অযোগ্য ও বুড়োদের তদবিরে অতিষ্ঠ বিএনপির হাইকমান্ড
হাবিবুর রহমান খান
প্রকাশ : ০৪ জুন, ২০১৪
যুবদল ও ছাত্রদলের পুনর্গঠনকে সামনে রেখে পদ প্রত্যাশী নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে না থাকলেও নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিতে চালাচ্ছেন নানা লবিং তদবির। নয়াপল্টন থেকে শুরু করে চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয় প্রতিদিনই নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করছেন তারা। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিভিন্ন নেতার বাসায়ও ধরনা দিচ্ছেন। যুবদল ও ছাত্রদলের জন্য যারা দৌড়ঝাঁপ করছেন তাদের বেশিরভাগই অযোগ্য, সুবিধাবাদী এবং বুড়ো। এদের তদবিরে বিএনপির হাইকমান্ডও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি কয়েকজন আগামী কমিটিতে তাদের ব্যাপারে একটু নজর রাখার অনুরোধ জানান। প্রথমে তিনি ধরে নিয়েছিলেন, তারা যুবদল বা স্বেচ্ছাসেবক দলে শীর্ষ পদের জন্য তদবিরে এসেছেন। কিন্তু আলোচনার এক পর্যায়ে যখন জানতে পারলাম তারা ছাত্রদলের পদ পেতে লবিং করছেন তখন নির্বাক হয়ে পড়ি। চল্লিশোর্ধ্ব এসব নেতা ছাত্রদলের জন্য লবিং করতে এসেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই নেতা বলেন, চল্লিশের আগে তারা যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, যুবদলের শীর্ষ পদ পেতেও সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নেতা তার কাছে এসেছিলেন। সত্যি বলতে, নানা তদবির চালিয়েও ওইসব নেতা সর্বোচ্চ সংগঠনের সহ-সভাপতি বা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে পারেন। অথচ এরা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এজন্য দলের নীতিনির্ধারকরাও অনেকটা দায়ী। কারণ তাদের কল্যাণে অতীতে এ রকম অযোগ্য ও বুড়োরা যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পেরেছেন।
যুবদল : ২০১০ সালের ৪ মার্চ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি ও সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্প্রতি যুবদলের কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে যুবদলে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন আলাল।
বিগত আন্দোলনে আত্মগোপনে থাকলেও পদ লাভের আশায় নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদিন গুলশান কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি গ্র“প মহড়া দিচ্ছে। তবে পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে কারও কারও ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। অনেকে দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না। আবার অনেকের সর্বোচ্চ সহ-সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা থাকলেও তারাও সভাপতি হওয়ার জন্য তদবির চালাচ্ছেন।
যুবদলের সভাপতি পদে যেসব নেতা দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমূখ। কয়েক মাস আগে সভাপতি হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নাম শোনা গেলেও বর্তমানে তিনি আলোচনায় নেই। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, এসএম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
ছাত্রদল : সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল ও হাবিবুর রশিদ হাবিবের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। কিন্তু বিগত আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার কারণে নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া। সম্প্রতি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে ছাত্রদল ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করার কথা জানান তিনি। খালেদা জিয়ার এমন সিদ্ধান্তে সংগঠনের নেতারা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। বিগত আন্দোলনে কাউকে রাজপথে দেখা না গেলেও কমিটি পুনর্গঠনের শব্দে তারা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদিন গুলশান আর নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করছেন তারা। রাজধানীর কয়েকটি স্পটেও সন্ধ্যার পর সমর্থকদের নিয়ে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বুড়োদের দায়িত্ব দেয়ার কারণেই বিগত আন্দোলনে ছাত্রদল তাদের অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। স্ত্রী-সন্তান আর নানাভাবে অর্জিত অবৈধ সম্পদ রক্ষায় তারা রাজপথ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু যারা নেতৃত্বে আসতে লবিং তদবির শুরু করেছেন তাদের বয়সও চল্লিশের ঊর্ধ্বে। বিগত আন্দোলনেও তারা রাজপথে না নেমে আত্মগোপনে চলে যায়।
নতুন কমিটিতে আসার জন্য যারা নিয়মিত লবিং তদবির ও শোডাউন করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সহ-সভাপতি তরুণ দে, আবু সাঈদ, কামাল আনোয়ার আহমেদ, শহীদুল্লাহ ইমরান, গোলাম মওলা শাহীন, জাভেদ হাসান স্বাধীন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনসহ আরও কয়েকজন। এরা প্রকাশ্যেই বর্তমান কমিটির অধীনে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment