Thursday, June 26, 2014

আম ছাড়া চলে গেল বাংলার মধুমাস

আম ছাড়া চলে গেল বাংলার মধুমাস
মাহবুব রেজা
মধুমাস চলে যাচ্ছে। বাজারে মধুমাসের নানা রকমের ফলও পাওয়া যাচ্ছে। নানা রঙের, নানা স্বাদের সুস্বাদু ফলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। চারদিকে ফলের ম-ম গন্ধ। মানুষের আগ্রহ মধুমাসের বিচিত্র স্বাদের এসব ফল-ফলাদির ওপর। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বাজারে এসব ফলের যোগান থাকলেও মানুষের মধ্যে কাজ করছে ফরমালিন আতঙ্ক। মধুমাসের ফলমূলে ফরমালিন ও কার্বাইড মেশানোর ফলে তা মানব দেহের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রাণঘাতী ফরমালিনের কারণে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা পেশার মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাই সঙ্গতকারণে এ বছর দেশের ফলের বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফরমালিন মেশানোর কারণে ফল কেনার ব্যাপারে আগ্রহ কমে গেছে সাধারণ মানুষের। সাধারণ মানুষ তাই প্রশ্ন তুলেছে, গাঁটের টাকা খরচ করে ফল খাওয়ার নামে পরিবারের মানুষজনকে তো বিষ খেতে দিতে পারি না। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবাকে আরও নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোও বিশেষ তৎপর ভূমিকা রাখছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফলফলারিতে ফরমালিন আছে কি-না তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকার আটটি পয়েন্টে চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছে যাদের কাজ হবে ট্রাক-বাসে আনা আম-জাম-লিচু-কাঁঠালসহ অন্যান্য ফলে ফরমালিন আছে কি-না তা যন্ত্রের মাধ্যমে শনাক্ত করা এবং ফরমালিন মিশ্রিত সেসব ফল ধ্বংস করে দেয়া। ফরমালিন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ মধুমাসের ফল খেতে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করছে- অন্যদিকে ফল ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফল ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এ বছর তাদের ব্যবসা রমরমা চলছে না বরং সাধারণ মানুষ ফলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার ফলে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। তাদেরকে হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এত কিছুর পরও মধুমাসের রেশ চলছে। মধুমাসের ফল পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের ঘরে। মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে যৎসামান্য ফল কিনে তা বিশেষ ব্যবস্থায় খাচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ফরমালিন মিশ্রিত ফল কুসুম-গরম পানিতে আধা-ঘণ্টা ডুবিয়ে রেখে তা খেলে ততটা আশঙ্কা থাকে না। মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে মধুমাসের ফল খাচ্ছে। বাঙালী এমনিতে উৎসব-পার্বণ পালন করা জাতি বলে বিশেষ পরিচিত-তারা উৎসব পার্বণকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে প্রাণের মেলবন্ধনে। মধুমাসকেও বাঙালী উৎসব বলে গণ্য করে। গ্রামে-গঞ্জে মধুমাস এসে উপস্থিত হলে মানুষের মধ্যে আনন্দের ধুম পড়ে যায়- তারা মধুমাস পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মধুমাসে মেহমান-অতিথিদের বাড়িতে ঘরের ফল পাঠিয়ে তাদেরকে সম্মানিত করা হয়। বিশেষ করে মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে নানা রকমের ফল (অবশ্যই তা মধুমাসের) উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে বাঙালীর সংস্কৃতিতে। মধুমাস তাই প্রাণের মাস। মধুমাস তাই উদযাপনের মাস। মধুমাস মানুষে-মানুষে ভ্রাতৃত্ব তৈরির মাস। মধুমাস মানুষের ভালবাসা তৈরি হওয়ার মাস।
আম। মধুমাসের অন্যতম প্রধান ফল। আম ছাড়া যেন মধুমাসের পূর্ণতা হয় না। আম নিয়ে গুণকীর্তন করতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন, ‘ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে...’ সত্যিই পাকা আমের লোভনীয়, মাদকতাময় ঘ্রাণে কে না পাগল হয়! আমকে বলা হয় ফলের রাজা। প্রাচীনকাল থেকেই ফলের রাজা হিসেবে আম এই উপমহাদেশে স্বীকৃত। চার হাজার বছর ধরে আম পৃথিবীর মানুষের রসনাকে নানাভাবে পরিতৃপ্ত করে আসছে। ইতিহাসপ্রসিদ্ধ কবি আমীর খসরু চতুর্দশ শতাব্দীতে আমকে হিন্দুস্তানের সেরা ফল হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন। আমের গুণকীর্তন শত শত বছর ধরে চলে আসছে। আধুনিককালে বিখ্যাত উদ্যানবিদ পোপেনো আমকে আখ্যায়িত করেছেন ‘প্রাচ্যের ফলের রাজা’ হিসেবে।
আমাদের দেশের মানুষও আম দারুণ পছন্দ করে। পছন্দের প্রথম নাম্বারে আম জায়গা দখল করে আছে। রসালো আমের প্রাণ হরণ করা স্বাদে বাঙালী শত শত বছর ধরে অভ্যস্ত। বর্তমানে পঁয়ত্রিশ ধরনের আম আমাদের দেশে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গোপালভোগ, মালভোগ, ল্যাংড়া, সন্দুরী, ভবানী, চম্পা, দাউনিয়া, সুরম্পা, বৈশাখী, পাঞ্জাছন্দ, সরঈম, সিঁদুরফোটা, বউভোলানী, হিমসাগর, কাজলী, কলাবতী, ফজলি, মোহনভোগ, কোহিতুর, গোলাপখাস, সামার বাহিশত চৌসা, আশ্বিনা, সটিয়ার করা (আশু), সূর্যপুরী, মাধ্যমিকা, কুয়া পাহাড়ি, বোম্বাই, লতা-বোম্বাই, কিষাণভোগ, খীর্সাপাতী প্রভৃতি আমের স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণে এ ফল বাংলাদেশের মানুষের জনপ্রিয়।
গ্রীষ্মম-লীয় আবহাওয়ার কারণে আমাদের দেশে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, লেবু, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, পেয়ারা, জামরুল, বেল, কদবেল, ডেউয়া, টেরখই, ডেফলসহ নানা ধরনের ফল পাওয়া যায়। মধুমাসের ফলের মধ্যে আমের রয়েছে নানা গুণাগুণ। ক্যান্সার, লিউকেমিয়া প্রতিরোধে এ্যান্টি অক্সিনেন্টসমৃদ্ধ ঔষধি গুণে গুণান্বিত আম। আমের মধ্যে ভিটামিন এ, বি, সি আমাদের প্রাণ-শক্তি যোগাড় করে। আমাদের দেশের আমের ব্যাপক উৎপাদন হয়। এক পরিসংখ্যান জানা যায়, গত বছর (২০১৩) আমাদের দেশে আম উৎপন্ন হয়েছে প্রায় দশ লাক টন। দেশে উৎপাদিত আমের প্রায় ২৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় জুস উৎপাদন খাতে। আম দিয়ে তৈরি এ জুস এখন দেশের বাইরে রফতানিও হচ্ছে। তাছাড়া কাঁচা ও পাকা আম মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ায় রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, আমাদের দেশে মৌসুমী ফল মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টন আর এতে মোট জমি ব্যবহৃত হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর।
গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে প্রচ- গরম পড়ে। গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ মৌসুমী ফলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। চিকিৎসাশাস্ত্রে এর শরীরতত্ত্বীয় প্রভাবও কাজ করে-চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, মৌসুমী ফলের মধ্যে রয়েছে নানা রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা। গরমে সাধারণত সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-জ্বরে মানুষ আক্রান্ত হয়। মৌসুমী ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, প্রোটিন। এছাড়া মানব দেহের বিশেষ উপকারী উপাদান ভিটামিন বি-৬, ফাইবার কপার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পেকটিস ফাইবার রোগ প্রতিরোধ করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে দৃষ্টিশক্তিকেও শাণিত করে মৌসুমী ফল।
আমের পর কাঁঠাল বাঙালীর অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় ফল। জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল সমধিক পরিচিত। দামে সস্তা হওয়ায় গরিব-ধনী নির্বিশেষে সবার কাছে কাঁঠাল সহজলভ্য। নানা প্রজাতির কাঁঠাল পাওয়া যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে এর সব অংশই মানুষের ব্যবহারোপযোগী। রসালো ফল হিসেবে কাঁঠাল এই উপমহাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। কাঁঠালের পাশাপাশি লিচু, জাম, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ, বাঙ্গি ফলও সাধারণ মানুষের কাছে লোভনীয়। বছর দশেক আগেও মানুষ ফরমালিনের নাম জানত না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফরমালিনের নাম-ডাক এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে সাধরণ মানুষ এর নাম শুনলে ভয় ও আতঙ্কে শিউরে ওঠে। বছরখানেক ধরে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে বিভিন্ন ফলে ফরমালিন, কার্বাইড, ইথোফেনসহ নানারকম কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। সাধারণত ফল পাকাতে ও একে দীর্ঘদিন অটুট রাখতে ফলে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। ফরমালিন মেশালে ফল দিনের পর দিন সজীব ও অটুট থাকে। শুধু ফল নয়, অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীতেও দেদার ফরমালিন মেশাচ্ছে। ফলে বর্তমানে জনস্বাস্থ্য পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। ফরমালিনের কারণে আম, জাম, লিচুসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের প্রতি সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। মানুষের মনে তাই প্রশ্ন জেগেছে, বিজ্ঞানের এ যুগে এসে মধুমাসের নামে আমরা কী ফল খাচ্ছি না বিষ খাচ্ছি, একটা সময় ছিল যখন মৃতদেহ সংরক্ষণ করার জন্য তাতে ফরমালিন ব্যবহার করা হতো। অথচ কালের পরিক্রমায় এখন দেখা যাচ্ছে ফলকে দ্রুত পাকাতে এবং এর দীর্ঘস্থায়িত্ব ধরে রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফরমালিন মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে। ফরমালিন মিশ্রিত এসব ফল খেলে মানুষের কিডনি, লিভার অকেজো হয়ে যায়। হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে, মস্তিষ্কে কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়- সর্বোপরি পাকস্থলী, ফুসফুস ও শাসনালীত ক্যান্সার এবং ব্লাড ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাজারের আম ও লিচুর শতকরা নব্বই ভাগই ফরমালিন মিশ্রিত। জামের মধ্যে রয়েছে শতভাগ ফরমালিন। মৌসুমী ফলের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে রাসায়নিক দ্রব্য। এসব ফল খেয়ে হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। সম্প্রতি ফরমালিন মিশ্রিত ফল বিক্রি রোধে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা জারি করলেও তা কার্যত পালিত হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতির কারণে বাজারে ফরমালিন মিশ্রিত ফল আছে কি না তা পর্যবেক্ষণের কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে ফরমালিন যুক্ত ফল বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। তবে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ফরমালিনযুক্ত ফল বিক্রি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফল পরীক্ষা করে তাৎক্ষণিকভাবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ মৌসুমী ফল কেনার ব্যাপারে হয়ত সাময়িকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এর ফলে সে সচেতন হয়ে উঠছে। ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে ক্রেতারর যে ক্ষতিকর সম্মুখীন হবে তার মূল্য টাকা দিয়ে হিসাব করা যাবে না- জীবন দিয়ে তার মূল্য শোধ করতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে তাই সোচ্চার দাবিও উঠেছে, আমরা প্রয়োজনে ফল খাওয়া বন্ধ করে দেব তবু ফরমালিনযুক্ত ফল কিনে নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করব না। তারা বলছে, সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলো আরও জোরদার ও কার্যকর থাকলে আগামী প্রজন্ম ফরমালিনের কবল থেকে মুক্তি পাবে।
মধুমাস নিয়ে কত গল্প কবিতা প্রবন্ধ আমাদের সাহিত্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সে সব রচনার মধ্যে মধুমাস মূর্ত হয়ে ওঠে নানা মাত্রায়। গ্রামাঞ্চলের মানুষ একটা সময় সারা বছর অপেক্ষা করে থাকত কবে মধুমাস আসবে, কবে মজার ফল-ফলারিতে প্রকৃতি ভরে উঠবে। মধুমাসের স্মৃতি ঘটনা নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক সৃজনশীল উপাখ্যান। কালের বিবর্তনে সে সব আজ শুধুই ইতিহাস। বর্তমানের মধুমাস আর আগের মতো নয়। ভেজাল ভেজালে সয়লাব হয়ে গেছে মধুমাসের পবিত্রতা। ফরমালিন কার্বাইড, ইথোফেনে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে আমাদের মধুমাস। বাজারে মধুমাসের ফলে এখন গুনগুন করে বিষাক্ত সব রাসায়নিক পদার্থ। বিচিত্র রঙের, বিচিত্র ঢঙের মৌসুমী ফল দেখে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই এর ভেতরে রয়েছে জীবনঘাতী বিষাক্ত পদার্থ। আগে যেখানে ফলের দোকানে মাছি, মৌমাছির উৎপাতে টেকা যেত না সেখানে বর্তমানে ফলের বাজারগুলোতে মাছির দেখা পাওয়া যায় না। পরিবেশবিদরা বলছেন, ফলে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানোর কারণে প্রকৃতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে- পাশাপাশি প্রাণী জগতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফরমালিনের কারণে পরিবেশ ও প্রাণী জগতেরও ক্ষতি হচ্ছে।
বাঙালী ভোজনরসিক হিসেবেও পৃথিবীতে নিজেদের পরিচিতিকে বিস্তৃত করেছে। রসনা বিলাসকে কিভাবে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয় তা বাঙালী পৃথিবীবাসীকে শিখিয়েছে। অতি প্রাচীনকাল থেকে বাঙালী এ ব্যাপারে তার সুনাম অক্ষুণœ রেখেছে। খাবার শেষে ফলাহার যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা এই উপমহাদেশের মানুষ বিশ্ববাসীকে শিখিয়েছে। প্রধান খাবারের পর ফল খাওয়া যে হজমের জন্য সবিশেষ উপকারী তা এখন স্বীকৃত। এই উপমহাদেশে ভৌগোলিক কারণেই নানা ধরনের ফল উৎপন্ন হতো। মাটি ও অঞ্চল ভেদে ফলের স্বাদ, রকম ও বৈশিষ্ট্যও বদলে যেত। বিদেশীরা এ দেশের নানা রকম ফলের প্রতি আকৃষ্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে মধুমাসের ফল প্রায় শেষের পথে। ফরমালিনের কারণে এ বছর মধুমাসের ফল বিক্রির পরিমাণ অন্যান্য বছরের মতো সে রকম আশাব্যঞ্জক না হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ তথ্যটি পৌঁছে গেছে- ফরমালিন মিশ্রিত ফল খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভাল। জনস্বাস্থ্যের দিকটাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে ধরে বলা হয়েছে, কোন অবস্থাতেই ফরমালিনযুক্ত ফল খাওয়া চলবে না- এই ফল আহারে জীবন বিনাশ হওয়ার আশঙ্কা আছে। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ফল খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই শ্রেয়।
ফলপ্রিয় মানুষ মনে করছে, ফরমালিন মেশানোর কারণে এ বছর মুধমাসের ফল সে রকম খাওয়া না গেলেও আশা করা যায় আগামী বছর এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। তারা মনে করছে, ফরমালিনের ব্যাপারে ফল উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হলে তারা কোনভাবেই ফলে ক্ষতিকর ফরমালিন, কার্বাইড, ইথোফেনসহ বিষাক্ত দ্রব্য মেশাতে পারবে না। এটা করা গেলে সাধারণ মানুষ ফলের প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠবে। আর উৎসাহী হয়ে উঠলে মধুমাস ফিরে আসবে আগের মতো। বাংলার মানুষ সামনের মধুমাসে ফলের ঘ্রাণে, ফলের স্বাদে নিজেদের উজ্জীবিত করতে চায়, বাড়িয়ে তুলতে চায়।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment