Thursday, June 26, 2014

দীর্ঘদিনেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ॥ ছিটমহলবাসী হতাশ

দীর্ঘদিনেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ॥ ছিটমহলবাসী হতাশ
এ রহমান মুকুল, পঞ্চগড় ॥ দীর্ঘদিনেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত প্রটোকল চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ ছিটমহলে বসবাসকারী নাগরিকরা। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে দুই দেশের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হবে এমনটাই আশায় বুক বাধলেও ৬৬ বছরেও এর কোন বাস্তবায়ন হয়নি। দুই দেশের ছিটমহলে বসবাসকারী মানুষ কোন দেশের নাগরিক সেই পরিচয়টুকু তাদের নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের পর বাংলাদেশ ও ভারতে কত সরকার এসেছে আবার চলেও গেছে। কিন্তু কোন সরকারই নাগরিকত্বসহ নানা বঞ্চনার শিকার ছিটবাসীর দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১১ সালে ’৭৪ সালে সম্পাদিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে প্রোটকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের ছিটমহলের জনগণনা কার্যক্রমও সম্পাদন হয়। এর পরই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত ছিটমহলের নাগরিকরা নাগরিকত্বের দাবিতে লাগাতার অভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি পাস করে নেয়া হলেও ভারতের লোকসভায় বিষয়টি উত্থাপনেরই সুযোগ পায়নি সদ্য বিদায় হওয়া কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার।
শুধু দুই দেশের ছিটমহল বিনিময়ই নয়, তিস্তার পানি প্রবাহসহ স্থল সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আন্তরিক হলেও সদ্য বিদায়ী ভারতের ইউপিএ সরকার লোকসভায় এ সব চুক্তি পাস করাতে না পারায় এর কোনটিই আলোর মুখ দেখতে পায়নি। ভারতের বর্তমান নতুন কেন্দ্র সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করতে চায়। কিন্তু এ সব অমীমাংসিত ইস্যু বাস্তবায়নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের নতুন কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জীর সাপে-নেউলে সম্পর্ক। তাই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের তিনদিনের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুর কতটুকু সফল বাস্তবায়ন ঘটবে তা নিয়ে ভুক্তভোগীরা বেশ সন্দিহান। তবে, সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠসহ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তেঁতুলিয়া করিডর, তিস্তার পানিপ্রবাহ, স্থল সীমান্ত চুক্তিসহ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে ট্যানেলের ফাঁক দিয়ে আলোকরশ্মি দেখা যাচ্ছে মর্মে উভয় দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে আসন্ন লোকসভা অধিবেশনেই ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন ঘটাবেন।
বাংলাদেশের পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে ১শ’ ১১টি ভারতীয় এবং ভারতের কোচবিহার জেলার অভ্যন্তরে ৫১টি বাংলাদেশী ছিটমহল রয়েছে। এ সব ছিটমহলে লোকসংখ্যা লক্ষাধিক। এই দুই দেশের ছিটমহল নাগরিকরা স্ব স্ব দেশের নাগরিকত্ব চায়। বংশ পরম্পরায় ছিটমহলে বসবাসকারী ছিটবাসী যে অবস্থানে রয়েছে সেই অবস্থান তারা বদলাতে চায় না। তারা চায় ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে দুই দেশের ছিটমহল বিনিময়। সদ্য বিদায় হওয়া ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত প্রটোকল চুক্তির বাস্তবায়ন।
এ নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্বের অভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। ভারতের এবারকার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও কোচবিহার জেলার দিনহাটায় এক বিশাল জনসভায় ছিটমহল সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। কেন্দ্রে এখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পাওয়া বিজেপি সরকার ক্ষমতায়। বিগত লোকসভা অধিবেশনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিরোধিতা করায় সাবেক কংগ্রেস সরকার ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বিলটি সংসদে উত্থাপনের পরও পাস করতে না পারলেও বর্তমান বিজেপি সরকারের পক্ষে বিলটি পাস করা কোন কঠিন নয় মর্মে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও মুখপাত্র দীপ্তিমান সেনগুপ্ত মনে করছেন। তার মতে, দিদি যাই বলুক মোদি বাবু একটু সদয় হলেই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কারণ, বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তি বাস্তবায়নে বেশ আন্তরিক রয়েছে।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment