকে সব একই মাপের। বাংলাদেশ অংশের দিকে ৪টি শেড আকাশী রংয়ের পতাকা টাঙানো, ভারতীয় অংশের ৪টি শেডে উজ্জ্বল হলুদ পতাকা ওড়ানো হয়েছে। উভয় দেশের বিক্রেতারা খোলা শেডে বস্তায় তাদের পণ্য নিয়ে বসে আছে ক্রেতারা ঘুরে ফিরে তা কিনছে।
কেনাবেচা হচ্ছে কৃষিপণ্য বস্তায়, মাপামাপি গনাগনি কারবার নেই। ভারতীয়রা এনেছে শুধু পাহাড়ি এলাকার তেতুল, বেল, সুপারি আর কলা এবং মশলার মধ্যে ১ কেজির প্যাকেট করা জিরা। আর বাংলাদেশীরা শুধুই প্লাস্টিকের নানা ধরনের সামগ্রী বালিশ আর পুরাতন বিদেশী কাপড়। এই হলো বর্ডারহাটের পণ্য। ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যে বিচিত্র সব পোশাকের শুধুই পাহাড়ি গারো ২২ নারী-পুরুষ দেখা যায়। তাদের মধ্যে নারী বেশি। অনেকেই আবার বিক্রেতা এবং ক্রেতা দুটোই। বাংলাদেশের ক্রেতা অনেক বেশি, দেখে মনে হলো ওরা সব ব্যবসায়ীদের নিয়োজিত সব শ্রমজীবী মানুষ ভারতীয় বস্তাভর্তি মাল কিনেই মাথায় নিয়ে ছুটছে নদীর ঘাটে। বাজারে ভারতের কৃষিপণ্য কিছুটা সস্তাই মনে হলো। এক বস্তা কাঁচা সুপারি ২ হাজার টাকা, দেড়শ’ দুশো পাকা বেলের বস্তা ৪শ’ এবং পাকা তেতুল দেড় হাজার টাকা। পণ্যগুলো খেতে ভাল। আর এক কেজি জিরা দেড়শ’ টাকা। বর্ডারহাটে খাবারের কোন দোকান নেই তবে দু’পাশে দুটো করে টয়লেট রয়েছে।
বর্ডারহাটের ৫০ গজ দূরেই কাঁটাতারের বেড়া এবং সঙ্গে চলাচলের রাস্তা। মাঝে মাঝে উঁচু সার্চ লাইট ও ওয়াচ টাওয়ার। কতো সুরক্ষিত আর সাজানো সীমান্ত ভারতের। আর বাংলাদেশের সীমান্ত শুধু চিহ্নিত করা যায় মাঝে ত্রিকোনা সীমানা খুঁটি দেখে। কাছেই ২শ’ গজ দূরে মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়। সে দেশের কাকড়ি পাড়াগ্রাম সঙ্গেই লাগোয়া। আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধখ্যাত সেই মাইনকার চর থানাহাট ৪ কিলোমিটার উত্তরে। মুশকিল হলো বর্ডারহাটে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যায় না। এমনকি মোবাইলে ছবি তোলা বা অযথা ঘোরাফেরা করতে ও বাধা দেয় বিজিবি ও বিএসএফরা।
বর্ডারহাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় ২০১১ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশের রাজিবপুরের বালিয়ামারী এবং আর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার আমপাতি মহুকুমার মহেন্দ্রগঞ্জ থানার কালাইয়ের চর সীমান্তের ১০৭২ নম্বর মেইন পিলারের ১৯ নম্বর সাব পিলারের পাশে উভয় দেশের সীমান্তে দুই পাশের ৭৫ মিটার করে ৪ বিঘা জমিতে বর্ডারহাট বসে।
নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে দুই দিন সোমবার ও বুধবার শুধু হাট বসে এবং সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। হাট বসার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জমে ওঠেনি এর বেচাকেনা। বর্ডারহাটে বাংলাদেশের বিক্রেতারা জানান, হাটে ক্রমেই ভারতীয় ক্রেতা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে বিক্রেতা। বাংলাদেশের ক্রেতা বাড়ছে। কমে যাচ্ছে বিক্রেতা। অথচ নিয়মানুযায়ী প্রতিহাটে উভয় দেশের ২৫ জন করে ৫০ জন বিক্রেতা এবং ৩শ’ জন করে ৬শ’ জন ক্রেতা আসার কথা। বাংলাদেশ থেকে বর্ডারহাটে ক্রেতা বা দর্শনার্থী হিসেবে যেতে পূর্বেই রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া নির্ধারিত বিক্রেতাদেরও অনুমতি পাস সংগ্রহ করতে হয়।
ভারতীয় পণ্যের মধ্যে সুপারি, আদা, জাম্বুরা, কমলা, গোলমরিচ, জিরা, শিমলা আলু ও কসমেটিকস সামগ্রী বাংলাদেশের কচুমুখি, আলু, আখ, তৈরি বালিশ, গামছা, গার্মেন্টস পোশাক, সাবান, এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন ও কসমেটিকস সামগ্রী বেচাকেনার অনুমতি আছে। কিন্তু এখন ভারতের সীমানা কিছু কৃষিপণ্য ও মশলা আসে। এগুলো হলো সুপারি, বেল, আদা, পিঁয়াজ, তেঁতুল, কলা ও জিরা মশলার প্যাকেট। আর বাংলাদেশের নানা প্লাষ্টিক সামগ্রী, বালিশ ও পুরাতন কাপড় ছাড়া আর কোন পণ্য সেখানে আসে না।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর এ হাট নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক এবং ২০১১ সালের ৮ মে প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের প্রজ্ঞাপনে হাটের পণ্য তালিকায় বলা হয়েছিল স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত বা উৎপাদিত বলতে সীমান্ত হাটটি সীমান্ত সংলগ্ন যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলায় প্রস্তুতকৃত বা উৎপাদিত পণ্যকে বুঝাবে। এ কারণে সে সময় নানা সামগ্রী স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত নয়- এ অজুহাতে ভারতের কাস্টমস ও বিএসএফ তাদের দেশের ক্রেতাদের বাংলাদেশের পণ্য কিনতে দেয়নি। শুধু উভয় দেশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী হাটে বেচাকেনা করা যাবে বলে তারা ভারতের বিক্রেতাদের লেবু, আদা, কলা, তেঁতুল, বেল, লটকোন, সুপারি ও মশলা ছাড়া অন্য পণ্য হাটে বিক্রির জন্য আনতে দেয় না।
হাটে খুচরা বিক্রির কথা থাকলেও ভারতীয়রা বস্তাভর্তি করে পণ্য আনে এবং বস্তা হিসেবে মূল্য ধরে বিক্রি করে। ফলে খুচরা ক্রেতার শুধু জিরার প্যাকেট ছাড়া অণ্য কিছু কেনার উপায় নাই। এ ছাড়া হাটে যাওয়ার জন্য কাঁচা রাস্তা ও জিঞ্জিরাম নদীতে ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহন সমস্যা। পণ্য পরিবহন করত নৌকা দিয়ে। বাজার থেকে শ্রমিক দিয়ে নৌকার ঘাটে মাল এনে নৌকায় তুলে ওপাড়ে নিতে হয়। আবার সেখান থেকে শ্রমিক দিয়ে বস্তা নিয়ে একেক করে পার হতে হয় বাংলাদেশের বিজিবির চেক পোস্ট। সে সঙ্গে ব্যাংকের কোন কাউন্টার না থাকায় ভারতীয় টাকা তাৎক্ষণিকভাবে বদলে নেয়ার সমস্যায় ভুগছেন বাংলাদেশের বিক্রেতারা।
জানা গেছে, হাট সংলগ্ন বাংলাদেশে বালিয়ামারী, মন্ডলেরপাড়া, সান্দারপাড়া, জালছিরাপাড়া, কড়াইডাঙ্গিপাড়া, আলগারচর, লাঠিয়ালডাঙ্গা, ব্যাপারীপাড়া, জাউনিয়ারচর, মিয়াপাড়া ও বাউলপাড়া গ্রামের ক্রেতা-বিক্রেতা এবং ভারতের বলদানগিরি, ওয়াদাগিরি, জানগিরি, মারহালিপাড়া, কালাইচর, গান্ধীপাড়া, কুচপাড়া, হাজংপাড়া, বংশীপাড়া ও ঢাকঢাকিপাড়া গ্রামের ক্রেতা-বিক্রেতারা সাধারণত নিয়মিত কেনাবেচা করতে আসে। এ ছাড়া প্রতিদিন বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরাও আসে এ হাট দেখতে।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2014-06-03&ni=174826
No comments:
Post a Comment