Monday, June 2, 2014

নূর হোসেনের টাকা নিয়ে রানা হত্যাকাণ্ড ঘটান

নূর হোসেনের টাকা নিয়ে রানা হত্যাকাণ্ড ঘটান

আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা

ইত্তেফাক রিপোর্ট ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা এম এম রানা কাউন্সিলর নজরুলসহ পাঁচজনকে অপহরণ-খুন ও ইটভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনায় জড়িত। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রধান আসামি নূর হোসেনের মদদে রানা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। র্যাবে কর্মরত অবস্থায় রানার সঙ্গে নূর হোসেনের সখ্য গড়ে ওঠে। প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে নিহত নজরুলের শত্রুতা ছিল। নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রানা পাঁচ জনকে (অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকার ও গাড়ি চালককে হত্যায় আলাদা মামলা হয়েছে) অপহরণ ও খুন করেছেন। আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল উল্লেখ করেন, আগে রিমান্ডে থাকাকালে রানা যেসব তথ্য দিয়েছেন এবং সাক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আরো নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। এ কারণে তাকে আরো সাতদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত তৃতীয় দফায় রানার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

আদালতে রানার পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। তিনি নিজেই বক্তব্য রাখেন। আদালতে রানা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। নূর হোসেনের সঙ্গে তার সখ্য ছিল না। নূর হোসেনের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জে আর তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহরের ক্যাম্প কমান্ডার। সিদ্ধিরগঞ্জ তার ক্যাম্পের আওতাভুক্ত নয়। ফলে নূর হোসেনের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠার কোনো কারণ নেই। রানার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত র্যাব-১১-এর স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির সাবেক ক্যাম্প কমান্ডার নৌ-বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম এম রানাকে গতকাল সোমবার বিকালে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে কঠোর নিরাপত্তায় রানাকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। এর আগে দুই দফায় ১৫ দিন রিমান্ডে ছিলেন রানা। শুনানির সময়ে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে পুলিশের এসআই আশরাফুজ্জামান বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে এটার প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, নূর হোসেনের টাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে র্যাব। 

শুনানির সময়ে আদালতের এপিপি ফজলুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ অন্তত ২৫ জন অংশ নেন। সেভেন মার্ডারের ঘটনায় এম এম রানাকে গত ১৭ মে গভীর রাতে ঢাকার সেনানিবাস থেকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহূত হন। পরদিন ফতুল্লা মডেল থানায় কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন নজরুলের স্ত্রী। পরে ৩০ এপ্রিল তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকার অপহরণ ও হত্যা মামলায় তার জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে আলাদা একটি মামলা করেন।

নজরুলের শ্বশুরের বক্তব্য

শুনল র্যাবের তদন্ত দল

নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সাত খুনে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনকারী শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়েছে এই বাহিনীর গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটি গঠনের এক মাস পর গতকাল কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুরসহ ৬ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। অন্য পাঁচজন হলেন- নজরুলের ছোট ভাই আব্দুস সালাম, ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার বাসিন্দা সাহিদুল ইসলাম খোকা, তার মেয়ে আঁখি আক্তার এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়ে বেরিয়ে শহীদুল সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার যা বলার, তা কমিটিকে বলে এসেছি।' র্যাব কি একটা মানুষকে মারার জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে- তাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে জানান নজরুলের শ্বশুর। 'আমি তাদের বলেছি, যারা টাকা খায়, মানুষ মারে, তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন, আরো বেশি সময় লাগলেও অপেক্ষা করত।' বিভিন্ন সময় র্যাবের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়ার কথাও তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন শহীদুল। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের রেস্ট হাউজে সাক্ষ্যগ্রহণ করে র্যাবের তদন্ত কমিটি।

No comments:

Post a Comment