Monday, June 16, 2014

শোকাচ্ছন্ন মিরপুর, লাশ ধরে বিলাপ স্বজনদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ॥ পল্লবী থানায় ৬ মামলা, তদন্তভার ডিবিতে ॥ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা

শোকাচ্ছন্ন মিরপুর, লাশ ধরে বিলাপ স্বজনদের
বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ॥ পল্লবী থানায় ৬ মামলা, তদন্তভার ডিবিতে ॥ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা
আজাদ সুলায়মান ॥ বিহারী ক্যাম্পে এক পরিবারের সবাইকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন মিরপুর এলাকা। হাসপাতাল থেকে রাতে সবার মরদেহ কালশীতে নেয়ার পর দেখা দেয়, স্বজনদের গগনবিদারী আর্তনাদ। লাশ ধরে তারা বুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে। শুধু কালশীর বিহারীরাই নয়-তাদের সঙ্গে যোগ দেয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ অন্য এলাকা থেকে আগত বিহারীরাও। ঢাকার বাইরে থেকেও আসে অনেকে। এ সময় তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে দুটো গাড়ি ভাংচুর করে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে পল্লবী থানায় ছয়টি মামলা হয়। রবিবারই মামলার তদন্ত ভার ন্যস্ত করা হয়েছে ডিবিতে। সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলায় সাতজনকে দুই দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। সকালে ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইম সিন টিমকে ভগ্নাবশেষ ও অন্য নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
এ বর্বরোচিত ঘটনায় কারা জড়িত, কি কারণে কারা এমন পৈশাচিক কর্মে লিপ্ত হলো, ঘরের বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগানোর অভিযোগের সত্যতা নিয়েও দিনভর আলোচনা চলেছে। রবিবার ঘটনাস্থল সরজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়-ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা না পার হতেই ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে হীন রাজনীতি। স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের সুরেই কথা বলতে থাকে বিহারী ক্যাম্পের বিক্ষুব্ধ লোকজন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। একটি পক্ষ চাচ্ছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে দোষীদের কঠোর বিচার করা। অপর পক্ষ এ ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটার কৌশল নিয়েছে। এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে রবিবার সাংবাদিকদের বিফ্রিং দেয়ার সময় বিহারীদের মধ্যে প্রকাশ্য বাকযুদ্বে। রাতে এ রির্পোট লেখার সময় বিহারীরা প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু করে। লাশ নিয়ে রাজনীতি করার মানসে তারা ওই এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্যার বিরুদ্ধেও সেøাগান দিতে থাকে। পুলিশ তাদের যথেষ্ট ধৈর্য ধরে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালায়। তবে তারা এতটা ক্ষুব্ধ হবারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে জানান স্থানীয় এক ষাটোর্ধ বাসিন্দা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান- শনিবার সকালে এমন একটা নারকীয় কা- ঘটে গেলেও রোববার বিকেল পর্যন্ত সেখানে কোন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ভিটে মাটি, টাকা-পয়সা, মাল-সামগ্রী খাবার দাবার সবই পুড়ে ছাই। তাদের অনেকেই ছিলেন উপোস। সরকারী বেসরকারী কোন পর্যায়েই পৌঁছেনি কোন ত্রাণ সামগ্রী।
কেন এ হত্যাকান্ড ॥ আতশবাজির মতো তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটে গেছে এত ভয়াবহ বর্বরোচিত ঘটনা। এলাকাবাসী কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছেনা-কি কারণে কেন এদের পুড়িয়ে মারা হলো। তাদের ভাষ্যমতে- শনিবার ফজরের নামাজের পর হঠাৎ এ সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও এর শুরুটা ছিল শুক্রবার রাতেই। বিহারী ক্যাম্পের ছেলেরা পবিত্র শব-ই-বরাত রাতে আতশবাজিতে এতটাই উন্মত্ত হয়ে পড়ে- যে সাধারণ মুসল্লিদের এবাদত বন্দেগীও তাতে ব্যাহত হয়। তখন বিহারী-বিহারী ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলে। সারারাত মুহুর্মুহু আতশবাজিতে সাধারণ মুসল্লিরা চরম বিরক্ত হয়ে পড়ে। ফজরের নামাজের সময়ও একই অবস্থা চলতে থাকে। তখন পাশের বাউনিয়া বস্তি থেকে বের হয়ে আসে স্থানীয় লোকজন। এদের সঙ্গেও সংঘর্ষে মেতে ওঠে বিহারীরা। এ সংঘর্ষ থামাতে সেখানে হাজির হয় পুলিশের টহল। বিহারীরা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। পুলিশের গাড়িতে মারা হয় ইট পাটকেল। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও যোগ দেয় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক মুসল্লি জানান- পুলিশের উপস্থিতি দেখেই বিহারীরা হিংস্র হয়ে ওঠে। তাদের উন্মত্ত আচরণে সাধারণ মানুষও মারমুখী হয়ে ওঠে। এ সময় চলে দুইপক্ষের সংঘর্ষ। সংঘর্ষ চলার সময় হঠাৎ খোরশেদের ঘরে প্রথম আগুন লাগতে দেখা যায়। সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পরিবারের ঘরে। আগুনের ভয়াবহতা দেখে বাকিরা ঘর ছেড়ে পালায়।
আগুন কারা দিয়েছে এবং ঘরে দরজায় তালা মারা হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কে রবিবার পর্যন্ত কোন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে বিহারী ও স্থানীয় লোকজন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। বিহারীরা সুস্পষ্টভাবে সাংবাদিকদের কাছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা বিল্লাল, গিয়াসউদ্দিন, হেলাল, ফারুখের নাম বলেছে। বিহারীরা এমপি ইলিয়াস মোল্লার লোক হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। তবে ইলিয়াস মোল্লার লোকজন বলেছে, এরা ইলিয়াসের লোক নয়। গত নির্বাচনে এরা ইলিয়াসের প্রতিপক্ষ আনারসের প্রার্থীর নির্বাচনে প্রকাশ্যে কাজ করেছে। এখন ওই মহলই ইলিয়াসকে এ ঘটনায় দায়ী করে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছে।
পল্লবী জোনের এডিসি মাইনুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, আগুন কিভাবে কারা লাগিয়েছে তা তদন্তের আগে কারোর পক্ষে বলা সম্ভব ও উচিত নয়। তদন্ত চলছে। সিআইডি ক্রাইম সিন আলামত নিয়ে গেছে। পরীক্ষার পর জানা যাবে কি ধরনের পদার্থ আগুনে ব্যবহার করা হয়েছে।
ঘটনার পর পরই বাইরে থেকে দরজায় তালাবদ্ধ করে আগুন দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে রবিবার সারাদিন অনুসন্ধান করে এর সপক্ষে কোন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পাওয়া যায়নি বরং রবিবার ঘটনাস্থলে খোরশেদ আলম জানান- প্রথম আগুন তার ঘরেই লেগেছে। সে আগুন থেকে রেহাই পাওয়ার পর অন্যরা অনেকেই নিজ নিজ ঘর থেকে বের হয়ে আসতে থাকে। হাসান জানান, তিনি নিজ ঘরের চাল খুলে পরিবারের সদস্যদের বের করে নিরাপদে সরিয়ে নেন।
ইয়াসিনের ঘরে তালা মারা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে খোরশেদ বলেন, এটা কেউ দেখেনি। তবে বাইরে থেকে দরজার খিল আটকানো ছিল।

http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment