ঝড়ে লঞ্চ ডুবলে কার কী করার থাকে!
প্রকাশ : ০৩ জুন, ২০১৪
প্রতি বছরই কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুমে বা বর্ষাকাল¢ লঞ্চ ডুবিতে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিটনেসবিহীন অঞ্চের অবাধ চলাচল, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন, সঠিক পূর্বাভাস না দেয়া বা না মানা, দক্ষ চালকের অভাবসহ কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কারণে কোনভাবেই জলযানের দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। লঞ্চ চলাচলে এসব অনিয়মের বিষয়ে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছেন নৌ ও পরিবহন মন্ত্রী মো. শাহজাহান খান। প্রতিবছর বর্ষাকালেই লঞ্চ দুর্ঘটনা বেশি হয় এটা জানার পরও আমরা কেন সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে পারছি না? লঞ্চ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঝড়ের মৌসুমেআমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস মেনে লঞ্চ ছাড়তে বলি এবং বিষয়টি সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করি। সব লঞ্চে এবং লঞ্চের ড্রাইভার-নাবিককে রেডিওতে আবহাওয়ার রিপোর্ট শুনে নিরাপদে যাত্রা শুরুর জন্য বলা হয়। অতিরিক্ত যাত্রী যেন লঞ্চে না ওঠে সেই দিকে খেয়াল রাখার জন্য ঘাটে অবস্থানরত আমাদের বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা রয়েছেন। তারা এ বিষয়টি দেখাভাল করেন।
শাহজাহান খান বলেন, ঝড়ে লঞ্চ ডুবলে তার কী করার থাকে? ঝড়ে লঞ্চ ডুবলে কী আল্লাহর সঙ্গে ফাইট করব। ঝড় ছাড়া অন্য যে বিষয়গুলো থাকে সেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। লঞ্চ নির্মাণের সময় কোনো ধরনের ত্র“টি যাতে না থাকে সে ব্যাপারে আমরা শতভাগ নজর রাখছি। নৌ পরিবহন মন্ত্রী বলেন, আমরা নদীর নাব্যতা নিয়ে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু তার শাসনামলে ড্রেজার কিনেছিলেন। এরপর আর কোনো সরকার ড্রেজার
কেনেনি। তার কন্যা ক্ষমতায় আসার পর ১৪টি ড্রেজার বানানো হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি সচল রয়েছে আর জুন মাসেই ৮টির কাজ শুরু হবে। বাকি তিনটি এ বছরের মধ্যে নদীতে নামবে। বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করে আরও ২৫টি ড্রেজার ইতোমধ্যে কাজ করছে।
দক্ষ চালক-ড্রাইভারের বিষয়ে তিনি বলেন, চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য নারায়ণগঞ্জে ডিইপিটিসি নামে যে ইন্সটিটিউট রয়েছে সেটি বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর আর কোনো সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকার দুটি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট করেছে একটা বরিশালে অন্যটা মাদারীপুরে।
মন্ত্রী জানান, আগে মরদেহের দাফন-কাফনের জন্য দেয়া হতো মাত্র তিন হাজার টাকা, মৃত ব্যক্তির পরিবার পেত ২০ হাজার টাকা আর একই পরিবারের একাধিক সদস্য মারা গেলে ৩০ হাজার টাকা দেয়া হতো। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে খুব আন্তরিক। এখন আমরা দিচ্ছি প্রতি মরদেহের দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা। আর প্রতি পরিবার ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছি।
শাজাহান খান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না বলে যে বদনাম ছিল, তা অনেকটাই ঘুচে গেছে। তবে তদন্ত পতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন কম হয় অথবা দেরিতে হয় এ কথা একেবারে মিথ্যা নয়। তবে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। ত্র“টিযপূর্ণ নৌযানগুলোকে ত্র“টিমুক্ত করার জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সদরঘাটের নৌ নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক সাইফুল হক খান বলেন, ঝড়ের মৌসুমকে সামনে রেখে বিশেষ মনিটরিং করা হচ্ছে। লঞ্চের ড্রাইভার, মাস্টার, মালিকদের চিঠি বা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সময়ে কি করণীয় সেগুলো জানিয়ে
দেয়া হচ্ছে। নির্দেশনা অমান্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব তদারকির জন্য ল এন ফোসিং নামে বিশেষ একটি টিম রয়েছে এরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে, তারপরও বিভিন্ন অনিয়ম হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
লঞ্চের ফিটনেসের ব্যাপারে সাইফুল হক খান বলেন, এখানে ফিটনেস ছাড়া কোনো লঞ্চ চলে না। প্রতিটি লঞ্চের সার্ভে-রেজিস্ট্রেশন করা আছে। আর দুর্ঘটনা তো দুঘর্টনাই। এটা হয়ে গেলে করার কিছু থাকে না। সদরঘাট থেকে প্রতিনিয়ত ৬০টি লঞ্চ যাওয়া-আসা করে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আরও স্টাবল ডিজাইনের লঞ্চ নির্মাণ করা উচিত। আরেকটা জিনিস প্রয়োজন সেটা হল দক্ষ মাস্টার তৈরি করা। ড্রাইভারদের মধ্যে যে ওস্তাদ-সাগরেদ প্রথাটা আছে সেগুলো এখানও রয়ে গেছে। গাড়িতে যেভাবে হেল্পার গাড়ি চালায় এখানেও সে ব্যাপারটি হয়।
চারটি উদ্ধারকারী জাহাজ যথেষ্ট কী না এ ব্যাপারে বলেন, সবগুলো লঞ্চ কিন্তু একসঙ্গে দুর্ঘটনা কবলিত হয় না। তারপরও চারটি উদ্ধারকারী জাহাজ যথেষ্ট নয়। বলি তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে চারটি উদ্ধারকারী জাহাজের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তিনটি, আর বরিশালে রয়েছে একটি। এগুলো দিয়েই কাজ চলতে হচ্ছে। ঝড়-ঝঞ্ঝার এ সময়টায় বিকাল চারটা থেকে রাত চারটা পর্যন্ত বিশেষ মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচলের ব্যাপারে প্রশাসনের ঢিলেঢালাভাব দায়ী কিনা এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই সময় আসলে করার কিছু করার থাকে না। ধরেন লঞ্চ আছে ৭টা কিন্তু যাত্রী আসে দশগুণ তখন আপনি কী করবেন। সবাই তো বাড়ি যাবে ঈদ করতে। সেখানেই আসলে আমরা অসহায়।
No comments:
Post a Comment