Monday, June 2, 2014

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় মিজান

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় মিজান
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ জুন, ২০১৪

স্বজনের অশ্র“, সহকর্মীদের শ্রদ্ধা ও সাধারণের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সোমবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বেলানগর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানকে। এর আগে বান্দরবান ও দেবিদ্বারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে এখনও সীমান্ত থেকে সেনা সরায়নি মিয়ানমার।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বুধবার বিজিপি (মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ) সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারান মিজানুর রহমান। যুগান্তরের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমিল্লা উত্তর/দেবিদ্বার : বান্দরবান থেকে মিজানুর রহমানের মরদেহ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে কুমিল্লায় আনা হয়। সোমবার দুপুর ১টা ৫ মিনিটে চান্দিনা উপজেলার ছয়গরিয়ায় হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। এ সময় বিজিবির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ বিজিবির পদস্থ কর্মকর্তা এবং চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিজিবির অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ দেবিদ্বারের বেলানগর গ্রামে নিজ বাড়িতে আনা হয়। লাশ দেখেই স্ত্রী শামীমা আক্তার পারুল, ৪ কন্যা, বৃদ্ধা মা ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দুপুর আড়াইটায় বাড়ির পাশের ইদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন, বিজিবির পক্ষ থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজার আগে সেখানে বক্তব্য ও শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন বিজিবির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, শহীদ মিজানের পরিবারকে বিজিবির পক্ষ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ পরিবারকে পর্যায়ক্রমে সব রকমের সহায়তা প্রদান করা হবে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের পুনর্বাসনের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মুন্সি, চাচা আবুল কাশেমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও পরিবারের শোকাহত সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মিজানুর রহমানের বাবা আবদুল হাফিজ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার দশম শ্রেণীতে, দ্বিতীয় মেয়ে হালিমা আক্তার ৮ম শ্রেণীতে ও তৃতীয় মেয়ে শিমু ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। ছোট্ট মেয়ে হাবিবা আক্তারের বয়স ৪ বছর।
নাইক্ষ্যংছড়ি/বান্দরবান : সকাল সোয়া ৯টায় নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির ৩১ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মিজানুর রহমানের প্রথম জানাজা। ব্যাটালিয়ন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল আনোয়ার এতে ইমামতি করেন। পরে কুমিল্লায় নেয়ার জন্য ১১টায় মিজানুরের লাশ হেলিকপ্টারে তোলা হয়।
জানাজায় শরিক ছিলেন বিজিবির চট্টগ্রাম রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ আহমদ আলী, বান্দরবান সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমদ, ফাঁসিয়াখালী ব্রিগেডের কমান্ডার এম নাইম, বান্দরবান সেক্টর কমান্ডার কর্নেল একে সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খন্দকার ফরিদ হাসান, নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল শফিকুর রহমান, মেজর তারিক, নাইক্ষ্যংছড়ি হাজি এম কালাম কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাঈনুদ্দিন খালেদ, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ। জানাজা শেষে সৈয়দ আহমদ আলী সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। জানাজার আগে লে. কর্নেল শফিকুর রহমান বলেন, শহীদ মিজানুর রহমান একজন অকুতোভয় সৈনিক। দেশের জন্য তার অবদান ভোলার নয়। জানাজায় অংশ নেয়া সতীর্থদের অনেকেই সহযোদ্ধার জন্য চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। বর্তমানে সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে। মিয়ানমার তাদের সেনাবাহিনী এখনও সরায়নি।
কক্সবাজার : মিজানের মরদেহ রোববার বিকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে কক্সবাজার বিজিবি সেক্টর দফতরে নেয়ার পর লাশের ময়নাতদন্ত হয়। রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয় তার লাশ। পরে সকালে আবার নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে নেয়া হয় মরদেহ।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/06/03/107003#sthash.oYo3a4BK.dpuf

No comments:

Post a Comment