Monday, June 2, 2014

মির্জাপুরে মহাসড়ক ও রেললাইনের পাশে ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক

মির্জাপুরে মহাসড়ক ও রেললাইনের পাশে ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক
এসএম এরশাদ, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে
প্রকাশ : ০৩ জুন, ২০১৪
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে রাস্তার দুপাশের উঁচু-নিচু এমনকি ধানি জমিতে কাঁচা-পাকা ঘর তৈরির হিড়িক পড়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকা, মির্জাপুর উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থান এবং কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক শত কাঁচা-পাকা ও আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। এছাড়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাস্তার দুপাশের জমির মালিকদের জমি ভাড়া নিয়ে বিশাল বিশাল ঘর নির্মাণ করেছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের জন্য এসব জমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হয়েছে। সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে জমির পাশাপাশি বসতবাড়ি ও প্রতিটি ঘরের জন্য আলাদা আলাদা দাম ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। আর এ কারণেই মহাসড়কের দুপাশে কাঁচা-পাকা দালান ঘর তোলার হিড়িক পড়েছে। এছাড়া ওইসব জমির আবাদকৃত ইরি ধানের চারা গাছ কেটে ফেলা হয়। আবার কোনো কোনো এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রটি ধানি জমি ভাড়ায় নিয়ে ধানগাছ কেটে স্থাপনা তৈরি করেছে। চক্রটি সরকারের কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়ার আশায় এ স্থাপনা তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চক্রটি আবাদ করা জমিতে স্থাপনা তৈরি করায় শত শত একরের ধান উৎপাদন ব্যাহত করেছে। অপরদিকে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। তাছাড়া রেলওয়ের জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী দ্বৈত (ডাবল) রেললাইন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য যেসব জমি অধিগ্রহণ হতে পারে, সেগুলোতেও বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায় জমির মালিকরা এরই মধ্যে ঘর তৈরি শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেনতেন এ স্থাপনা নির্মাণে উভয় প্রকল্পের জরিপসহ অধিগ্রহণ কাজে নিয়োজিতদের যোগসাজশ রয়েছে। চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। আর রেললাইন তৈরির প্রকল্প বাংলাদেশ রেলওয়ের। এ দুটি সংস্থার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, সব বড় প্রকল্পেই জমি অধিগ্রহণের কথা জানাজানি হওয়ার পর একটি চক্র নতুন স্থাপনা তৈরির তোড়জোড় শুরু করে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়। এ ঝামেলা এড়াতে অনেক বড় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের আগেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তার দুধারের ছবি সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন করতে টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলায় প্রায় ৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় হবে প্রায় ২০ একর। এরই মধ্যে উপজেলার গোড়াই গন্ধব্যপাড়া, কোদালিয়া (রহিমপুর একাংশ) ধানি জমির ওপর ও সদরে শতাধিক টিনের ঘর এবং আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া গোড়াই ইউনিয়নের ধেরুয়া এলাকার রাস্তার দুধারের জমির ধান কেটে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কিছু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় দালাল আবদুর রহমানের মাধ্যমে ওইসব মৌজার জমির মালিকরা অধিগ্রহণের বিষয়টি জানতে পারেন। গোয়ালবাথান এলাকার আবদুর রহমানের সঙ্গে কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ যোগসাজশ রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। জমির মালিক ও এলাকাবাসী জানান, মির্জাপুর উপজেলার কোদালিয়া, ধেরুয়া, গোড়াই গন্ধব্যপাড়া এলাকায় স্থানীয় ভাটা ব্যবসায়ী মোস্তফা ও আশরাফ শিকদারের মাধ্যমে জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি শতাংশ জমি এক বছরের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকায় ভাড়া নেন নরসিংদী এলাকার মাস্টার, বরিশালের রাসেল মিয়া ও ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। জমি ভাড়া নিয়ে ওইসব জমির মধ্যে নিুমানের টিন, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া, রুবেল ড্রাইভার ও সিলিম মিয়া বলেন, বেশি টাকা পাওয়ার আশায় একটি চক্র স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে এসব ধানি জমি ভাড়া নিয়ে নিুমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নামমাত্র ঘর তৈরি করছেন।

No comments:

Post a Comment