অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের স্ট্যাম্প দিচ্ছে দালাল
অনির্বাণ ঘোষ
দালাল চক্র নতুন নয় এসএসকেএমে৷ এত দিন মুখের কথায় প্রভাব খাটিয়ে দালালদের রমরমা চলত৷ আর এখন? রীতিমতো হাসপাতাল কর্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যভবনের আমলাদের জাল সই 'বিক্রি' হচ্ছে এমারজেন্সির সামনে৷ পরিষেবার বহর অনুযায়ী সইয়ের দাম কখনও ৫০০ তো কখনও ১০০০ টাকা৷
মাস পাঁচেকের অসুস্থ মেয়ে মুন্নিকে নিয়ে সোমবার বিকেলে এসএসকেএম এমারজেন্সিতে এসেছিলেন কালীঘাটের শ্যাম কুমার৷ ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ভর্তি করতে হবে৷ এমারজেন্সির ঠিক বাইরে আচমকা উদয় হয়ে শ্যামবাবুকে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, 'মেয়েকে ভর্তি করলে অনেক খরচ হবে৷ ৫০০ টাকা দিন, সব ফ্রি করে দিচ্ছি৷' শ্যামবাবু আর দু' বার ভাবেননি৷ ৫০০ টাকা তুলে দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তির হাতে৷ তিনি মুন্নির প্রেসক্রিপশনে সই করে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের স্ট্যাম্প মেরে দেওয়ায়, সঙ্গে সঙ্গেই ফ্রি অ্যাডমিশন হয়ে গিয়েছিল শিশুটির৷
মঙ্গলবার শ্যামবাবুকে ওয়ার্ড থেকে বলা হয়, ভর্তির সময়ে ২৪ ঘণ্টার চিকিত্সা 'ফ্রি' করানো হয়েছিল৷ বিনামূল্যে চিকিত্সার মেয়াদ বাড়াতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কাছে যান৷ শ্যামবাবু অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কাছে যেতে, ওই কর্তার চোখ কপালে! তিনি দেখেন, প্রেসক্রিপশনে তাঁরই জাল সই৷ স্ট্যাম্পও জাল৷ ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বিস্মিত, পাঁচ মাসের শিশুর চিকিত্সা এমনিতেই বিনামূলে হওয়ার কথা৷ অথচ তার জন্যই শ্যামবাবু ৫০০ টাকা দিয়ে বসে আছেন দালালকে!
ক্রেতারা অবশ্য জানেন না, সই জাল৷ কিন্ত্ত এমন সই, স্ট্যাম্প নকল করে রোগী ভর্তি কিংবা পরিষেবা ফ্রি করার মতো জালিয়াতির নজির রোজকার হয়ে দাঁড়িয়েছে এসএসকেএমে৷ চিকিত্সা থেকে শুরু করে নানা পরিষেবা সাধারণত যাঁদের স্বাক্ষরে 'ফ্রি' হয়, হাসপাতালের সেই পাঁচ অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিজের ভুয়ো সই চাক্ষুষ করার৷ নয়া চক্রের রমরমার কথা হাসপাতালের তরফে পুলিশে জানানো হয়েছে বটে৷ কিন্ত্ত অপরাধী এখনও অধরা৷ ফলে দাঁড়ি পড়েনি লাগাতার সই-জালিয়াতির ঘটনাতেও৷ এসএসকেএমের ডেপুটি সুপার সর্বেশ্বর মণ্ডল বলেন, 'ভবানীপুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে একাধিকবার৷ কিন্ত্ত লাভ হয়নি৷' থানা সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে৷ কিন্ত্ত কবে এর সুরাহা হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না পুলিশও৷ ফলে, না-জেনে এমন কত 'শ্যামবাবু' যে এসএসকেএমে দালাল চক্রে শিকার, তার কোনও হিসেব নেই৷ যেমন, সাতগাছিয়ার মনোহর মল্লিক কিংবা হাওড়ার রিমা দাস৷ মনোহরবাবুর মেরুদণ্ডে এবং রিমাদেবীর মস্তিষ্কে এমআরআই হওয়ার কথা ছিল এই হাসপাতালে৷ কিন্ত্ত আড়াই-তিন হাজার টাকা খরচ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই ওঁদের কারও৷ চিন্তিত মুখ দেখে 'শিকার' চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়নি দালালের৷ দু' জনেই এক হাজার টাকা করে দিয়ে বসেন দালালকে৷ বিনিময়ে হাতে আসে স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি চিঠি৷ অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি৷ ওই চিঠি দেখিয়ে এমআরআই করাতে গেলে, সন্দেহ হয় এমআরআই সেন্টারের কর্মীর৷ তিনি দুই রোগীকেই সুপার অফিসে পাঠালে দেখা যায়, দু'টি চিঠিই জাল৷ তাতে রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের এক ওএসডি তথা এক্স-অফিসিও সেক্রেটারির জাল সই৷
পিজি-র এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কথায়, 'এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো দামি পরিষেবা ফ্রি করার এক্তিয়ার বিশেষ সচিব পর্যায়ের কোনও আধিকারিকের৷ তাই এমন ক্ষেত্রে সাধারণত পেশেন্ট পার্টির দরখাস্তের ভিত্তিতে আমরাই স্বাস্থ্যভবনের স্টেট ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্ট ফান্ড থেকে থেকে চিঠি করিয়ে আনি৷ পেশেন্ট পার্টি সেই চিঠি দেখালে আর টাকা জমা দিতে হয় না কাউন্টারে৷ কিন্ত্ত আজকাল কত পরিষেবা যে আমাদের অজান্তে জাল সই-স্ট্যাম্প দিয়ে ফ্রি হয়ে যাচ্ছে, কোনও ইয়ত্তা নেই৷' তিনি জানান, যে ভাবে স্বাক্ষর কিংবা সিলমোহর নকল করা হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে তা ধরা কঠিন৷
তা হলে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ বুঝলেন কী করে? এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলেন, মনোহরবাবু আর রিমাদেবীর নাম ছিল দুটো আলাদা চিঠিতে৷ কিন্ত্ত পৃথক তারিখের সেই চিঠি দু'টির মেমো নম্বর ছিল অভিন্ন৷ এমনটা হওয়ার কথাই নয়৷ তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, স্বাস্থ্যভবনের চিঠিটি আসলে জাল৷ এক এসএসকেএম কর্তা বলেন, 'দালাল চক্রের সাহস ক্রমে বেড়েই চলেছে৷ শুধু এখন তারা স্বাস্থ্যভবনের অন্দরেও পৌঁছে গিয়েছে৷' তিনি জানাচ্ছেন, আপাতত তাই স্বাস্থ্যভবনের কাগজের চিঠি বা হার্ড কপির বদলে ই-মেলের মতো সফট কপির চিঠি দেখেই এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো পরিষেবা 'ফ্রি' করছেন তাঁরা৷ এতে কিছুটা ঠেকানো গিয়েছে জাল চক্রের রমরমা৷ কিন্ত্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারদের জাল সইয়ে এখনও রাশ টানা যায়নি একটুও৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/false-stamp-sskm-hospital-health-department/articleshow/36649177.cms
অনির্বাণ ঘোষ
দালাল চক্র নতুন নয় এসএসকেএমে৷ এত দিন মুখের কথায় প্রভাব খাটিয়ে দালালদের রমরমা চলত৷ আর এখন? রীতিমতো হাসপাতাল কর্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যভবনের আমলাদের জাল সই 'বিক্রি' হচ্ছে এমারজেন্সির সামনে৷ পরিষেবার বহর অনুযায়ী সইয়ের দাম কখনও ৫০০ তো কখনও ১০০০ টাকা৷
মাস পাঁচেকের অসুস্থ মেয়ে মুন্নিকে নিয়ে সোমবার বিকেলে এসএসকেএম এমারজেন্সিতে এসেছিলেন কালীঘাটের শ্যাম কুমার৷ ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ভর্তি করতে হবে৷ এমারজেন্সির ঠিক বাইরে আচমকা উদয় হয়ে শ্যামবাবুকে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, 'মেয়েকে ভর্তি করলে অনেক খরচ হবে৷ ৫০০ টাকা দিন, সব ফ্রি করে দিচ্ছি৷' শ্যামবাবু আর দু' বার ভাবেননি৷ ৫০০ টাকা তুলে দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তির হাতে৷ তিনি মুন্নির প্রেসক্রিপশনে সই করে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের স্ট্যাম্প মেরে দেওয়ায়, সঙ্গে সঙ্গেই ফ্রি অ্যাডমিশন হয়ে গিয়েছিল শিশুটির৷
মঙ্গলবার শ্যামবাবুকে ওয়ার্ড থেকে বলা হয়, ভর্তির সময়ে ২৪ ঘণ্টার চিকিত্সা 'ফ্রি' করানো হয়েছিল৷ বিনামূল্যে চিকিত্সার মেয়াদ বাড়াতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কাছে যান৷ শ্যামবাবু অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কাছে যেতে, ওই কর্তার চোখ কপালে! তিনি দেখেন, প্রেসক্রিপশনে তাঁরই জাল সই৷ স্ট্যাম্পও জাল৷ ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বিস্মিত, পাঁচ মাসের শিশুর চিকিত্সা এমনিতেই বিনামূলে হওয়ার কথা৷ অথচ তার জন্যই শ্যামবাবু ৫০০ টাকা দিয়ে বসে আছেন দালালকে!
ক্রেতারা অবশ্য জানেন না, সই জাল৷ কিন্ত্ত এমন সই, স্ট্যাম্প নকল করে রোগী ভর্তি কিংবা পরিষেবা ফ্রি করার মতো জালিয়াতির নজির রোজকার হয়ে দাঁড়িয়েছে এসএসকেএমে৷ চিকিত্সা থেকে শুরু করে নানা পরিষেবা সাধারণত যাঁদের স্বাক্ষরে 'ফ্রি' হয়, হাসপাতালের সেই পাঁচ অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিজের ভুয়ো সই চাক্ষুষ করার৷ নয়া চক্রের রমরমার কথা হাসপাতালের তরফে পুলিশে জানানো হয়েছে বটে৷ কিন্ত্ত অপরাধী এখনও অধরা৷ ফলে দাঁড়ি পড়েনি লাগাতার সই-জালিয়াতির ঘটনাতেও৷ এসএসকেএমের ডেপুটি সুপার সর্বেশ্বর মণ্ডল বলেন, 'ভবানীপুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে একাধিকবার৷ কিন্ত্ত লাভ হয়নি৷' থানা সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে৷ কিন্ত্ত কবে এর সুরাহা হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না পুলিশও৷ ফলে, না-জেনে এমন কত 'শ্যামবাবু' যে এসএসকেএমে দালাল চক্রে শিকার, তার কোনও হিসেব নেই৷ যেমন, সাতগাছিয়ার মনোহর মল্লিক কিংবা হাওড়ার রিমা দাস৷ মনোহরবাবুর মেরুদণ্ডে এবং রিমাদেবীর মস্তিষ্কে এমআরআই হওয়ার কথা ছিল এই হাসপাতালে৷ কিন্ত্ত আড়াই-তিন হাজার টাকা খরচ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই ওঁদের কারও৷ চিন্তিত মুখ দেখে 'শিকার' চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়নি দালালের৷ দু' জনেই এক হাজার টাকা করে দিয়ে বসেন দালালকে৷ বিনিময়ে হাতে আসে স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি চিঠি৷ অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি৷ ওই চিঠি দেখিয়ে এমআরআই করাতে গেলে, সন্দেহ হয় এমআরআই সেন্টারের কর্মীর৷ তিনি দুই রোগীকেই সুপার অফিসে পাঠালে দেখা যায়, দু'টি চিঠিই জাল৷ তাতে রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের এক ওএসডি তথা এক্স-অফিসিও সেক্রেটারির জাল সই৷
পিজি-র এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কথায়, 'এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো দামি পরিষেবা ফ্রি করার এক্তিয়ার বিশেষ সচিব পর্যায়ের কোনও আধিকারিকের৷ তাই এমন ক্ষেত্রে সাধারণত পেশেন্ট পার্টির দরখাস্তের ভিত্তিতে আমরাই স্বাস্থ্যভবনের স্টেট ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্ট ফান্ড থেকে থেকে চিঠি করিয়ে আনি৷ পেশেন্ট পার্টি সেই চিঠি দেখালে আর টাকা জমা দিতে হয় না কাউন্টারে৷ কিন্ত্ত আজকাল কত পরিষেবা যে আমাদের অজান্তে জাল সই-স্ট্যাম্প দিয়ে ফ্রি হয়ে যাচ্ছে, কোনও ইয়ত্তা নেই৷' তিনি জানান, যে ভাবে স্বাক্ষর কিংবা সিলমোহর নকল করা হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে তা ধরা কঠিন৷
তা হলে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ বুঝলেন কী করে? এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলেন, মনোহরবাবু আর রিমাদেবীর নাম ছিল দুটো আলাদা চিঠিতে৷ কিন্ত্ত পৃথক তারিখের সেই চিঠি দু'টির মেমো নম্বর ছিল অভিন্ন৷ এমনটা হওয়ার কথাই নয়৷ তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, স্বাস্থ্যভবনের চিঠিটি আসলে জাল৷ এক এসএসকেএম কর্তা বলেন, 'দালাল চক্রের সাহস ক্রমে বেড়েই চলেছে৷ শুধু এখন তারা স্বাস্থ্যভবনের অন্দরেও পৌঁছে গিয়েছে৷' তিনি জানাচ্ছেন, আপাতত তাই স্বাস্থ্যভবনের কাগজের চিঠি বা হার্ড কপির বদলে ই-মেলের মতো সফট কপির চিঠি দেখেই এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো পরিষেবা 'ফ্রি' করছেন তাঁরা৷ এতে কিছুটা ঠেকানো গিয়েছে জাল চক্রের রমরমা৷ কিন্ত্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারদের জাল সইয়ে এখনও রাশ টানা যায়নি একটুও৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/false-stamp-sskm-hospital-health-department/articleshow/36649177.cms
No comments:
Post a Comment