বই পরিচিতি
ব্যাচ একাত্তর
আমাদের মহান স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে এ পর্যন্ত রচিত হয়েছে অনেক উপন্যাস, গল্প-কবিতা, নাটক। লেখা হয়েছে বিশ্লেষণধর্মী অনেক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ সাহিত্য। রক্তাক্ত সংগ্রামের এই ইতিহাসের কথা নানাভাবেই উঠে এসেছে আমাদের সাহিত্যে। প্রবাসী সাহিত্যিক মাসুম আহমেদ রচিত ‘ব্যাচ একাত্তর’ শিরোনামের নাট্যগ্রন্থটিও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা স্মরণ করে দেয় আরেকবার। শিরোনামেই যার খানিকটা আভাস মেলে। এ নাটকে মূলত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয় বরং চার দশক পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি এখানে মুখ্য হয়ে ফুটে ওঠে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজে প্রক্রিয়া চলছে। এ সময়ে দেশে চলমান রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা কারণে সঙ্কট দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আর এই অবস্থাটি কয়েক প্রবাসী বাংলাদেশীর চোখ দিয়ে অবলোকনের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পর অনেকে এ দেশ ছেড়ে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ভিন দেশে পাড়ি দেয়; যাঁদের অনেকেই দেশের জন্য সীমাহীন মমতা অনুভব করেন। আবার কেউ কেউ আছেন তার বিপরীত। স্বাধীনতার কয়েক দশক পর এরা বাংলাদেশী নামক একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে এই প্রবাসীদের দেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জীবন সায়াহ্নে উপনীত এসব প্রবীণ নিজেরাও কিঞ্চিৎ দ্বিধান্বিত দেশের প্রতি তাদের অবদান নিয়ে। অথচ ‘এরা বাংলাদেশী’ এই প্রবীণ প্রবাসী নাগরিকদের সম্মাননা জানাতেই দেশের ব্যয়বহুল রিসোর্টে থাকা-খাওয়ার যাবতীয় সুবিধাসমেত আমন্ত্রণ করেছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী দুই দম্পতি। কানাডা প্রবাসী মন্তাজ ও এজাজ। আরও আছেন ভারত থেকে আগত নীতিশ ও তার বাসন্তী। নাটকের কুশীলবদের মধ্যে এরা বাংলাদেশী কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়াও উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র রয়েছে। চরিত্রগুলোর মাধ্যমে মূলত বর্তমান বাংলাদেশের কিছু খ-চিত্রের উপস্থাপন ও এর প্রতিক্রিয়ার চিত্রও তুলে ধরা হয়। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে এঁদের অনেকেই দেশের প্রতি এক ধরনের মমতা অনুভব করেন। এই গভীর মমত্ববোধ থেকে স্বদেশের তরে জনহিতকর কাজ করার আগ্রহও দেখান। আবার অনেকেই একাত্তরের দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণ করে এখনও সে গভীর ক্ষতের বেদনা অনুভব করেন। সেসব যুদ্ধস্মৃতি এখনও কারও কারও জীবনে এতটাই স্পষ্ট হয়ে ধরে দেয় যে বর্তমান সময়টাকেও আড়াল করে ফেলে। বর্তমান সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ আর যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ এই দুয়ের ঘটনাপ্রবাহে নাটকের কাহিনী এগিয়ে যায়।
‘ব্যাচ একান্তর’ এর মাধ্যমে মাসুদ আহমেদ এক নতুন মিশনের সঙ্গে পরিচয় করে দিতে চেয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ বলেই হয়ত তিনি নতুন মুখোশধারী বা ছদ্মবেশীর কৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা করেছেন। পাঠক মনে কৌতূহল তৈরির জন্য কৌশলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা আর দিলাম না। তবে শেষ কথায় এটুকু বলব, চমৎকার এই কৌশলটি উপস্থাপনে রচয়িতা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন আর তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভাষা আন্দোলনের অনন্য দলিল
ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী অগ্নিপুরুষরা আমাদের চেতনার পৃথিবীতে প্রথম আগুন জ্বেলে দেয়। সে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি জাতির চৈতন্যের প্রতিটি পথে, গলিতে প্রান্তরে। বাঙালিরা অধিকার আদায়ের বোধে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত হয়। তাদের কষ্ট উচ্চকিত হয়ে ওঠে। গোটা জাতি স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চারিত হয়। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে পৌঁছে যায় অভীষ্ট গন্তব্যে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় ঘটে। যা ভাষা আন্দালনের সূত্রধরে অর্জিত হয়। সে কারণে বলা যায় ভাষা সংগ্রামীরা স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা কিংবা পথ প্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে। এ আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তারা অবশ্যই অমর, চিরঞ্জীব এবং অবিনশ্বর। তরুণ, গবেষক, লেখক, ইতিহাসবিদ। এম আর মাহবুব ভাষা আন্দোলনে নানাভাবে সম্পৃক্ত ২১৪ জন ভাষা সংগ্রামীর জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন তার ‘যারা অমর ভাষা সংগ্রামে’ গ্রন্থটির মাধ্যমে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন অনিন্দ্য প্রকাশনী। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। গ্রন্থটির মুখবন্ধ রচনা করেছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী এবং গ্রন্থটিতে কবি বেলাল চৌধুরীর মতামত সন্নিবেশিত হয়েছে। খুব সাবলীল ভাষা বিন্যাসে লেখক এম আর মাহবুব নির্বাচিত ভাষা সংগ্রামীদের পরিচয় এবং তাদের বর্ণাঢ্য জীবনের কথকতা নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার সব রচনার মধ্যে নিরপেক্ষতা ও মননশীলতা লক্ষণীয়। এম আর মাহবুবের এই স্মারক গ্রন্থটি ভাষা আন্দোলনের অনন্য দলিল হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ গ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বেলিত করবে। যারা ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাজে এই গ্রন্থটি সহায়ক ভুমিকা রাখবে। এম আর মাহমুবের এই গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার কামনা করি।
সাগর জামান
আমাদের মহান স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে এ পর্যন্ত রচিত হয়েছে অনেক উপন্যাস, গল্প-কবিতা, নাটক। লেখা হয়েছে বিশ্লেষণধর্মী অনেক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ সাহিত্য। রক্তাক্ত সংগ্রামের এই ইতিহাসের কথা নানাভাবেই উঠে এসেছে আমাদের সাহিত্যে। প্রবাসী সাহিত্যিক মাসুম আহমেদ রচিত ‘ব্যাচ একাত্তর’ শিরোনামের নাট্যগ্রন্থটিও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা স্মরণ করে দেয় আরেকবার। শিরোনামেই যার খানিকটা আভাস মেলে। এ নাটকে মূলত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয় বরং চার দশক পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি এখানে মুখ্য হয়ে ফুটে ওঠে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজে প্রক্রিয়া চলছে। এ সময়ে দেশে চলমান রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা কারণে সঙ্কট দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আর এই অবস্থাটি কয়েক প্রবাসী বাংলাদেশীর চোখ দিয়ে অবলোকনের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পর অনেকে এ দেশ ছেড়ে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ভিন দেশে পাড়ি দেয়; যাঁদের অনেকেই দেশের জন্য সীমাহীন মমতা অনুভব করেন। আবার কেউ কেউ আছেন তার বিপরীত। স্বাধীনতার কয়েক দশক পর এরা বাংলাদেশী নামক একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে এই প্রবাসীদের দেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জীবন সায়াহ্নে উপনীত এসব প্রবীণ নিজেরাও কিঞ্চিৎ দ্বিধান্বিত দেশের প্রতি তাদের অবদান নিয়ে। অথচ ‘এরা বাংলাদেশী’ এই প্রবীণ প্রবাসী নাগরিকদের সম্মাননা জানাতেই দেশের ব্যয়বহুল রিসোর্টে থাকা-খাওয়ার যাবতীয় সুবিধাসমেত আমন্ত্রণ করেছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী দুই দম্পতি। কানাডা প্রবাসী মন্তাজ ও এজাজ। আরও আছেন ভারত থেকে আগত নীতিশ ও তার বাসন্তী। নাটকের কুশীলবদের মধ্যে এরা বাংলাদেশী কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়াও উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র রয়েছে। চরিত্রগুলোর মাধ্যমে মূলত বর্তমান বাংলাদেশের কিছু খ-চিত্রের উপস্থাপন ও এর প্রতিক্রিয়ার চিত্রও তুলে ধরা হয়। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে এঁদের অনেকেই দেশের প্রতি এক ধরনের মমতা অনুভব করেন। এই গভীর মমত্ববোধ থেকে স্বদেশের তরে জনহিতকর কাজ করার আগ্রহও দেখান। আবার অনেকেই একাত্তরের দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণ করে এখনও সে গভীর ক্ষতের বেদনা অনুভব করেন। সেসব যুদ্ধস্মৃতি এখনও কারও কারও জীবনে এতটাই স্পষ্ট হয়ে ধরে দেয় যে বর্তমান সময়টাকেও আড়াল করে ফেলে। বর্তমান সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ আর যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ এই দুয়ের ঘটনাপ্রবাহে নাটকের কাহিনী এগিয়ে যায়।
‘ব্যাচ একান্তর’ এর মাধ্যমে মাসুদ আহমেদ এক নতুন মিশনের সঙ্গে পরিচয় করে দিতে চেয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ বলেই হয়ত তিনি নতুন মুখোশধারী বা ছদ্মবেশীর কৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা করেছেন। পাঠক মনে কৌতূহল তৈরির জন্য কৌশলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা আর দিলাম না। তবে শেষ কথায় এটুকু বলব, চমৎকার এই কৌশলটি উপস্থাপনে রচয়িতা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন আর তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভাষা আন্দোলনের অনন্য দলিল
ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী অগ্নিপুরুষরা আমাদের চেতনার পৃথিবীতে প্রথম আগুন জ্বেলে দেয়। সে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি জাতির চৈতন্যের প্রতিটি পথে, গলিতে প্রান্তরে। বাঙালিরা অধিকার আদায়ের বোধে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত হয়। তাদের কষ্ট উচ্চকিত হয়ে ওঠে। গোটা জাতি স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চারিত হয়। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে পৌঁছে যায় অভীষ্ট গন্তব্যে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় ঘটে। যা ভাষা আন্দালনের সূত্রধরে অর্জিত হয়। সে কারণে বলা যায় ভাষা সংগ্রামীরা স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা কিংবা পথ প্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে। এ আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তারা অবশ্যই অমর, চিরঞ্জীব এবং অবিনশ্বর। তরুণ, গবেষক, লেখক, ইতিহাসবিদ। এম আর মাহবুব ভাষা আন্দোলনে নানাভাবে সম্পৃক্ত ২১৪ জন ভাষা সংগ্রামীর জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন তার ‘যারা অমর ভাষা সংগ্রামে’ গ্রন্থটির মাধ্যমে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন অনিন্দ্য প্রকাশনী। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। গ্রন্থটির মুখবন্ধ রচনা করেছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী এবং গ্রন্থটিতে কবি বেলাল চৌধুরীর মতামত সন্নিবেশিত হয়েছে। খুব সাবলীল ভাষা বিন্যাসে লেখক এম আর মাহবুব নির্বাচিত ভাষা সংগ্রামীদের পরিচয় এবং তাদের বর্ণাঢ্য জীবনের কথকতা নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার সব রচনার মধ্যে নিরপেক্ষতা ও মননশীলতা লক্ষণীয়। এম আর মাহবুবের এই স্মারক গ্রন্থটি ভাষা আন্দোলনের অনন্য দলিল হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ গ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বেলিত করবে। যারা ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাজে এই গ্রন্থটি সহায়ক ভুমিকা রাখবে। এম আর মাহমুবের এই গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার কামনা করি।
সাগর জামান
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment