Thursday, June 26, 2014

মুভিং ফিঙ্গার কৃষ্ণা সোবতি অনুবাদ : মনোজিৎকুমার দাস

মুভিং ফিঙ্গার
কৃষ্ণা সোবতি 
অনুবাদ : মনোজিৎকুমার দাস
[কৃষ্ণা সোবতি (জন্ম : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫) প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক। হিন্দী ভাষার গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক হিসাবে তাঁর খ্যাতি বিশেষভাবে স্বীকৃত তাঁর উপন্যাসগুলোর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ‘মিত্র মার্জনী’, ‘দার সে বিচ্ছুরি’, ‘সূর্যমুখী’ ‘আন্ধেরে কে’ ‘জিন্দাগিনামা’, ‘ইয়ারোন কে ইয়ার’। তাঁর লেখা গল্পসংকলনগুলো হচ্ছে ‘নাফিসা’, ‘সিক্কা বদল গায়া,’ ‘বাদলোম কে ঘেরে’ ‘বাচপান’ ইত্যাদি। তিনি তাঁর লেখা ‘জিন্দাগিনামা’ এর জন্য ১৯৮০ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। এ উপন্যাসের জন্য ১৯৯৬ সালে সাহিত্য একাডেমীর সর্বোচ্চ পুরস্কার সাহিত্য একাডেমী ফেলোশিপ পান। ‘মিত্র মার্জনী’ (১৯৬৬) উপন্যাস তাঁর লেখা মাস্টারপিস হিসাবে বিবেচিত। তাঁর অনেক উপন্যাস ও ছোটগল্প ইংরেজী ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি সাহিত্য একডেমী ছাড়াও ১৯৮১ সালে ‘শিরোমণি পুরস্কার’, ১৯৮২ সালে হিন্দী একাডেমী পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে ‘কথা চুড়মণি পুরস্কার,’ ২০০০ সালে ‘সালাকা পুরস্কার’ লাভ করে। তিনি হাশমাত ছদ্মনামেও বেশ কিছু লেখা লেখেন। হিন্দী ভাষায় লেখা প্রবন্ধের দ্য লিটল ম্যাগ (টিএলএম) এর ইংরেজী ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত দ্য মুভিং ফিঙ্গার প্রবন্ধের বঙ্গানুবাদ করা হলো মুভিং ফিঙ্গার নামে। ]
এ পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষের মত আমিও প্রতিদিন আকাশের নিচে জমিনে বসবাস করি। সূর্য ও চাঁদ আমাকে আলো দেয়। আমি আমার নগরীর রাস্তা ও ক্রসিং পেরিয়ে ফুটপাথ, ট্রাফিক লাইট, অপেক্ষামাণ কিউ, লম্বা ব্রিজ, সুন্দর অট্টালিকা, পোস্ট অফিস, ব্যাংক, রেস্টুরেন্টের অলিগলি দিয়ে ঘুরে বেড়াই। টেবিল থেকে ভেসে আসা গরম খাবারের সুগন্ধ আি পেয়ে থাকি। ফ্লাওয়ার ভাসে সুন্দরভাবে সাজানো ফুলের সৌরভ আমি গ্রহণ করি। আমি পথের ধারের ধাবাগুলোর জ¦লন্ত উনুনের আগুনের শিখা ও চকচকে তামার পাত্র দেখতে পাই। আমি নিজেই ব্রিজ পার হই। যখনই আমার পছন্দ হয় তখনই আমি সে সব জায়গার লোকজনদের সাথে মিলিত হই। মৃদুমন্দ বাতাস আমি পছন্দ করি। আমি আমার মনের জানালা খুলে রাখি। আমি বিশুদ্ধ বাতাস আর সূর্য কিরণ পছন্দ করি। আমি পেশাজীবী পারিষদ নই। আমার নিজের পরিচয় নিজেই দিতে গর্ববোধ করি। আমি অন্যের দ্বারা পরিচিত হতে দ্বিধাবোধ করি।
আমার অনেক চেনাজানা লোক আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে বন্ধুর সংখ্যা খুব কম। আমি সাথীদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কখনোই ক্লান্ত হই না। আমি রাতে বেশি তরতাজা থাকি। এমনকি আমি রাতে অন্য রকম থাকার কথাও ভাবি। রহস্যজনক শব্দ, মিষ্টি কণ্ঠস্বর - রাতের নীরবতা ও নির্জনতা আমি উপভোগ করি। আমি এ সবের মধ্যে ছন্দ, আলো, আনন্দের সুর আর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। আমি বেঁচে থাকার জন্য লিখি।
সাধারণভাবে আমি একজন পেশাজীবী লেখক হলেও আমাকে শব্দের কঠিন শৃঙ্খলাকে মেনে গ-ি ভেতরে কিংবা গ-ির বাইরের কাউকে অভিভূত করতে হয়।
সংগ্রাম, পরিবর্তন ও সৃজনশীল মন
আজকের দিনে লেখককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে লেখার কাজ করতে হয়, এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে লেখা সব সময়ই লেখকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। আর লেখার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় হলো মানবিক মূল্যবোধগুলো, যা সব ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত। লড়াই করে নিজেকে সমুন্নত রাখতে হয়। একজন লেখককে কালের শব্দাবলী ও গ-গোল শুনে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে সেগুলোকে বর্ণনা করতে হয়, আর সেটাই সৃজনশীল কাজ। একজন লেখক তার সময় ও স্থানের বাস্তবতা ও গ-গোলকে ধাতস্থ করে কাগজে পুনরায় সৃজনশীল অনুষঙ্গে উপস্থাপন করেন।
একজন লেখক ব্যক্তিগত লড়াইয়ে প্রবৃত্ত হন না, তিনি কেবলমাত্র ব্যক্তিগত আনন্দ ও দুঃখের হিসাবেনিকাশ না করে তিনি কিন্তু তাদের অনুসন্ধান করেন যারা লড়াই করে ভোগান্তির শিকার হয়ে অজান্তেই মৃত্যুবরণ করে। লেখালেখি একটা নিঃসঙ্গ কর্ম নয়, এটা হচ্ছে লড়াই, প্রতিবাদ, সমৃৃদ্ধির কর্ম-নিরবচ্ছিন্ন সমৃদ্ধি। একজন লেখক প্রত্যেক প্রজন্মে, প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক ঋতুতে, প্রত্যেক অবস্থায় জন্ম নেন। একজন লেখক আত্মীয়ার মাঝ দিয়ে, ঘনিষ্ঠ ও দূর উভয় সম্পর্কে মাঝে জন্ম নেন। একজন লেখক ইতিহাসে মোড়ানো পরিবর্তনশীলতাকে মেনে নিয়ে জীবনীশক্তির সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং পদ্ধতি ও বোধের মাধ্যমে গুণসম্পন্ন একজন লেখক তার লেখায় সময়ের কথা তুলে ধরেন।
সাহিত্যের আত্মা হচ্ছে ধ্যান। ভাষা হচ্ছে তার শরীর। এটা হচ্ছে লোকসাহিত্যের সচেতনা যা ভাষার মূলে পূর্ণ যৌবন দান করায় গতিশীল হয়। লোকসাহিত্যের প্রবাদবাক্য মাটি থেকে সরাসরি শক্তি তুলে আনে। ইতিহাস হচ্ছে একটা নদীর মত, আমাদের জীবন আর আমাদের কৃষ্টি সভ্যতা সময়ের গ-িতে বিকশিত হয়।
একজন লেখকের নির্জনতা হচ্ছে লেখকের ধ্যানজ্ঞান। এটাই হচ্ছে ভাবনার পন্থা যা লেখককে প্রগাঢ়ভাবে সচেতন করে তুলতে সাহায্য করে। পরিবেশ, শ্রেণি ও মূল্যবোধ থেকে সচেতনতার উদ্ভব ঘটে। এ থেকেই একজন লেখকের সৃজনশীলতা গড়ে উঠে। লেখালেখি শুধুমাত্র ঘটনা ও গল্পের ঘনঘটা নয়। লেখালেখি হচ্ছে মনের অভ্যন্তরের আলোড়ন ও বাস্তবতার একীভূত অভিব্যক্তি।
লেখায় চিন্তা ও উদ্দেশ্য
একটা সৃজনশীল কাজ ভাবনা ও আকাক্সক্ষাশূন্য জীবনের জটিলতাকে উপলব্ধি করতে পারে। একটা সৃজনশীল কাজ শক্তির পর ভিত্তিতে অভিব্যক্ত হতে পারে না। সাহিত্যে সত্য ও মূল্যবোধের আকাক্সক্ষা জীবনের ভার্সাস আর্টের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং, এটা দুটোর সঙ্গমস্থল যা, ব্যক্তি ও সমাজ সম্বন্ধে সত্যের প্রকাশ ঘটায়। সাহিত্য ছড়িয়ে পড়ে। সময় শুধুমাত্রই জীবনের এক টুকরো এবং শিল্পকলার সৌন্দর্য সৃষ্টি করে না। সাহিত্য লেখকের আত্মায় মূল শিকড় হিসাবে গৃহীত হয়।
লেখালেখির কাজের মাঝ দিয়ে একজন লেখক মনের জটিলতাকে আবিষ্কার করেন, শরীর ও আত্মার প্রগাঢ় প্রহেলিকাকে সমাধান করেন, শব্দের মেজাজ ও শব্দের অনুরণন ঘটান; তাদের ক্ষমতার পরিমাপ করেন এবং তাদের বহুবিধ অর্থকে প্রকাশ করেন।
প্রত্যেকটি শব্দের একটা শরীর, একটা আত্মা ও একটা পরিচ্ছদ আছে। তারা একত্রিত হয়ে একটা ভাবনা স্পন্দিত হয়ে প্রকাশমান হয়। সত্যিকার লেখকের ভাষা ও শব্দাবলীর ভাসাভাসা সম্পর্ক থাকতে পারে না, কারণ একজন লেখক চিরদিনের জন্য শব্দাবলীতে আত্মমগ্ন, শব্দের স্থিতিশীলতা, অর্থাবলী প্রতিধ্বনিত হয় শব্দাবলী, কণ্ঠের সুর, শব্দের সুর ও বুনন মাধ্যমে। একজন লেখক শব্দাবলীর আত্মা ও শরীরের প্রতি সমানভাবে ভালবাসা বর্ষণ করেন ।
একজন লেখক তার আশপাশের ঘটনা থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করতে, কিংবা একটা অজ্ঞাত সংবেদনশীলতায় নিমগ্ন থাকতে পারেন। সংবেদনশীলতার ভেতরে এবং বাস্তবতার বাইরে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং ধারণা গড়ে ওঠে একটা নতুন ও স্বাধীন মাত্রায়। একজন লেখকের অবিরত ধ্যানজ্ঞান ও তার অচেতন অন্তরের গভীর থেকে সৃজিত হয় জীবন্ত অভিজ্ঞতার একটা তরতাজা দর্শন। যদি এটা ঘটে তবে একজন লেখক আধা সত্য ও আধা মিথ্যার মাঝ থেকে মূল্যবোধ ও সত্য অনুসন্ধান করতে পারেন। একজন লেখকের কাজ তার বিশ্বাসগুলোকে লিপিবদ্ধ করা। একটা মাত্র দৃশ্যপট বর্ণনার মাঝ থেকেই কিন্তু একজন লেখকের পূর্ণতা ফুটে উঠতে পারে।
ভ্রান্ত যুক্তি প্রয়োগ সত্য ও সৃজনশীল মূল্যবোধকে অভিভূত করে। এমনকি এর ফলে সবচেয়ে ধীশক্তিমান লেখককেরও বোধশক্তির হ্রাস ঘটে। সুতরাং একজন ভাল লেখকের লেখালেখির দক্ষতার চেয়েও একজন ব্যক্তিত্বহীন লোক ও উদ্দেশ্যমূলক দৃশ্যপট তার কাছে বেশি প্রয়োজনীয়।
অভিব্যক্তি ও ভাষা
আমি কখনোই ভাষাকে আমার কাজের উপর অনাহূত
ভাবে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেই না। এটা সত্য যে আমি কিন্তু অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে কোন কিছু করতে শিখি নি। অই লেড়কী ছোট গল্পের সংক্ষিপ্তসার থেকে শেয়ার করতে পছন্দ করলাম :
শুনুন, একটা কন্যা জন্ম দিয়ে নিজের ইমেজকে ধরে রাখা একজন মায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটা হচ্ছে ধর্মভক্তির কাজ। একজন কন্যা মাকে অমর করে রাখে, মা মৃত্যুর পরে কখনোই হারিয়ে যান না। তিনি আজও এখানে আছেন, আগামীকালও থাকবেন। এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে , মা থেকে কন্যা, কন্যাদের থেকে কন্যা- তারপর তার কন্যা, সুতরাং এভাবেই চলতে থাকে- ওইটাই সৃষ্টির উৎস্য।
আম্মু, আব্বার প্রশংসা করেও কিছু বলুন।
পিতার ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একজন পিতার রক্ত তার সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত হয়! পিতারও অজস্্র প্রশংসা! রাতের দেবীর ভক্ত। তার দয়ায়ই পরিবারে বাতি জ্বলে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মানব জীবনের বীজ যোগানোর ক্ষমতা পিতার মধ্যে নিহিত, কিন্তু পিতার অবস্থান শরীরের ভেতরে অবয়ব দেবার প্রক্রিয়ার বাইরে।
পিতা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে আর মাতা তার শরীরের ভেতরে শিশুকে বড় করে তোলে। এ কারণেই মাতাকে বলা হয় জননী (জন্মদাত্রী), তিনি তার মন ও শরীরের ভেতর থেকে শিশুর শরীর গঠন করেন এবং শিশুকে বড় করে তোলেন।
কন্যা, হাসছে :
আম্মু, তুমি বইয়ের ভাষায় কথা বলছো।
মেয়ে, কেন আমি পাতঞ্জলী পড়ি নি? শ্রবণ, পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা জ্ঞান ঋদ্ধ হয়।
কত ছোট জানালা সেটা কোন বিষয় নয়, লেখক অবশ্যই জেগে উঠে আকাক্সক্ষা ও কৌতূহল নিয়ে আমাদের সম্বন্ধে পৃথিবীকে দেখছে।
একটা গ্রন্থ রচনা
একটা রচনা পুরোপুরি লেখকের দক্ষতা, ধীশক্তি, সচেতনার উপরই নির্ভর করে না। প্রত্যেকটা রচনার পেছনে একটা ঐতিহ্য, নীরবতার মধ্যেও একটা শক্তি থাকে যা, লেখক ও তার লেখার ’পর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া, মানুষের একটা ভাষা আছে, তা সব সময়ই মোলায়েম। একটা সৃজনশীল কাজ একজন লেখকের হাতের খেলনা নয়। এটা একজন লেখকের মানসিক, আদর্শিক, ভাষাগত পরিবেশের ফলাফল। সত্যিটা হচ্ছে যে স্ক্রিপ্টে একজন লেখক শব্দাবলী মাধ্যমে সমাজ সৃষ্টির বীজ বপন করেন।
বলা হয়ে থাকে যে আমি নতুন কাজের দ্বারা আমার ভাষার পরিবর্তন করতে পারি। এটা ইচ্ছা শক্তির দ্বারা সৃষ্ট কাজের ফলাফল নয়। সৃষ্টি নিজ অবস্থানকে সৃজনকারীর ’পর বর্তায়। যখন আমি লিখি, আমি আমার কাজ থেকে একটা নির্দিষ্ট নিরাসক্ত ভাব মেনে চলি- বেশি ঘনিষ্ঠও হই না, দূরেও সরে যাই না। সুশৃঙ্খলা ও ধৈর্যের দ্বারাই এটা সম্ভব। এটা একটা টাইট রোপ ওয়ে। ঘনিষ্ঠতা ও বিচ্ছিন্নতা অবশ্যই মোটামুটি দূরত্বের দিকে টানে, অবশ্যই বিপরীত দিকে।
জিন্দাগিনামা লেখার অভিজ্ঞতার কথা বলবো। ভোরের একটু আগে উপন্যাসটা শেষ করেছিলাম। রচনাটা শেষ করার পর আমি সব সময় নিজে জোরে জোরে পড়তাম। ৪০০ পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস উচ্চস্বরে পড়ার কথা কি ভাবা যায়? আমি কিন্তু এটা না পড়ে থাকতে পারি নি।
একটা লম্বা গল্প। প্রায় ৫০০ চরিত্র এবং অসংখ্য দৃশ্যপট। আমি সারাদিন ধরে পড়লাম, গলা শুকিয়ে গেল। আমি বেশ কয়েক কাপ কফি ও চা পান করলাম। সন্ধ্যা নামলো। শেষ লাইন পড়া শেষ করতে রাত বাড়লো।
আমি টেবিল থেকে উঠে রুমের মাঝে হাঁটছিলাম। আমার ভাবনায় জট পাকিয়ে যাচ্ছিল। আমি অনুভব করলাম উপন্যাসটি শুরু হয়েছিল একটা দুর্বল অনুষঙ্গে- আরো দুর্বল অনুষঙ্গ গল্পটি সামনে দিকে যাচ্ছিল।
আমি কাঁচাভাষা ও গ্রাম্য সমাজের ঐতিহ্যকে সামনে নিয়ে এগিয়ে চললাম। একটা পূর্ণিমার রাত, একটা গ্রামের বাড়ির কর্দমাক্ত উঠোন আমার অন্তর চক্ষুর সামনে ভেসে উঠলো। গ্রামের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ শিশুদের কাছে একটা গল্প বলছেন।
শিশুরা-
শোন শিশুরা-
লেখার জন্য আমি আমার কলম হাতে নিয়েছি, কিন্তু আমার মন শূূূন্য।
চার পাঁচ দিন আমার মনের মধ্যে প্রচ- একটা উথালপাথাল চলার পর একদিন আমার ডেস্কে ফিরে আসলাম। কোন প্রকার পূর্বচিন্তা ছাড়াই আমি সাদা কাগজে একটা লাইন লিখে ফেললাম। শোন, ছেলেমেয়েরা, প্রত্যেকটি ছেলে হচ্ছে তার পিতার জীবন্ত প্রকাশ
এভাবেই শুরু হয়েছিল অদিতি ও প্রজাপতির গল্প, সৃষ্টির গল্প। সৃষ্টি, স্্রষ্টা ও সৃজনশীল অনুষঙ্গ আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সচেতনতায় অনুরঞ্জিত। এটা হচ্ছে সমালোচক কিংবা পাঠকের কাছে একজন লেখকের প্রবেশাধিকার।
আপনি, আমি, আমরা বাতাস থেকে শব্দাবলী চয়ন করে সেগুলোকে গল্পের মাঝে ঢুকিয়ে দেই। আমরা শব্দাবলীকে উল্টিয়ে নতুন ভাবে গঠন করতে পারি। মাঝে মধ্যে আমরা সেগুলোকে স্মরণ করি, মাঝেমধ্যে স্মরণ করতে ভয় পাই। মাঝেমধ্যে আমরা তাদেরকে ঠেলে দেই সচেতনার বাইরে। অন্য সময় তারা আমাদের স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে উঠে। মাঝেমধ্যে আমরা শব্দাবলীর মধ্যে অনেক ধরনের বৈপরিত্য লক্ষ্য করি- আমরা সেগুলোকে এড়িয়ে এগিয়ে যাই। অন্য সময় আমরা শব্দগুলোকে স্মৃতি থেকে সংগ্রহ করে অক্ষরবিন্যাস করি। অব্যক্ত কথা আমরা ব্যক্ত করি- কখনো কখনো একটি মাত্র শব্দে। সময় বয়ে যায়, অগণন সংখ্যক আঙ্গিক, সুর মূর্ছনা ও সঙ্গীত প্রকাশমান হয়। সময় শব্দাবলীর অর্থ পরিবর্তন করে, মানুষের ভোগান্তিতে সময় শব্দাবলীর সাথে সম্পৃক্ত হয় ।
আমরা জন্মগ্রহণ করি শিশু রূপে এবং আমরা জীবন কাটিয়ে দেই স্বপ্ন লালন করে, দিগন্তরেখাগুলো বিস্তারিত হয়। আমরা জীবন সংগ্রামে রত থেকে আমাদের বিশ্বাস ও আশা আকাক্সক্ষাকে অর্থপূর্ণ করি। প্রথা ও অভিজ্ঞতার দ্বারা আমরা আমাদের জীবনকে সীমাহীন স্্েরাতধারায় সম্পৃক্ত করি। এটাই প্রত্যেক লেখকের গল্প। এটাই বার বার সময়ের আবর্তে ফিরে ফিরে আসে। শুরু ও সমাপ্তি একই ধারায় ঘটে। একজন লেখক লক্ষণীয় পটভূমিকা ও অভিজ্ঞতার সাহায্যে তার কাজ সমাধা করে, যা অন্য কাজের চেয়ে স্বতন্ত্র। সম্প্রদায় ও সমাজ লেখককে জায়গা করে দেয়। একজন লেখকের যোগ্যতাই হচ্ছে তার সম্পদ। প্রত্যেকটি শিশুর জন্ম হয় একটা মহাকাব্যের মাঝে, যা শুরু হয়েছিল অনেক অনেক কাল আগে থেকে। শিশু বেড়ে ওঠে বিকশিত হয় এবং তারপর এক সময় ম্লান হয়ে যায়, একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনের সীমা ও সীমাহীনতার গল্প তৈরি হয়। এটা আমার বন্ধুদের গল্প। এটা মানুষের মহাকাব্য, যা আমরা অনুসন্ধান করে লিপিবব্ধ করি একের পর এক।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment