Monday, June 16, 2014

‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ সারদায়, জানাল সিবিআই

‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ সারদায়, জানাল সিবিআই

duo
এই সময়: সারদা-কাণ্ডে প্রথমবার অভিযুক্তদের হেফাজতে পাওয়ার দিনই এই আর্থিক দুর্নীতিতে 'বৃহত্তর ষড়যন্ত্র' হয়েছে বলে উইটনেস-বক্সে উঠে অভিযোগ তুললেন সিবিআই-এর তদন্তকারী অফিসার৷ শুধু 'বৃহত্তর ষড়যন্ত্র'ই নয়, সারদা-র 'নিয়ন্ত্রক' গোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি থেকে আসা সিবিআই দল৷ সোমবার সুদীপ্ত সেন, কুণাল ঘোষ-সহ সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত ছ'জনকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে পাওয়ার আগে সিবিআই-এর তদন্তকারী অফিসার ও আইনজীবীদের এহেন অভিযোগের জেরে এক বছরের দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলা কার্যত নতুন মাত্রা পেল৷ অন্য দিকে, সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত এবং সাসপেন্ডেড তৃণমূল সাংসদ কুণাল দু'জনেই এ দিন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে একাধিকবার জানিয়েছেন, সিবিআই-কে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন তাঁরা৷ সিবিআই-কে দীর্ঘ চিঠি লেখা সুদীপ্ত ও কুণালের এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় সিবিআই তদন্তে এবার শাসকদল এবং শাসকদল ঘনিষ্ঠ কেউ-কেউ সমস্যায় পড়বেন কি না, এ দিনের ঘটনার পর আবারও উঠেছে সে প্রশ্ন৷ ঘটনাচক্রে সুদীপ্ত অথবা কুণাল--কারও আইনজীবীর তরফেই এ দিন আদালতের কাছে জামিনের আবেদন করা হয়নি৷

এ দিন সকাল ১০টা বেজে ৪৪ মিনিটে আলিপুর আদালতের পুলিশ লক-আপের সামনে একটি প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয় সুদীপ্তকে (ওই ভ্যানে তিনি একাই ছিলেন)৷ বিরাট পুলিশি আয়োজনে এরপর একে-একে দেবযানী মুখোপাধ্যায়, মনোজ নাগেল, অরবিন্দ সিং চওহান, কুণাল এবং সোমনাথ দত্তকে তোলা হয় লক-আপে৷ ১১টা বেজে ৩১ মিনিটে প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে হাসিমুখ কুণালের প্রশ্ন ছিল, 'আর্জেন্টিনার রেজাল্ট কী?' '২-১' উত্তর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা, 'মেসি দিয়েছে তো?'

দুপুর ২টোর সময় অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হারাধন মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে তোলা হয় অভিযুক্তদের৷ শুরু হয় সিবিআই এবং অভিযু্ক্তদের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ৷ অভিযুক্তদের চার আইনজীবীর তরফে মূলত দু'টি অভিযোগ করা হয়: (এক) সিবিআই-এর তরফে 'শোন অ্যারেস্ট'-এর যে আবেদন করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন৷ আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা (মনোজ, অরবিন্দ ও দেবযানীর আইনজীবী) ও শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় (সোমনাথের আইনজীবী) দু'জনেই বারবার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মামলাগুলিকে 'ট্রান্সফার' অর্থাত্‍ অন্যত্র সরানোর কথা বলা হয়েছে৷ ৪ মে সিবিআই সারদা-কাণ্ডে যে নতুন মামলাটি করে--আইনজীবীদের বক্তব্য অনুযায়ী--সেগুলি ইতিমধ্যে হওয়া ৫৫টি মামলার 'ক্লাব' (সম্মিলিত যোগফল)৷ প্রসঙ্গত, হেফাজতে থাকাকালীন যদি অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা এক বা একাধিক অভিযুক্তকে নতুন করে গ্রেপ্তার করতে চায়, তখন 'শোন অ্যারেস্ট'-এর আবেদন করতে হয় আদালতে৷ (দুই) এমতাবস্থায় নতুন মামলা বা এফআইআর রুজু করার যৌক্তিকতা কোথায়? আইনজীবীদের বক্তব্য, সেই মামলাগুলির কোনওটিতে অভিযুক্তেরা পুলিশি বা বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থেকেছেন, কোনও ক্ষেত্রে চার্জশিট জমা পড়ে গিয়েছে, কোনও মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ সেক্ষেত্রে নতুন মামলা হলে আবার তাঁদের মক্কেলদের হেফাজতে যেতে হবে৷ অনির্বাণবাবু বলেন, 'তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ বাজেয়াপ্ত করার কারণ দর্শিয়ে সিবিআই-এর তরফে নতুন এফআইআর করার যে কথা বলা হচ্ছে, তা স্ববিরোধী৷ কারণ এর অর্থ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্তকারী সংস্থাগুলি সে সব নথি বাজেয়াপ্ত করেছে৷ তাহলে কি গত এক বছরে তদন্তই হয়নি?' এ দিন সুদীপ্ত ও কুণালের আইনজীবী হিসেবে যথাক্রমে উপস্থিত ছিলেন নরেশ বালোড়িয়া ও সৌমজিত্‍ রাহা৷

অভিযুক্তদের প্রথম অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই-এর আইনজীবীদের যুক্তি, সারদায় 'বৃহত্তর ষড়যন্ত্র' হয়েছে৷ পুনরায় তদন্তের স্বার্থে তাই নতুন এফআইআর করা যায়৷ দিল্লি থেকে সিবিআইএ-র তরফে এসেছিলেন আইনজীবী ভি কে শর্মা ও তদন্তকারী অফিসার (আইও) ফণীভূষণ করণ৷ সিবিআই-এর বক্তব্য শোনার জন্য আইও-কে উইটনেস বক্সে ডাকেন ম্যাজিস্ট্রেট৷ নিজেদের বক্তব্যের সাপেক্ষে মোট তিনটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন কারনাল৷ (এক) সারদা-কাণ্ডে 'বৃহত্তর ষড়যন্ত্র' হয়েছে৷ (দুই) টাকা শেষমেশ কোথায় গেল, তা এখনও জানা যায়নি এবং (তিন) সারদা-র 'নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী' (রেগুলেটরি বডি)-র ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন রয়েছে৷

শেষমেশ ম্যাজিস্ট্রেট জামিনের আবেদন খারিজ করার পর ছয় অভিযুক্তকেই সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ আদালত চত্বর থেকে বেরনোর সময় দু'টি পৃথক প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর সুদীপ্ত ও কুণাল দু'জনেই কার্যত একই সুরে কথা বলেছেন দু'বার৷ সুদীপ্ত বলেন, 'সঠিক তদন্ত হোক৷ মানুষ টাকা ফেরত পান৷ সিবিআই-কে সর্বোতভাবে সহযেগিতা করব৷ আপনাদের কাছে (সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে)-ও যদি কোনও তথ্য থাকে, সিবিআই-কে দিন৷' কুণাল বলেন, 'সিবিআই তদন্তই চেয়েছিলাম৷ আমি খুশি৷' সংবাদমাধ্যমকে যে নামগুলি বলেছেন, সেগুলি সিবিআই-কে বলবেন তিনি? সুদীপ্তর মতো তাঁরও উত্তর, 'যা বলার, সিবিআই-কেই বলব৷'

No comments:

Post a Comment