Monday, June 2, 2014

৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে নিগ্রহকারীকে ছাড়ের সালিশি, অভিযুক্ত তৃণমূল

just
এই সময়, বারাসত: বীরভূমের মহম্মদবাজারে ধর্ষণের ঘটনায় আদিবাসী সমাজের সালিশি সভা নিদান দিয়েছিল অভিযুক্তের থেকে হাঁড়িয়া নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার৷ সেই বিতর্কের মধ্যেই প্রকাশ্যে এল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার ঘটনা৷ এখানেও শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত এক যুবককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার ফতোয়া দিল শাসকদলের নেতাদের আয়োজনে বসা সালিশি সভা৷ সেই টাকা না-মেটানোয় অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর-মারধরেও নাম জড়াল সেই তৃণমূল নেতাদেরই৷ শ্লীলতাহানির ঘটনায় থানায় অভিযোগ না-হলেও, বাড়ি ভাঙচুরে আমডাঙার তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান রবীন পাত্র-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রবিবার রাতে থানায় অভিযোগ করেছেন সিরাজুল মণ্ডল নামে ওই অভিযুক্ত যুবক৷ সালিশিতে প্রচ্ছন্ন মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের স্থানীয় বিধায়ক রফিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও৷ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক৷

মহম্মদবাজারের সালিশির ঘটনায় অভিযুক্ত আদিবাসী সমাজের মাতব্বররা৷ আর কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে আমডাঙায় শ্লীলতাহানিতে রীতিমতো স্কুল মাঠে সালিশিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত উপপ্রধান রবীন পাত্র৷ সালিশির কথা স্বীকারও করেছেন তিনি৷ গত জানুয়ারিতেই লাভপুরে সালিশিতে বসে মাতব্বরদের ধষর্ণের ফতোয়া দেওয়ার ঘটনায় নড়ে উঠেছিল গোটা দেশ৷ চারদিকের সমালোচনার ঝড় সামলাতে সালিশি সভা বন্ধ করতে পঞ্চায়েত স্তর থেকে সর্বত্র সচেতন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনগুলিকে৷ কিন্ত্ত সেই নির্দেশ যে সঠিক জায়গায় পৌঁছয়নি, তার প্রমাণ মহম্মদবাজার থেকে আমডাঙা৷ পুলিশে ভরসা না রেখে যেখানে খোদ পঞ্চায়েতের উপপ্রধানই সালিশিতে বসে মোটা টাকা জরিমানা হেঁকেছেন৷

পেশায় কৃষক সিরাজুল ৩ মে বিকেলের দিকে কাজ সেরে তারাবেড়িয়ার তেঁতুলিয়ায় বাড়ি ফিরে রাস্তার কলে হাত-মুখ ধুতে যান৷ অভিযোগ, সে সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বছর আটেকের একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করেন তিনি৷ আশপাশের বাসিন্দাদের চিত্‍কার-চেঁচামেচিতে লোকজন জুটে যায়৷ চড়-চাপাটি পড়ে অভিযুক্তের উপর৷ ছুটে আসেন স্থানীয় তৃণমূলের মাতব্বররা ৷ অভিযুক্তর শাস্তির জন্য ওই দিন সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া প্রাথমিক স্কুলে বসে সালিশি সভা৷ সেখানে রবীন পাত্র-সহ অন্যান্য মাতব্বররা অভিযুক্তকে ২৮ মে-র মধ্যে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে নির্দেশ দেন৷ তখনকার মতো সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরদিনই আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমানের কাছে ছোটেন সিরাজুল৷ গোটা ঘটনা শোনার পর তাঁকে টাকা দিতে হবে না বলে বিধায়ক আশ্বস্ত করেন বলে দাবি ওই যুবকের৷ সিরাজুলের কথায়, '২৮ মে রাতেই টাকা না-পেয়ে ১০-১২ জনের একটি দল বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়৷ বিধায়ক সাহেব গোটা বিষয়টি জানেন বলে তাঁদের জানিয়ে দিই৷' পরদিনই তিনি ফের ছোটে বিধায়কের কাছে৷ এবারও তিনি আশ্বাস দেন বলে দাবি তাঁর৷

তার পরদিন ৩০ মে রাতে ৩০-৩৫ জনের একটি দল রবীন পাত্রের নেতৃত্বে ফের তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ সিরাজুলের৷ কোনও মতে তিনি পালিয়ে গেলেও দলটি পরিবারের লোকজনকে মারধর করে তাঁর ছোট বাচ্চার দুধের বাটিতে বিষাক্ত রাসায়নিক ঢেলে দেয় বলে অভিযোগ তাঁর৷ দীর্ঘক্ষণ ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যায়৷ রবিবার রাতে সিরাজুল আমডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন৷ শ্লীলতাহানি প্রসঙ্গে সিরাজুলের বক্তব্য, 'আমার মেয়ের মতো ওই মেয়েটি৷ কলতলায় আমি হঠাত্‍ পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় হাতের কাছে পেয়ে ওকে ধরে ফেলেছিলাম৷ অন্য অনেকেই তখন সেখানে ছিলেন৷ কিন্ত্ত হঠাত্‍ই রটিয়ে দেওয়া হয় শ্লীলতাহানির কথা৷ তাও চার-পাঁচ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলাম৷ কিন্ত্ত ওরা ৫০ হাজার চাইল৷ বিধায়ক আশ্বাস দেওয়ায় কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম৷ কিন্ত্ত ওরা টাকা না পেয়ে ভাঙচুর করল৷ এখন গ্রামে থাকতে দেবে কি না তা-ই বুঝতে পারছি না৷'

তৃণমূল নেতা রবীন পাত্র সালিশি সভায় উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, 'গ্রামের লোক সবাই মিলে ডাকায় সেখানে উপস্থিত ছিলাম৷ তবে ভাঙচুরে কোনও ভাবেই জড়িত নই৷' বিষয়টি যে সবটাই তিনি জানেন তা সরাসরি স্বীকার না করে বিধায়ক বলছেন, 'সারাদিনই তো কত লোক আসে সমস্যা নিয়ে৷ একটু একটু ঘটনাটা শুনেছি৷ এটা একটা সামাজিক সমস্যা৷ পাড়ার লোক বসে মিটিয়ে দিতে চেয়েছিল হয়ত৷ সিরাজুলকে ডেকে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করব৷' সালিশি সভায় তাঁর দলের নেতার উপস্থিত থাকার কথা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছেন কি না, বা পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগকারীর পরিবারকে যেতে বলেছেন কি না, এ প্রশ্ন শুনেই অবশ্য ফোন কেটে দিয়েছেন বিধায়ক৷

No comments:

Post a Comment