Monday, June 2, 2014

আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা ॥ জিয়া মরে বেঁচেছেন ০ বেঁচে থাকলে তাঁকেও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি করা হতো ০ ড. কামাল ১৯৭৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ০ মন্ত্রী, নেতা ও সংসদ সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা ॥ জিয়া মরে বেঁচেছেন
০ বেঁচে থাকলে তাঁকেও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি করা হতো
০ ড. কামাল ১৯৭৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন
০ মন্ত্রী, নেতা ও সংসদ সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জেনারেল জিয়াউর রহমান মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন। বেঁচে থাকলে সেও বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামি হতেন। ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যিঁনি আওয়ামী লীগে থাকতে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, তিনিই আজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ওকালতি করছেন।
সুশীলসমাজের কিছু প্রতিনিধির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কিছু চিন্তাবিদ আছেন যাঁরা দেশের কোন ভাল কাজই তাঁদের চোখে পড়ে না। এঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তখন তাদের অনেক গুরুত্ব ছিল। গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে জনগণের গুরুত্ব বাড়ে, তাঁদের গুরুত্ব কমে। তাই গণতান্ত্রিক শাসনামলে তাদের কোন কিছুই ভাল লাগে না। মানুষ ভাল থাকলে তাঁদের গায়ে জ্বালা করে। অসাংবিধানিক সরকার আসলেই তাঁরা স্যুটকোর্ট নিয়ে রেডি থাকেন। এ কারণেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তাদের পছন্দ নয়। শুধু সরকারের ছিদ্র খুঁজতে থাকে। কিন্তু যে যতই সমালোচনা বা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।
সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টাম-লী এবং পার্লামেন্টারি পার্টির যৌথ বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটাই প্রথম আওয়ামী লীগের সবপর্যায়ের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বৈঠক। প্রারম্ভিক বৈঠকের পর মন্ত্রী-নেতা ও এমপিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-নেতা-এমপিদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডে কেউ জড়িত হয়ে সে যত বড়ই নেতা হোন না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী কারোরই আওয়ামী লীগে স্থান হবে না। তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে সারাদেশে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা করার জন্যও দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেন।
যৌথসভা মূল মঞ্চে ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবুল মাল আবদুল মুহিত, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নূহ-উল আলম লেনিন, সতীশ চন্দ্র রায় ও চিফ হুইপ আসম ফিরোজ। আলোচিত দুই সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রায় সব সংসদ সদস্যই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমানও জড়িত উল্লেখ করে বলেন, মীরজাফর খুনী মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াউর রহমানকে প্রধান সেনাপতি নিয়োগ দেন। খুনী মোশতাকের প্রথম পছন্দ জিয়া। এর মাধ্যমেই প্রমাণের আর অপেক্ষা রাখে না বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, বিএনপির অনেকে বলে জিয়া নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা! অস্ত্রহাতে সায়েমকে হটিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর প্রতি রাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছেন এই জিয়াউর রহমান। জিয়া জনগণতন্ত্র নয়, কারফিউ গণতন্ত্র দেশবাসীকে উপহার দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় দখল করে ১৮-১৯টি ক্যুর মাধ্যমে হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করেছে। অবৈধভাবে শুধু ক্ষমতা দখলই নয়, অবৈধভাবে বিএনপিরও জন্ম দেয়। দেশের হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিরও জন্মদাতা এই জিয়া। যে দলেরই জন্ম অবৈধ, তারা সবকিছুতে অবৈধ দেখবেই।
বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত ষড়যন্ত্র, নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ-নাশকতা চালিয়েও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ৪০ ভাগেরও বেশি ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। অবৈধভাবে অস্ত্রহাতে ক্ষমতা দখল তাদের কাছে অবৈধ হয় না, ৪০ ভাগেরও বেশি ভোট পড়ার নির্বাচন তাঁদের কাছে অবৈধ হয়! আসলে এরা জ্ঞানপাপী।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কোন দল নির্বাচনে আসবে কী আসবে, এটা তাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা ৫ বছর জনগণের জন্য কাজ করেছি, আর আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বলেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলে নির্বাচন হবে কীভাবে? প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলে একমাত্র প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করাই তো নির্বাচন কমিশনের আইন।
তিনি বলেন, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিতে পারেনি। নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী দোসর নেই, এই দুঃখে-কষ্টে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া নির্বাচনে আসেননি। তিনি বলেন, নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোট শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ৫৩৮টি স্কুল-কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছে, হাজার হাজার গাছ নিধন করেছে, ফিশপ্লেট উপড়িয়ে রেলে নাশকতা চালিয়েছে, রাস্তা কেটেছে, এমনকি বোমা মেরে নিরীহ গরু পর্যন্ত হত্যা করেছে। দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ধ্বংস করতে যা করার তার সবই করেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণ বিশেষ করে ভোটার, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সেনাবাহিনী, প্রশাসনসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সকলে জনগণের পাশে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে বলেই নির্বাচন বানচালের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ব্যর্থ হয়েছে, জনগণ সফল হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
গণমাধ্যমের কিছু কিছু ভূমিকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে কোন বেসরকারী টিভি চ্যানেল ছিল না। আওয়ামী লীগ স্বাধীন গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে বলেই এতগুলো টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছে। বহু মানুষের চাকরির সংস্থান হয়েছে, সাংবাদিকদেরও কদর বেড়েছে। কিন্তু ওইসব টিভি চ্যানেলে টকশ’র নামে যে ইচ্ছা বলে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের পেছনে লেগেই আছে। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, যেন উপকারীকে বাঘ খাওয়া প্রবাদের মতোই হয়েছে আমাদের অবস্থা।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। এবার নির্মাণ কাজ শুরু করার আগেই শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। সরকার ও আমার পরিবারকে হেয় করতে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলেছে। আমরা সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। যারা পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার ও আমার পরিবারকে অসম্মান করার চেষ্টা করেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে, আমরা সফল হয়েছি। ইনশাল্লাহ পদ্মা সেতুও সম্পন্ন হবে।
সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমাদের গণমাধ্যম বিরুদ্ধে লিখতেই ব্যস্ত, ভাল কাজ সম্পর্কে লেখার সময় তাদের কোথায়? তাই নিজেদের সফলতা ও উন্নয়ন নিজেদেরই জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখতে হবে। তিনি দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতেই এখন থেকেই কাজ করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেন।
গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় কোন ব্যবসায়ীকে কোন কাজ করতে হলে শুধু হাওয়া ভবন নয়, মা ও পুত্রকে সন্তুষ্ট করার পর মায়ের কাছের একজনকে খুশী করেই ব্যবসা করতে হতো। তিন জায়গায় ভাগ না দিয়ে কেউ কোন ব্যবসা করতে পারত না। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য এবং দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন-করাই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীতি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কোন ব্যবসায়ীকে হাওয়া ভবনসহ কোথাও কোন কিছু দিয়ে কাজ করতে হয় না।
২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে চাই না। কারোর কাছে ভিক্ষা ও সাহায্য নিয়ে নয়, আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আমরা বীরের জাতি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তাই আমরা নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই করতে চাই। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তিময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবই।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-06-03&ni=174807

No comments:

Post a Comment