Tuesday, June 3, 2014

জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ কারা নিয়েছে-খোঁজা হচ্ছে প্রকৃত তালিকার পর বাড়ানো হবে সুযোগসুবিধা ও চাকরির মেয়াদসীমা

জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ কারা নিয়েছে-খোঁজা হচ্ছে
প্রকৃত তালিকার পর বাড়ানো হবে সুযোগসুবিধা ও চাকরির মেয়াদসীমা
মশিউর রহমান খান ॥ জাল জালিয়াতি আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে নেয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের তদন্তে বেশ জোরেশোরে মাঠে নেমেছে সরকার। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণকারীদের খুঁজে বের করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণকারীদের মাঝে অতি দ্রুত তদন্ত পরিচালনা করবে বলে জানা গেছে। সন্দেহভাজনরা মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা যাচাইয়ে প্রয়োজনে এলাকায় প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ের জনগণ জড়ো করে তাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে চাইবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বের করে চূড়ান্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরি করতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শেষবারের মতো দোষ স্বীকার করে মন্ত্রণালয়ে সনদ আত্মসমর্পণের সুযোগ দিতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কতো তার সংখ্যা মন্ত্রণালয় বা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কেউ কিছু বলতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তের পর ইতোমধ্যে নতুন করে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের অনলাইনে ও ডাকযোগে প্রায় ১৬ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। বর্তমানে সারাদেশে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে। পূর্বে সনদ গ্রহণকারীদের মধ্য থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকা মিলে নিয়মবর্হিভূতভাবে সনদ গ্রহণকারীদের খুঁজে বের করতে প্রকাশ্যে ও গোপনে অভ্যন্তরীণভাবে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সরকারে সচিব পর্যায়ের লোকজন থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পদের ব্যক্তিবর্গ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার, শিক্ষক রয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী নাগরিক, সম্পদশালী, শীর্ষ ব্যবসায়ী ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। সরকার পূর্বে প্রদানকৃত সনদধারীদের মধ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারী নিয়ম ভঙ্গ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকার) কোন প্রকার সুপারিশ ছাড়াই শুধু মন্ত্রী বা সরকারের উর্ধতনদের নির্দেশে ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বেআইনীভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন কয়েক হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এ ছাড়াও তথ্য গোপন বা জালিয়াতি করে যেসব ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন তাদেরসহ সকল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার অতি দ্রুত একটি নীতিমালা তৈরি করবে। এতে জেল জরিমানাসহ বিভিন্ন প্রকার শাস্তির বিধান রেখে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্বে গ্রহণকৃত সনদ সরকার গ্রহণ করবে বলে মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সরকার ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরির কাজ শুরু করছে।
জামুকা ও মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কয়েকজন সচিব ও সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপন করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করেছেন। ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে বসে এরকম ভয়ানক দুর্নীতি ও জালিয়াতি করায় সরকারের উর্ধতন মহল আশ্চর্য হয়ে যায়। সূত্র জানায়, এ বিষয়টি জানাজানির পর প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে মন্ত্রণালয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ বিষয়ে তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি প্রদান করে। অভিযুক্তদের মধ্যে সরকারের সাবেক ও বর্তমান সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকতাসহ উর্ধতন এমন ৭ জন কর্মকর্তার বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে। দুদক ইতোমধ্যে এসব অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, জামুকা নিজ উদ্যোগে ভুয়া ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার তথ্য জানতে গোপনে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশিত নীতিমালার বাইরের সকল সনদ গ্রহণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জামুকা ও মন্ত্রণালয় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে নীতিমালা তৈরির পর সরকার সারাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নামে একটি বিশেষ চিঠি ইস্যু করবে। এ চিঠিটি হবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মন্ত্রণালয় প্রদত্ত সনদ আত্মসমর্পণের নির্দেশ সংবলিত চিঠি। এ চিঠি প্রাপ্তির পর কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার যদি তার দোষ স্বীকার করে সনদপত্র জমা দেন তাহলে তাকে কম শাস্তি ও চিঠি প্রাপ্তির পরও যদি কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ মন্ত্রণালয়ে জমা না দেন তাহলে তাকে গুরুদ- বা বড় শাস্তি প্রদানের চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। তদন্ত সাপেক্ষে সরকার এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত নামের তালিকা করতে এ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সূত্রমতে, কয়েক মাসের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ কেউ মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধ না করেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারী নীতিমালা না মেনে মুক্তিযোদ্ধা হতে জালিয়াতি করে ও মিথ্যা তথ্য দেখিয়ে বা কোন কর্মকর্তা বা কোন ব্যক্তিকে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করেছেন। তবে এ সংখ্যার পরিমাণ কত হাজার তা কোনভাবেই সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমাদের কাছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন এমন অভিযোগের সংখ্যা কয়েক হাজার। যার সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগের সত্যতা কঠোরভাবে যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ প্রদান করছে। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের মধ্যে বড় সংখ্যার বা কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করার কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের চূড়ান্তভাবে খুঁজে বের করতে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ করে মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে একটি বিশেষ চিঠি প্রদান করবে। যা সনদ আত্মসমর্পণ চিঠি হিসেবে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সনদ নিয়ে থাকলে চিঠি প্রাপ্তির পর স্বেচ্ছায় মন্ত্রণালয়ে সনদ জমা দিতে আহ্বান জানানো হবে। যদি কেউ এ আহ্বানে সাড়া দেয় তাহলে তাকে কম শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হবে। এক্ষেত্রে ভুল স্বীকার করে সনদ জমা দেয়ায় তার শাস্তি হবে কম। অপরদিকে সরকারের এ চিঠি প্রাপ্তির পরও কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যদি সনদ জমা না দেন সরকার তাদের বিষয়ে অতি দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে বিশেষ উদ্যোগ নেবে। তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আগের আমলসহ বিভিন্ন সরকারের সময়ে সরকারী চাকরিজীবী ও বেসরকারী কয়েক হাজার ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযুদ্ধ সনদ গ্রহণ করেছেন তাদের খুঁজে বের করে প্রতিদিনই বেড়ে চলছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। তাছাড়া নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তুলতে আবেদনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। মন্ত্রণালয় প্রতিদিনই পূর্বে প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা সনদপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কয়েকজনের সনদ বাতিল করছে।
গত ৫ বছরে সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১শ’ ৫০ জন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সচিব থেকে শুরু করে চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন।
সূত্রমতে, মন্ত্রণালয় পরিচালিত গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসছে যে, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে ও দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সমাজে নিজের সম্মান বাড়াতে এসব ভুয়া ব্যক্তিবর্গ মুক্তিযোদ্ধা সেজে এ সনদ গ্রহণ করছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘোষিত জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রদান করতে মুক্তিযোদ্ধাগণ, তাদের সন্তান-সন্ততি এমনকি তাদের পরবর্তী প্রজন্মদের অর্থাৎ নাতি-নাতনিদের ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানা সুযোগÑসুবিধা প্রদান করায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে করে অনেকেই নিয়ম ভঙ্গ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এর রেজুলেশনের মাধ্যমে করা সুপারিশ না নিয়েই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সরকারের উর্ধতনদের নির্দেশে সনদ সংগ্রহ করেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। সনদ গ্রহণে জামুকার সুপারিশ নেয়নি এমন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি বলে সূত্র জানায়। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কেউ মুক্তিযোদ্ধা হলে চাকরিতে যোগদানের সময়ই তাঁকে এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে হবে। পরে বললে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। কিন্তু এ প্রজ্ঞাপন নামেই রয়েছে বাস্তবে কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সরকারী-বেসরকারী আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারী থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তা এমনকি সরকারের বর্তমান ও সাবেক সচিব পর্যায়ের বেশ প্রভাবশালী কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায় এ সংখ্যা অর্ধশতের বেশি। ইতোমধ্যে সরকারের ৭ সচিবসহ প্রায় অর্ধশত উর্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রেখেছে সরকার। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দেয়ায় এবং বিশেষ করে সরকারী চাকরিরতদের চাকরির বয়স বাড়ানোর সময় প্রথমে ২ বছর ও পরে আরও ১ বছর মোট দুদফা বৃদ্ধি করে। ফলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির সুবিধা নিতে সরকারের অনেক উর্ধতন কমকর্তাগণ মন্ত্রণালয় থেকে সনদ নেয়ার হিড়িক পড়ে যায়।
মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও সুযোগ প্রদান করতে চাকরির বয়স বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে সরকারী চাকরির বয়স আরও ২ বছর বাড়ানোর চিন্তা করেন। কিন্তু শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর এ আগ্রহে ভাটা পড়ে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত স’ত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জাল সনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যেসব সচিব বা উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়ে জাল সনদ নিয়ে সরকারের দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘোষিত সুবিধা ভোগ করছেন তাদের জাল সনদের বিষয়টি তদন্ত করতে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) ফাইল হস্তান্তর করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তের পর দোষী প্রমাণিত হলে তাদেরসহ সকল ভুয়া সনদধারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী কোন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তুলতে চাইলে আবেদনের পর পরিপূর্ণ যাচাই বাছাই শেষে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) রেজুলেশনের মাধ্যমে সনদ প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে। তারপর সুপারিশ সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় কেবল সনদ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রীসহ কোন ব্যক্তি সনদ প্রদানের ক্ষমতা নেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে জরুরী সনদ প্রয়োজন হলে মন্ত্রী প্রয়োজনীয় সত্যতা যাচাই ও তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন এমন ধারণা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয় এমন মনে করলে কাউকে সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা নয়। তবে অবশ্যই পরবর্তীতে সনদধারী সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান করতে হবে। ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে যাকে ইচ্ছা তাকে সনদ প্রদানের কথাও শোনা যায়। বর্তমানে প্রতিদিনই তদন্ত সাপেক্ষে কয়েকজনের সনদ বাতিল করা হচ্ছে। আরও অনেকের সনদ বাতিলের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।
দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তির ধরন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, চলমান খসড়া নীতিমালায় দোষী প্রমাণের শাস্তি হিসেবে কয়েকটি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী হলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভোগকৃত সকল সুবিধার অর্থ ফেরত প্রদান, তাঁদের সনদ বাতিল করার পাশাপাশি মিথ্যা তথ্যের জন্য ফৌজদারি মামলা, চাকরিরত হলে বর্তমানের চেয়ে নিম্ন পদে পদায়ন, প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করা, উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী অবসরে চলে গেলে তাদের কাছ থেকে পেনশনের টাকা রাখা বা কেউ কেউ পেনশনের টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেলে তার সম্পদ থেকে অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করা, ব্যবসায়ী বা সাধারণ নাগরিক হলে তাদের রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের জন্য সমুদয় অর্থ ফেরত নেয়া, অর্থ প্রদানে অসমর্থ হলে জেলে প্রেরণসহ নানা শাস্তির বিধান রাখার কথা বলা হয়।
তবে সনদ বাতিলের পর মন্ত্রণালয় পূর্বের প্রদত্ত বাতিলকৃত সনদের ব্যাপারে করা গেজেটও সরকার বাতিল করবে। দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরপরই তা করা হবে। পূর্বে প্রদত্ত সনদধারীরা যদি আদালতে মামলা করে সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করবে। সরকার চায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন অব্যাহত রাখতে। এ লক্ষ্যেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরকারের এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। আশা করি আগামী ৩ মাসের মধ্যেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে চূড়ান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভভ হবে। এ জন্য তিনি সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-06-04&ni=174941

No comments:

Post a Comment