Thursday, June 5, 2014

রানার স্বীকারোক্তি আমরা হুকুম তামিল করেছি

রানার স্বীকারোক্তি আমরা হুকুম তামিল করেছি
রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ থেকে
প্রকাশ : ০৬ জুন, ২০১৪

নারায়ণগঞ্জে সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনার আসামি মেজর (অব.) আরিফ হোসেনের পর এবার নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন র‌্যাবের চাকরিচ্যুত সাবেক কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এমএম রানা। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় তিনি এ জবানবন্দি দিলেন। ৭ খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া পৃথক দুই মামলাতেই হাজির হয়ে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন রানা। মেজর আরিফের দেয়া জবানবন্দির মতোই এমএম রানার জবানবন্দিতেও এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের নির্দেশদাতা হিসেবে উঠে এসেছে র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম।
গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানিয়েছেন, রানা তার জবানবন্দিতে এ ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে সরকারের বিশেষ বাহিনীর ‘জিয়া’ নামে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেছেন। রানা বলেছেন, উচ্চপদস্থ এ কর্মকর্তার আদেশ পালন করেছেন তারা।
আদালত সূত্র জানায়, গ্রেফতারের ২০ দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে কঠোর গোপনীয়তায় এমএম রানাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবির ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল আসামি রানার জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করলে তাকে বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক রানাকে ভেবে দেখার জন্য ৩ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এমএম রানা তার জবানবন্দি শুরু করেন। জবানবন্দি শেষে বিকাল ৩টায় তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখওয়াত হোসেন খান আদালতের কার্যক্রম শেষে কোর্ট প্রাঙ্গণে গণমাধ্যম কর্মীদের রানার জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, জবানবন্দিতে নির্দেশদাতা কর্মকর্তা ‘জিয়া’র নাম বলেছেন। রানা বলেন, উচ্চপদস্থ কেউ আদেশ দিলে তারা তা পালন করতে বাধ্য। তিনি বলেন, ‘আমরা হুকুম তামিল করেছি।’
সংবাদকর্মীরা ওই কর্মকর্তার নাম এবং আরও কোন কোন নাম এসেছে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত। তিনি বলেন, ১৬৪ একটি গোপনীয় নথি, তাই কারও নাম বললে তার পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা যেন সেই সুযোগটি করে না দিই। সেজন্য তিনি জিয়ার পুরো নাম বা পদ-পদবি উল্লেখ করেননি।
সাখাওয়াত আরও বলেন, ‘আদালতে এ পর্যন্ত র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে কয়েক দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২ জন এমএম রানা ও আরিফ হোসেন হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিভাবে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তার বিশদ বর্ণনা আদালতে দিয়েছেন। এমএম রানা ও আরিফ হত্যাকাণ্ডে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দিতে এমএম রানা কিভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কারা করেছে, কিভাবে অপহরণ করেছে, কারা কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছে, কিভাবে ইট, বস্তা, রশি সংগ্রহ করেছে, কারা লাশ নদীতে ডুবিয়েছে, কারা নৌকা সংগ্রহ করেছে, কতজনের টিম অপহরণ থেকে শুরু করে কিলিং মিশন পর্যন্ত উপস্থিত ছিল, কে কে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, কার নির্দেশে এ হত্যা হয়েছে, কোথায় বসে হত্যা করা হয়েছে, কি পদ্ধতি অবলম্বন করে হত্যা করা হয়েছে, লাশের পেট কিভাবে ফুটো করেছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে লাশগুলো, কে বেঁধেছে, কোন যানবাহনে লাশ বহন করা হয়েছে ইত্যাদির বর্ণনা দেন। সাখাওয়াত আরও জানান, প্রথমে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়া আরিফের সঙ্গে এমএম রানার জবানবন্দির মিল রয়েছে। ওই জবানবন্দিতে আরিফ যেমন কিলিং মিশনের ২৩ জনের কথাসহ রাজনৈতিক নেতার নামসহ কয়েকজনের নাম বলেছিলেন। এমএম রানাও একই কথা বলেছেন।
অপরদিকে পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, জবানবন্দিতে এমএম রানা জানিয়েছে, নজরুলকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক সিও তারেক। এছাড়া র‌্যাবের সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, নজরুল ও স্বপনকে তুলে নিতে হবে। সূত্র আরও জানায়, জবানবন্দিতে রানা স্বীকার করেছেন, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারকে হত্যার কোনো ইচ্ছা ছিল না তাদের। চন্দনের দোষ একটাই। তিনি অপহরণ দৃশ্য ভিডিও করেছিলেন। তখন অপহরণের দায়িত্বে থাকা রানা বিষয়টি মেজর আরিফ ও সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদকে জানান যে, একজন আইনজীবী ‘লোকজন তুলে নিয়ে যাওয়ার’ দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করেছে। তাকে ‘চলে যাও’ বললেও সে বাড়াবাড়ি করছে। তখন তারেক সাঈদ বলেন, হিম পিকআপ। রানা বলেন, কিলিং মিশনে তিনি, সাঈদ ও মেজর আরিফ ছাড়া র‌্যাবের ২০ জন ছিলেন। পুলিশের এক এসআই ও দুই কনস্টেবল ছিলেন।
২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। পরদিন ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ৩০ এপ্রিল বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
- See more at: http://www.jugantor.com/last-page/2014/06/06/108076#sthash.mw3Y9jN3.dpuf

No comments:

Post a Comment