জিয়াই আমার বাবাকে হত্যা করেছে
মাহজাবিন খালেদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফের কন্যা মেহজাবিন খালেদ এমপি সম্প্রতি বাজেট অধিবশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাঁর পিতা হত্যা সম্পর্কে সংসদে কিছু সত্য কথা তুলে ধরেছেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেই হত্যাকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন যা আজ পরিষ্কার। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীতে পাকিস্তান-প্রত্যাগত সেনা কর্মকর্তাদের বিশেষ সবিধা দিতে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে দেয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তে? জিয়াউর রহমান বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন যার ফলে আশির দশকে সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এঁদের মধ্যে কাউকে কর্মচ্যুত করা হয়, কাউকে কাউকে বিনা কারণে কোট মার্শালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়, কাউকে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এক কথায় জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ছিল মুক্তিযোদ্ধা-সেনা কর্মকর্তাদের জন্য দুঃসময়।
মেহজাবিন খালেদ তাঁর বক্তব্যে প্রসঙ্গক্রমে সেসব কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর বক্তব্যে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট, জেলহত্যা এবং তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে জিয়াউর রহমান নানাভাবে কলুষিত করে রাজনীতি থেকে স্বচ্ছতা, সততাকে নির্বাসনে নিয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতিতে একই ভূমিকা রেখে চলেছেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি যৌবনে পা দিয়েই দৃঢ়সংকল্প করেছিলেন যে সোনার বাংলা গড়তে হলে অবশ্যই আমাদের এ ভূখ-কে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই ১৯৭১ সালে আমার বাবা সে সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর খালেদ মোশারফ অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের সময়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু কুলাঙ্গার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। সেই রাতে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। এখন এটা নিশ্চিত যে, এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সে সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধীচক্র, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও কিছু অতিবিপ্লবীচক্র মিলে ’৭৫-এর ৭ নবেম্বর রাতের গভীরে ঢাকা সেনানিবাসে সেনা আইন ভঙ্গ করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য লিফলেট বিতরণ করে, যা সেনানিবাসে এক চরম অরাজক অবস্থা তৈরি করে। এই জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা এবং মেজর হায়দারকে। কী তাঁদের অপরাধ ছিল? খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের সেনাবহিনী ৩ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান হোতা খোন্দকার মোশতাক আহমদের অবৈধ শাসনের অবসান ঘটায়। সে সময়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অকুতোভয় একদল অফিসার ও জওয়ানকে। তিনি খুনী ফারুক-রশিদ-ডালিম চক্রকে বঙ্গভবনের দখল থেকে উচ্ছেদ করেন। তিনিই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চেন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনেন। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার পুরস্কার হিসেবেই খুনী মোশতাক সেনাবাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমনাকে। এই পদ পেয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ নস্যাত করতে তিনি একের পর এক ঘৃণ্য পদক্ষেপ নিতে থাকেন। ২ নবেম্বর মধ্য রাতে খুনী মোশতাকের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে যে কুলাঙ্গার দল তারাও আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে জিয়াউর রহমানের। ৭ নবেম্বরের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুরোপুরি কুক্ষিগত করে জিয়াউর রহমান জেল হত্যাকাণ্ডের বিচার ধামাচাপা দেন ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানাভাবে পুরস্কৃত করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এম কামরুজ্জামানের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
খালেদ মোশাররফ ১৯৭১ সালে ত্রিপুরায় মেলাঘরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় ট্রেনিং সেন্টার ও অপারেশন হেডকোয়ার্টার গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হানাদার বাহিনীকে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তিতে থাকতে না দিতে স্থির সংকল্প করেছিলেন। তাঁর নির্দেশে ক্রাক প্লাটুনের বীরযোদ্ধারা একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে প্রতিনিয়ত নাস্তানাবুদ করতে থাকেন। ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছিল মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বর সেক্টরের অসম সাহসী কর্মকা-। এই অপরাধেই কি তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সময়জুড়ে প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকা সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ৭ নবেম্বর হত্যা করা হয়?
১৯৭৫ সালের ৪ নবেম্বর সকালে আমার দাদি মহীয়সী নারী জামিলা আক্তারের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার এক বিশাল মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। পরের দিন সব সংবাদপত্রে খবর ছিল- ‘খালেদ মোশাররফের মায়ের নেতৃত্বে মিছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।’ এই অপরাধেই কি জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফকে হত্যা করেন? জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকা-েই মদদ দেননি, ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতার নাম উচ্চারণ পর্যন্ত কঠোর দ-নীয় অপরাধ হিসেবে রেওয়াজে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতেই খালেদ মোশাররফ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার শপথ গ্রহণ করেন এবং সেইভাবেই তাঁর অধীনস্থ সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করতে থাকেন। ২ এপ্রিল খবর আসে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর অধীনস্থ বাহিনী একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তখন খালেদ মোশাররফই জিয়াউর রহমানকে উদ্ধারের জন্য চতুর্থ ও দ্বিতীয় বেঙ্গলের দুটি কোম্পানিকে রামগড়ে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা অষ্টম বেঙ্গলের সঙ্গে যোগদান করার কারণেই জিয়াউর রহমান নিরাপদে ভারতে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। এ অপরাধেই জিয়াউর রহমান ৭ নবেম্বর খালেদ মোশাররফকে হত্যা করেন?
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর মায়ের সঙ্গে আমরা দুই বোন ছিলাম অবরুদ্ধ ঢাকাতে। আমাদের ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য খালেদ মোশাররফকে অনেকেই অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রতিটি অনুরোধেই তিনি উত্তর দেনÑ আমি যদি আমার পরিবারেরর প্রতি মনোযোগ দেই তাহলে আমার মুক্তিযোদ্ধাদের কী হবে। এক সময়ে আমার মা আমাদের ঢাকাতে রেখেই হেঁটে ত্রিপুরায় পৌঁছান। তিনি নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবেননি। প্রিয়তম স্বামী রণাঙ্গনে বীরের মতো লড়ছেন, সেটা ছিল তাঁর পরম গর্ব। কিন্তু তাঁর একটিই ভয় ছিলÑ শত্রুর হাতে ধরা পড়লে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি হতে পারে। তাঁকে জিম্মি করে কিংবা হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। এ জন্যই আমার মা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যান। আমাদের দুই বোনের জীবনে এরপর নেমে আসে আরও দুঃসময়। বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশারফের দুই মেয়ে ঢাকাতেই রয়েছেন, এ খবর জানতে পেরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের দালালরা হন্যে হয়ে আমাদের খুঁজে পায় এবং আটক করে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আমাদের রাখা হয় আজিমপুর অগ্রণী স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা মিসেস মনসুরের তত্ত্বাবধানে। দুই নম্বর সেক্টরের দুঃসাহসী ক্রাক প্লাটুনের সদস্যরা এ খবর জানতে পেরে আমাদের সে বাসা থেকে উদ্ধার করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তারা আমাকে নিতে পারলেও ছোট বোনকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চিত হয়ে আরও বহুদিন কাটে আমার ছোট বোনের জীবন। এই তো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সাহস ও গৌরবের জীবন। যাঁরা সে সময়ে আমার মা ও আমাকে শত্রুবাহিনীর কবলিত ঢাকা থেকে উদ্ধার করে আমার বাবার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই অথচ আমরা জানি যে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করে শত্রু বাহিনীর হেফাজতে পরম নিশ্চিন্তে জীবন কাটিয়েছিলেন। মুজিবনগর সরকারের সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়কের স্ত্রীকে নিয়ে পাকিস্তানী সেনা কমান্ড কেন বিব্রত হয়নি, সেটাই প্রশ্ন। তাঁকে ভারতে নেয়ার জন্য বিশেষ টিম পাঠানো হলেও তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁর জন্য আরাম-আয়েশের যে সুব্যস্থা করেছিল সেটা ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। যেসব মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ভারতে নিয়ে যেতে বার্তা পাঠান তাঁদের তিনি পাকিবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন আর যেসব পাকিস্তানী বর্বর সেনা অফিসার তাঁর জন্য এ সুব্যবস্থা করেছিলেন, তাঁদের কথা তিনি কখনও ভোলেননি। তাঁদের কারও কারও মৃত্যুতে তিনি শোকের সাগরে ভেসে গেছেন। প্রোটোকল ভেঙ্গে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে শোকবাণী পাঠিয়েছেন। ধিক, এ মনোভাবের। আমরা এটাও জানি যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রাখার অপরাধে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান তাঁর স্ত্রীকে ঘরে তুলতে চাননি। জাতির জনকই তখন তাঁর মহানুভবতায় সব ভুলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে জিয়াউর রহমানকে রাজি করান। বঙ্গবন্ধুকে কি এই অপরাধেই নিষ্ঠুরভাবে স্ত্রী-পুত্র-পুত্রবধূসহ হত্যা করা হয়েছিল? সংসদে ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কথা বলা হয়ত ঠিক নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়ক খালেদ মোশাররফ বীরোত্তমের স্ত্রী হিসেবে আমার মাকে সরকার থেকে যে বাড়ি প্রদান করা হয়েছিল, সেখান থেকে তাঁকে উচ্ছেদের জন্য বেগম খালেদা তাঁর শাসনামলে একের পর এক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর স্বামীর মতো তিনিও আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন। মেলাঘরে মুক্তিবাহিনীর যেসব সদস্য ছিলেন, যাঁরা চরণে মরণ শঙ্কাকে বার বার দোলে যান তাঁরা সবাই তাঁদের কমান্ডার খালেদ মোশররফকে আজও স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বীর সেনায়কসহ তাঁকে হত্যার পর প্রায় চার দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। জাতির জনক হত্যার প্রতিবাদে যিনি অসীম সাহসে একাত্তরের মতোই গর্জে উঠেছিলেন, যিনি খুনীদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন তাঁকে যারা পরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে, তাদের কি বিচার হবে না? আমি আজ এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে চাই যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রুখে দাঁড়িয়েছেন যিনি, সেই খালেদ মোশররফসহ ’৭৫-পরবর্তী সকল মুক্তিযোদ্ধার হত্যার বিচার চাই। শুধু একজন সন্তান হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় এ হত্যার বিচার চাই। তিনি আমার বাবা, এর চেয়ে গর্বের আমার কী আছে? আমি এমন এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যাঁকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষদের একজন হিসেবে গণ্য করত। তিনি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে আহত হয়েছেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের স্বপ্নপূরণের পথে একের পর এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চিরকালের পরনির্ভর বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে। বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে চাই না।’ আজ আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্র্মাণ করতে পারছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধাবিত হচ্ছে।
লেখক : সংসদ সদস্য
মেহজাবিন খালেদ তাঁর বক্তব্যে প্রসঙ্গক্রমে সেসব কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর বক্তব্যে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট, জেলহত্যা এবং তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে জিয়াউর রহমান নানাভাবে কলুষিত করে রাজনীতি থেকে স্বচ্ছতা, সততাকে নির্বাসনে নিয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতিতে একই ভূমিকা রেখে চলেছেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি যৌবনে পা দিয়েই দৃঢ়সংকল্প করেছিলেন যে সোনার বাংলা গড়তে হলে অবশ্যই আমাদের এ ভূখ-কে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই ১৯৭১ সালে আমার বাবা সে সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর খালেদ মোশারফ অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের সময়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু কুলাঙ্গার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। সেই রাতে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। এখন এটা নিশ্চিত যে, এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সে সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধীচক্র, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও কিছু অতিবিপ্লবীচক্র মিলে ’৭৫-এর ৭ নবেম্বর রাতের গভীরে ঢাকা সেনানিবাসে সেনা আইন ভঙ্গ করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য লিফলেট বিতরণ করে, যা সেনানিবাসে এক চরম অরাজক অবস্থা তৈরি করে। এই জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা এবং মেজর হায়দারকে। কী তাঁদের অপরাধ ছিল? খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের সেনাবহিনী ৩ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান হোতা খোন্দকার মোশতাক আহমদের অবৈধ শাসনের অবসান ঘটায়। সে সময়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অকুতোভয় একদল অফিসার ও জওয়ানকে। তিনি খুনী ফারুক-রশিদ-ডালিম চক্রকে বঙ্গভবনের দখল থেকে উচ্ছেদ করেন। তিনিই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চেন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনেন। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার পুরস্কার হিসেবেই খুনী মোশতাক সেনাবাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমনাকে। এই পদ পেয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ নস্যাত করতে তিনি একের পর এক ঘৃণ্য পদক্ষেপ নিতে থাকেন। ২ নবেম্বর মধ্য রাতে খুনী মোশতাকের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে যে কুলাঙ্গার দল তারাও আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে জিয়াউর রহমানের। ৭ নবেম্বরের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুরোপুরি কুক্ষিগত করে জিয়াউর রহমান জেল হত্যাকাণ্ডের বিচার ধামাচাপা দেন ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানাভাবে পুরস্কৃত করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এম কামরুজ্জামানের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
খালেদ মোশাররফ ১৯৭১ সালে ত্রিপুরায় মেলাঘরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় ট্রেনিং সেন্টার ও অপারেশন হেডকোয়ার্টার গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হানাদার বাহিনীকে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তিতে থাকতে না দিতে স্থির সংকল্প করেছিলেন। তাঁর নির্দেশে ক্রাক প্লাটুনের বীরযোদ্ধারা একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে প্রতিনিয়ত নাস্তানাবুদ করতে থাকেন। ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছিল মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বর সেক্টরের অসম সাহসী কর্মকা-। এই অপরাধেই কি তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সময়জুড়ে প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকা সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ৭ নবেম্বর হত্যা করা হয়?
১৯৭৫ সালের ৪ নবেম্বর সকালে আমার দাদি মহীয়সী নারী জামিলা আক্তারের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার এক বিশাল মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। পরের দিন সব সংবাদপত্রে খবর ছিল- ‘খালেদ মোশাররফের মায়ের নেতৃত্বে মিছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।’ এই অপরাধেই কি জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফকে হত্যা করেন? জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকা-েই মদদ দেননি, ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতার নাম উচ্চারণ পর্যন্ত কঠোর দ-নীয় অপরাধ হিসেবে রেওয়াজে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতেই খালেদ মোশাররফ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার শপথ গ্রহণ করেন এবং সেইভাবেই তাঁর অধীনস্থ সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করতে থাকেন। ২ এপ্রিল খবর আসে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর অধীনস্থ বাহিনী একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তখন খালেদ মোশাররফই জিয়াউর রহমানকে উদ্ধারের জন্য চতুর্থ ও দ্বিতীয় বেঙ্গলের দুটি কোম্পানিকে রামগড়ে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা অষ্টম বেঙ্গলের সঙ্গে যোগদান করার কারণেই জিয়াউর রহমান নিরাপদে ভারতে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। এ অপরাধেই জিয়াউর রহমান ৭ নবেম্বর খালেদ মোশাররফকে হত্যা করেন?
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর মায়ের সঙ্গে আমরা দুই বোন ছিলাম অবরুদ্ধ ঢাকাতে। আমাদের ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য খালেদ মোশাররফকে অনেকেই অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রতিটি অনুরোধেই তিনি উত্তর দেনÑ আমি যদি আমার পরিবারেরর প্রতি মনোযোগ দেই তাহলে আমার মুক্তিযোদ্ধাদের কী হবে। এক সময়ে আমার মা আমাদের ঢাকাতে রেখেই হেঁটে ত্রিপুরায় পৌঁছান। তিনি নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবেননি। প্রিয়তম স্বামী রণাঙ্গনে বীরের মতো লড়ছেন, সেটা ছিল তাঁর পরম গর্ব। কিন্তু তাঁর একটিই ভয় ছিলÑ শত্রুর হাতে ধরা পড়লে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি হতে পারে। তাঁকে জিম্মি করে কিংবা হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। এ জন্যই আমার মা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যান। আমাদের দুই বোনের জীবনে এরপর নেমে আসে আরও দুঃসময়। বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশারফের দুই মেয়ে ঢাকাতেই রয়েছেন, এ খবর জানতে পেরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের দালালরা হন্যে হয়ে আমাদের খুঁজে পায় এবং আটক করে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আমাদের রাখা হয় আজিমপুর অগ্রণী স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা মিসেস মনসুরের তত্ত্বাবধানে। দুই নম্বর সেক্টরের দুঃসাহসী ক্রাক প্লাটুনের সদস্যরা এ খবর জানতে পেরে আমাদের সে বাসা থেকে উদ্ধার করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তারা আমাকে নিতে পারলেও ছোট বোনকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চিত হয়ে আরও বহুদিন কাটে আমার ছোট বোনের জীবন। এই তো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সাহস ও গৌরবের জীবন। যাঁরা সে সময়ে আমার মা ও আমাকে শত্রুবাহিনীর কবলিত ঢাকা থেকে উদ্ধার করে আমার বাবার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই অথচ আমরা জানি যে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করে শত্রু বাহিনীর হেফাজতে পরম নিশ্চিন্তে জীবন কাটিয়েছিলেন। মুজিবনগর সরকারের সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়কের স্ত্রীকে নিয়ে পাকিস্তানী সেনা কমান্ড কেন বিব্রত হয়নি, সেটাই প্রশ্ন। তাঁকে ভারতে নেয়ার জন্য বিশেষ টিম পাঠানো হলেও তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁর জন্য আরাম-আয়েশের যে সুব্যস্থা করেছিল সেটা ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। যেসব মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ভারতে নিয়ে যেতে বার্তা পাঠান তাঁদের তিনি পাকিবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন আর যেসব পাকিস্তানী বর্বর সেনা অফিসার তাঁর জন্য এ সুব্যবস্থা করেছিলেন, তাঁদের কথা তিনি কখনও ভোলেননি। তাঁদের কারও কারও মৃত্যুতে তিনি শোকের সাগরে ভেসে গেছেন। প্রোটোকল ভেঙ্গে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে শোকবাণী পাঠিয়েছেন। ধিক, এ মনোভাবের। আমরা এটাও জানি যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রাখার অপরাধে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান তাঁর স্ত্রীকে ঘরে তুলতে চাননি। জাতির জনকই তখন তাঁর মহানুভবতায় সব ভুলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে জিয়াউর রহমানকে রাজি করান। বঙ্গবন্ধুকে কি এই অপরাধেই নিষ্ঠুরভাবে স্ত্রী-পুত্র-পুত্রবধূসহ হত্যা করা হয়েছিল? সংসদে ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কথা বলা হয়ত ঠিক নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়ক খালেদ মোশাররফ বীরোত্তমের স্ত্রী হিসেবে আমার মাকে সরকার থেকে যে বাড়ি প্রদান করা হয়েছিল, সেখান থেকে তাঁকে উচ্ছেদের জন্য বেগম খালেদা তাঁর শাসনামলে একের পর এক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর স্বামীর মতো তিনিও আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন। মেলাঘরে মুক্তিবাহিনীর যেসব সদস্য ছিলেন, যাঁরা চরণে মরণ শঙ্কাকে বার বার দোলে যান তাঁরা সবাই তাঁদের কমান্ডার খালেদ মোশররফকে আজও স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বীর সেনায়কসহ তাঁকে হত্যার পর প্রায় চার দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। জাতির জনক হত্যার প্রতিবাদে যিনি অসীম সাহসে একাত্তরের মতোই গর্জে উঠেছিলেন, যিনি খুনীদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন তাঁকে যারা পরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে, তাদের কি বিচার হবে না? আমি আজ এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে চাই যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রুখে দাঁড়িয়েছেন যিনি, সেই খালেদ মোশররফসহ ’৭৫-পরবর্তী সকল মুক্তিযোদ্ধার হত্যার বিচার চাই। শুধু একজন সন্তান হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় এ হত্যার বিচার চাই। তিনি আমার বাবা, এর চেয়ে গর্বের আমার কী আছে? আমি এমন এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যাঁকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষদের একজন হিসেবে গণ্য করত। তিনি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে আহত হয়েছেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের স্বপ্নপূরণের পথে একের পর এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চিরকালের পরনির্ভর বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে। বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে চাই না।’ আজ আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্র্মাণ করতে পারছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধাবিত হচ্ছে।
লেখক : সংসদ সদস্য
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment