Thursday, June 26, 2014

শেখ হাসিনার পদক্ষেপে পূর্ণ সমর্থন থাকবে এরশাদের

শেখ হাসিনার পদক্ষেপে পূর্ণ সমর্থন থাকবে এরশাদের
সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ নেবেন তাতে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গুম-খুন-অপহরণের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ গডফাদার, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সংঘাতের রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাস, অশিক্ষা-কুশিক্ষা থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু সেই মুক্তি আজ অবরুদ্ধ। আমরা শান্তি, স্বস্তি ও অগ্রগতির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এইচএম এরশাদ বলেন, দেশের মানুষ দুঃশাসন, দুর্নীতি, গডফাদার আর সংঘাতের রাজনীতি থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু কে এনে দেবে মুক্তি? বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভায় বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়ে যেতে পারেননি। মুক্তি এনে দেয়ার সময় পাননি।
সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশে আজ মৃত্যুর মিছিল। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে চাকরি পায় না। অর্থমন্ত্রীকে বলব- রাত ১১টায় কমলাপুর যান। মানুষ বসে আছে, কাজ নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কোদাল নিয়ে শ্রমিকরা বসে থাকে, কাজ নেই। পেটে খাবার নেই। তারা রিজার্ভ বোঝে না, প্রবৃদ্ধি বোঝে না। তারা কাজ চায়, বাঁচতে চায়।
এরশাদ বলেন, এক দেশে দুই আইন চলছে। ধনীর জন্য একরকম আর গরিবের জন্য অন্যরকম। সবার জন্য আইন সমান হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে একরকম নয়। তিনি বলেন, আগে কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যে গডফাদার নাম থাকত। এখন গডফাদার নামে নতুন আলামতের আবির্ভাব ঘটেছে আমাদের দেশে। তাদের অঢেল অর্থ, অবৈধ অস্ত্রের ভা-ার। এসব গডফাদারদের বিচার হয় না। তারা কি আইনের উর্র্ধে? এক মন্ত্রী নাকি ৩ হাজার একর জমি কিনেছেন। আমরা এসব মাফিয়া, গডফাদার চাই না। শান্তি চাই।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের ঘটনা ঘটল। মিরপুরের বিহারী পল্লীতে ১০টি মানুষ পুড়ে মারা গেল। মানুষ হত্যা হচ্ছে, আমাদের মনে যেন দুঃখ কষ্ট নেই। আমাদের জীবন থেকে প্রেম-ভালবাসা চলে গেছে। আমাদের জীবন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। অর্থ ও ক্ষমতার লোভে সবাই পাগল হয়ে গেছি। মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে, কবে ফিরে আসবে পরিবাররা কেউ জানে না। এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমরা শান্তি, স্বস্তি ও অগ্রগতির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।
শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠনের অভিযোগ করে এইচএম এরশাদ বলেন, শেয়ারবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা যারা লুট করে নিয়ে গেল তারা সমাজে এখন প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব্যাংক লুণ্ঠনকারীরাও আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দোষীরা সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলো, তদন্তে রিপোর্টে জড়িতদের নামও উঠে এল। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখছে না। অর্থমন্ত্রী বলছেন, তাদের হাত অনেক লম্বা! আমি জানতে চাই- এসব অপরাধীদের হাত কত লম্বা? তাদের হাত কি সরকার, প্রশাসন ও আইনের চেয়েও লম্বা? অনেকে অর্থ পাচার করে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করছেন। এরা এত টাকা কোথায় পেল? কিভাবে টাকা গেল? এদের ধরা কী খুবই কঠিন কাজ। দেশে আজ নিরাপত্তা নেই। আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপত্তা থাকলে বিদেশে অর্থ পাচার হবে না।
এরশাদ বলেন, মানুষ আজ মুক্তি চায়। গডফাদার, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সংঘাতের রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাস, অশিক্ষা-কুশিক্ষা থেকে মুক্তি চায়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে তাঁর সন্তান প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি এজন্য যে পদক্ষেপ নেবেন আমরা সর্বাত্মকভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করব। খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, মাছ ও ফলে ফরমালিন, দুধে পর্যন্ত বিষ! রোজা আসছে, মুড়ি খাব। সেখানেও ইউরিয়া। সমস্ত দেশ আজ বিষাক্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে প্রাদেশিক সরকারের কোন বিকল্প নেই। এরশাদ কবিতার ছন্দ দিয়ে বক্তব্য শুরু এবং গানের কলি দিয়ে শেষ করেন।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment