জেব্রারা নিরীহ নয়
প্রকাশ : ২৮ জুন, ২০১৪
জেব্রা আমাদের খুব পরিচিত একটা প্রাণী। এদের গায়ে ডোরাকাটা কালো দাগ আমাদের মোহিত করে। আফ্রিকার সবুজ অরণ্যে জেব্রার দলবেঁধে চরে বেড়ানো সে এক অপরূপ দৃশ্য। ঘাস খায় এবং অমন চমৎকার রূপধারী বলে এরা যে খুব শান্ত প্রাণী তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে এদের দলপতি দলের অন্যদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখে।
জেব্রা কি পোষ মানে? এই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজছে মানুষ। চেষ্টা চালাচ্ছে তাকে পোষ মানানোর। সানডিয়েগো চিড়িয়াখানায় এই প্রাণীটির মুখে ঘোড়ার মতো লাগাম পরিয়ে তার ট্রেনারকে সওয়ার হতে দেখা যেত কয়েক বছর আগেও। পূর্ব আফ্রিকায় একটি ফটোগ্রাফে দেখা গেছে ঠিক ওই একই কায়দায় এক ভদ্রলোক জেব্রার পিঠে উঠে একটি বেড়া ডিঙোচ্ছেন। এর পর দীর্ঘদিন মানুষ চেষ্টা করেছে তাকে পোষ মানাতে। কিন্তু জেব্রার মেজাজ-মার্জির আন্দাজ পাওয়া ভারি শক্ত। এরা কখন কী করে বসবে তার ঠিক নেই। তাছাড়া এরা মানুষকে একেবারেই বিশ্বাস করে না। যা কিনা পোষ মেনে নেয়ার অন্যতম শর্ত। জেব্রাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে এরা সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে। এদের হাতিয়ার হল দাঁত এবং খুর। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবর পড়লে বোঝা যাবে রেগে গেলে এরা কী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
চল্লিশ বছর বয়স্কা ভদ্রমহিলার নাম অ্যান মিডজা। নিবাস জিম্বাবুয়ের ম্যারনডেরা নামের শহরতলিতে। একটি অনাথ জেব্রা-শাবককে তিনি তার গোয়ালে আশ্রয় দিয়েছিলেন প্রায় দশ বছর। জেব্রাটির মধ্যে কখনও কোনো উত্তেজনা লক্ষ করেননি কেউ। হঠাৎ একদিন অ্যান লক্ষ করলেন গোয়ালের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গরুর পিছনের পায়ে ভয়ঙ্কর আক্রশে জেব্রাটি কামড় বসিয়েছে এবং গরুটি কাতর হয়ে চিৎকার করছে যন্ত্রণায়। পরে গরুটি প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়। অ্যান জেব্রাটিকে সামলাতে একটি থান ইট ছুঁড়ে মারেন এবং এতেই তার কাল হয়। জেব্রাটি তার মালিককে প্রচণ্ড বেগে তাড়া করে। ভদ্রমহিলা প্রাণভয়ে দৌঁড়তে থাকেন। প্রায় চল্লিশ মিটার দৌড়বার পর জেব্রাটি মহিলাটির নাগাল পায় এবং তার শরীর থেকে কয়েক পাউন্ড মাংস কামড়ে তুলে নেয়। ভদ্রমহিলা জেব্রাটির মুখ চেপে ধরে তার কামড় থেকে যখন বাঁচার চেষ্টা করছেন সেই সময় প্রাণীটি তার হাতের বুড়ো আঙ্গুল কামড়ে ছিঁড়ে নেয়। পরে অবশ্য ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে জেব্রাটিকে গুলি করে মেরে ফেলে। ভদ্রমহিলা হাসপাতালে শুয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেছিলেন। যা শুনে ও দেশের সরকারি মুখপাত্র বলেছিলেন জেব্রাকে পোষার চেষ্টাটাই বেআইনি। কেউ তা করতে পারেন না। এখানেই শেষ নয়। জেব্রারা অমনোযোগী টুরিস্টকে আক্রমণ করতে যেন মুখিয়ে আছে সবসময়। টেক্সাস সাফারি পার্কে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সাফারি রাইডে গিয়েছিলেন মেগান নামে এক মহিলা। যদিও জানোয়ারদের সামনে গাড়ির কাচ খোলা রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু উত্তেজনা বশে অনেকেই তা করে ফেলেন। বড়সড় একটি জেব্রাকে আরো ভালো করে দেখতে গিয়ে মেগান তার পাশের জানালার কাচ নামিয়ে দেন। তার হাতে ধরা ছিল চিপস। টুরিস্টদের কল্যাণে এইসব খাবারদাবারের স্বাদ অধিকাংশ প্রাণীর ভালোই জানা। জানালা খুলে তিনি পেছনে বসা তার সহযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই অবসরে জেব্রাটি প্রথমে তার হাতে ধরা চিপসটির নাগাল পেতে চেষ্টা করে এবং তা না পেয়ে ভদ্রমহিলার শরীরের খোলা অংশে কামড় বসায়। যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন তিনি। দেখা যায় কলার বোনের একটু নিচে অনেকখানি জায়গা লাল হয়ে উঠেছে। সেটা অবশ্যই ছিল জেব্রাটির ‘মৃদু দশংন’। ‘ইউ টিউবে’ এমন আক্রমণের বহু প্রমাণ পাওয়া যাবে। দেখা যাবে খাবারের লোভে একটি জেব্রা গাড়ির স্টিয়ারিং-এ অবধি কীভাবে কামড় বসিয়েছে।
জেব্রারা তাদের এমন সুন্দর কান্তি ধরে রাখতে প্রসাধন করে নাকি? অবশ্যই। শুকনো ধুলো ভরতি জায়গা পেলেই এরা তাদের প্রসাধন পর্ব সেরে নেয়। গোটা শরীর সেই ধুলোয় বহুক্ষণ ধরে ঘষাঘষি করে তারা। এতে নাকি ওদের গায়ে কোনও পরজীবী প্রবেশ করতে পারে না।
জঙ্গলের অন্য প্রাণীদের সঙ্গে মোটেও আলাপ জমাতে আগ্রহী না হলেও এদের সঙ্গে ওয়াইল্ড বিস্টদের প্রায়শই দল বেঁধে চরে বেড়াতে দেখা যায। হঠাৎ বিপদ ঘনিয়ে এলে দুটি প্রাণীই পরস্পরকে সাবধান করতে নানা রকম ধ্বনি করে।
এ রিয়াজ
No comments:
Post a Comment